✒️ মরহুম মাওলানা মওদূদীর ইসমতে আম্বিয়ার প্রতি বিষেদগার!
▶️ মরহুম মওদূদী হযরত ইউনুস (আ.) এর প্রতি রেসালাতের দায়ীত্ব পালনে শৈথিল্যকে যুক্ত করে দেন এবং ইউনুস (আ.) এর শৈথিল্যতাকেই সম্প্রদায়ের উপর থেকে আযাব সরে যাওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেন। তদুপুরী এই শৈথিল্যতাকেই খোদায়ী রোষের কারণ বলে সাব্যস্ত করেন।
(যা সম্পুর্ণ কোরআন সুন্নাহ বিরোধী)
এব্যাপারে মুফতী মুহাম্মাদ শফি রহ. তাফসীরে মারেফুল কুরআনে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করেছেন। আমি এখানে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা কররবো। ইনশাআল্লাহ।
⛔ "এক্ষেত্রে মাওলানা মওদূদীর কঠিন বিভ্রান্তি ঘটে গেছে । তিনি হযরত ইউনুস (আ) এর প্রতি রেসালতের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যকে যুক্ত করে দেন এবং পয়গম্বরের শৈথিল্যটাকেই সম্প্রদায়ের উপর থেকে আযাব সরে যাবার কারন সাবস্ত করেন । তদুপরি এই শৈথিল্যটাকেই খোদায়ই রোষের কারন বলে সাব্যস্ত করেন। সুরা – আম্বিয়া ও সুরা সাফফাতে এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে । তা এরুপঃ
(“ কেরাআনের ইঙ্গিত এবং ইউনুস (আ.) এর গ্রন্থের বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রতি লক্ষ করলে বিষয়টি পরিষ্কার জানা যায় যে,
ইউনুস (আ.) দ্বারা রেসালতের দায়ীত্ব পালনে যৎসামান্য ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি হয়তো অধৈর্য হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের অবস্থান ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সেজন্য আযাবের লক্ষণাদি দেখেই যখন তার সঙ্গী সাথীগণ তাওবা-এস্তেগফার আরম্ভ করে দেয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। কুরআনে আল্লাহ তায়ালার যেসব মূলনীতির কথা বলা হয়েছে, তাতে একটি নিদৃষ্ট ধারা এও রয়েছে যে, আল্লাহ কোন জাতি-সম্প্রদায়কে ততক্ষণ পর্যন্ত আযাবে লিপ্ত করেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের উপর স্বীয় প্রমানাদি পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা করে দেন।
সুতরাং নবীর দ্বার যখন রেসালাতের দ্বায়ীত্ব পালনে ত্রুটি হয়ে যায় এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তিনি নিজেই যখন স্থান ত্যাগ করেন, তখন আল্লাহর ন্যয়নীতি তার সম্প্রদায়কে সেজন্য আজাব দান করতে সম্মত হয়নি।
(তাফহীমুল কোরআনঃ মাও. মওদূদী. পৃষ্ঠা ৩১২, - জিলদ-২")
➡️ এখানে সর্ব প্রথম লক্ষ করার বিষয় এই যে, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের পাপ থেকে মা’সুম (নিষ্পাপ) হওয়ার বিষটি এমন একটি সর্ব সম্মত বিশ্বাস, যার উপ সমগ্র উম্মতের ঐক্যমত বিদ্যমান। এর বিশ্লেশনে কিছু আংশিক মতবিরোধও রয়েছে যে, এই নিষ্পাপত্ব কি সগীরা কবিরা সর্ব প্রকারের গুনাহ থেকেই, না শুধু কবীরা গুনাহ থেকে? তাছাড়া এই নিষ্পাপত্বে নবুওয়াত প্রাপ্তির পুর্বেকার সময়ও অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা? কিন্তু এতে কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তি কাহারোই কোন মতবিরোধ নেই যে, নবী রসূলগণের কেহই রেসালাতের দায়ীত্ব পালনে কোন রকম শৈথিল্য করতে পারেনা। তার কারণ নবী-রসূলগণের জন্য এর চাইতে বড় পাপ আর কিছুই হতে পারেনা যে, যে দায়ীত্বে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নির্বচন করেছেন, তাঁরা নিজেই তাতে শৈথিল্য করে বসেন। এটা সেই মর্যাদাগত দায়ীত্বের প্রকাশ্য খেয়ানত, সাধারণ শালীনতা সম্পন্ন মানুষের পক্ষেও সম্ভব নয়। এহেন ত্রুটি থেকেও যদি নবীগণ নির্দোষ না হবেন, তবে অন্যান্য পাপের নিষ্পাপ হলেই বা কি লাভ!
কিন্তু এখানে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মওদূদী সাহেব যে বিষয়টি কোরআন কারীম ও হযরত ইউনুস আঃ এর সহিফার বিশ্লেষণের উদৃতিক্রমে উপস্থাপন করেছে, তা সহীফায়ে ইউনুসে থাকলেও থাকতেপারে, কিন্তু মুসলমানদের নিকট তার কোন গুরুত্ব ও গ্রহনযোগ্যতা নেই।
তবে এ ব্যাপরে কোরআনী ইঙ্গিত একটিও নেই। বরং ব্যাপারটি হলো এই যে, কয়েকটি প্রেক্ষিত জড়ো করে তা থেকে এই সিদ্ধান্ত বের করা হয়েছে একান্তই জবরদস্তিমুলকভাবে। প্রথমত ধরে নেওয়া হয়েছে যে, ইউনুস (আ.) এর কওমের উপর থেকে আযাব রহি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহ ত’আলার সাধারণ রীতির বিরুদ্ধে হয়েছে।
অথচ এমন মনে করা আয়াতের পুর্বাপর ধারাবাহিকতারও সম্পুর্ণ বিরোধী। তদুপরি তাফসীরশাস্ত্রের গবেষক ইমামগণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেশনেরও পরিপন্থি। তারপর এর সাথে এ কথাও ধরে নেওয়া হয়েছে যে, ঐশী রীতি এ ক্ষেত্রে এ কারণে লঙ্ঘন করা হয়েছে যে, স্বয়ং নবী দ্বারা রেসালাতের দ্বায়ীত পালনে ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল, তৎসঙ্গে একথাও ধরে নেওয়া হয়েছে যে, নবীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নির্ধারিত স্থান ত্যাগ করার জন্য একটা বিশেষ সময় নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্ত তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই দ্বীনের প্রতি আহবান করার দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে পড়েছেন।
সামন্যতম বিচার বিশ্লেশনও যদি করা হয়, তবে একথা প্রমানিত হয়ে যাবে যে, কোরআন সুন্নাহর কোন ইঙ্গিত এসব মনগড়া প্রতিপাদ্যের পক্ষে খুজে পাওয়া যায়না। স্বয়ং কুরআনের আয়াতে বর্ণনা ধারার প্রতি লক্ষ করুন, আয়াতে বলা হয়েছে - فلو لا كانت قرية آمنت فنفعها الا قوم يونس এর পরিষ্কার মর্ম এই যে, পৃথিবীর সাধারণ জনপদের অধিবাসীদের সম্পর্কে আফসোসের প্রকাশ হিসাবে বলা হয়েছে যে, তারা কেনইবা এমন হলোনা যে, এমন সময় ঈমান নিয়ে আসত যে সময় পর্যন্ত ঈমান আনলে তা লাভজনক হতো! অর্থাৎ, আযাব কিংবা মৃত্যুতে পতিত হওয়ার আগে যদি ঈমান নিয়ে আসত, তবে তাদের ঈমান কবুল হয়ে যেত। কিন্তু ইউনুস (আ.) এর সম্প্রদায় তা থেকে সতন্ত্র। কারণ তারা আযাবের লক্ষণাদি দেখে আযাবে পতিত হওযার পুর্বেই যখন ইমান নিয়ে আসে, তখন ঈমান ও তাওবা কবুল করা হয়। আয়াতের প্রকৃষ্ট অর্থ প্রতীমান করে যে, এখানে কোন ঐশী রীতি লংঘন করা হয়নি; বরং একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার নিয়ম অনুযায়ী তাদের ইমান ও তাওবা কবুল করে নেওয়া হয়েছে। অধীকাংশ মুফাচ্ছিরগণ তাদের তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারটি সাধারণ খোদায়ী রীতি অনুযায়ী হওয়ার কথাই বলে।
ইউনুস (আ.) এর স্থান ত্যাগ করার কথাটি তাফসীরে রুহুল মাআনী এভাবে উল্লেখ করা হয়-
▶️ "ইউনুস (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে এজন্য চলে যাচ্ছিলেন যে, তিনি সম্প্রদায়ের কঠিন বিরোধিতা এবং কুফরীর উপর হঠকারিতা সত্ত্বেও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত রেসালাতের আহবান জানাতে থাকার ফলাফল প্রত্যক্ষ করে নিয়েছিলেন।" বস্তুত তার এ সফর ছিল হিজরত হিসাবেই। অথচ তখনও তিনি হিজরতের অনুমতি লাভ করেননি। এতে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে যে, তার প্রতি ভর্ৎসনা আসার কারন রেসালাত ও দাওয়াতের দায়িত্বে শৈথিল্য প্রদর্শন ছিল না; বরং অনুমতির পূর্বে হিজরত করাই ছিল ভৎর্সনার কারন। মি. মদূদীকে কোন কোন ওলামা তার এই ভুলের ব্যাপারে অবহিত করলে সে সূরা-সাফ্ফাতের তাফসীরে স্বীয় মতবাদের সমর্থনে অনেক তাফসীরবিদের বক্তব্যও উদ্বৃত করেছে, যেগুলোর মধ্যে ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ প্রমুখের ইসরাঈলী রেওয়ায়েত সমূহ ছাড়া অন্য কোনটির দ্বারাই তার এ মতবাদের সমর্থন প্রমানিত হয় না যে, হযরত ইউনুস (আঃ) এর দ্বারা (মা'আযাল্লাহ) রেসালাতের দায়িত্ব সম্পাদনে শৈথিল্য হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া জ্ঞানবান বিজ্ঞ লোকদের একথা অজানা নেই যে, তাফসীরবিদগন নিজেদের তাফসীরে এমনসব ইসরাঈলী রেওয়ায়েতসমূহও উদ্বৃত করে দিয়েছেন, যেগুলোর ব্যাপারে তাদের সবাই একমত যে, এসব রেওয়ায়েত প্রামান্য কিংবা গ্রহনযোগ্য নয়। শরীয়তের কোন হুকুমকে এগুলোর উপর নির্ভরশীল করা যায় না। ইসরাঈলী রেওয়ায়েত মুসলিম তাফসীরবিদদের গ্রন্থেই থাক বা ইউনুস (আঃ) এর উপর এহেন মহা অপবাদ আরোপ করা যেতে পারে না যে, তার দ্বারা রেসালাতের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য হয়েছে। ইসলামের কোন তাফসীরকার এহেন কোন মত গ্রহনও করেন নি। (তাফসীরে মা’আরীফুল কোরআন বঙ্গানুবাদ , সৌদি সরকার কর্তৃক প্রকশিত, পৃষ্ঠা নং ৬১৭-১৮- ১৯)
জ্ঞাতব্য : মওদূদী সাহেব তার রচনাসমূহের মাঝে নবী, সাহাবী ও ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চরম অবমাননাকর ও কুরআন সুন্নাহের সাথে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েছেন। তন্মধ্যে তার রচিত খেলাফত ও মুলুকিয়াত বইয়ে আম্বিয়ায়ে কেরাম ও খুলাফায়ে রাশেদার বিরুদ্ধে এতটাই ঘৃণ্য বক্তব্য দিয়েছে যা তার গোমরাহীর স্পষ্ট প্রমান বহন করে।
সেক্ষত্রে সে এমন সব তথ্য উদৃত করেছে বাস্তবতার সাথে যার কোন মিল নেই। বরং সব জালিয়াতিপূর্ণ।
উলামায়ে কেরাম তন্নতন্ন খুঁজেও তার সত্যতা পায়নি। এসব বিষয় দিবলোকের ন্যায় স্পষ্ট হওয়ার পরও তার অনুসারীরা তার অন্ধ সমর্থনে লিপ্ত রয়েছে এবং উলামায়ে হক্কানীর উপর তোহমত দিয়ে যাচ্ছে ।
আল্লাহ তাদেরকে সহি বুঝ দান করুন।
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন