নায়ক সালমান শাহ্ ও নায়িকা মৌসুমী একই সিনেমা দিয়ে একই সালে আসেন। সে অনুযায়ী ১৯৯৬ সাল ছিল দুইজনের ক্যারিয়ারেরই ৪র্থ বছর। এ বছর সালমান শাহ্ এর মোট ৯ টি সিনেমা মুক্তি পায়। অন্যদিকে নায়িকা মৌসুমীর মুক্তি পায় ১১ টি সিনেমা। মৌসুমীর মুক্তি পাওয়া সেই ১১ সিনেমা ছিল- ১.রাক্ষস ২.শয়তান মানুষ ৩.ফাঁসির আসামী ৪.ঘাত প্রতিঘাত ৫.পাপের শাস্তি ৬.সুখের স্বর্গ ৭.স্বজন ৮. হারানোর প্রেম ৯.বাঘিনী কন্যা ১০. আত্মত্যাগ ১১.গরিবের রানি।
এই ১১ সিনেমার মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানে ৬ টাতেই নায়িকা মৌসুমী ছিল গুরুত্বহীন বা কোনোটাতে দ্বিতীয় নায়িকা। আবার কোনোটাতে দ্বিতীয় নায়িকারও যে গুরুত্ব বা উপস্থিতি থাকে সেটাও ছিল না। পাশাপাশি উক্ত সিনেমাগুলোর গান দিয়েও আলোর ছিটেফোঁটা পায়নি। এদিকে বাকি যে ৫টা ছিল সেসবেও ২/৩ টা ছাড়া বাকিগুলোতে সে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে হ্যাঁ, এ পাঁচটাতে সেই প্রধান নায়িকা ছিল।
আসলে প্রথম সিনেমার সাফল্য এবং প্রেসদের একতরফা সুপ্রচার পাবার পরেও যদি ক্যারিয়ারের ৪র্থ বছরেই সিনেমাতে তার চরিত্রের এ অবস্থা হয় তখন তাকে কি বলা যায়? অথচ এ সব সিনেমা ছিল তার বিয়ের আগে সাইন করা। মানে বিয়ের আগেই তার সিনেমা বাছাই ও চরিত্রের গুরুত্ব এমনটি ছিল। তবুও কারণে-অকারণে প্রেসরা মৌসুমীকে নির্লজ্জের মত সুপ্রচার দিয়ে গেছিল। যার বিন্দুমাত্র কারন ছিল না। হ্যাঁ, এ সময়টাতে মৌসুমীর বেশ ভাল জনপ্রিয়তা ছিল, শুধু এটার জন্যই সেসময়ের ম্যাগাজিনগুলো তাদের নির্লজ্জতা চালিয়ে গিয়েছিল। অথচ সিনেমাতে সে সময়েও তার উপস্থিতি বেশিরভাগ মূল্যহীন ছিল। যা অতীত সময়ে আর কোনো তারকার ক্ষেত্রে ঘটেনি। এমন ক্রেজ পাওয়া তারকার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই না।
অন্যদিকে একই বছরে আসা সালমান শাহ্ এর মুক্তি পাওয়া ৯ সিনেমা ছবিতেই সংযুক্ত করা আছে। সিনেমাগুলোর দিকে চোখ দিলেই বুঝা যাচ্ছে সালমান তার ক্যারিয়ারের কাজের ব্যাপারে কতটা সচেতন ছিল। তার মুক্তি পাওয়া এই ৯ সিনেমার সবগুলোতেই সালমান ছিল প্রধান হিরো। অথচ তখন তারকাবহুল সিনেমার যুগ চলছিলো। যদিও সালমান অভিনীত এই ৯ সিনেমার মধ্যেও কিছু তারকাবহুল সিনেমা ছিল। কিন্তু তারপরেও সেসব সিনেমাতে নায়ক চরিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটা ওই সালমানেরই ছিল।
পাশাপাশি প্রায় সবগুলো সিনেমার নামও খুব সুন্দর ছিল। বাণিজ্যিক চটকদার নাম বলতে শুধু, সত্যের মৃত্যু নেই আর মায়ের অধিকারই যা। বাকি সবগুলোই সহজ,সরল এবং প্রাঞ্জল ছিল। চটুল কোনো বাণিজ্যিক নাম ছিল না।
চরিত্রের বিচারে বা গুরুত্বে তোমাকে চাই,স্বপ্নের পৃথিবী,বিচার হবে,জীবন সংসার, প্রিয়জন,চাওয়া থেকে পাওয়াতে সে গল্পের নায়িকার নায়ক। যার সবগুলোতেই সালমান ছিল উজ্জ্বল। একমাত্র চাওয়া থেকে পাওয়া,প্রিয়জন সিনেমার গল্পই সাদামাটা ছিল। তবে উক্ত সিনেমাদ্বয় সাদামাটা হলেও স্মার্ট উপস্থাপনের জন্য বিশেষ ছিল।
বাকি সিনেমাগুলোর মধ্যে মায়ের অধিকারে তো সালমানই সব। আর সত্যের মৃত্যু নেই এর গল্পতে সত্য মিথ্যার খেলা তো তারা মা-ছেলেই খেলেছে। আসলে নায়িকা শাবানার সাথে সালমানের এটা তৃতীয় কাজ। এর আগে তার সাথে কন্যা দান ও স্নেহ করে। সেখানেও তাদের মা-ছেলের স্নেহ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে গল্প আগায়। আর কন্যাদানেও কন্যা দেয়া-নেয়া করে তারা দুইজন (যদিও এখানে আলমগীর ও লীমাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল)।
যাইহোক, সবশেষে রইল এই ঘর এই সংসার। সেখানেও সালমানের গুরুত্ব ও অভিনয় চমৎকার ছিল। উক্ত সিনেমাতে তমালিকা অত্যন্ত ভাল করার পরেও সালমান শাহ্ গুরুত্ব ও অভিনয়ে কোনটাতেই ম্লান হবার সুযোগ রাখেনি।
এই ছিল একই সাথে আসা দুই নায়ক-নায়িকার ১৯৯৬ সালের ব্যবচ্ছেদ। উক্ত বছরেও এতো সুন্দর ক্যারিয়ার সালমান পার করার পরেও প্রেসদের এতোটুকু সুপ্রচার সে পায়নি। বরং বিভিন্ন নিউজে এ বছর তাকে নায়িকা নির্ভর বানিয়ে দিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রচার করা হয়। অন্যদিকে নায়িকা মৌসুমী এতো বাজে ও গুরুত্বহীন বিভিন্ন সিনেমা নিয়ে বছর পার করার পরেও একের পর এক সুপ্রচার পেয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এ সুপ্রচার দর্শক সমাজে কখনোই মৌসুমীর জন্য সুফলতা বয়ে আনেনি।
আর আনবেই কিভাবে?
ক্যারিয়ারের ৪র্থ বছরেই যদি কোনো তারকার সিনেমার অবস্থা এই হয় তাহলে কিভাবে দর্শক তাকে গ্রহণ করবে বা প্রিয়তে রাখবে? যার জন্যই এ বছর থেকে মৌসুমী যে পিছিয়ে পড়ে আর কখনো কোনো দিন আগাতে পারেনি বা এগিয়ে আসেনি। হ্যাঁ, এমন গুরুত্বহীন অসংখ্য সিনেমার কল্যাণে নায়িকাদের লিস্টে জায়গা পেয়েছে বা লেখকরা দিয়ে গেছে। কিন্তু শীর্ষ নায়িকা বা সবার প্রথম পছন্দ আর সে হতে পারেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন