রোদে শুকানো উচ্ছে। (Sun dried bitter gourd)
রোদে শুকনো উচ্ছে, যার অর্থ "সূর্য-শুকনো তেতো করলা", একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যা তেতো করলাকে পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে বেশ জনপ্রিয়। রোদে শুকনো উচ্ছে ব্যবহারের ঐতিহ্য ঠিক কতদিনের পুরোনো, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে, এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা খাদ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত হয়েছিল।
ঐতিহাসিকভাবে, যখন রেফ্রিজারেশন বা অন্য আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রচলন ছিল না, তখন মানুষ বিভিন্ন উপায়ে খাদ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করত। রোদে শুকানো তেমনই একটি পদ্ধতি। উচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং এটি বেশিদিন সতেজ রাখা কঠিন। তাই, সম্ভবত সেই সময় থেকেই উচ্ছেকে রোদে শুকিয়ে সারা বছর ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার প্রথা চালু হয়েছে। এইভাবে আমার দিদাকে দেখেছি উচ্ছে কেটে রোদে শুখিয়ে রেখে দিতে। যখন উচ্ছে বাজারে পাওয়া যেতো না তখন এই সবজি দিয়ে নানা তরকারি দিদা বানাতেন।
তবে বাংলার লোককথায় বা পুরোনো রান্নার বইয়ে এর সরাসরি উল্লেখ হয়ত নাও থাকতে পারে, তবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জীবনে এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নায় রোদে শুকনো উচ্ছে একটি পরিচিত উপকরণ। অনেক পুরোনো পরিবারে এখনও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এটা বলা যায় যে রোদে শুকনো উচ্ছে ব্যবহারের ঐতিহ্য বাংলা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বহু পুরোনো এবং খাদ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। যা সম্ভবত বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা একটি রান্নার প্রথা।
কিকরে রোদে শুকনো উচ্ছে তৈরির করতে হয় তার পদ্ধতি এখানে দেয়া হলো। বাজার থেকে কেনা তাজা, কচি উচ্ছে বেছে নিন। ভালো করে ধুয়ে দুই প্রান্ত কেটে ফেলুন। এরপর পাতলা গোল করে অথবা লম্বা ফালি করে কেটে নিন। বীজ এবং ভেতরের স্পঞ্জি অংশ ফেলে দেওয়া ভালো। নুন মাখানো ঐচ্ছিক ব্যাপার, যা কাটা উচ্ছেতে সামান্য নুন মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এতে উচ্ছে থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাবে এবং তেতো ভাব কিছুটা কমবে। এরপর হাত দিয়ে চেপে অতিরিক্ত জল ফেলে দিন। একটি টিশু কাগজে রেখে জল শুখিয়ে নিন। এবার পরিষ্কার কাপড় বা পলিথিনের শিটের উপর উচ্ছেগুলো ছড়িয়ে দিন। সরাসরি সূর্যের আলোয় ২-৩ দিন ধরে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। মাঝে মাঝে উল্টে দিন যাতে সব দিক সমানভাবে শুকায়। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে এগুলো কুঁচকে ছোট হয়ে যাবে এবং মচমচে হবে। সংরক্ষণ জন্য শুকনো উচ্ছে ঠান্ডা করে এয়ারটাইট পাত্রে ভরে রাখুন। এভাবে অনেকদিন পর্যন্ত তা সংরক্ষণ করা যায়।
রোদে শুকনো উচ্ছে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। শুকনো উচ্ছে তেলে ভেজে মুচমুচে করে ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। এটি একটি জনপ্রিয় সাইড ডিশ বা স্ন্যাকস। কিছু তরকারিতে শুকনো উচ্ছে ব্যবহার করা হয়, যা তরকারির স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। মনে রাখা প্রয়োজন শুকনো উচ্ছে খাওয়ার আগে তা জলে নিয়ে তারপরে ব্যবহার করা। এই শুকনো উচ্ছে দিয়ে ডাল , উচ্ছে ভাজি, এছাড়াও উচ্ছের নানা বঙ্গ রান্নায় ব্যবহৃত হয়। কিউব, রিং আকারে ডিহাইড্রেটেড করলা বিভিন্ন তরকারি তৈরিতে যেমন ব্যবহার হয় তেমনি বাদামি করলা ‘করলা চা’ তৈরিতে এর ব্যবহার দেখা যায়।
তেতো করলার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। রোদে শুকানো হলেও এর কিছু পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এটি হজমক্ষমতা বাড়াতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত তেতো ভাব কমাতে এবং সংরক্ষণ করার জন্যই মূলত একে রোদে শুকানো হয়। তাছাড়া আমরা যারা ম্যাগি বা সেই জাতীয় খাবার খাই তাদের এই শুকনো সবজির ব্যাপারটা ভালোই জানা আছে। এই উচ্ছে ছাড়াও আরো অনেক নানা ধরনের সবজি যেমন আলু, গাজর, ঢ্যাঁড়স, পাতাকপি এবং কাঁচ কলার মতো সবজি শুখিয়ে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি হয়। সবজি ডিহাইড্রেটেড করার মূল উদ্দেশ্যই হল শেলফ লাইফ বাড়ানো।
👇
By Chef Moonu
👇
#chefmoonuskitchen #moonuandco #travellermoonu #thefoodietraveller #kolkatablogger #kolkatafood #chefmoonu #kolkata #foodlovers #foodblogger #CulinaryJourney #bengalifood #foodculture #WestBengal @top fans
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন