শাশুড়িরা কেন বৌমাদের সহ্য করতে পারেন না?
বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের সমাজে শাশুড়ি-বৌমা সম্পর্ক বহুদিন ধরেই আলোচনার বিষয়।এই সম্পর্ক অনেক সময় ভালোবাসার হলেও, বিরোধ ও মানসিক দ্বন্দ্বও কম নয়। শাশুড়িরা অনেক সময় বৌমাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন নানা কারণে। চলুন জেনে নিই, কী কারণে শাশুড়িরা অনেক সময় বৌমাদের সহ্য করতে পারেন না।. . .
১. ছেলে ভাগ হয়ে গেছে এমন অনুভূতি
মায়ের কাছে ছেলেই পৃথিবীর সব।
বিয়ের পর ছেলেটির মনোযোগ স্ত্রীর দিকে গেলে মায়ের মনে হয়, ছেলে আর আগের মতো নেই।
এই 'বিয়ের পর ছেলে পালটে গেছে' অনুভূতি থেকেই শুরু হয় মানসিক প্রতিদ্বন্দ্ব।
এতে করে বৌমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে শাশুড়ি।
২. কর্তৃত্ব হারানোর ভয়
বিয়ের আগে ঘরের সিদ্ধান্তে শাশুড়ির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।
বউ আসার পর সেই সিদ্ধান্তে নতুন একজনের প্রভাব পড়ে।
এতে করে শাশুড়ির মনে হয়, বৌমা তার অবস্থান দখল করে নিচ্ছে।
এই ভয়ের কারণেই অনেক সময় সহ্য করতে পারেন না।
৩. বৌমার আধুনিকতা ও মতামত শাশুড়ির চক্ষুশূল
অনেক বৌমা শিক্ষিত, মতপ্রকাশে সাবলীল ও স্বাধীনচেতা হন।
শাশুড়িরা এই স্বাধীনচেতা মনোভাবকে 'অধিক কথা বলা' বা 'উদ্ধত আচরণ' ভাবেন।
তাদের চোখে, এই ধরনের বৌমারা নিয়ম মানে না এবং তাদের গুরুত্ব দেয় না।
ফলে জন্ম নেয় বিরক্তি ও দূরত্ব।
৪. তুলনার মনোভাব
শাশুড়িরা অনেক সময় বৌমার সঙ্গে নিজের সময়ের তুলনা করেন।
"আমরা তো এত কষ্ট করতাম, ও কিছুই করে না" — এমন মন্তব্য প্রায়ই শোনা যায়।
এই তুলনা থেকেই তারা ভাবেন, বৌমারা অলস, সুবিধাভোগী।
এর থেকেই আসে বিরূপ মনোভাব।
৫. পরিবারের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা
বৌমা যদি সংসারে সক্রিয় ভূমিকা নেয়, শাশুড়ির মনে হয় তার নিয়ন্ত্রণ কমছে।
এই নিয়ন্ত্রণহীনতার ভয় তাকে বৌমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তোলে।
শুধু রান্না বা খরচ নয়, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কেও মত দেয় বৌমা।
এতে শাশুড়ি মনে করেন, সংসার তার হাতছাড়া হচ্ছে।
৬. পারিবারিক রাজনীতির চাপে
অনেক সময় ননদ, জা বা আত্মীয়রা শাশুড়িকে ভুল তথ্য দেয় বৌমা সম্পর্কে।
এই অপপ্রচারে শাশুড়ির মনে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়।
সংসারের কূটনীতিতে একজন অন্যজনকে ছোট করে নিজেকে বড় দেখাতে চায়।
এই রাজনীতির বলি হন নির্দোষ বৌমা।
৭. বয়সের ব্যবধান ও চিন্তার ফারাক
শাশুড়ি-বৌমার মাঝে প্রজন্মের ব্যবধান থাকে।
এতে করে জীবনদর্শন, প্রযুক্তি ব্যবহার, পোশাক বা সন্তান পালনেও মতভেদ হয়।
এই ফারাককে শাশুড়িরা অনেক সময় 'উপযুক্ত সম্মান না দেওয়া' বলে ব্যাখ্যা করেন।
ফলে সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যায়।
৮. বৌমার উপর অতিরিক্ত প্রত্যাশা
অনেক শাশুড়ি মনে করেন, বৌমা আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে সব বুঝে নিতে হবে।
রান্না, সংসার, আচরণ — সব কিছুতেই পূর্ণতা চাই তাদের।
বৌমা একটু ভুল করলেই তারা ভাবেন, ইচ্ছে করে করছে।
এই উচ্চ প্রত্যাশা সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে।
৯. ছেলে ও বৌমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে ঈর্ষা
বিয়ের পর ছেলের সময় ও ভালোবাসার বড় অংশ যায় স্ত্রীর কাছে।
মায়ের মনে হয়, সে উপেক্ষিত হচ্ছে।
এই অবহেলার অনুভব থেকে সে স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়।
ফলে সম্পর্ক হয়ে পড়ে কষ্টদায়ক।
১০. নিজের জায়গা হারানোর ভয়
বউ ঘরে এলে শাশুড়ির মনে হয়, নতুন কেউ তার জায়গা নিচ্ছে।
তিনিও তো একসময় নতুন বউ ছিলেন — তখন যেমন সম্মান পেয়েছেন, এখন সেই সম্মান কেউ অন্যকে দিচ্ছে।
এই 'স্থানচ্যুতি' মানতে না পারার কারণেই অনেক শাশুড়ির আচরণ বিরূপ হয়।
এটি একধরনের মানসিক সংকট, যা সময় ও সহানুভূতিতে কাটিয়ে উঠা যায়।
শাশুড়ি-বৌমা সম্পর্কের জটিলতা মূলত মানসিকতার ফারাক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঘাটতির ফল।
এই সম্পর্ক সুন্দর হতে পারে যদি দুপক্ষই শ্রদ্ধা, ধৈর্য ও সহানুভূতি দিয়ে একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করে।
সন্তানের সুখ ও পরিবারের শান্তির জন্য এ সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে হবে।
কারণ, একজন ভালো শাশুড়ি হতে পারা যেমন গৌরবের, একজন বৌমারও সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন