★★আলোচ্য বিষয়
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (Power of Attorney) বা আম-মোক্তারনামা দলিল সম্পর্কে :-
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (Power of Attorney) বা আম-মোক্তারনামা দলিল হল একটি আইনি দলিল, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি (মূল ব্যক্তি বা প্রিন্সিপাল) অন্য আরেকজন ব্যক্তির (এজেন্ট বা অ্যাটর্নি) উপর তার পক্ষে কাজ করার জন্য আইনি ক্ষমতা অর্পণ করেন। এই ক্ষমতা আর্থিক, সম্পত্তি-সংক্রান্ত, বা স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো কিছুই হতে পারে।
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি মূলত দুই প্রকার যথা:-
১. সাধারণ পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি-
এই ধরনের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য ক্ষমতা প্রদান করে, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ থাকে।
২. অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি-
এই ধরনের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি সাধারণত কোনো সম্পত্তি বা অন্য কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং এটি সহজে বাতিল করা যায় না।
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করার জন্য কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, যেমন:
১. দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে, যদি এটি কোনো সম্পত্তির সাথে সম্পর্কিত হয়।
২. পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দলিলটি অবশ্যই স্ট্যাম্পযুক্ত হতে হবে।
৩. দলিলটি অবশ্যই যথাযথভাবে পূরণ করা এবং স্বাক্ষরিত হতে হবে।
৪. পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করার জন্য সাধারণত কিছু ফি এবং স্ট্যাম্প শুল্ক দিতে হয়, যা দলিলের প্রকার এবং মূল্যের উপর নির্ভর করে।
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল, যা অনেকের জন্য নানা প্রয়োজনে কাজে লাগে, যেমন বিদেশে থাকা অবস্থায় সম্পত্তি দেখাশোনা করা বা অসুস্থতার কারণে নিজের কাজ নিজে করতে না পারা ইত্যাদি।
>>আর একটু সহজ ভাষায় বলতে গেলে-
বাংলাদেশের আইনে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি মূলত এমন একটি দলিল যেটার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি অপর
কোন ব্যাক্তিকে তার পক্ষে আইনসঙ্গত কোন কার্যক্রম গ্রহণের অধিকার প্রদান করে থাকে।
সাধারণত এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের অধিকার লিখিত দলিলের মাধ্যমে দেওয়া হয়।পাওয়ার অব এ্যাটর্নি আইনের ২ ধারার (১)উপধারা অনুসারে পাওয়ার অবএ্যাটর্নি বলতে এমন কোন দলিলকে বুঝায় যেটার মাধ্যমে কোন ব্যাক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্ণিত কায-সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যাক্তি নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন বা করে থাকেন।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি প্রকারভেদ-
সাধারণ দিক থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-
১.সাধারন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি (General Power of Attorney)
২.বিশেষ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি ( Special Power of Attorney)
★সাধারন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি (General Power of Attorney)
সাধারন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সম্পর্কে সুনিদিষ্ট ভাবে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি আইন ও বিধিমালায় আলোচনা করাহয়নি,তবে আমরা এই ভাবে বলতে পারি যে–পাওয়ার অব এ্যাটর্নি আইনে ২(৭) ধারার অনুযায়ী
অপ্রত্যাহারয়োগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নি চারটি (৪টি) ক্ষেএ রয়েছে ,উক্ত ক্ষেএ ব্যাতীত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পওি ছাড়াও যেকোন বিষয়
সাধারন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিল সম্পাদন করা যায়।যেমন-স্থাবর সম্পওি ইজারা, দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ,অস্থাবর সম্পওি বিক্রয় ক্ষমতা অর্পণ ইত্যাদি।
★বিশেষ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি ( Special Power of Attorney)
রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩২ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একই আইনে ৩৩ ধারার
অধিনে প্রস্ততকৃত পাওয়ার অবএ্যাটর্নি কে বিশেষ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি বলে গন্য হবে।
বিশেষ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিলকে খাস-মোক্তারনামা নামেও সর্বাধিক পরিচিত।এখন কোন ব্যাক্তিকে যদি মোকাদ্দমা পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়, তখন সেটাবিশেষ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি অনুযায়ী করতে হবে;
পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি শর্তগুলো কী
১) পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত হতে হবে অবশ্যাই;
২) যদি পাওয়ার অব এ্যাটর্নি কোন জমি হলে অবশ্যাই দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে আইন অনুযায়ী;
৩) যে কারনে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখা করতে হবে;
৪) স্ট্যাম্প আইন অনুযায়ী তা স্ট্যাম্প করতে হবে এবং রিসিট গ্রহন করতে হবে;
৫) আবেদন অবশ্যাই রেজিস্টার্ড ব্যাক্তির কাছে করতে হবে।
কোন কোন বিষয়ে পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি দলিল তৈরি করা যাবে না
ধারা ৪ অনুযায়ী এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তা হলেঃ
উইল সম্পাদন বা দাতা উইল নিবন্ধনের উদ্দেশ্য দাখিলকরন;
দত্তক গ্রহনের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন বা দাতা দত্তক ক্ষমতাপত্র নিবন্ধনের উদ্দেশ্য দাখিলকরন;
দান বা হেবা সম্পর্কিত ঘোষনা সম্পাদান;
ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন
সরকারীর দলিল বিশেষ বা সাধারন আদেশের মাধ্যেমে সম্পাদন;
দাতার বিরুদ্ধে যখন গ্রহীতা প্রতারনা করে
দাতার এখানে আইনী প্রতিকার হলো দন্ডবিধি অনুযায়ী ধারা ৪০৬ এবং ৪২০ অনুযায়ী
মামলা দায়ের করতেপারবে জুডিশয়াল মেজিস্ট্রেট বা মেট্রেপলিটন ম্যজিস্ট্রট এর নিকট।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি প্রস্ততকরণে যা লাগবে তা নিম্নরুপঃ
১. মূল পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিলপত্র ।
২. ব্যাক্তিদের রঙ্গিন ছবি দিতে হবে অবশ্যাই।
৩. ক্ষমতা প্রদানকারী ব্যাক্তি (Power Giver) এর বৈধ বাংলাদেশী জাতীয় ।
পরিচয়পত্র/পাসর্পোট/ডিজিটাল(১৭ডিজিট) জন্মনিবন্ধন সনদ কপি। তাছাড়া বিদেশী নাগরিক এর ক্ষেত্রে তার নিজ দেশের পাসপোর্ট ।
৪. ক্ষমতা গ্রহনকারী ব্যাক্তি(Power Receiver) বৈধ বাংলাদেশী জাতীয়
পরিচয়পএ/পাসর্পোট/ডিজিটাল(১৭ডিজিট)জন্মনিবন্ধন সনদ কপি।
৫. ক্ষমতা প্রদানকারী ব্যাক্তি (Power Giver)এবং ক্ষমতা গ্রহনকারী ব্যাক্তি
(Power Receiver) এর সদ্যতোলা ২কপি ছবি।(সাদা ব্যাক-গ্রাউন্ডযুক্ত)।
৬. ফি প্রদানের প্রমাণপত্র।
৭. ডাকে পাঠানোর ক্ষেএ অর্থ পরিশোধিত ও ঠিকানা লিখা ফেরত খাম।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কিভাবে করবেন এবং
একাধিক পাওয়ার অব এ্যাটর্নি গ্রহীতা নিয়োগ করা যাবে কিনা:-
পাওয়ার অব এাটর্নি একাধীক হবে কিনা তা পাওয়ার অব এাটর্নি আইনে সুনিদিষ্ঠ ভাবে উল্লেখ না থাকলেও ৯ ধারায় একাধিক কথা উল্লেখ রয়েছে এই ধারা মতে পাওয়ার অব এাটর্নি দলিল ক্ষেত্র বিশেষে একাধিক পাওয়ারঅব এাটর্নি গ্রহীতা নিয়োগ করা যাবে,
কিন্তু একাধিক গ্রহীতা নিয়োগ এ প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে
একজন কে মূখ্য এবং বাকিদের কে সহযোগী হিসাবে রাখা যাবে। প্রধান গ্রহীতার অনুপস্থিতে অন্যরা যাতে কাজ করতে পারেন।
পাওয়ার দাতা বিদেশে অবস্থান করলে :-
পাওয়ার অফ এটর্নি বিদেশ থাকা অবস্থায় ব্যক্তির দলিল বানানোর প্রক্রিয়া একটু জটিল।এই ক্ষেত্রে আইনটিসম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানেন এমন কাউকে
দিয়ে সঠিক ভাবে লিখে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ওপ্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি দেশের বাইরে থেকে জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়
তাহলে অবশ্যাই তাকে রেজিস্ট্রেশন আইন এর ধারা ৩৩ অনুসরন করবেন। এখানে বলা হয়েছে পক্ষের নাম ও ঠিকানা, জাতীয় পরিচয় পত্র, রঙ্গিন ছবি দিতে হবে, গ্রহীতার ছবির উপর দাতা তা শনাক্ত করবেন , দূতাবাসে যাওয়া সিলনেওয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে যাবে, ধারা ৮৯ অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কালেক্টর এর নিকট পাঠাতেহবে। এবং স্ট্যাম্প করবেন এবং রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠিয়ে দিবে এবং নং ১ বই জমা দিতে হবে। এই পর্যায়ে ওইদলিলের একটি ক্রমিক নম্বর ও তারিখ নির্দিষ্ট হবে।
এই নম্বরটিই ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের নম্বর।তফশিল ক, ফর্ম ৩ অনুসরন করবে দলিল তৈরির সময়।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সম্পাদনে ব্যক্তিগত উপস্থিতি:-
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সম্পাদনে ব্যক্তিগত উপস্থিতি
বাধ্যতামূলক এবং আগমনের পূর্বে কবেযোগদান করবে সেটি নিচ্ছিত করতে হবে,,,তবে বিদেশে অবস্থান করে
সেই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম রয়েছে,উপস্থিতি বিষয় সিথিল করা হয়েছে।
এখন কেউ যদি ভার্চুয়াল পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সম্পাদন করতে চাই সেটা সম্ভব নয় তবে,
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিলপএ হাইকমিশনার এর কন্সুলার অফিসারের সম্মুখে স্বাক্ষর করতে হবে।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি কখন অবসান বা বাতিল হয়ে যাবে :-
কি কি কারনে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি বাতিল হবে/হয়ে থাকে তা নিম্নরু্পঃ
১. নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নি করা হলে
মেয়াদ শেষে বা উদ্দেশ্য সফল তা বাতিল বলে গণ্য হবে।যেমনঃ ১ জানুয়ারী ২০২৪ থেকে ১ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত হলে, সময় শেষ হলে বাতিল হয়ে যাবে;
২. পাওয়ার অব এ্যাটর্নি বাতিল বা প্রত্যাহার করা যায়। বাতিল করতে চাইলে যে অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল, সেই জেলার রেজিস্ট্রার বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের লিখিত আবেদন করতে হবে।
৩. পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি জারীকারী ব্যাক্তি দেওলিয়া, মারা গেলে, আইনী স্বত্বা বাতিল হলে সেই দলিল ও বাতিলহয়ে যাবে;
৪. যদি পাগল বা উন্মাদ হয়ে যায় তাহলে বাতিল হয়ে যাবে;
৫. যেখানে দলিলটি আইন অনুয়ায়ী নিবন্ধন করার প্রয়োজন ছিলো, সেক্ষত্রে করে নাই;
৬. যে ব্যাক্তির কাছে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সে ব্যাক্তি যদি পাওয়াকারীর নিকট আবেদনের মাধ্যেমে যখন বাতিলহয়ে যায়;
৭.যখন আইনী কোন পর্যায়ের মাধ্যেমে সমধানের মাধ্যেমে যখন বাতিল করা হয়,
যেমনঃ বিরোধ হলেমধ্যেস্থতাকারীর মাধ্যেমে যখন কোন বাতিল সিদ্ধান্ত আসে।
৮. সাধারণ পাওয়ার অব এ্যাটর্নি অবসানের ক্ষেত্রে দাতা ক্ষমতা গ্রহীতাকে ডাক রেজিস্টার্ডর মাধ্যমে ৩০ দিনের নোটিশ দিয়ে প্রদত্ত ক্ষমতার অবসান ঘটাতে পারবেন। তা ছাড়া ক্ষমতা গ্রহীতাও একইভাবে মালিককে ৩০ দিনের নোটিশ সাপেক্ষে অ্যাটর্নির দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারেন।
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি সংক্রান্ত আইনি সমস্যা বা আইনী সহায়তার জন্য ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন