"বিড়ালকে আপনি প্যারাসিটামল খাওয়াবেন, প্যারাসিটামল আপনার বিড়ালকে খেয়ে ফেলবে "
প্যারাসিটামল যাদের জীবনের জন্য হুমকি
----------------------------------------------
১) মাংসাশি প্রাণিদের মধ্যে শুধু বিড়াল (পোষা ও বন্য সকল ক্যাটাগরি) জাতীয় প্রাণি প্রাণিতে প্যারাসিটামল বিষক্রিয়া তৈরী করে । কুকুরের ক্ষেত্রে এই রকম সোজা সাপটা নির্দেশনা নেই । ব্রিড ভেদে কম বেশী টলারেন্স থাকলওে কুকুরে প্যারাসিটামল ব্যবহার নিরাপদ নয় ।
২) প্যারটস (বাজেরিগার, ককাটিল, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, আমাজন প্যারট, ম্যাকাউ, লাভবার্ড, ক্যানারি, ফিন্সেস, কাকাতুয়া), কবুতর । গ্যালিফরমস বার্ড যেমন চিকেন এ প্যারাসিটামল ব্যবহার পরিলক্ষিত হলেও এদের জন্য নির্দেশিত ব্যাথানাশকের তালিকায় প্যারাসিটামলের নাম নেই ।
৩) লেগোমরফ (Legomorph) : খরগোশ (Rabbit) এবং হেয়ার (Hare) ।
৪) রডেন্টস (Rodents) - গিনিপিগ, ক্যাপিবারা (Capybara), চিনচিলা (Chinchilla) , সজারু, দেগু (Degu) ।
৫) সকল প্রকার সরীসৃপ ও ব্যাঙ জাতীয় প্রাণি।
কেন প্যারাসিটামল ব্যবহার করেন পোষা প্রাণিতে ?
------------------------------------------------------------
প্রথমত পোষা প্রাণিকে সন্তানতুল্য করে লালন পালন করছেন পেট পেরেন্টস । মানুষের মেডিসিন পোষায় ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশা। এটা তারা দেখছেন । সুতরাং প্যারাসিটামল মানুষে ব্যবহার হলে নিশ্চয় পোষা প্রাণিতে উপকারী হবে । আর এই লাইনের প্রতিবেশী পেট লাভার , ফেইসবুক গ্রুপ, ইউটিউব ভাই এর নিকট থেকে তথ্য নিয়ে জাস্টিফিকেশন না করে খাওয়ানোর কাজটা করে ফেলেন অনেক পেট পেরেন্টস । জ্বর আসছে কীংবা ব্যাথা পেয়েছে সামান্য বিষয়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন না হয়ে বিড়ালকে প্যারাসিটামল দিয়ে থাকেন ।
মানুষের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল কিভাবে মেটাবজিম হয় ?
-------------------------------------------------------
সাধারণত ০৩ টি পদ্ধতিতে প্যারাসিটামল মেটাবলিজম হয়ে থাকে
১) Glucuronidation : ( ফেজ-২ মেটাবলিজম )
প্যারাসিটামল দেহের Glucuronic Acid এর সাথে যুক্ত হয়ে প্যারসিটামল Glucuronide তৈরী হয় । এই ক্ষেত্রে ইউডিডি-গ্লোকরনোসিল ট্রান্সফারেজ(UDP-Glucuronosyl Transferase) নামক এনজাইম প্রভাবক হিসাবে কাজ করে । Paracetamol-Glucuronide একটা পানীতে দ্রবণীয় নন-টক্সিক মেটাবলাইট । গ্রহণকৃত প্যারাসিটামলের ৫৯-৬০% Paracetamol-Glucuronide কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায় ।
২) সালফেসান (Sulfation) :
প্যারাসিটামল সালফোট্রান্সফারেজ (Sulfotransferase) এনজাইমের প্রভাবে দেহের সালফেট মলিকুলের সাথে যুক্ত হয়ে প্যারাসটিামল সালফেট তৈরী হয় । ইহাও পানীতে দ্রবনীয় , নন-টক্সিক একটা মেটাবলাইট । এই পদ্ধতিতে কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায় ২০-৩০% প্যারসিটামল ।
৩) অক্সিডেশন : (Oxidation)
এই পদ্ধতিতে ৫-১০% Paracetamol দেহ থেকে কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায় । সাইটোক্রোম পি-৪৫০ এনজাইমের প্রভাবে Paracetamol/Acetaminophen ভেঙ্গে N-acetyl-p-benzoquinoneimine (NAPQI) তৈরী হয় । এই NAPQI একটা বিষাক্ত এবং বিক্রিয়াশীল Metabolite । এই নাপকি গ্লোটাথিওনের (Glutathione) সাথে বিক্রিয়া করে মারক্যাপচুরকি এসিড (Mercapturic Acid) এবং সিস্টিন কনজুগেট (Cysteine Conjugate) হিসাবে কিডনি দিয়ে বের হয়ে যায় ।
বিড়ালের ক্ষেত্রে কেন বিষক্রিয়া দেখা দেয় ?
---------------------------------------------------
১) Glucuronidation প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্যারাসিটামল যে এন্জাইমের (UGT) প্রভাবে Paracetamol Glucuronide ্এ রুপান্তরিত হয়ে নন-টক্সিক মেটাবলাইট হিসাবে Kidney দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে সেই এনজাইমের ঘাটতি থাকে বিড়ালের লিভারে । সুতরাং প্যারাসিটামল দেহ থেকে বের করতে হলে বাকী দুই পদ্ধতি সালফেশান এবং অক্সিডেশান এর উপর নির্ভর করতে হয় ।
২) সালফেশনের জন্য যে এনজাইম (সালফোট্রান্সফারেজ) প্রয়োজন তা বিড়ালের আছে কিন্তু এই পথের তো পাসিং ক্যাপাসিটি কম । তাই দ্রুত প্যারাসিটামল দেহে জমতে শুরু করে । বাধ্য হয়ে অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করতে হয় ।
৩) অক্সিডেশন প্রক্রিয়াতে ঠিকই নাপকি (NAPOI) তৈরী হয় যা খুবই বিষাক্ত এবং বিক্রিয়াশীল । মানুষের ক্ষেত্রে গ্লুটাথিওয়নের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে যার দ্বারা নাপকি ভেঙ্গে মারক্যাপচুরিক এসিড এবং সিস্টিন কনজুগেট হিসাবে কিডনি দিয়ে বের হয়ে যায় । পক্ষান্তরে বিড়ালে Glutathione এর মজুদ সীমিত । ফলে ব্যাপকহারে উৎপাদিত নাপকিকে নন-টক্সিক মেটাবলাইট এ রুপান্তরিত করা সম্ভব হয় না । এই নাপকি-ই লিভার এবং Red Blood Cell ধ্বংস করে ।
কীভাবে Cat মৃত্যুমুখে পতিত হয় ?
-----------------------------------
NAPQI হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে মিথ-হিমোগ্লোবিন তৈরী করে যা অক্সিজেন বহন করতে পারে না । বিড়ালের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । মিউকাস মেমব্রনে সায়ানোটিক (Cyanotic) হয়ে যায় । লিভারে সেন্ট্রিলবিউলার জোনে নেক্রসিস হয়ে লিভার ফেইল করে বিড়াল মারা যায় । প্যারাসিটামল বিষক্রিয়া শুরুর সাথে সাথে দ্রুত বিড়ালকে নিয়ে হাসপাতাল/ক্লিনিকে যাওয়া আবশ্যক ক্রিটিক্যাল কেয়ারের জন্য । অন্যথায় বিড়ালের মৃত্যু হবে ।
Courtesy: Dr. Nazmul Huda Sir
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন