#থার্টি_ফার্স্ট_নাইট #রম্য_গল্প😃
কলমে #রেহানা_পুতুল
বছরের শেষরাইত আজকে।বহুত বিতিকিচ্ছিরি কইরা কুলসুম বিবিকে বিছানায় আনলাম। নইলে নাতিপুতি,বউ,পোলা,সংসার সামলিয়ে প্রতিদিন সে ঘুমাইতে আসে রাইত বারোটার পরে। মানে একদিন শেষ কইরা আরেকদিনের শুরুতে। আমি দরজা বন্ধ করতে গেলেই কুলসুম বিবি হালকা ঝাঁঝে চেঁচিয়ে উঠে কইলো,
এই আফনের হইছে কি? দুয়ারে সিটকিনি দ্যান ক্যা?
আমি নরম গলায় কইলাম,
আইজ তোমার একদিন কি আমার শ্যাষদিন বউ।
চড়ুই পাখির আণ্ডার মতন সে তার আণ্ডামার্কা চোখের সাইজকে আরো বৃহৎ করে কইলো,
আজিব তো! কি হইছে?
আমি শুরু করলাম আমার দুঃখের বয়ান। দেখো খোকার মা, বিয়ের পর থেইকা আইজ অবধি তোমারে কাছে পাইতে আমার যুদ্ধ করা লাগছে। আমি যদি কোন ফেমাস ব্যক্তি হইতাম। এইটা নিয়া কাগজে কলমে লিখালিখি হইতো। তোমারেও সাংবাদিকের তোপের মুখে পড়তে হইতো। নানান প্রশ্নের উত্তর না দিয়া সারতানা তুমি।
কুলসুম বিবি গোলগোল চোখে আমার দিকে চাইয়া কইলো,
কি জিগাইতো হেরা আমারে? ফাউল কনকর।
কি জিগাইতো? তারা জিলাপির মতন পেঁচায়া পেঁচায়া ধরতো তোমারে? কইতো,
আপনার কি অপছন্দের বিয়ে উনার সাথে?
আপনি স্বইচ্ছায় কখনো উনাকে টাচ করতে দেননা কেন?
আপনি আলাদা বিছানায় ঘুমান কেন? এতে আপনার গুনাহ হচ্ছে জানেন না?
অন্তরঙ্গ রিলেশনে এত অনীহা কেন আপনার দিক হতে? নাকি মানসিক দূরত্ব ও রয়েছে আপনার পক্ষ হতে?
উনি সবসময় ভিলেনের মতো জোর করে আপনার থেকে ভালোবাসা আদায় করতে হয় কেন?
সমস্যাটা আসলে কার? আপনার উনার স্পর্শ ভালোলাগে না? নাকি উনি যুবক বয়সের মতো অতিরিক্ত রোমাঞ্চ করতে চায় আপনার সঙ্গে? কোনটা?
থামেন কইলাম, বলে মৃদু ধমক দিলো হেতি আমারে। আমি কইলাম থামাথামির কাম নাই আইজ। আমি এখন তোমার সাংবাদিক। জবাব চাই। না দিলে রক্ষা নাই।
আইচ্ছা খোকার মা, এই আন্ধার রাইতের আসমানরে সাক্ষী কইরা কওতো,
আমি কি জোর কইরা সাদি করছি তোমারে?
কুলসুম বিবি চুপ মাইরা আছে। মুখে কোন বুলি ফুটে না। তখন অভিমানে, জিদ্দে, আমার বুক ভাইঙা আসে। আমি কইতে লাগলাম ,
তুমি নানান অজুহাতে বিয়ার চল্লিশ বছর পার কইরা দিলা। সাদির পর কইতা,
আমি বালিকা। নরম গাল আমার।আপনের শলার মত দাঁড়ি আমার গালে লাগলে ব্যথা পাই। গাল লাল হয়।সকালে সবাই নানান কথা কয়।আমার শরম লাগে।
👉#রাইটার #রেহানা_পুতুল পেইজে আপনার পছন্দের সব গল্প পেতে প্লিজ ফলো ও লাইক দিয়ে রাখুন।🙏
এই ভুয়া ছুতোয় পাঁচ বছর খাইলা। সবার বালিকা বয়েস শেষ হয় উনিশে। আর তোমার শেষ হইছে তেইশে।
মাইনা নিলাম।কারণ তোমার কচি অঙ্গখানি বুকে চাইপা ধরলেও বেশ আরাম পাইতাম। মনে হইতো হাজীর বিরিয়ানি আর কুমিল্লার রসমলাই খাইতাছি।
তারপর শুরু করলা,
বাচ্চাদের নিয়া রাইত জাগি।ওদের যত্ন নিতে নিতে আমি ক্লান্ত। দয়া কইরা দূরে থাকেন।
মাইনা নিলাম। কারণ সন্তানদের এতটুকু অযত্ন হউক তা আমিও চাইনাই। তাদের ভালোথাকাটাই আমার ভালো থাকা। এইভাবে আরো কয়েক বছর পার হইলো।
তারা যখন আলাদা শোয়ার মত বড় হইলো।তখন দুজনেই রুমের দরজা খোলা রাখতাম। কারণ তারা যদি রাত জাইগা ভয় পায়।তারা ঘুমালে তোমারে ধরতে গেলে বলতে,
ওরা এসে পড়বে। এতবছর পর আর কিসের চুমাচুমি,জড়াজড়ি? দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাইবার সুযোগও দাওনি।
আমার যৌবনকাল বৃথা যাওয়ার জন্য তুমিই দায়ী। তবুও মাইনা নিলাম।
তোমার গলার স্বর তো নয়।যেন মাইক। ধরতে গেলেই চিল্লাইয়া উঠতে। তখন তারা এসো বলত,
কি হইছে আম্মু?আব্বু ঝগড়া করে তোমার সাথে?
তোমার নিরবতায় তারা বুঝে নিতো তাই। এভাবেই নানাভাবেই আমাকে বাঁশ দিয়ে আসছো। নিরবে মাইনা নিতাম। কারণ আমি শান্ত আর শান্তিপ্রিয় মানুষ।
তারপর তারা বড় হওয়ার পর বলতে,
আপনি এত্ত বেশরম ক্যান?বিয়ের এত বছর হইছে,তবুও বউকে ধরতে চান।বদস্বভাব বদলান। কি ভাববে তারা?
হুহ।চুপ থাকতাম ছেলেমেয়ে শুনবে বলে।এরপর তাদের বিয়ে হলো। তখন বলতে,
আমার শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এসব পিরিত এখন আর ভালো লাগেনা। ছেলে বউ এখন রঙ ঢঙ করবো। সেইখানে আপনে এমন করা মানায়? আক্কেল থাকা লাগে।
মাইনা নিলাম সম্মানের দিকে তাকাইয়া।
তারপর শুরু হইলো তোমার আরও শত বাহানা। নাতি হইছে। খেয়াল রাখা লাগে। আর আলাদা ঘুমাইতে এই ছুতায়,
আপনে ঘুমাইলে এত জোরে নাক ডাকেন,মনে হয় গ্রামে আমাদের উত্তর পুকুরপাড়ে কেউ করাত দিয়া বাঁশ কাটতাছে।
তোমার নানা বাহানার জাঁতাকলে আমার জীবনের রঙ্গরসের অনুভূতিগুলার কোরবানি হইছে। আইজ মানামানি নাই। একবছর গত হইলো মানে আমার মরনের সময় ঘনায়া আসছে। আমাদের খানদানে সব পুরুষ বউদের আগে মইরা যায়। বেশী আয়ু পায়না।
আইজ তোমার মাক্ষনের মতন গালে চুমা খামুই বলে, কুলসুম বিবিরে ঝাপটাইয়া ধরলাম। মূহুর্তেই হেতি ছোবল মারা সাপের মত ফোঁসফোঁস করতে করতে,
আআআ...এইটা মাইনষের হাত না লোহা?ছাড়েন কইলাম।
নাতি নাতনিরা দৌড়ে আইসা দরজা ধাক্কা দিতে লাগল। আমি খুইলা দিলাম। তারা চোখ বড় বড় করে জানতে চাইলো,
দাদু কি হইছে? দিদা এমন চিল্লালো কেন?
কুলসুম বিবি চুপ হয়ে আছে। ছেলের বউ এসে ও জানতে চাইলো,
বাবা কোন সমস্যা?
আমি লজ্জায় মরে গেলাম। নিজের বউর দিকে কড়মড় কইরা চাইয়া,
মনে মনে কইলাম,
বছরের শেষ রাইতেও একটু সুখ পাইতে দিলানা। জীবন আমার প্যাড়াময়। বিরহময়।
খানিকবাদে দেখি একি খোদার কুদরতি। কুলসুম বিবি আমার বুকের সাথে ল্যাপ্টাইয়া আছে। তাকে জড়াইয়া ধইরা কইলাম,
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার নিদিষ্ট কোন সময় নাই।বয়স নাই। শরম নাই।
সে তারাবাত্তির লাহান একখান ঝলক মারা হাসি দিলো। আমি মনে মনে কইলাম,
যাক এই মাঝবয়সে আইসা কুলসুম বিবি বুঝল কিছু। আমার বিরহ জীবনের অবসান ঘটিলো বুঝি।
সঙ্গীর সঙ্গে চলতে জাইনলে, তার আবেগময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দিলে, সকল মাইনষের জীবনটা আসলেই বহুত আনন্দময় ও বহুত শান্তিময় হবে।
সবাইকে #হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৪🙋♀️💚🥀
কপি পেস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন