এলি লোবেল একজন নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি University College Kensington, London থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালের বসন্তে, মাত্র ২৭ বছর বয়সে এলি একটি জঙ্গলে হাঁটার সময় একটি পোকা (টিক বা Deer Tick) কামড় দেয়।
এই টিকের দেহে থাকা Borrelia burgdorferi নামক ব্যাকটেরিয়া এলির রক্তে ঢুকে পড়ে।
প্রথমে সাধারণ জ্বর, ব্যথা ও দুর্বলতা দিয়ে শুরু হয়, যা দিন দিন বাড়তে থাকে। অনেক ডাক্তার এটি ফ্লু, ভাইরাল ইনফেকশন, আর্থ্রাইটিস, লুপাস ইত্যাদি বলে ধরে নেন। কিন্তু এক বছর পর জানা যায়—তিনি লাইম ডিজিজে আক্রান্ত, যা বোরেলিয়া বার্গডোর্ফেরি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।
এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর এলি লাইম ডিজিজে ভোগেন। শরীর দুর্বল হতে হতে এক পর্যায়ে তিনি হুইলচেয়ারে বসে যান। ব্যথা, স্মৃতিভ্রষ্টতা, স্নায়ু দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে তাঁর জীবন এক বিষাদে পরিণত হয়। এক সময় চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন যে, তাঁর আর চিকিৎসার কোনো উপায় নেই এবং মাত্র ৩ মাসের আয়ু অবশিষ্ট আছে।
২০১১ সালে এলি সিদ্ধান্ত নেন ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাবেন। সেখানেই একদিন একটি মৌমাছির দল হঠাৎ করে তাঁকে আক্রমণ করে। অসংখ্য মৌমাছি তাঁকে কামড় দেয় এবং তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এলির শরীরে মৌমাছির বিষের প্রতি এলার্জি ছিল, তাই পরিবারের সবাই ভেবেছিল এবার হয়তো তাঁর মৃত্যু হবে।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, সেই মৌমাছির কামড়ই এলির জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি লক্ষ্য করেন—তার শরীরের ব্যথা কমে যাচ্ছে, মাথা পরিষ্কার হচ্ছে, এবং তিনি আস্তে আস্তে হাঁটতেও পারছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, মৌমাছির বিষে থাকা মেলিটিন নামক একটি পেপটাইড বোরেলিয়া ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে ধ্বংস করেছে। এর ফলে শরীরে থাকা লাইম ডিজিজের মূল উৎস কার্যত নিঃশেষ হতে শুরু করে।
এলি লোবেলের জীবন আমাদের এক অসাধারণ বার্তা দেয়—প্রকৃতির মাঝে এমন অনেক বিষ আছে, যা প্রয়োজনমতো ব্যবহারে ওষুধ হয়ে উঠতে পারে। মৌমাছির বিষে প্রাণঘাতী ব্যথা শুরু হলেও, তা-ই তাঁকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।
হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। হোমিওপ্যাথির মূল নীতি “Like cures Like” অর্থাৎ—যা রোগ সৃষ্টি করে, তা-ই রোগ সারাতে পারে—এই দর্শনের সঙ্গে এলির অভিজ্ঞতা গভীরভাবে মিলে যায়। মৌমাছির বিষ তাঁর শরীরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পরে তা-ই আরোগ্যের পথ খুলে দেয়, তা হোমিওপ্যাথির মূল ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন বলা চলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন