বাংলিশকে না বলুন!
১৯৫২ সালের কথা একবার কল্পনা করুন তো..
আপনার হৃদয়পটে কী ভেসে উঠছে? নিশ্চয়ই রক্তমাখা বর্ণমালা? রফিক,বরকত, জব্বার, সালামসহ অনেকের রক্তমাখা নিথর দেহ? "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই" সহ মিছিলের আকাশ বিদীর্ণ স্লোগান নিশ্চয়ই কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে?
ভাষার দাবিতে কেন তাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, উত্তর খুঁজেছেন কখনো? কীসের বলে বলীয়ান হয়ে তাঁর আত্নহূতি দিয়েছিলেন?
ভাষার জন্য দিতে হয় রক্ত; উৎসর্গ করতে হয় প্রাণ; তা কী পৃথিবী অতীতে কল্পনা করেছিল?
একঝাঁক প্রশ্ন প্রথমেই ছুড়ে দিলাম আপনার বিবেকের কাছে! সম্মানিত পাঠক উত্তর খুঁজে নিবেন।
আমি আজকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে কথা বলব না। উদ্দেশ্যও তা নয়, ভিন্ন।
৪৭ থেকে ৫২, ৫২ থেকে ৫৬। এই ইতিহাস করো অজানা নহে।
মোদ্দা কথায় আসা যাক..
মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা ও রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে এতো ত্যাগ তিতিক্ষার সোনালী ফসল ভোগ করছি আমরা। কিন্তু আমরা কী পেরেছি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে?
এ প্রশ্নেন উত্তর খুজতে গিয়ে আমি কখনো হতাশ হই, কখনো মর্মবেদনায় ছটফট করি,কখনোবা রক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ে।
যাইহোক, শিরোনামে উল্লিখিত বিষয়ে দৃষ্টিপাত করি..
"বাংলিশ" আপনাদের সবার পরিচিত একটি শব্দ। আমরাই এর জন্ম দিয়েছি। আমাদের প্রাণের মাতৃভাষা বাংলা আজ "বাংলিশ" নামক মহামারী ভাইরাসে আক্রান্ত! কথিত আধুনিক প্রজন্মের এ যেন নিত্যদিনের ভাষা হয়ে উঠেছে!
বাংলিশ নিঃসন্দেহে মাতৃভাষা বাংলার বিকৃতভাষ্য। এটা আমরা ভাবি'ই বা ক'জন?
আমরা কেবল ভোগকারী! যিনি মাতৃভাষাকে ভালোবাসেন তিনি কখনো এই বিকৃতভাষ্যে অভ্যস্থ হতে পারেন না।
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করি, তাহলে দেখতে পাব এই কাজটাই হানাদার পাকিস্তানিরা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা পারে নাই, অথচ আমরা কী অনায়াসেই না তাদের ঘৃণ্য বিকৃতির বাস্তবায়ন করছি! দিব্যি আবার বুলিও আওরাই চেতনাবাদী বলে!
পাক-হানাদারেরা তৎকালীন ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্কে ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে প্রস্তাব করেছিল যে, আরবি হরফে বাংলা ভাষা চালু করার জন্য!
তারা বাঙালির ধর্ম প্রীতির দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছিল। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ উল্লিখিত প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এখন ভাবুন তো..
আমরা যে বাংলিশ (ইংরেজি বর্ণে বাংলা লিখা) ব্যবহার করছি, তা কী পাকিস্তানিদের এজেন্ডার বাস্তবায়ন নয়?
প্রশ্ন রইল সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কাছে।
শিক্ষিত সচেতন মানুষ হয়ে আমরা এই ঘৃণ্য কাজটি কীভাবে করতে পারি! এ কেমন উদাসীনতা! একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরী আর পুষ্পস্তবক অর্পণেই কী আমাদের ভাষা প্রীতির বহিঃপ্রকাশ আর শহীদদের যতার্থ সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন?
আশাকরি, আমরা এই কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসব..ইনশাআল্লাহ।
মা,মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। মননে লালন করতে হবে।
চর্চা করতে হবে সবক্ষেত্রেই শুদ্ধ বাংলার।
তবেই শান্তি পাবে শহীদদের আত্মা, প্রতিষ্ঠিত হবে মাতৃভাষার মর্যাদা।
লেখক –
মো. মেহের উল্লাহ ইমরান।
প্রতিনিধি, সঠিক বার্তা ২৪ ডট কম, ময়মনসিংহ সদর।
বি.দ্র: প্রায় ৪ বছর আগে একটা অনলাইন পোর্টালে লিখেছিলাম।
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন