জন্মদিনে স্মরণঃ আ বু ল খা য়ে র
অভিনেতা হিসেবে তিনি ছিলেন কিংবদন্তীতুল্য। দর্শকের কাছে তাঁর সফল পরিচিতি একজন অভিনেতা হিসেবে।
তিনি চলচ্চিত্র ও নাটকপ্রেমীদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আবুল খায়ের।
বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ'- এও ছিলেন অন্যতম অভিনেতা। জহির রায়হানের 'কাচের দেয়াল', 'সঙ্গম'-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে এফডিসির মহাপরিচালক বানিয়েছিলেন। ঋত্বিক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম' থেকে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর 'শিমুল পারুল' সব ছবিতেই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি।
'দহন' চলচ্চিত্রে তাঁর অসামান্য অভিনয় যে কেউ প্রশংসা করতে বাধ্য, এই ছবিতেই পান প্রথম জাতীয় পুরস্কার। এরপর একে একে 'রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত', 'অন্য জীবন', 'দুখাই' দিয়ে মোট চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
রাজ্জাকের 'জিনের বাদশা'য় করেছিলেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়। 'দীপু নাম্বার টু'-তে ছিলেন স্কুল শিক্ষক, বিখ্যাত ছবি 'পদ্মা নদীর মাঝি'তে হয়েছিলেন পীতম মাঝি। মূলধারার বেশকিছু ছবিতেই উনাকে দেখা গিয়েছিল।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ছিল তাঁর অপূর্ব রসায়ন। আগে থেকেই ছিলেন সফল অভিনেতা; তবে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বিশেষ করে নব্বই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তিনি এই কাজগুলোর জন্যই বেশি স্মরনীয়।
এই জুটির সূচনাটা হয়েছিল 'এইসব দিনরাত্রি'র মধ্য দিয়ে। একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে, যিনি সুখী নীলগঞ্জ করার প্রচেষ্টায় ছিলেন। অনেক বাধা বিঘ্ন এসেছে তবে সেটা কাটিয়ে গড়ে তুলতে ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
এর ঠিক পরের ধারাবাহিক 'বহুব্রীহি'তে পেলেন পুরো ভিন্ন চরিত্র। গ্রাম থেকে আসা এক দাদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। 'অয়োময়'তে চিকিৎসক, তবে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন 'কোথাও কেউ নেই'- তে বাকের ভাইয়ের বিপক্ষে উকিলের চরিত্রে অভিনয় করে। যার কুবুদ্ধিতে বদি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়।
'নক্ষত্রের রাত'-এ অত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র না পেলেও 'আজ রবিবার'-এ ছিলেন বাড়ির প্রধান কর্তা হিসেবে, তিতলী- কঙ্কার দাদার চরিত্রে।
একক নাটকের মধ্যে 'জননী', 'মাটির পিঞ্জিরার মাঝে', 'নিমফুল', 'অচিনবৃক্ষ' রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন- এও ছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। এর বাইরে 'শেকড়' নাটকটাও বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
'আমি এখন ঔষধ বানামু কি দিয়া'- নতুন শতকের শুরুর দিকে ঔষধি গাছের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জন সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বানানো হয়েছিল, এতে তিনি কবিরাজের চরিত্রে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হন।
আমাদের শৈশবের এই বিজ্ঞাপন এখনো অনেকে মনে রেখেছে। এর কিছুদিন পরেই তিনি মারা যান, বিটিভিতে এরপরেও বেশ কিছু বছর বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হয়েছিল।
আবুল খায়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালক এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (২০ জানুয়ারি ১৯৭২-২১ আগষ্ট ১৯৭২) দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৭১-এর ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ধারণ এবং প্রচারের সাথে যারা জড়িত ছিলেন অভিনেতা আবুল খায়ের ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ৭২ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল খায়ের (এ কে এম মহিবুর রহমান) ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (৪ এপ্রিল) ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন