এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অতীত ফেইসবুক গল্প পেইজ

 পাঁচ বছর পর তার সাথে আমার আজকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা।দুজনের মুখেই হাসি, উনার মুখে অপরাধীর আর আমার মুখে ব্যথা লুকানোর হাসি। নিজের স্ত্রীকে নিয়ে দাওয়াতে এসেছেন। কোলে একটা বাচ্চা মেয়েও আছে দেখছি। কাকতালীয় ভাবে দেখা। পাঁচ বছর পরেও আমার অনূভুতি গুলো কেমন আগের মতই আছে। বুঝতে পারছি না, কথা বলা উচিৎ নাকি নয়,বললেই কীভাবে কথা বলবো, কথা বলতে চাচ্ছি কিন্তু ঠোঁট নাড়িয়ে বলতে পারছি না।এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।গলা যেনো শুকিয়ে কাঠ,পানি খেয়েও তৃষ্ণা মিটছে না।জ্বর ,সর্দি হলে যেমন হয়,ঠিক তেমন আমার গলার দশা।এর মধ্যেই উনার পাশে থাকা মহিলাটি বলে উঠলো


-"আরে আপনি সেই? গতকাল এসেছি থেকে ঝুমুর মুখে আপনার প্রশংসা শুনছি। আসলেই আপনার পছন্দ একদম আপনার মতোই সুন্দর।"


কেউ কারুর প্রশংসা করলে, উত্তরে কী বলতে হয় তা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।তাই বোকার মতো কেমন হাসলাম। হেঁসেই খুব অনাকাঙ্ক্ষিত এক প্রশ্ন করলাম,,

উনার কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটির হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম,


-"আপনার মেয়ে বুঝি?"


-"জ্বী আমার মেয়ে।আর উনি আমার বর।"


বাচ্চা মেয়েটার হাত ধরে পূনরায় জিজ্ঞেস করলাম,


-"নাম কী মেয়ের?"

 

মেয়ের মা টুক করে জবাবে বললেন ,

 

-"হুমাইরা ইয়াসমিন ইফতি।"


আমি চমকালাম,এই নাম নিয়ে আমরা একটা সময় কত গল্প করেছি। জানেন আমাদের একটা মেয়ে হবে। টুকটুকে লাল, আপনার নামের সাথে নাম মিলিয়ে তার নাম রাখবো হুমাইরা ইয়াসমিন ইফতি।


আজকে সত্যি সত্যি উনার একটা লাল টুকটুকে মেয়ে হয়েছে। নাম টাও ঠিক সেটাই হয়েছে। কিন্তু মেয়ের মায়ের জায়গায় আমি নই অন্য কেউ। নিঃসন্দেহে ইফতির মা অনেক সুখী মানুষ।যেখানে এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে মেয়ের নাম ঠিক করলাম আমি, কল্পনায় লাল টুকটুকে মেয়ে চাইলাম,আর উনাকে যতটা চেয়েছি তা আর কী বলবো,,

চাওয়ার পরিমাপ বোঝার জন্য হলেও একটা মেশিন আবিষ্কার করা উচিৎ ছিলো,যাতে কে কাকে কতটা সত্যি কারেই চায় তা বোঝা যেতো। কোন ফেইক মানুষের সাথে,জীবন জড়িয়ে যেতো না, হয়তো তখন কারুর।আর যাদের আমরা তীব্র ভাবে চাই তারাও হয়তো এই পরিমাপ যন্ত্রের সাহায্যে চাওয়ার পরিমাণ দেখতে পেরে আমাদের ছেড়ে যেতে বা ধোঁকা দিতে একটু হলেও কলিজা কাঁপত বোধহয়।


আমার সামনে দাঁড়ানো মহিলাটি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী। যাকে হাজার বার চেয়েও আমি পেলাম না।আর উনি তা কী সহজ স্বাভাবিক ভাবে পেয়ে গেলেন। এটাকে আমি আমার দূর্ভাগ্য বলবো নাকি কর্মের ফল? বুঝতে পারছি না।


 আমার কী বুকে ব্যথা হচ্ছে নাকি। চোখের পানি বিদ্রোহ করছে বোধহয় কোপল বেয়ে গড়ানোর জন্য। আমি এসবের কিছু বুঝতে পারছি না। শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ রাজ্যের রানী আমি। পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ছে।এই রাজ্যে সুখ ছাড়া কিছুই নেই।ব্যথা কি এই রাজ্যের মানুষ জানে না। আমি সুয়ে আছি একটা হীরের পালঙ্কে।


আমার কল্পনা বেশ কাজে দিলো, দুঃখ রা সব পালালো। আমি এখন আছি ফূর্তিতে। আমার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির সামনে আমাকে জীবন দিয়ে হলেও সুখী থাকতে হবে।কান্না করার অনেক সময় পাবো। আজকের এই মুহূর্তের কান্না আমার জীবনের কলঙ্কের মতো।তাই ইফতির মাকে হাসি হাসি মুখে বললাম,


-"বাহ, অসাধারণ নাম মেয়ের।তা কে রেখেছেন এই নাম?"


-"ওর বাবাই,এই নাম না রাখলেই নাকি নয়।ইফতি যখন পেটে, তখন ওর বাবাই কী বলেছে জানেন?ছেলে হলে নাম রাখার দায়িত্ব আমার,আর মেয়ে হলে উনার।মেয়ে হলেই যে উনিই রাখবেন তা নয়, মেয়ে যদি টুকটুকে সুন্দরী হয় তাহলে উনি রাখবেন আর না হলে আমি যা খুশি রাখবো।মেয়ে হওয়ার আগে অনেক বার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিন্তু উনি আমাকে নামটা অবধি বলেননি।নামটা নাকি অনেক দামী,তাই বলা যাবে না। সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করছি, তিনি আমাকে  টুকটুকে মেয়েই ভিক্ষে দিয়েছেন।"


উনার স্ত্রী বেশ সরল নয়তো এই ঘটনা টুকু উনার খুব সুখের। নয়তো এইভাবে অপরিচিত কাউকে এসব বলবেন কেন। উনার স্ত্রী যখন এসব কথা বলছেন,উনি কেমন অস্থতিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দেখলাম।


আমিও আবার হাসি  মুখে বললাম,


-"নামের সাথে আপনার মেয়ের চেহারার অনেক মিল মাশআল্লাহ। আল্লাহ আপনার মেয়েকে নেক হায়াত দান করুন।"


উনি উনার স্ত্রী কে নিয়ে একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলেন। আমি জানি এখানে আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না।দ্রুত বাসায় যেতে হবে। এখানে বিয়েতে ইনভাইট করেছে আমাকে।যার বিয়ে সে আমার পূর্ব পরিচিত নয়, গতকাল বিকালেই সদরে দেখা গয়নার দোকানে। আমি গিয়েছিলাম একটা আংটি আনতে।তখন যার বিয়ে মানে ঝুমুর উপস্থিত সেই দোকানে। আমার আংটিটি দেখে বললো,


-"আরে বাহ্ আপনার পছন্দ তো চমৎকার! আমাকেও কিছু পছন্দ করে দিন তো।"


পরে জানতে পারলাম উনার বিয়ের গয়না, কেনাকাটা শেষে আমাকে খুব করে যেতে বললো। ফোন নাম্বার নিয়ে গেলো। কিছু কিছু মানুষের আতিথেয়তা না করার মতো উপায় থাকে না।তাই বাধ্য হয়েই আজকে আসা। কিন্তু এত বছর পর উনার সাথে আমার দেখা হবে তা আমি মনের ভুলেও ভাবিনি।শুধু উনিই নয়, উনার স্ত্রী, সন্তান। অতীতের করা ভুল গুলো আমাদের ভবিষ্যতে গিয়ে দুঃখ নামের সারপ্রাইজ হিসাবে সামনে এসে চমকে দেয়।


আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিয়ের কনেকে পরে কল করে কিছু একটা বলে দিবো।দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। আজকে আমি অনেক আয়োজন করে কাঁদবো।কজন কাঁদতে পারে,কত মানুষ কাঁদতে চেয়েও পায় না, চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তাদের।আর আমার চোখে এখনও সাগর সমান পানি।দ্রুত হাঁটছি। রাস্তায় গিয়ে গাড়ি নিতে হবে। অনেক টা পথ সরু কাঁচা মাটির রাস্তা। এখানে গাড়ি আসে না।


-"এখনো অনেক ঘৃণা করো আমাকে?"


আমি চমকে পিছন ফিরে চাইলাম। উনি আমার পিছনে। কথার জবাব না দিয়ে হাঁটছি।


-"আমি সত্যিই প্রচণ্ড ভালোবেসেছিলাম তোমাকে!তা না হলে তোমার দেওয়া নামটাই মেয়ের নাম রাখতে এত পাগলামী করতাম না।"


এইবার আমার মুভিতে খল নায়ক যেমন হাসি দেয় নয়তো হুট করেই কেউ পাগল হয়ে গেলে যেমন হাসি দেয়,ঠিক তেমন গগন বিধারি , আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হো হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেভাবে হাসলাম না। বেশি হয়ে যাবে। স্বাভাবিক ভাবেই মৃদু হেসে বললাম,


-"আপনি ঠিক আগের মতোই আছেন।কথার ধরন দেখে মনে হবে সত্যি সত্যিই ভালোবাসতেন। আপনি আগের মতো থাকলেও আমি আগের মতো নেই,যে আপনার কথা বিশ্বাস করে, হাউমাউ করে কেঁদে বলবো, আমাকে বিয়ে করুন।সতীনের ঘর করতে আমি রাজি। আপনার স্টাটাসের সাথে না মিললেও আমি কারুর এঁটো জিনিসে হাত দেই না।আর ভালোবাসেননি আমি কখন বলেছি? আমি আগেও বলিনি এই কথা আর এখনো বলছিনা।ভালোবাসেন ভয়ংকর ভালোবাসেন,ঠিক সিনেমার মতো। সিনেমাতে যেমন দেখায়,নায়ক নায়িকার ভালোবাসা। কিন্তু সেই ভালোবাসাটুকু শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ বাস্তব জীবনে নয়। সেরকম আপনার ভালোবাসা অভিনয়ে সীমাবদ্ধ ছিলো বাস্তবে নয়। আমার মন নিয়ে খেলেছেন মাত্র। আপনার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। আপনি আমার জন্য এক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মানুষ।তাই পিছন পিছন এসে কথা বলবেন না দয়া করে। আমি কথা বলতে চাইনা।"


-"তুমি সেদিনের রাগের বশে বলা কথা গুলো এখনো ধরে আছো। একটা বার আমার রাগের কারণ খোঁজার চেষ্টা করোনি।সেসব কথা বাদ দাও।আমি তোমার সাথে একদিন কথা বলতে চাই।"


-"কী কথা বলবেন? আপনি আমাকে মিথ্যা মোহে বেঁধেছিলেন তার গল্প?নাকি আপনার বিবাহিত জীবন কতটা সুখে কাটছে তার গল্প?


-"প্লীজ অনু আমি তোমাকে মিথ্যে মোহে বাঁধিনী কখনো। তোমার চলে যাওয়ার একাকিত্ব আমি মানতে পারিনি।"


-"তাই বুঝি বিয়ে করে, একাকিত্ব মিটিয়েছেন?তা বেশ! ভালো করেছেন, আমার সাথে আপনার আর কী কথা?


-"বিয়ে করে নাও অনু!সুখে থাকবে।"


-"বিয়ে করবো না কখন বলেছি? অবশ্যই বিয়ে করবো।"


উনি কেমন চুপ করে গেলেন কথা খুঁজে পাচ্ছেন না হয়তো।তাই আমি আগ বাড়িয়ে বললাম।


-"আপনি চিন্তা করবেন না। আপনাকে আমি না ঘৃণায় রেখেছি আর না ভালোবাসায়। আপনার সাথে কখনো প্রেম ছিলো আমার, আমি সেটাই ভুলে গেছি। নিজেকে অপরাধী ভাববেন না।সব সময় হাসিখুশিতে থাকবেন।হাসি খুশিতেই আপনাকে মানায়। আপনি এখন ফিরে যান।"


-"আমাকে পারলে মাফ করে দিও অনু। তোমাকে ভালোবাসতে কোথাও না কোথাও হয়তো ভুল ছিলো আমার। তোমাকে হয়তো তোমার মতো করে ভালোবাসতে পারিনি।তাই হারিয়েছি। আমি দোয়া করি, তোমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে, তোমাকে তোমার মতো করেই ভালোবাসুক। তুমি তার ভালোবাসায় সব সময় ভালো থেকো।"


-"মনে আছে আপনার? আপনাকে  বলেছিলাম, আমার মা নেই, বাবা নেই, আমার কোন পরিবার নেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো অসংখ্য কারণ নেই। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ আপনি। আপনাকে ছাড়া যেহেতু বেঁচে থাকতে শিখেছি, তাহলে অবশ্যই ভালো থাকবো।তার জন্য আমার কারুর ভালোবাসার প্রয়োজন হবে না।আপনি আর আমার পেছনে হাঁটবেন না।"


উনি থেমে গিয়েছিলেন সেদিন, হয়তো কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পাননি।


আমি একটু মৃদু হেসে হাঁটতে লাগলাম,আর অল্প একটু পথ পেরুলেই পাকা রাস্তা। পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে।এই সামান্য ইচ্ছে পূরণ করতে কোটি টাকা লাগবে না কিংবা কোন আয়োজন করতে হবে না। পিছন ফিরলেই ইচ্ছে পূরণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি পিছন ফিরে চাইলাম না। পিছনে আছে আমার আবেগী বয়সের মায়া। বর্তমানে একজন নারীর ভালোবাসা আর একজন মেয়ের আর্দশ পিতা। সুখী পরিবারের প্রধান কর্তা। আমি চিরদুখী। আমি চাইনা আমার দুঃখ চোখের নজর উনার জীবনে পড়ুক।


পুনশ্চঃ সেই ঘটনার ছয় বছর পর আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে।চিঠিটি লিখেছে ইফতির মা।চিঠিটা ছিলো এমন।


প্রিয় অনু

তোমার দুঃখময় জীবনের সূচনা আমি। তারপরেও আমার জীবনে তার কোন প্রভাব ফেলোনি তুমি। তুমি চাইলে এক ইশারায় ইফতির বাবাইকে তোমার জীবনে নিয়ে নিতে পারতে। কিন্তু তুমি তা করোনি। আমি তোমার পরিচয় জানার পর থেকেই খুব অপরাধ বোধে ভুগী। আমার জন্য না তুমি সুখী হতে পারলে না ইফতির বাবাই আর না আমি।ইফতির বাবাইকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু প্রচণ্ড ভালোবাসি। উনাকে ছাড়া একটা নিঃশ্বাস নেওয়ার কথাও আমি ভাবতে পারি না। ছেড়ে থাকবো কীভাবে।উনার ভালোবাসাকেও কম মনে হয়,সব ভালোবাসা যেনো তোমার জন্য তুলে রাখা, যেটুকু পাই তা উনার দায়িত্ব আর তোমার দেওয়া করুণা মনে হয়।ইফতির বাবাইও সুখী নয়, তোমার একাকিত্বময় জীবনের জন্য নিজেকে দায়ি মনে করেন। তুমি অনেক সুখী হয়ে তোমার অভিশাপ থেকে আমাদের নাম দুটি কেটে দিও প্লীজ!


ইতি 

তোমার করুণার পাত্রী।


আমি চিঠিটা পড়া শেষে। সম্পূর্ণ বেখেয়ালে বলে ফেললাম,ভালো থাকুন অন্য কারুর ভালোবাসায়। দুঃখ নামের ছায়া না পড়ুক আপনার জীবনে। আমিও নাহয় ভালো থাকবো ফাইলে চোখ বুলানোর তাড়ায়।


#ফেইসবুক থেকে কপিকরা

#ভালো থাকুন অন্য কারুর ভালোবাসায়

#লিখনীতে কপি পেস্ট করা

কোন মন্তব্য নেই:

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...