তেলাকুচার আত্মকথন
ঝোপঝাড়ে আদাড়ে-বাদাড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে ও যেকোন স্থানেই কারো আদর যত্ন ছাড়া জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারি আমি। আমার জাতভাই শশা ও কুমড়ার বাজারে বেশ কদর থাকলেও স্বাদে আমি কিছুটা তিতা হবার কারণে আমার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বেশ কম। মানুষ আমার বেড়ে ওঠা লতানো ডালে পাকা ফল ঝুলে থাকতে দেখলে অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ে, দেখে ফের চলে যায়।
তবু আমি অনেক বেশি সহ্যশীল। ক্ষরাতে আমি টিকে থাকতে পারি, মাটির খুব গভীর হতে খাবার ও পানি সংগ্রহ করতে পারি বলে মানুষের কদর কমে গেলেও এখনও বহাল তবিয়তে টিকে আছি। কমে যাওয়ার কথা বললাম এই কারণে; আমাকে নিয়ে কেউ চাষবাস না করলেও
ভারতীয় অনেক এলাকায় আমার ফলের তরকারি বেশ তারিয়ে তারিয়ে মসলা দিয়ে পাকানো হয় আর বাঙালি বাবুরা কোন ইদানিং সচ্ছলতার মুখ দেখার পর বিদেশী প্রসাধন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রূপচর্চায় আমার ব্যবহার ভুলে গেলেও সারা দুনিয়ার ভাজাভুজি খেয়ে পেট ফেপে যাওয়ার পর তবেই আমার দ্বারস্থ হয় পাতা চাইতে।
আমার কিন্তু কোনো কিছুতেই না নেই! রূপ সচেতন রমণ ও রমণীদের রূপচর্চায় শুধু শুধু দামি স্পর্ট রিমুভার ব্যবহার না করে আমার পাতার পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে বসে থাকলে মেছতা ও ব্রণের দাগ সেরে যাবে
যারা আবার ৪০ বছর পার হবার পর, হাটু চেপে ব্যাথায় কুচকানো মুখ সকলের নিকট লুকিয়ে ফেলার প্রচেষ্টায় প্রাণান্ত আমার মূল দিয়ে বানানো হালুয়া টনিক হিসেবে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আমার সর্বস্বের ভেষজ
গুনে গুণান্বিত সকল গোপন খবর একসময়
কবিরাজরা খুব ভালো করে জানতো।
ঔষধ এসে আমাদের কদর কমে গেলেও আমাকে মকধ্বজ হিসেবে এখনো গ্রহণ করে চলেছে ভারতে ইন্দোনেশিয়ার অনেক অঞ্চলের মানুষ। অনেক অঞ্চলে আমাকে আবার সাজিয়ে-গুছিয়ে আবাদ করে থাকে লোকজন।
Scarlet gourd হিসেবে আমি ইংরেজিতে পরিচিত আর বাংলায় আমার কয়েকটি নামঃ তেলাকুচা, কুদরি অথবা কুড়নী।
চুপেচাপে একটা কথা বলি, এখন কিন্তু আবার কিছু দোকান বিভিন্ন আমার নামের বিভিন্ন পণ্যকে চটকদার নানারকম প্যাকেটে সাজিয়ে গুজিয়ে লোকজনের কাছে বিকোনোর চেষ্টা করছে। যদিও বাংলাদেশের কথা আমি বলতে পারছি না।
যারা ডায়েবিটিস বা বহুমুত্রের রোগী তারা কিন্তু আমাকে ঠিকই মনে মনে খুঁজে থাকেন কেননা আমার কিছু এনজাইম মানুষের শরীরের চিনি তথা শর্করার পরিমাণ শারীরবৃত্তিক উপায়ে কমিয়ে ফেলে।
আমরা সারা বছরই জন্মাতে পারি। আমাদের প্রধান শত্রু জলাবদ্ধতা। ফল প্রথমে শশার মতো সবুজ ও পরে পেকে লাল হলেও ফুল গুলো নিপাট সাদা। আমাদের বীজের বিস্তারণ হয় পাখির দ্বারা,তাছাড়া আমাদের মূল ও ডাল, সহজেই আমাদের বিস্তার ঘটাতে পারে। মূলতঃ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে আমাদের ফলন সবচাইতে বেশি হয়।
আমার ডালপালা লতানো, শশার মতোই আকর্ষি তথা টেন্ড্রিল দিয়ে বেয়ে বেয়ে বড় গাছের উপর চেপে বসতে পারি। আর গাছ মালিকের আমাদের দেখে যদি- মাথায় রক্ত চড়ে যায় তবে, আমার পাতা ও কচিডালের রস তাদের রক্ত-চাপ কমিয়ে ফেলতে সক্ষম!
এখন সিদ্ধান্ত মানুষের, অনেক আমাদের মত একজন
গায়ে পড়া পরোপকারীকে ধারে-কাছে রাখবে, নাকি ঝোপে-ঝাড়ে, বনে-বাদাড়ে সকলের অলক্ষ্যে চালিয়ে যাব আমাদের নিরব অভিযান, যখন চলছে অবিরাম কীটনাশক ও আগাছানাশক এর বিরক্তিকর পটকা-বাজি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন