ছাদবাগানে পেঁপে চাষ পদ্ধতি
---------------------------------------
পেঁপে গাছ লম্বা হয়। এটি লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট লম্বা হয়ে থাকে। কম-বেশি সারা বছর ফল হয়। এর কাঁচা ফল দেখতে সবুজ, পাকলে হলুদ বা পীত বর্ণের হয়। ফলটি কাঁচা-পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
সারা বছর এ ফল চাষ করা গেলেও উত্তম সময় হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। জমি কিংবা বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গায় লাগানো যেতে পারে গাছটি।
আমাদের দেশে এর অনেক জাত রয়েছে। জাতগুলো হলো: ব্লুস্টেম, কাশিমপুরী, যশোরী, রাচি, নউন ইউ, হানি ডিউ, ছোট পেঁপে, শাহি পেঁপে ও সংকর জাত। এর যে কোনো একটি জাত বেছে নিয়ে চাষ করতে পারেন। পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী। তবে এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর সূর্যের আলো। তাই চাষের জমি হতে হবে জলাবদ্ধতামুক্ত ও সেচ সুবিধাযুক্ত।
চারা রোপণের সময়: কার্তিক থেকে ফাল্গুন অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। আর চারা রোপণের সময় চৈত্র থেকে বৈশাখ অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিল উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও এর চারা রোপণ করা যায়। যদিও উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দোআঁশ মাটি চাষের জন্য ভালো। তবে পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়।
চারা তৈরি: এর বীজগুলো সংগ্রহ করে প্রায় এক ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এরপর একদিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। একদিন হয়ে গেলে পানি ফেলে বীজগুলো ছাই মেখে দুই ভাগ মাটি ও এক ভাগ শুকনো গোবর মিশিয়ে মাটিতে বীজগুলো বুনতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বীজগুলো যাতে মাটির বেশি নিচে না যায়। এরপর খড় অথবা ধানের কুঁড়া দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। এর ওপরে পানির ঝরনা দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর চারা বের হওয়া শুরু করবে। এ সময় ঢেকে দেওয়া খড় অথবা কুঁড়া সরিয়ে দিতে হবে। শীতের সময় চারা বের হতে সময় লাগে বেশি। তবে পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রোগবালাই দমন ও সাবধানতা
চারা-ধসা রোগ
আক্রান্ত চারার গোড়ার চারদিকে এক ধরনের দাগ দেখা যায়। শিকড় পচে যায়, চারা নেতিয়ে পড়ে, গাছ মারা যায়। স্যাঁতসেঁতে মাটি ও মাটির উপরিভাগ শক্ত হলে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। রোগটি মাটিবাহিত বিধায় মাটি, আক্রান্ত চারা ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্ত চারা বীজতলা থেকে অপসারণ করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই পেঁপে খাবেন না বা বিক্রি করবেন না। এ রোগ ঠেকাতে চারা রোপণের আগে ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বীজ শোধন করে নিতে হবে। রৌদ্রযুক্ত উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরি করে নিলে ভালো হয়।
গোড়ায় পচা রোগ
গোড়ায় পচা রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা হলুদ হতে থাকে। চারার গোড়া ও শিকড় পচে যায়। চারা নেতিয়ে পড়ে গাছ মারা যায়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ অপসারণ করতে হবে। এ রোগ ঠেকাতে কৃষি অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাকনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে গোড়ার মাটিসহ ভিজিয়ে দিতে হবে। তবে সাবধান, আক্রান্ত গাছের বীজ সংগ্রহ করা যাবে না।
ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ
এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে পাতা কুঁচকে যায়। ফল ধরার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। এ রোগ দেখা দিলে ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। ভাইরাসমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করতে হবে। জাব পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
পাতা কুঁচকানো রোগ
এক ধরনের ভাইরাসের কারণে পাতা কুঁচকানো রোগ দেখা দেয়। এ রোগ হলে গাছে কুঁচকানো ও কোঁকড়ানো পাতা দেখা দেয়। এতে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। এক সময় বাগানে এ গাছ জঙ্গল হিসেবে পরিগণিত হয়। এক্ষেত্রে বাগান থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাই ভালো। প্রথম অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব কৃষি অধিদফতরের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ দিতে হবে।
মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা
এ ধরনের পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে নেয়; ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। পোকার আক্রমণে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মতো দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়াও দেখা যায়। এতে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় ও ডাল মরে যায়। এতে ফল ধরার সম্ভাবনা তো থাকেই না, বরং পুরো গাছ মরেও যেতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটির ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ওপরে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে, যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম বা বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে পানিতে কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঢলে পড়া রোগ
যে কোনো বয়সের গাছে এ রোগ হতে পারে। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে হলদে ও পরে বাদামি রঙ ধারণ করে। গাছের শাখা-প্রশাখা আগা থেকে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত গাছটি সম্পূর্ণ মরে যায়। বাগান থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা উচিত। আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে জিপসাম অথবা চুন দিতে হবে। বাগানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
সুটি মোল্ড রোগ
এ রোগের আক্রমণে পাতা, ফল ও কাণ্ডে কালো ময়লা জমে। মিলিবাগের আক্রমণ এ রোগের কারণ। মিলিবাগ দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করতে হবে। গাছের গোড়ায় পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মিলিবাগ পোকা দূর করতে হবে। সুটি মোল্ড রোগের আক্রমণ খুব বেশি হলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
সাবধানতা
আগাম বীজ বপন করা উত্তম। সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। রোগমুক্ত জাত যেমন- বারি জাত বেছে নিয়ে রোপণ করতে হবে।
পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহ
চারা রোপণের পর ঠিকমতো পরিচর্যা না করলে গাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া সঠিক পরিচর্যায় পাওয়া যায় উন্নত মানের ফল।
![]() |