একদিন মহানবী (সাঃ) হাসিমুখে বসে ছিলেন। হঠাৎ তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন এবং হাতের দুটি আঙ্গুল দিয়ে একটা রিং বানিয়ে বললেন- ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীরে এই পরিমাণ একটা গর্ত তৈরী হয়েছে। হয়ত এটার মানে এরকম যে, তাদের আসার দিন ঘনিয়ে এসেছে। ১৪০০ বছর আগেই যদি এই অবস্থা হয়, এখন তাহলে কি অবস্থা ?
কেয়ামতের বড় আলামতের একটি হলো পৃথিবীতে ইয়াজুজ মাজুজের আগমন।
এখন প্রশ্ন আসে এই ইয়াজুজ মাজুজ কারা ও তারা কখন পৃথিবীতে আসবে? ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায় এখন কোথায় আছে? তাদের ধ্বংস হবে কিভাবে?
ইয়াজুজ মাজুজ হলো আদম (আঃ) এর বংশধর। তারা কিয়ামতের আগে ঈসা (আঃ) এর সময় পৃথিবীতে আগমন করবে।
তারা লুকায়িত আছে একটা লোহার প্রাচীরের মধ্যে। কিন্তু কিভাবে তারা এই প্রাচীরের মধ্যে আটকা পড়লো?
তাদের কে আটকে রেখেছিল যুল কারনাইন এবং কিয়ামতের আগে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তারা মুক্তি পাবে।
যুল কারনাইন ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ কঠোর রাজা। তিনি ঘোড়ায় চড়ে পৃথিবী ঘুরে বেড়াতেন এবং যেখানেই অন্যায় দেখতেন তার বিচার করতেন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসতেন।
আল্লাহ যেভাবে যে আইন দিয়েছিলেন তার সময়ে, তিনি কঠোরভাবে তা প্রণয়ন করতেন।
তার নিয়ম ছিল এইটা- “যে ভাল কাজ করবে, আমি তাকে বিশাল পুরস্কার দিব। যে খারাপ কাজ করবে, দূর্নীতি করবে, আমি তাকে শাস্তি দিব। আমি তো দিবই এই পৃথিবীতে, আর শেষ বিচারের জন্য আল্লাহ তো আছেনই। তিনি ছিলেন ভালোর ভালো, মন্দের যম!"
এভাবে তিনি ঘুরতে ঘুরতে দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌছালেন এবং সেখানে তিনি এমন এক জাতির সন্ধান পেলেন যারা তাঁর ভাষা ভালভাবে বুঝতে পারছিলেন না। অতঃপর তিনি খুব দ্রুত তাদের ভাষা রপ্ত করলেন।
তারা বললেন, "হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। ”
যুল-কারনাইন উত্তর দিলেন- ”তোমাদের টাকার আমার কোন দরকার নাই, আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা যেকোন সম্পদের চেয়ে উত্তম। আমি তোমাদের সাহায্য করব। যদি তোমরা তোমাদের জনবল দিয়ে আমাকে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে একটা নিশ্ছিদ্র প্রাচীর তৈরী করে দিব।"
[ সূরা কাহাফ ]
আমাকে লোহা এনে দাও !! হাজার হাজার টন লোহা আনা হল। তিনি দুই পাহাড়ের মধ্যে সেই লোহা রাখলেন। লোহা দিয়ে প্রথমে একটা ফাপা দেয়াল বানালেন, দুটি পর্বতের মধ্যে লোহার দেয়াল, তাতে এমন আগুন দেওয়া হল যে লোহা গলে গেল।
অতঃপর গলিত তামা কে তিনি ঢেলে দিলেন গলিত লোহার সাথে। তৈরী হল রদ’মা। নিশ্ছিদ্র এক নিরাপত্তা বেষ্টনী। পৃথিবীর বুক থেকে হাজার হাজার বছর ধরে একটি পাশবিক জাতিকে সরিয়ে রাখার জন্যে।
এভাবে পৃথিবীর বুকে এখন তারা একটি রহস্য হয়ে রয়ে আছে। অনেক নাস্তিকেরা মানতে নারাজ বিস্ময়ের এই যুগে যখন মানুষ অতল সমুদ্রে চলে গেছে তখন এমন জায়গা থাকা কি করে সম্ভব যা মানুষের অজানা। ইয়াজুজ মাজুজ এমন কোন প্রাচীরের লুকায়িত থাকলে অবশ্যই তা এতোদিনে বিজ্ঞানিরা বের করে ফেলার কথা। (না'যুবিল্লাহ)
কিন্তু যেই সৃষ্টি কর্তা এই বিশ্ব মন্ডল তৈরী করেছেন, তার পক্ষে কি এটা খুব কঠিন কাজ যে তিনি কিছু লুকিয়ে রাখতে পারবেন না? নিশ্চয় না।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, “এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।”
[ সূরা কাহাফ ]
অর্থাৎ ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে তারা একদিন বেরিয়ে আসবে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এতো পোক্ত প্রাচীর ভেদ করে তারা কিভাবে বের হয়ে আসবেন?
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রাচীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী করীম (সাঃ) বলেন, অতঃপর প্রতিদিন তারা প্রাচীর ছেদন কার্যে লিপ্ত হয়। ছিদ্র করতে করতে যখন পুরোটা উন্মোচনের উপক্রম হয়, তখনই তাদের একজন বলে, আজ তো অনেক করলাম, চল! বাকীটা আগামীকাল করব! পরদিন আল্লাহ্ পাক সেই প্রাচীরকে পূর্বের থেকেও শক্ত ও মজবুত রূপে পূর্ণ করে দেন। ফলে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারে না।
অতঃপর যখন সেই কাক্ষিত সময় আসবে এবং আল্লাহ্ পাক তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেবেন, তখন তাদের মধ্যে একজন বলে উঠবে, আজ চল! বাকিটা ইন শা আল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ্ যদি চাহেন তো আগামীকাল পূর্ণ খোদাই করে ফেলব! এবং পরদিন এসে দেখবে প্রাচীর আগের অবস্থায় আছে ফলে তারা পূর্ণ খোদাই করে, প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবেন।
[ তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম ]
ইয়াজুজ মাজুজ বের হয়ে আসার পর কি ঘটবে?
সেদিন তারা ফিলিস্তিনে এসে Tiberias Lake থেকে পানি খাওয়া শুরু করবে। সামনে যেখানে পানি পাবে খাওয়া শুরু করবে। এমনকি তাদের প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষদলটি এসে দেখবে কোন পানি নেই এবং তারা বলবে ‘হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল এবং তাতে পানি ছিল’।
তারা পৃথিবীর সবকিছু খেয়ে ফেলবে। খাবারের এমন অভাব হবে যে এক টুকরা মাংস মানুষের কাছে এক ব্যাগ স্বর্ণমুদ্রা থেকে বেশি দামি মনে হবে।
এদের মূল অস্ত্র হচ্ছে নিজেদের মধ্যে একতা। বর্তমান দুনিয়ার ব্যাপারে এদের বিন্দুমাত্র কোন ধারনা নেই।
এরা সংখ্যায় হবে অগনিত। হত্যা, ডাকাতি, দুর্নীতি, অরাজকতা, অন্যায়, ধর্ষন যা ইচ্ছা তাই করবে। এদের মূল লক্ষ্য একটাই, তা হল পৃথিবীকে দখল করে নেওয়া।
মাত্র দুইবার পৃথিবীতে স্রোতের মতন মানুষ বের হবে। একবার বের হবে যখন ইয়াজুজ মাজুজ ছাড়া পাবে, আর একদিন বের হবে যেদিন ইসরাফীল (আঃ) তার শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফূ দিবেন।
তারা মানুষ মারবে। তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না। এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,”দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের শেষ করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব।” তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন।
আর তখন ওরা ভাববে, যে সত্যিই তারা আকাশের সবাইকে মেরে ফেলেছে। এই সব দেখে যারা দুর্বল বা নড়বড়ে ঈমানের মানুষ তাদের ঈমান থাকবে না। তারা ইয়াজুজ মাজুজকে খোদা মেনে নিবে। (না'যুবিল্লাহ)
একই সময় ঈসা (আঃ) ও দুনিয়াতে থাকবেন এবং তিনি তাদের থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। তারপর আল্লাহর নির্দেশে ঈমানদার লোকদের নিয়ে ঈসা (আঃ) জেরুজালেম এ লুকাবেন।
অতঃপর আল্লাহ এক প্রকার কীট পাঠাবেন যেগুলো ইয়াজুজ মাজুজ দের আক্রমন করবে। এক রকম মহামারী শুরু হবে। সব ইয়াজুজ মাজুজ মারা যাবে। পুরা পৃথিবী ভরে যাবে পচা গলা দেহ দিয়ে। ঈসা (আঃ) আবার দু’আ করবেন। আল্লাহ এবার পাখি পাঠাবেন। বিশাল বড় বড় পাখি। তারা দেহগুলো নিয়ে নাহবাল নামক স্থানে পানিতে ফেলে দেবে। আল্লাহ এইবার বৃষ্টি পাঠাবেন। বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে দিবেন পৃথিবী।
মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে।
[ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ]
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইয়াজুজ মাজুজ সহ সকল ফিতনা থেকে ঈমান রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। [ আল্লাহুম্মা আমীন ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন