বিনা পয়সার ব্যবসা !
খরখরে দুপুরবেলা। খড়্গপুর-হাওড়া লোকাল, ট্রেন চলেছে ঢুকুর-ঢুকুর। হালকা ভিড় আছে মোটামুটি, সবাই প্রায় ডেলি প্যাসেঞ্জার। কেউ ঢুলছে, কেউ গান ধরেছে। কিন্তু বেশিরভাগ যাত্রীই ঘাড়গুঁজে একমনে মোবাইলে লিপ্ত। বহির্জগৎ সম্পর্কে তাদের কোনো হঁশই নেই।
বালিচক ষ্টেশন ছাড়ানোর পর বছর কুড়ি-বাইশের একটি ছেলে উঠল কামরায়। শুষ্ক-রুক্ষ চেহারা, ছেঁড়া-ময়লা জামাপ্যান্ট। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনো ফেরিওয়ালা হবে হয়তো! কিন্তু ছেলেটির কাছে বিক্রয়যোগ্য কোনো সামগ্রীই ছিল না। তাহলে কি ভিখিরি?
ছেলেটি কিন্তু উঠেই একে একে যারা মোবাইল নিয়ে মশগুল, তাদের কাছে গেল। কিছু বলতে বা চাইতে হলো না। ঘাড় গুজে বসে থাকা মোবাইল-প্রেমীদের কাঁধে জাস্ট আলতো করে একটা টোকা! অমনি তাঁরা মোবাইল থেকে চোখ না তুলেই ছেলেটির হাতে দশটাকার নোট গুঁজে দিল!
ট্রেনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করলে আবার ট্যাক্স দিতে হয় নাকি? বলা যায় না! যা দিনকাল পড়েছে! কৌতূহল চাপতে না পেরে পাশে বসা এক মোবাইল-বিলাসীকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিসের টাকা দিলেন ভাই?"
ভদ্রলোক বললেন, “আর বলবেন না দাদা! মোবাইলের চক্করে আজকাল যা হচ্ছে না! যার দেউলটি নামার কথা, সে চলে যাচ্ছে আন্দুল! মেচেদার লোক গিয়ে নামছে উলুবেড়িয়ায়। ছেলেটি রোজ দশটাকার বিনিময়ে আমাদের সজাগ করে দেয়! এই যে আজ আমি নামব কোলাঘাটে, নামা নিয়ে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। সজাগ-মূল্য দশটাকা মিটিয়ে দিয়েছি। এবার যতই মোবাইলে ঢুকে থাকি না কেন, ছেলেটি ধাক্কা মেরে হলেও কোলাঘাটে নামিয়ে দেবেই দেবে আমাকে!” এই বলে দেঁতো হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন, আর আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম ওনার দিকে।
কে বলে বাঙালির ব্যবসার বুদ্ধি নেই।
--------------🤣🤣🤣-----------------..
কপি
পেস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন