এক মুঠো কাঁচের চুরি
পর্ব_১৬
লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মাঝরাতে থেকে পেটের অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে তানহা।দাঁতের ওপরে দাঁত চেপে সকাল হবার অপেক্ষা করছে'।সময়ের সাথে পেটের ব্যথা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।একবার এই কাত হচ্ছে,তো' আরেকবার ওই কাত।এপাশ-ওপাশ করতে করতে ফজরে'র আজান দিয়ে দিল।তানহা দেওয়ালের সাথে নিজের হাত বারি মারলো'।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,আর আল্লার কাছে ধৈর্য চাচ্ছে।
তানহা'র ছটফটানি দেখে আজানের একটু আগে জাগা পেয়ে যায় ইফাদ।তানহা'র কি' হয়েছে।তা' বোঝার চেষ্টা করছে।মেয়েটা এমন কেনো?কি' সমস্যা হচ্ছে আমাকে ডেকে বলতে পারলো না'।তখন-ই ইফাদের মাথায় আসলো।আজান হয়ে গেছে।তানহা এখনো নামাজ পড়তে উঠলো না।ইফাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না।আল্লাহ তায়ালা তানহা'কে সাময়িক সময়ের জন্য ছুটি দিয়েছে।ইফাদ তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো'।
পেটের ওপরে গরম কিছু অনুভব করতে-ই চোখ মেলে তাকালো তানহা।ইফাদ'কে দেখে একটু অবাক হলো'।তার থেকে বেশি অবাক হলো'।ইফাদ তার পাশে শুইয়ে ছিল।উঠে গেলো কি' করে?
--আপনি কখন উঠলেন।
--যখন বউ ডেকে তুলে না।তখন নিজেকেই উঠতে হয়।
তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকালো।
--তোমার সমস্যা হচ্ছে,আমাকে ডেকে দিলেই তো' পারতে।এভাবে কষ্ট করছো কেনো?
--আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।তাই আপনাকে বিরক্ত করি নাই।আমার সহ্য করার অভ্যাস আছে।
--কেমন আছে দেখতেই পাচ্ছি।কেমন গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছো।
--গরম পানি পেটে ধরে রাখো একটু হলে-ও আরাম পাবে।আমি নামাজ পড়ে আসি।বলেই ইফাদ চলে গেলো'।ইফাদের ব্যবহার দেখে তানহা খুব খুশি হলো'।ইফাদ তানহার দিকে নজর দিয়েছে।তার খেয়াল রাখছে।তার কষ্টটা অনুভব করেছে।ভেবেই মনে প্রশান্তি বইয়ে গেলো।ইফাদ অজু করে এসে বাসায় নামাজ পড়ে নিল।
--আপনি আজকে মসজিদে গেলেন না।
--তোমার ব্যথার ঔষধ নেই।
--না।
--আমাকে বলো নাই কেনো?
--আপনি মনে হয় ছিলেন।আসছেন তো' কয়দিন হলো।
--আচ্ছা আমি সকালে কিনে এনে দিব।একটু বসো আমি আসছি।বলেই ইফাদ চলে গেলো'।তানহা কপালে হাত দিয়ে দু-চোখ বন্ধ করে নিল'।বেশ কিছুক্ষণ পরে হাতে একটা বাটি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো ইফাদ।বাটিটা বিছানায় রেখে তানহাকে বলল।
--তানহা উঠে বসো তো'।
--উঠতে ভালো লাগছে না।একটু পরে উঠে রান্না করবো।এত সকালে তো' আপনারা খান না।
--আমি তোমাকে রান্না করতে বলছি।আমি রেগে যাওয়া'র আগে উঠে বসো'।
ইফাদের কথা শুনে তানহা চোখ মেলে তাকালো'।ইফাদ তানহাকে তুলে আধশোয়া করে বসালো।তানহার পিঠের নিচে বালিশ রেখে দিল।তানহা বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো।ইফাদ কি করতে চাইছে।তা' বোঝার চেষ্টা করছে।খাবারের গন্ধ পেয়ে তানহা নিজের ডান পাশে ডাকলো।ধোঁয়া ওঠা গরম নুডুলসের বাটির দিকে তাকিয়ে আছে।অবাক হয়ে বলল।
--কে রান্না করেছে?
--আমি রান্না করেছি।কথা কম বলো চুপচাপ খাও।
--আমি খাব না।আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
--এই সময় এমন একটু হবেই।খালি পেটে একদম থাকা যাবে না।সব সময় পেট ভরা রাখবে।তাহলে ব্যথা কম করবে।খালি পেট পেলেই ব্যথা করবে।চুপচাপ খাও কথা কম।বলেই ইফাদ তানহাকে খাইয়ে দিল।ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও খেয়ে নিল তানহা।ইফাদ তানহাকে খাইয়ে দিয়ে।আবার ঘুমোতে বলল।
--এখন ঘুমালে রান্না করবো কখন?
--এখনো অনেক সময় আছে।পরে রান্না করবে।
--সত্যি একটু ব্যথা কমেছে।
--আমি কি নিজের ভালোর জন্য খেতে বললাম।তোমার ভালোর জন্যই বলেছি।কথা না বলে,দু-চোখ বন্ধ করো।একটু ঘুমিয়ে নাও।শান্তিতে থাকতে পারবে।ইফাদ তানহা'কে শুইয়ে দিয়ে।গায়ে কম্বল টেনে দিল।তারপরে তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।এক পর্যায়ে তানহা ঘুমিয়ে যায়।
রোকেয়া বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে রান্না ঘরে তানহা'র কাছে আসছিল।রান্না ঘরে এসে অবাক হয়ে গেলো।
--ইফাদ তুই এত সকালে রান্না ঘরে কি করছিস।
--আম্মু আমি একটা নতুন রেসিপি শিখেছি।সারাদিন বাসায় থাকতে পারি না।আজকে ছুটির দিন।তাই ভাবলাম আজকে তোমাদের রান্না করে খাওয়াই।
রোকেয়া বেগম সন্দেহের দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকালেন।ছেলে কি সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলছে।তিনি মুহূর্তেই বুঝে ফেললেন।ইফাদের একটা অভ্যাস আছে।ইফাদ মিথ্যা কথা বলতে পারে না।প্রয়োজনে যদি দুই একটা বলে-ও থাকে।তাহলে চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারে না।মিথ্যা বলার সময় ইফাদের দৃষ্টি সব সময় নত থাকে।
--মায়ের কাছে মিথ্যা কথা বলছিস।
ইফাদ অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো।
--আম্মু আসলে তানহা অসুস্থ।তাই ভাবলাম আমি আজকের রান্নাটা করি।তুমি যদি তানহা'কে ভুল বুঝো।আজকালর সবাই না কিছু কিছু শাশুড়ী আছে।স্বামী যদি বউদের কোনো কাজ করে দেই।তখন শাশুড়ীরা বউদের অনেক কথা শুনায়।তুমি যদি তানহাকে ভুল বুঝো।তাই মিথ্যা কথা বলেছি।আম্মু তানহা তো' প্রতিদিন রান্না করে।তানহা-ও তো' একটা মানুষ তানহা'র-ও শরীর আছে।মানুষের মাত্রই শরীর খারাপ হতে পারে।এখন তার কাজ যদি অন্য কেউ করে দেয়,তাহলে সমস্যা কোথায়।
--আমাকে তুই এতটা খারাপ ভাবিস ইফাদ।আমাকে তোর এতটা খারাপ মা মনে হয়।তুই যখন ছিলি না।তখন তানহা অসুস্থ থাকলে আমি নিজেই রান্না করেছি।চৈতালি সাহায্য করেছে।আমি এতটা খারাপ মানুষ নই রে ইফাদ।এতিম মেয়েটার ওপরে অত্যাচার করবো।
ইফাদ নিজের মায়ের ব্যবহারে মুগ্ধ হলো।পৃথিবীতে সব মানুষ খারাপ হয় না।ভালো মানুষ আছে বলেই পৃথিবী এখানো টিকে আছে।
--আমি খুব গর্বিত জানো আম্মু।আমি তোমার মতো মা পেয়েছি।তুৃমি আর তানহা আমাকে রান্না করে খাইয়েছো।আজকে আমি তোমাদের রান্না করে খাওয়াবো।
--রান্না করতে পারবি তো'।হাত পুড়িয়ে ফেলিস না আবার।না পারলে আমাকে বল।আমি রান্না করে দিচ্ছি।
--লাগবে না তোমার বয়স হয়েছে।এখন তুমি বসে বসে খাবে।যখন দেখবে তানহা অসুস্থ তখন চৈতালি রান্না করবে।আর চৈতালি না পারলে তুমি করবে।চৈতালি বড় হয়েছে।এখন ওকে বাসার কাজ শিখতে হবে।
--বড় হতেই পারলাম না।বাড়ির বোঝা হয়ে গেলাম।বলল চৈতালি।
--দু'টো থাপ্পড় বসিয়ে দিব।বড়দের মুখে মুখে কথা বলিস।সবাই মা-ভাই ভাবি না।তুই কাজ করবি না।তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে।মেয়ে হয়েছিস।একদিন পরের ঘরে যেতে হবে।তোকে দু’কথা শোনালে আমাদের বুকে এসে আঘাত লাগবে।তাই তোকে এমন ভাবে তৈরি করতে চাই।যেনো লোকে তোকে দু’কথা শোনানোর রাস্তা খুঁজে না পায়।তুই পারিস শুধু কথার মানে না বুঝে ভুল বুঝতে।
--রাগ করছো কেনো ভাইয়া।আমি মজা করলাম।আমি জানি তোমরা আমার ভালো চাও।তবু্ও এমন কথা বললে,আমার মন খারাপ হয়ে যায়।আমি এখনই বিয়ে করবো না।আমি আগে চাকরি করবো।নিজের পায়ে দাঁড়াবো।তারপরে বিয়ে করবো।আমি অন্যের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে হতে চাই না।
--তুই চাকরি করবি।আমাদের কোনো আপত্তি নেই।নিজেকে সংযত রেখে যা করার করবি।তোর যতদূর ইচ্ছে তুই পড়াশোনা করবি।তোকে কেউ বিয়ের জন্য চাপ দিতে পারবে না।আমি যতদিন আছি।তুই নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস।
--আমি ভালো ছেলে পেলে চৈতালিকে বিয়ে দিয়ে দিব।
--দেখছো ভাইয়া আম্মু কি বলে।
--আম্মু চৈতালির মাথার মধ্যে এসব দিবে না।পড়াশোনা করছে।আপাতত পড়াশোনায় মন দিক।বিয়ের সময় আসলে,তখন দেখা যাবে।
তিনজন বসে বসে জমিয়ে আড্ডা দিল।ইফাদ রান্না শেষ করে সবাইকে খেতে দিল।নিজেও খেয়ে নিল।বাসার সামনের দোকান থেকে ব্যথার ঔষধ কিনে নিয়ে আসলো।ঘড়িতে দশটা বাজতে যায়।তানহা এখনো ঘুমাচ্ছে।ইফাদের কথা মতো কেউ তানহাকে ডাকে নাই।চৈতালি আজকে বাসায়।মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ করছে।বিশটা এতিম বাচ্চাকে খাওয়াবেন রোকেয়া বেগম।ইফাদ কালকেই মাদ্রাসায় বলে আসছিলো।তারা বিকেলে আসবে বলেছে।ইফাদ সকালে গিয়ে বাজার করে নিয়ে এসেছে।
তানহা ছোট ছোট করে দু-চোখ মেলে তাকালো।ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
--আমি এত ঘুমালাম কি করে।সকালের রান্না হয়েছে কি' না।সবাই কি' খেয়েছে।তার শাশুড়ীর সকালে ঔষধ খেতে হয়।তানহা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।তখনই ইফাদ খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
--আমার ম্যাডামের ঘুম ভেঙেছে তাহলে।
--এত বেলা হয়ে গেছে।আপনি আমাকে ডাকেন নাই কেনো?সবাই কি' না খেয়ে আছেন।আম্মার সকালে ঔষধ খেতে হয়।আম্মা কি রাগ করেছে।
--আমার আম্মুকে তোমার এতটা খারাপ মনে হয়।
--এমা ছিঃ না একদম না।ওনার তো' বয়স হয়েছে।ওনার-ও তো ইচ্ছে করে এখন বসে বসে খাবে।ছেলের বউ হয়েছে।ছেলের বউ যেনো মেয়ের মতো আচরণ করে।প্রতিটা শাশুড়ী_ই এমনটা চায়।আমার জন্য উনি কষ্ট পাক তা' আমি চাই না।
--দেখো মেয়ের কথা।তুমি আমাকে মা' ভাবতে পারলে।আমি কেনো তোমাকে মেয়ে ভাবতে পারবো না।তুমি অসুস্থ জেনে-ও তোমাকে দিয়ে অমানুষের মতো কাজ করাবো।
--আম্মা সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান।আমি আপনার মতো শাশুড়ী পেয়েছি।
--আমি'ও অনেক ভাগ্যবান তোমার মতো মেয়ে পেয়েছি।আজকে বাসায় অনেক মানুষ আসবে।সব সময় মাথায় কাপড় দিয়ে রেখো আচ্ছা মা।খেয়ে রান্না ঘরে আসো।হাতে হাতে সাহায্য করবে।আজকের রান্না আমি করবো।তুমি অসুস্থ ভারি কাজ করাবো না।
--আচ্ছা আম্মা।রোকেয়া বেগম চলে গেলেন।তানহা ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো।
--তানহা খেয়ে নাও।না খেয়ে রুমের বাহিরে এক-পা রাখবে না।
--আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
--পিঠে মার পড়লেই খেতে ইচ্ছে করবে।
--আমি কি' ছোট বাচ্চা আমাকে মারবেন।
--তুমি কি' ছোট বাচ্চা তোমাকে খাওয়ার জন্য এত করে বলতে হবে।
--পারলে খাইয়ে দিন।না হলে খাব না।
--বললেই পারতে আমার হাতে খাবে।এত ঢং করার কি ছিল।
--বললেই পারতেন আমাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য বসে আসেন।এত নাটক করার কি আছে।
তানহার কথা শুনে ইফাদ হেসে দিল।তারপরে তানহাকে খাইয়ে দিয়ে,ঔষধ খাইয়ে দিল।দু'জন মিলে রান্না ঘরের দিকে গেলো।চৈতালি মায়ের কাজে সাহায্য করছে।ইফাদ আর তানহা তাদের সাথে যোগ দিল।
--চৈতালি ডালটা দেখিস মা।আমি রুম থেকে আসি।
--আম্মা আমি দেখছি।বলল তানহা।রোকেয়া বেগম রুমে চলে গেলো।
--এই ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছো কেনো?ভদ্রলোকের মতো পেঁয়াজ ছিলো।আমাকে আবার চাল ধুইতে হবে।
--তোমাকে চাল ধুইতে হবে না।আমি ধুইয়ে দিব।
--তানহা আমি চাল ধুইয়ে দেই।বলল ইফাদ।
--আপনি ছেলে মানুষ আপনার মেয়েদের কাজ করতে হবে না।
--তুমি অসুস্থ তোমাকে-ও ভারি কাজ করতে হবে না।এই সময়ে ভারি কাজ করতে হয় না।
ইফাদের কথা শুনে চৈতালি মুচকি মুচকি হাসছে।তানহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।ইফাদ বলল।
--আমি চাল ধুইয়ে দেই।
--ধুইয়ে দিবেন দেন।
--আজকে যদি আমার একটা বর থাকতো।তাহলে আমাকে এভাবে কাজে সাহায্য করতো।
ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি লজ্জা পেয়ে জিভে কামড় দিয়ে।মাথা নিচু করে ফেললো।রোকেয়া বেগম এসে তানহাকে সরিয়ে দিল।তানহা চৈতালিকে সাহায্য করছে।ইফাদ মাকে সাহায্য করতে।সবাই মিলেমিশে কাজ করছে।রোকেয়া বেগমের মনে হচ্ছে পৃথিবীতে তার পরিবার সবচেয়ে সুখী পরিবার।আল্লাহ যেনো সারাজীবন তার পরিবারকে এমন হাসিখুশি রাখে।কোনো দুঃখ তার পরিবারকে ছুঁইতে না পারে।ভেবেই অস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।আদৌ কি তার পরিবার সুখী থাকবে।নাকি কোনো কালো অধ্যায় এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যাবে।
চলবে.....,,,,,,
,,,,,,,
.........
কপি
পেস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন