রবীন্দ্রনাথ
যেভাবে কুশারী থেকে ঠাকুর হলেন...
পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার কুশ গ্রাম থেকে কুশারী বংশের উদ্ভব। রাজা বল্লাল সেনের সময় গ্রামটি ছিল সমৃদ্ধশালী। এই গ্রামেই কুশারী পরিবারের বাস। কুশারীরা মুলত ব্রাক্ষণ ছিলেন। ক্রমে ক্রমে বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে তাদের, এরপর তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে, যশোরের অধুনা পিঠাভোগে, ঢাকার কয়কীর্তনে, যশোরের ঘাটভোগ-দামুড়হুদা গ্রামে। তবে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষরা পিঠাভোগের কুশারী। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে আদিশুরের রাজস্বকারে বৌদ্ধ প্রভাবাচ্ছন্ন বঙ্গদেশের হিন্দু ধর্মের ফিরিয়ে আনতে এ প্রধান্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে কণ্যাকুঞ্জ থেকে যে পঞ্চ ব্রাক্ষণ্যের আবির্ভার ঘটে তাদের মধ্যে শাল্ল্যি গোত্রীয় ক্ষিতিশ ছিলেন অন্যতম। পিঠাভোগের কুশারীরা ও শাল্ল্যি গোত্রীয় ক্ষিতিশের বংশজাত ব্রাক্ষণের ধারাবাহিক উত্তর পুরুষ। কথিত আছে ভট্টনারায়ণের পুত্র দ্বীননাথ শাল্ল্যি গোত্রীয় শ্রেণির ব্রাক্ষণ মহারাজ ক্ষিতিশের অনুগ্রহে বর্ধমান জেলার ‘কুশ’ গ্রামে দান স্বত্ব লাভ করে কুশারী গোত্রভুক্ত হন।(বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, ব্রাক্ষণ কান্ড, পৃষ্ঠা ১২১)। সেখান থেকে রবি ঠাকুরের পূর্ব উপাধি কুশারী হয়।(রবীন্দ্র জীবনী ১ম খন্ড, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) কালক্রমে যশোর অধুনা খুলনার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে আবাসভূমি গড়ে উঠে।
রবি ঠাকুরের দক্ষিণ ডিহির মাতৃকুলের রায় চৌধুরী বংশের সাথে কবির আদি পুরুষ পিঠাভোগের কুশারী বংশের আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
.....জগন্নাথ কুশারীর পরবর্তী বংশধর পঞ্চানন কুশারী মত পার্থক্যের কারণে দক্ষিণ ডিহি ত্যাগ করে কলকাতার গঙ্গাতীরে কালিঘাটের গোবিন্দপুর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পিঠাভোগ থেকে আসা পঞ্চানন কুশারীকে স্থানীয়রা ভক্তিতে গ্রহণ করেন। ইংরেজরা তখন আজকের কলকাতার শহরের গোড়াপত্তন করছিলেন। স্থানীয়রা তাদের মুখপাত্র হিসাবে পঞ্চানন কুশারীকে ইংরেজদের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখতে অনুরোধ করে। কুশারীরা ছিল ব্রাক্ষণ। স্থানীয় রুচিবান মানুষেরা ব্রাক্ষণ পঞ্চাননকে সম্মান করে ‘ঠাকুর’ বলে ডাকতো। এই ভাবেই পিঠাভোগের কুশারী কলকাতায় ঠাকুর হিসাবে পরিচিত পান। ঠাকুর হওয়ার পিছনে আরও কাজ করে ওই সময় ভাগীরথী নদীতে ইংরেজদের বাণিজ্য তরী ভীড়তো। সেই বাণিজ্য তরীর মালামাল উঠানো এবং নামানোর ঠিকাদার এবং খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা করতেন পঞ্চানন কুশারী। এ কাজে নিয়জিত শ্রমিকেরা কুশারীকে শ্রদ্ধা ভরে ঠাকুর মহাশয় বলে ডাকতো। জাহাজের ক্যাপ্টেনদের কাছেও তিনি ঠাকুর বলে পরিচিত পেয়ে যান। তাদের কাগজপত্রে TAGORE লেখা হতো। এখান থেকেই ঠাকুর উপাধির প্রচলন।....যাইহোক দীর্ঘকাল ইংরেজদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে ‘টেগোর’ উচ্চারণটি স্থানী রুপ লাভ করে। বিশ শতকে এসে সব টেগোরই ইংরেজি বাংলা উভয় ভাষাই ঠাকুর হলেন। ব্যতিক্রম শুধু রবীন্দ্রনাথ। তিনি বাংলা ভাষায় ঠাকুর কিন্তু ইংরেজি ভাষায় এখনো টেগোর।
সাজেদ রহমান ফেইসবুক থেকে নেওয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন