ঘটনা ১) ভাতিজার বিয়েতে দায়িত্ব পড়েছে মুদি সদাই করার।বাবুর্চির লিস্ট অনুযায়ী শুধু টেস্টিং সল্ট ছাড়া বাজার করে আনলাম।সেকি ঝগড়া বাবুর্চির।পরে ভাই আরেকজনকে দিয়ে বাজার থেকে আনিয়ে দিল।
ঘটনা ২) মাওজির কুলখানি।সেখানেও দায়িত্ব পড়লো বাজার সদাই করার।টেস্টিং সল্ট বাদ দিয়ে সব আনলাম।এবার আর বাবুর্চি কিছু বলে না কিন্তু রান্নার সময় টেবিলের উপর দেখি ৪ পেকেট টেস্টিং সল্ট।কে এনে দিছে জানিনা।
ঘটনা ৩)প্রত্যন্ত গ্রাম,শিক্ষার হার নিন্ম,আমাদের চান্দিনার ফার্মের পাশে ছোট্ট মুদি দোকান।ঘুড়ির লেজের মত ঝুলে আছে টেস্টিং সল্টের পেকেট।জিজ্ঞেস করলাম,কারা নেয়? বললো,গ্রামের সব বাড়িতেই তো ব্যবহার করে।কেন? খানা মজা হয় এজন্য।
ফুচকা,চটপটি,হালিমওয়ালা,গাছতলা,ছালাদিয়া,ফুটপাত,৩ তারা,৫ তারা,চাইনিজ,বাংলা,থাই,হোটেল,রেস্টুরেন্ট সবাই দেদারসে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করছে।এ পর্যন্ত এই "স্নায়ুবিষ" এর বিরুদ্ধে কোন আইন নেই দেশে।এর ক্ষতিকর দিকগুলো দেখুন...
"চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা টেস্টিং সল্টকে স্নায়ুবিষ বলে আখ্যায়িত করেছেন।বিশেষজ্ঞরা জানান,টেস্টিং সল্ট মস্তিস্ককে উদ্দীপ্ত করে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে মনে হয়, খাবারটি খুবই সুস্বাদু। ওই খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে। শিশুরা পছন্দ করে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর টেস্টিং সল্টমিশ্রিত খাবার সরবরাহ নিষিদ্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক সমকালকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক বছর আগে স্নায়বিক অসুস্থতার লক্ষণযুক্ত নতুন রোগের কথা জানায়, যার নাম দেওয়া হয় 'চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম'। টেস্টিং সল্ট মানবদেহে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিষিয়ে তোলে। ফলে স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ঘুম কম হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে স্বাভাবিক খাবার অরুচিকর লাগে। কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
অধ্যাপক ফারুক আরও বলেন, টেস্টিং সল্টকে বিজ্ঞানীরা উদ্দীপক বিষ নামে অভিহিত করেছেন। নিয়মিত টেস্টিং সল্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, হরমোন নিঃসরণে গোলযোগ, মনোবৈকল্য, শিশুদের ক্ষেত্রে লেখাপড়ায় কম মনোযোগ. অতিরিক্ত ছটফটানি ভাব, হাঠ7ৎ ক্ষেপে যাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অ্যাজমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা টেস্টিং সল্ট খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া এটি মস্তিস্কে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বের কয়েকটি দেশে টেস্টিং সল্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।"
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সমকাল