এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

লেক নেট্রন, উত্তর তানজানিয়া, আফ্রিকা::-- যেন সাক্ষাৎ যমপুরী। সরাসরি মৃত্যু নেই, কিন্তু মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর এক শাস্তি আছে। 

 লেক নেট্রন, উত্তর তানজানিয়া, আফ্রিকা::--


যেন সাক্ষাৎ যমপুরী। সরাসরি মৃত্যু নেই, কিন্তু মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর এক শাস্তি আছে। অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো, সুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর। তানজানিয়ার উত্তরে আরুষা অঞ্চলের এই হ্রদটি এখনও এক বিভীষিকা,রহস্যময়। 


এই হ্রদের কাছে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন হ্রদের ধারে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে পাথরের পশুপাখির মূর্তি। দেখে মনে হবে কোনও ভাস্করের নিখুঁত ভাস্কর্য পুরো হ্রদটির চারপাশে ছড়িয়ে আছে। কোনও খামতি নেই সযত্নে তৈরি করা হয়েছে বাদুড়, মাছরাঙা, রাজহাঁস, ঈগলের মতো অনেক নাম না জানা প্রাণীর মূর্তি। অবশ্য মূর্তি বলা ভুল হবে তা যেন জীবন্ত জীবাশ্ম। তবে আবার মমিও বলা যায়।


আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর তানজানিয়ার বিপজ্জনক লবণ হ্রদ পৃথিবীর সবচেয়ে কস্টিক অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি যা প্রাণীদের পাথরে পরিণত করে। হ্যাঁ এটাই বাস্তব। নেট্রন লেকের অত্যন্ত প্রতিফলিত এবং রাসায়নিকভাবে ঘন জলগুলি একটি কাঁচের দরজার মতো মনে হয়। যা ঘোরাফেরা করা পাখিদের মনে করে যে তারা খালি জায়গায় উড়ছে। তারা হ্রদে অবতরণ করার মুহুর্তে তাদের শরীর কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।


একে তো ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা। কোন প্রাণীর পক্ষে এক মুহূর্ত ওই হ্রদে থাকার জো নেই। কোনওক্রমে তাপমাত্রার হাত থেকে বাঁচলেও, সে বাঁচা হবে মৃত্যুর থেকেও অনেক ভয়ঙ্কর। ডাঙায় উঠেও রক্ষে নেই। ধীরে ধীরে পাথরের মতো হয়ে যাবে শরীর।


কিন্তু ভয়ঙ্কর এই বিভীষিকার কারণ কী? মূলত জলের ক্ষারধর্মের জন্য হয় এই সমস্যা। অগভীর এই নেট্রন হ্রদটি দৈর্ঘে ৫৭ কিমি ও প্রস্থে ২২ কিমি। জলের গভীরতা মাত্র ১০ ফুট। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে বহুকাল আগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ। যার ফলে উত্তাপ সবসময় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে।


বেশি তাপমাত্রার ফলে হ্রদের জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তাঁর পরিবর্তে পড়ে থাকে লাভা যা জলের মতোই তরল। এদিকে সোডিয়াম এবং কার্বনেটের ক্ষারধর্মের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের অণুজীব। এদের শরীরে আবার লাল রঞ্জক থাকে। ফলে দূর থেকে লেকের জল মনে হয় লাল রঙের। লেকের এই লাল রঙ আকৃষ্ট করে এই হ্রদের নিকটবর্তী এলাকায় উড়ে বেড়ানো পাখিগুলিকে।


সবচেয়ে বিপজ্জনক সমস্যা হল, অনেক সময় এই হ্রদে পাখিগুলিকে নামতে হয় না। এর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ই হ্রদের জলে পড়ে যায় তারা। কীভাবে? জলের পরিবর্তে লাভা থাকায়, সূর্যের রশ্মি হ্রদ থেকে বেশি পরিমাণ প্রতিফলিত হয়। ফলে পাখিগুলি যখন উপর দিয়ে উড়ে যায় তখন তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। 


তীব্র আলোর ঝলকানিতে বিভ্রান্ত হয়ে হ্রদেই পড়ে যায় বাদুড় বা পাখিগুলি। পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক পাখির মৃত্যু হয়। কেউ যদি অতি কষ্টে ডাঙায় উঠেও পড়ে, তাঁর কষ্ট আরও বাড়ে। লেকের জলের সোডা আর লবন লেগে যায় পাখি বা প্রাণীটির শরীরে। যা শুকোনোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কামড়ে ধরতে থাকে। আস্তে আস্তে পাথরে পরিণত হয় ওই লবন আর সোডা। একসময় পাখিগুলির শরীর পূর্ণাঙ্গ চুনাপাথরের মূর্তির রূপ নেয়।


বিজ্ঞানীদের একটি পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, হ্রদের জল অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫)।যা ত্বককে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে কারণে পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়।


লেক নেট্রন আদতে একটি মৃত্যুফাঁদ। নেট্রন হ্রদের জল ক্ষারধর্মী হলেও এই হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় একটি প্রজনন ক্ষেত্র। প্রায় ২৫ লক্ষেরও বেশি লেসার ফ্লেমিঙ্গো এই হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই হ্রদের অগভীর জলে পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এই শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।


তানজানিয়ার এই লেক নেট্রনের আশেপাশে বিভিন্ন পশু ও পাখিদের মূর্তি দেখতে পাওয়া গেল পাওয়া যায়নি ফ্লেমিঙ্গো পাখিদের কোন নিদর্শন। তাই অনেক বিজ্ঞানীদের ধারণা একমাত্র লেসার ফ্লেমিংগোরাই পারে এই লেকের ক্ষারধর্মী জলের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে।

 

কোন মন্তব্য নেই:

এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করার সময় আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বলেছিলেন, "এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বেঁচে যাবে। কিন্তু অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ করবে না! তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি লোক মারা যাবে আবার।"

 এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করার সময় আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বলেছিলেন, "এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বেঁচে যাবে। কিন্তু...