গাধা, কুমির আর কাকের গল্প
গ্রীষ্মের একদিন, নদীটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। নদীর মাঝখানে কাদায় আটকে ছিল এক কুমির। হাঁফাতে হাঁফাতে সে চেষ্টা করছিল বাঁচতে, কিন্তু কিছুতেই বের হতে পারছিল না।
নদীর ধারে ঘাস খাচ্ছিল একটি গাধা। হঠাৎ সে দেখতে পেল কুমিরটি কাদায় ছটফটাচ্ছে। মায়ায় পড়ে গাধা এগিয়ে গেল।
কুমির কাতর গলায় বলল, "দয়া করো, আমাকে বাঁচাও! আমি মরে যাচ্ছি!"
গাধার মন নরম হলো। সে একটি বড় শুকনো ডাল এনে কুমিরের দিকে বাড়িয়ে দিল। কুমির সেটি ধরে ধীরে ধীরে নিজেকে টেনে মাটির শক্ত জায়গায় তুলল।
কিন্তু মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুমিরের চোখে ঝলসে উঠল লোভ। সে সুযোগ বুঝে গাধার দিকে লাফিয়ে পড়ল, তাকে ধরে খাবার জন্য!
আতঙ্কে গাধা দৌড়াতে লাগল, কিন্তু কুমিরের শক্ত চোয়াল থেকে ছুটে পালানো কঠিন ছিল।
ঠিক তখনই কাছের গাছ থেকে উড়ে এল একটি কাক। কাকটি চিৎকার করে বলল, "তুমি কি ভুলে গেলে — যে তোমাকে বাঁচালো, তার প্রতি এভাবে প্রতিদান দিতে নেই?"
কুমির একটু থমকালো। সেই ফাঁকে কাক গাধার কানে ফিসফিস করে বলল, "ঝাঁকি দাও, আর দৌড়াও! আমি বিভ্রান্ত করি!"
কাক দ্রুত কুমিরের চোখের সামনে পাখা নাচিয়ে উড়তে লাগল। গাধা জোরে ঝাঁকি মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল এবং ছুটে অনেক দূরে নিরাপদে গিয়ে দাঁড়াল।
সেখানে দাঁড়িয়ে গাধা চিৎকার করে বলল, "জীবন দিয়ে তুমি লোভ দেখালে! এখন একা পড়ে থাকো তোমার কাদার মধ্যে!"
কুমির হতাশ হয়ে নদীর পাশে পড়ে রইল। আর গাধা আর কাক মিলে দূরের সবুজ বন ধরে এগিয়ে গেল নতুন জীবনের পথে।
গল্পের শিক্ষা:
"বিপদ বা অসহায়তা দেখলেই চট করে সাহায্য করতে নেই। আগে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। সবকিছু বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সত্যিকারের বুদ্ধিমানের কাজ।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন