এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫

শচীন দেববর্মণ আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক অমূল্য সম্পদ—তাঁর সুর ও গানের ভাণ্ডার, যা আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

 রাজ পরিবারের সন্তান হলেও তিনি ছিলেন আদ্যোপান্ত একজন মাটির মানুষ। বলতেন, "দূর! যে দেশে গঙ্গা নাই, হেইডা আবার দেশ নাকি!" এই এক বাক্যেই যেন তাঁর শিকড়ের প্রতি টান ও গভীর দার্শনিকতা ধরা পড়ে। শচীন দেববর্মণ—এক এমন সুরের সন্ন্যাসী, যাঁর জীবনের প্রতিটি পরতে ছিল সংগীতের প্রতি অপরিসীম প্রেম।


ফিল্মিস্তানে কাজের প্রথম দিনগুলোতে শচীন কত্তার পকেটে থাকত মাত্র দুটো টাকা। পরবর্তী সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করলেও সেই দু’টাকার সঙ্গে লাখ টাকার কোনও তফাৎ ছিল না তাঁর কাছে। গান ছিল তাঁর প্রথম এবং শেষ প্রেম। সংসার, বিবাহ সব সামলেও সংগীতই ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান।


সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র শচীন টেনিস খেলতেন সাউথ ক্লাবে। কিন্তু সংগীতের প্রতি তাঁর টান শুরু হয় মান্না দে'র কাকা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে। পরে তিনি ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তালিম নেন। প্রথম জীবনে এই দুই গুরুদেবের প্রভাব থাকলেও, রবীন্দ্রসঙ্গীত ছিল তাঁর প্রাণ।


পরিচালক তপন সিংহ একবার বম্বেতে শচীন কর্তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তখন নতুন একটি সুর করছিলেন। লতা মঙ্গেশকর গাইবেন সেই গান। তপন সিংহকে শোনালেন—‘মেঘছায়ে আঁধি রাত’। তপন মুগ্ধ হয়ে বললেন, “অসাধারণ!” শচীন কর্তার উত্তর ছিল, “সবই রবীন্দ্রনাথের কৃপা। এই সুরের মূলেও রবীন্দ্রপ্রভাব।”


একদিন মেঘলা দুপুরে শচীন কর্তা হারমোনিয়াম নিয়ে সুর করছিলেন। হঠাৎ কাজী নজরুল ইসলাম এসে বললেন, "মুখটা তো বেশ হয়েছে শচীন, দাঁড়াও একটা কাগজ দাও।" মাত্র মিনিট পনেরো। লেখা হয়ে গেল পুরো গানটি, আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সুর। পরের দিন রেকর্ডিংয়ে তৈরি হলো চিরস্মরণীয় গান—‘মেঘলা নিশি ভোরে, মন যে কেমন করে’।


তপন সিংহ একবার শোনেন শচীন দেববর্মণের স্ট্রোক হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখলেন, বাঁ দিক সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তপনের দিকে তাকিয়ে কর্তা বললেন, “তপন, আর কিছু চাই না—শুধু যদি একটু গুনগুন করে গান গাইতে পারতাম!”


তপন তাঁকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, “বড়ে গোলাম আলি খান সাহেব স্ট্রোকের পরেও গান গেয়েছিলেন। আপনিও পারবেন।” কিন্তু হয়তো মৃত্যুর নিয়ম ভিন্ন। কলকাতায় ফিরে কিছুদিনের মধ্যেই, ৩১ অক্টোবর ১৯৭৫, ভারত হারাল সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সংগীতের একটি অধ্যায়ের অবসান হল।


শচীন দেববর্মণ আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক অমূল্য সম্পদ—তাঁর সুর ও গানের ভাণ্ডার, যা আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।

____________________________

কৃতজ্ঞতা: মনে পড়ে, তপন সিংহ।

সম্পাদনা: কিছু কথা॥ কিছু সুর ।

© ছবি পুনর্নবীকরণ ও রঙিনীকরন: কিছু কথা ॥ কিছু সুর

কোন মন্তব্য নেই:

সংসারের ভাঙনের শুরু যেভাবে হয়..

 সংসারের ভাঙনের শুরু যেভাবে হয়.. আপনি যখন আপনার স্ত্রীর সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা বলেন, সেটা যদি হয় অন্য কোনো নারীর সঙ্গে—তখনই আপনি নিজের স...