গল্প টা মায়ের কাছে শোনা।
কোন এক গ্রামে এক চিটিংবাজ বাস করতো। যেহেতু চিটিংবাজ তাই, সারাদিন ফন্দি আঁটত কাকে কিভাবে ঠকানো যায়।
গ্রামের কেউকে সে কোনোদিন ঠকায় নি। পাছে গ্রামে তাঁর সন্মান নষ্ট হয়। একদিন তাঁর মাথায় কু বুদ্ধি ভর করলো। সে ভাবলো গ্রামের কেউকে সে ঠকাবে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ।
গ্রামের ব্রাহ্মণ, ঘোষ, কামার, কুমোর, ছুতোর, দাস, মাঝি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের বাস। সে ভাবছে কাকে ঠকানো যায়?? অবশেষে তাঁর নজর পড়লো, কুমোরপাড়ার হরিদাস পালের উপরে।
একদিন সন্ধ্যাবেলায়, হরিদাস পালের বাড়ি গিয়ে চিটিংবাজ লোকটা বলল। " ভাই আমাকে ১০০০ মাটির ১ টাকার কয়েন তৈরী করে দেবে?? তোমার পারিশ্রমিক যা লাগবে দেবো"।
হরিদাস পাল অনেক ভেবে রাজি হলো। চিটিংবাজ তাকে কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।
একসপ্তাহ পরে চিটিংবাজ, হরিদাস পালকে বাজারে দেখে, সবার সামনে চেঁচিয়ে বলল " আমার হাজার টাকার কয়েন গুলো কবে দেবে??
হরিদাস পাল বিনয়ের সাথে বলল " আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
হরিদাস পাল কে চিটিংবাজ প্রায়ই বলে " আমার হাজার টাকা কবে দেবে??
হরিদাস বলেন " আর কিছুদিন পরে "
ইতিমধ্যে গ্রামের সবাই জেনে গেছে চিটিংবাজ হরিদাস পালের কাছে ১০০০টাকা পায়।
এভাবে ছয় মাস পার হলো,, একদিন চিটিংবাজ বাজারে লোকজনের সামনে একপ্রকার হুমকি দিয়েই বলল "এক সপ্তাহর মধ্যে আমার টাকা চাই। নইলে..
গ্রামের লোকজন জানতো হরিদাস পাল চিটিংবাজের থেকে ১০০০ টাকা ঋণ নিয়েছে, চিটিংবাজ সেই টাকাটাই চায়। তাই তাঁরাও চিটিংবাজের পক্ষ নিয়ে হরিদাস পাল কে ভীষণ চাপ দিতে থাকলো।
চিটিংবাজ যে হরিদাস পালকে মাটির টাকা তৈরী করতে দিয়েছে সে কথা কেউ বিশ্বাসই করলো না।
সবাই বলল " একটা চিটিংবাজ কি পাগল?? যে তোমাকে মাটির টাকা বানাতে দেবে?? তুমি ওর ১০০০ টাকা মেরে দিতে চাইছো?? ভালোই ভালোই ওর পাওনা টাকা ওকে ফেরত দাও। নইলে কিন্তূ কপালে কষ্ট আছে।
বেগতিক দেখে হরিদাস গ্রামের মোড়লের কাছে গেল। সব শুনে মোড়ল হরিদাসকে মিথ্যাবাদী বলে ভৎসনা করলো। তারপর তাকে আদেশ দিলো, তিন দিনের মধ্যে চিটিংবাজের সব টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। নয়তো সালিসি সভা দেখে তোমাকে চরম শাস্তি দেয়া হবে।
সহজ সরল হরিদাস কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি গিয়ে ভাবছে একি অনাচার?? তাঁর কথা কেউ বিশ্বাসই করছে না?
যে মিথ্যা বলছে সবাই তাঁর পক্ষে কথা বলছে??
হরিদাস পালের স্ত্রী ছিলেন ভীষণ বুদ্ধিমতী। সব শুনে সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন " এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তুমি কাঁদছো?? যাও এখুনি চিটিংবাজ কে বলে এসো। কাল সকালে আমাদের বাড়িতে এসে যেন টাকাটা নিয়ে যান।
স্ত্রীর কথা শুনে হরিদাস অবাক। তাহলে কি সত্যি সত্যিই ওকে টাকা দিতে হবে??
হরিদাস পালের স্ত্রী বললেন " কি এতো ভাবছো?? যা বললাম তাই করো। এখুনি গিয়ে বলে এসো।
হরিদাস স্ত্রীর কথা মত চিটিংবাজকে টাকা নিতে যাওয়ার কথা বলল..
টাকা নিতে যাওয়ার কথা শুনে চিটিংবাজ তো মহাখুশি। পরের দিন সকালে হাসতে হাসতে হরিদাসের বাড়িতে উপস্থিত হলো।
হরিদাস পালের স্ত্রী মাথায় ঘোমটা দিয়ে বললেন " আমি এখনো আকাচা।আপনার টাকা ওই চাক (হাঁড়ি বানানোর যন্ত্র ) ঘরের ডাপের ঝোলায় রাখা আছে। আপনি একটু কষ্ট করে নিয়ে নিন।
টাকার লোভে চিটিংবাজ প্রায় লাফাতে লাফাতে চাক ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে দেখলো ঘরটা একটু অন্ধকার। তবে ডাপে ঝোলা টা দেখা যাচ্ছে। যেমনি ঝোলাটা নামিয়েছে। অমনি ঝোলার আড়ালে ভীমরুলের চাক থেকে বেশ কিছু ভিমরুল বেরিয়ে চিটিংবাজের মুখে, হাতে, বুকে, পিঠে যেখানেই পেরেছে হুল ফোটাতে শুরু করেছে।
" বাবারে, মা রে, গেলাম রে, বাঁচাও বাঁচাও বলে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে দৌড়োতে শুরু করেছে। ভিমরুল গুলোও চিটিংবাজের পিছু নিয়েছে।
বেগতিক দেখে প্রাণ বাঁচাতে চিটিংবাজ এবারে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছে। পুকুরে গভীর খাল, এদিকে চিটিংবাজ সাঁতারও জানতো না।
চিটিংবাজ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। আর জল খাচ্ছে। সব দেখে হরিদাস একটা বাঁশের লগি নিয়ে এগিয়ে এলো। সঙ্গে গ্রামের মোড়ল ও আরও কিছু গণ্যমান্য লোকজন।
লগিতা চিটিংবাজের দিকে বাড়িয়ে হরিদাস বলল " সত্যি কথা বলো, তুমি আমাকে টাকা ঋণ দিয়েছো?? না কি মাটির টাকা তৈরী করতে দিয়েছিলে?? সব সত্যি বলবে। নইলে এই লগি আমি ছেড়ে দেবো..
বাঁচার তাগিদে চিটিংবাজ সব সত্যি কথা বলল। সব শুনে সবাই চিটিংবাজকে জল থেকে তুলে উত্তম মধ্যম দিতে এক্কেবারে মুখিয়ে রয়েছে।
হরিদাস চিটিংবাজকে জল থেকে টেনে তুলে তাঁর করুন অবস্থা দেখে খুব দয়া হলো। সারা শরীর টা ভীমরুলের কামড়ে এক্কেবারে যেখানে সেখানে ফুলে লাল হয়ে রয়েছে। তাই কেউ আর তাঁর গায়ে হাত দিলো না।
মোড়ল মশাই কড়া ভাষায় চিটিংবাজ কে আদেশ দিলেন। সহজ সরল মানুষ পেয়ে হরিদাস কে ঠকানোর চেষ্টা?? তোমার শাস্তি তো তুমি পেয়েই গেছ তবুও তোমাকে সবার সামনে হরিদাসের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।
চিটিংবাজ সবার সামনে হরিদাসের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে বাবারে, মা রে , মরে গেলাম রে বলতে বলতে চলে গেল।
হরিদাস স্বস্তির ফেলল। বাড়ি ফিরে " সত্যি গিন্নি, তোমার জবাব নেই "" বলে দুজনেই হাসতে লাগলো।
✍️ পরিতোষ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন