এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গৌড় মালদহের ভুলে যেতে বসা এক ইতিহাস... 

 গৌড় মালদহের ভুলে যেতে বসা এক ইতিহাস... 


গৌড় বাংলার এককালীন রাজধানী এবং অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি নগর যার অবস্থান বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এটি লক্ষণাবতী বা লখনৌতি নামেও পরিচিত। প্রাচীন এই দুর্গনগরীর অধিকাংশ পড়েছে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ জেলায় এবং কিছু অংশ পড়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। শহরটির অবস্থান ছিল গঙ্গানদীর পূর্ব পাড়ে, রাজমহল থেকে ৪০ কিমি ভাটিতে এবং মালদার ১২ কিমি দক্ষিণে। তবে গঙ্গা নদীর বর্তমান প্রবাহ গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে অনেক দূরে।

পাণিনির ব্যাকরণে, কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে বাৎসায়নের কামসূত্রে গৌড়পুর বা গৌড়ের নাম পাওয়া যায়। বাৎস্যায়নের কামসূত্র-এ গৌড়ের সমৃদ্ধির কথা বিশেষভাবে জানা যায়। এই গ্রন্থমতে বঙ্গ থেকে দক্ষিণ কলিঙ্গ পর্যন্ত গৌড়ের বিস্তার ছিল। হর্ষবর্ধনের অনুশাসনলিপি থেকে জানা যায়, মৌখরীর রাজা ঈশান বর্মণ গৌড়বাসীকে পরাজিত করে সমুদ্র পর্যন্ত বিতারিত করেন। এই লিপি অনুসারে ধারণা করা যায়, গৌড় সুমুদ্রের নিকটবর্তী এলাকায় ছিল। রাষ্ট্রকূট-রাজ প্রথম অমোঘবর্ষের অনুশাসনলিপিতে মুর্শিদাবাদকে এর একটি অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এই অনুশাসনে এক বলা হয়েছে 'গৌড়-বিষয়'। সম্ভবত এই 'গৌড়-বিষয়' থেকে গৌড়দেশ নামটি সৃষ্টি হয়েছিল। বরাহমিহির তাঁর বৃহৎ-সংহিতা গ্রন্থে গৌড়কে পুণ্ডবর্ধন, সমতট, তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পৃথক এলাকা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।


ইতিহাস:-


শক্তিসঙ্গমতন্ত্র মতে গৌড়ের অনুসারে গৌড় ছিল বিস্তীর্ণ জনপদ। কুর্ম ও লিঙ্গপুরাণ মতে, সূর্যবংশীয় শ্রাবস্তী পুত্র বংশক গৌড়দেশে শ্রাবস্তী নগরী তৈরি করেন। বর্তমানে এই প্রাচীন নগরী অযোধ্যা প্রদেশের অন্তর্গত। স্কন্দপুরাণে  সারস্বত, কনোজ, উৎকল, মিথিলা ও গৌড় অঞ্চলের বসবাসকারী ব্রাহ্মণদেরকে বলা হয়েছে পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণ। এর ভিতরে মিথিলা ও বঙ্গের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ছিল গৌড়। বাণভট্টের শ্রীহর্ষচরিতে পাওয়া যায়, রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধনের সময় গৌড়ে নরেন্দ্রগুপ্ত নামক একজন রাজা ছিলেন।


আধুনিক ঐতিহাসকদের মতে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা স্কন্ধগুপ্ত (৪৫৫-৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ)-এর মৃত্যুর পর পরবর্তী অযোগ্য শাসকরা রাজত্ব করেন। এই সময় গুপ্তরাজ বংশের উত্তরাধিকারদের মধ্যে আত্মকলহের সুযোগে সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে একাধিক রাজবংশের উত্থান ঘটে। হুনরা গান্ধার, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে মালব পর্যন্ত দখল করে। এর পাশাপাশি দক্ষিণে বলভীর  মৈত্রবংশ, থানেশ্বররের পুষ্যভূতি বংশ, কনৌজের মৌখরীবংশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে দুটি শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এই রাজ্য দুটি হলো- স্বাধীন বঙ্গরাজ্য ও স্বাধীন গৌড়রাজ্য।


৫২৫ থেকে ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বঙ্গরাজ্য প্রবল দাপটে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই সময় পৃথক রাজশক্তি হিসেবে গৌড় ততটা শক্তিশালী ছিল না। এরপর চালুক্য-রাজ কীর্তিবর্মণ-এর আক্রমণে বঙ্গরাজ্য হীনবল হয়ে পড়ে। কিন্তু গৌড় শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয় এবং বঙ্গরাজ্যের একটি অংশ গৌড়রাজ্য দখল করে। এই সময় উত্তর ভারতের রাজা মৌখরী গৌড়রাজ্য বারবার আক্রমণ করতে থাকে।  মৌখরী রাজ বংশের ঈশান বর্মণ গৌড় রাজাকে পরাজিত করে, তাঁর রাজ্য থেকে বিতারিত করেন। একই সময় চালুক্য রাজারাও গৌড় আক্রমণ করা শুরু করে। ফলে অচিরেই গৌড়রাজ্য ক্ষীণবল হয়ে পড়ে।


গৌড়রাজ্যের এই হীনাবস্থার ভিতরে শশাঙ্কের গৌড়ের রাজা হন। সম্ভবত তিনি মগধ ও গৌড়ের অধিপতি মহাসেনের অধীনে মহাসামন্ত হিসেবে কিছুদিন রাজ্য শাসন করেন। তিনি উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের গুপ্তবংশীয় শাসকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গুপ্তশাসকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে গৌড়কে মুক্ত করে একটি স্বাধীন রাজ্যের পত্তন ঘটিয়েছিলেন। গঞ্জামের তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, শশাঙ্ক ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল কর্ণসুবর্ণ। ধারণা করা হয়— পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় রাজবাড়িডাঙ্গা'র (রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের প্রত্নস্থল অথবা আধুনিক রাঙ্গামাটি) সন্নিকটে চিরুটি রেলস্টেশনের কাছে কর্ণসুবর্ণ ছিল।


শশাঙ্কের মৃত্যুর পর কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মন কর্ণসুবর্ণকে নিজের রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর শশাঙ্কের মানবদেব নামক এক পুত্র রাজ্য পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর জয়নাগ নামক জনৈক সামন্ত গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। তিনি  ভাস্করবর্মনের অধিকারভুক্ত থেকে কর্ণসুবর্ণকে মুক্ত করেন। এই রাজা নিজের নামে মুদ্রা প্রচলন করেছিলেন। তবে জয়নাগ সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানা যায় না।


সেন শাসনামলে লক্ষ্ম‌ণাবতী বা লখনৌতি উন্নতি লাভ করে।লক্ষনাবতী নগরের নামকরণ করা হয়েছে সেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের নামানুসারে। সেন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের আগে গৌড় অঞ্চলটি পাল সাম্রাজ্যের অধীনের ছিল এবং সম্ভবত রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল এর প্রশাসনিক কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ শহর থেকে দশ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় ও পাণ্ডুয়া (প্রাচীন নাম গৌড়নগর ও পাণ্ডুনগর )। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ যুগে পাল বংশের রাজাদের সময় থেকে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে (৬০৫ বঙ্গাব্দে) মুসলমান শাসকেরা গৌড় অধিকার করবার পরেও গৌড়েই বাংলার রাজধানী থেকে যায়। ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ (৭৫৭ বঙ্গাব্দ) থেকে রাজধানী কিছুদিনের জন্য পাণ্ডুয়ায় স্থানান্তরিত হলেও ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে (৮৬০ বঙ্গাব্দে) আবার রাজধানী ফিরে আসে গৌড়ে, এবং গৌড়ের নামকরণ হয় জান্নাতাবাদ।

অনুমান করা হয় ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে এটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মধ্যে বিজয়নগর (বিজয় সেনের এর প্রতিষ্ঠিত নগর) ও গৌড় সবথেকে নগরায়িত বলে সুপরিচিত ছিল।


বড় সোনা মসজিদ বা বারো দুয়ারী:-


গৌড়ের স্থাপত্য কীর্তিগুলির মধ্যে এটি সবথেকে বড়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এটির নির্মাণ কার্য্য শুরু করলেও তিনি এ কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তার পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন (নুসরাত শাহ) ১৫২৬ সালে এই কাজ সম্পন্ন করেন। এর উচ্চতা ২০ ফুট, দৈর্ঘ্য ১৬৮ ফুট ও প্রস্থ ৭৬ ফুট।


দাখিল দরওয়াজা:-


এটি গৌড় দুর্গে প্রবেশের প্রধান দ্বার। এটি ৬০ ফুট উঁচু ও ৭৩ ফুট চওড়া এই দরওয়াজাটি ছোট ছোট ইট ও পাথর দিয়ে তৈরী করেছিলেন সম্ভবতঃ সুলতান রুকনউদ্দীন (বারবক শাহ)। ভিতরের পথটি বেশ চওড়া, তাই সওয়ারী সহ হাতি অনায়াসে এই দরওয়াজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারতো। এই দরজার দুপাশ থেকে তোপধ্বনি করে সুলতান ও ঊর্ধ্বতন রাজপুরুষদের সম্মান প্রদর্শন করা হত। তাই এই দরওয়াজার আর এক নাম সেলামী দরওয়াজা।


লোটন মসজিদ:-


কোতোয়ালি দরওয়াজা থেকে ১ কিমি উত্তরে রয়েছে এই লোটন মসজিদ। এখানে ইঁটের উপর রংবেরঙের মীনার কারুকার্য ছিল, বর্তমানে যার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে খুব ভাল করে দেখলে বোঝা যায় এর সামান্য অস্তিত্ব । ছাদের গম্বুজের নিচের দিককার সৌন্দর্য অপূর্ব।


লুকোচুরি দরওয়াজা:-


১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে (১০৬২ বঙ্গাব্দে) বাংলার সুবেদার শাহ সুজা গৌড় দুর্গে প্রবেশ করবার জন্য এই লুকোচুরি দরওয়াজাটি তৈরি করেন। উচ্চতা ৬৫ ফুট ও চওড়া ৪২ ফুট। দুইদিকে প্রহরীদের ঘর ও ওপরে নহবতখানা আছে।


কদম রসুল মসজিদ:-


লুকোচুরি ফটক বা দরোয়াজা দিয়ে গৌড় দুর্গে ঢোকার পর ডানদিকে রয়েছে কদমরসুল সৌধ। এখানে রয়েছে হজরত মুহাম্মদের পদচিহ্ন, যেটা সুদূর আরব থেকে পীর শাহ জালাল ইয়েমেনী এনেছিলেন পাণ্ডুয়ার বড় দরগায়, সেখান থেকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এটিকে নিয়ে আসেন গৌড় দুর্গে। তার পুত্র সুলতান নসরত শাহ ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে (৯৩৭ বঙ্গাব্দে) একটি কষ্ঠি পাথরের বেদির ওপর পদচিহ্নটি স্থাপন করে তার ওপর কদম রসুল সৌধ নির্মাণ করেন।


চিকামসজিদ :-


এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই স্থাপত্যটি ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে (৮৫৭ বঙ্গাব্দে) তৈরি। পূর্বে এটি সম্ভবত সমাধিস্থল ছিল। তবে কথিত আছে যে সম্রাট হুসেন শাহ এটিকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন। স্থাপত্যটির ভিতরের দেয়ালে অনেক হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে। পরবর্তী কালে এখানে চামচিকার উপদ্রব শুরু হলে এর নাম হয় চামকান মসজিদ বা চিকা(চামচিকা থেকে) মসজিদ।


বিশেষ অনুরোধ :

সংগৃহীত তথ্যে কোনো ভুল থাকলে দয়া করে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন। এই পোস্টটি করার উদ্দ্যেশ্য অতীত ইতিহাস কে জানার চেষ্টা ও তার স্বল্প পরিসরে বিস্তার, যদি কারো কে কিছু সংযোজন করতে হয় ইনবক্স বা কমেন্ট এ আহ্বান জানাই।

কোন মন্তব্য নেই:

সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে।

 সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে। ক্লিওপেট্রা ....মিশ...