ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই জমিদারির ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। মোঘল বাংলার বিখ্যাত ভূইয়া দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাওয়াল গাজী। ভাওয়াল গাজীরা চার ভাই ছিলেন – ফজল গাজী, কাশেম গাজী, সেলিম গাজী ও তালেব গাজী। ভাওয়াল গড় এ মূল রাজবাড়ী থাকলেও তালেব গাজী তাঁর বসবাসের জন্য গাজীপুর এর কালিয়াকৈর থানার শ্রীফলতলী নামক স্থানে তাঁর জমিদার বাড়ী নির্মাণ করেন। এটি সেই তালেব গাজীর জমিদার বাড়ি।
সেকালে জমিদারদের মাঝে এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা হত তাদের শান সাওকাত, বাড়ি ঘর, পুকুর, স্কুল কলেজ, চিকিৎসালয় নিয়ে। প্রতিযোগিতা হত কার বাড়ি কত বড় আর কি তাদের কারুকাজ। এসব বিষয়ে জমিদারদের নিরব প্রতিযোগিতারই একটা ফসল এই জমিদারী এলাকা আর জমিদার বাড়ি।
তবে ছোট তরফের বাড়ির গেটে আর বংশ লতিকায় কিংবা এই বাড়ির ইতিহাসে তালেব গাজীর উল্লেখ নেই। এখানে বলা আছে, বিখ্যাত তালিবাবাদ পরগণার নয় আনা অংশের মালিকানা নিয়ে গঠিত হয় শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট। এই এস্টেটের প্রধান কর্ণধার খোদা নেওয়াজ খান। এই এলাকায় জমিদার বাড়িটি ভূতুড়ে জমিদার বাড়ি হিসেবে বেশ পরিচিত।
সবাই বলাবলি করে জমিদার যখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান তখন যে সমস্ত অলংকার এবং মূল্যবান জিনিষপত্র সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন নি, তা তিনি নাকি এই বাড়ির বিভিন্ন দেয়ালে, মেঝেতে পুতে প্লাস্টার করে দেন এবং ঘরের আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিষ ঘরে রেখেই তালা লাগিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে অনেকেই সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করে সফল হতে পারে নাই। অনেকেই বলে সেসব সোনা জহরত নাকি বড় বড় সাপেরা পাহারা দেয় !! আর রাতে শোনা যায় বিভিন্ন ভৌতিক শব্দ!!
যা হোক সব কল্পকথা আর লোকমুখের প্রচলিত গল্পের বাইরে এই জমিদার বাড়ির অলঙ্করণ আর শৈল্পিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। দ্বিতল এই বাড়ির পেছনে আরও কয়েকটা একচালা পুরনো বাড়ি আছে দেখার মতো। একটাতে এখনও চিনিটিকরি করা পিলার স্পষ্ট। তবে সীমানা প্রাচীরগুলা ধ্বংসপ্রায়। সীমানা প্রাচিরের ওইপাশে ছোট তরফের আরেকটা জমিদার বাড়ি যার কথা আগেই বললাম, আর দুই বাড়ির মাঝখানে পুরনো মুঘল আমলের আদলে একটি মসজিদ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের যে কোনও বাসে কালিয়াকৈর বাজারে নামা যায়। গাবতলি সাভার রোড ধরে আসলেও অনেক বাস আছে। কোনটায় চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত এসে অন্য বাসে বা টেম্পুতে কালিয়াকৈর বাজার। তারপর রিকশায় ২০/২৫ টাকা ভাড়া। বললেই হবে শ্রীফলতলি জমিদার বাড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন