‘সূর্য উডের অভাই লাল মারি/
রইস্যা বন্ধু যারগই আমার বুকে সেল মারি’
অথবা 'নাতিন বরই খা বরই খা হাতে লইয়া নুন।’
গানগুলো অবশ্যই আপনারা শেফালী ঘোষের কন্ঠে অনেকে শুনেছেন। তাঁর কণ্ঠে প্রতিধ্বনি হয়েছে মানুষের আনন্দ-বেদনার সুর, নদীর সৌন্দর্য্য, পাহাড়ের নীরবতা আর পশুপাখি কলতান । আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী ছিলেন শেফালী ঘোষ। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছেন যা উপমহাদেশের সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে। সংগীত জীবনে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান গেয়েছেন। তার গাওয়া গান নিয়ে দুই শতাধিকের বেশি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ২০টিরও বেশি দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাংস্কৃতিক ভূমিকা রেখেছেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি যাত্রা এবং মঞ্চনাটকেও তার নিয়মিত অংশগ্রহণ ছিল। তার গাওয়া বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে এম এন আখতার রচিত এবং সুরারোপিত "যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম", আহমেদুল হক সিদ্দিকী রচিত ও সুরে "ও রে সাম্পানওয়ালা", মলয় ঘোষ দস্তিদার রচিত ও সুরে "ছোট ছোট ঢেউ তুলি" প্রভৃতি। শেফালী ঘোষ ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় জজন্মগ্রহণ করেন। শিল্পী জীবনের সূচনালগ্নে প্রথমে রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত এবং আধুনিক গান শিখতে শুরু করলেও এক পর্যায়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। শেফালী ঘোষের জন্য গান লিখেছিলেন সুপরিচিত কবিয়াল রমেশ শীল, আবদুল গফুর হালী, এম এন আখতার, কবিয়াল এয়াকুব আলী, সৈয়দ মহিউদ্দিন, অচিন্ত্য কুমার চক্রবর্তী, চিরঞ্জিত দাশ, মোহাম্মদ নাসির এবং মোহন লাল দাশ। তিনি ১৯৯০ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক পদক, ২০০২ সালে বাংলা একাডেমি আজীবন সম্মাননা পদক , ২০০৩ সালে শিল্পকলা একাডেমী পদক এবং ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেফালী ঘোষ মারা যান। আজ বরেণ্য কন্ঠশিল্পী শেফালী ঘোষের প্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধা চিত্তে স্মরণ করছি। মানুষের আবেগ আর ভালোবাসায় শেফালী ঘোষ আমাদের অন্তরে জাগ্রত থাকুক।
✍️রূপম চক্রবর্ত্তী- প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম
ছবিতে শিল্পী শেফালি ঘোষ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন