বাংলা সাহিত্যে তখন একপ্রকার চাঁদের হাট। বনফুল,শিব মৈত্র,পরিমল গোস্বামীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সখ্য।
বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী বনফুল মাঝে - মাঝেই অপরিচিত লোকের সাথে বন্ধুত্ব করার নেশায় মেতে উঠতেন । ঠিক তেমন অসহায়, অপরিচিত গরীব মানুষের চিকিৎসা করা, তাঁর ওষুধ,পথ্যের সব খরচ সব নিজের পকেট থেকেই দিতেন।যেমন কণ্ঠস্বর ,তেমন চেহারা ,ব্যক্তিত্ব সর্বত্র বনফুল সত্যিই ব্যতিক্রমী বিরল এক চরিত্র। যিনি মেসের বন্ধুর খাওয়ার জন্য বিনা দ্বিধায় অপরিচিত মানুষের বাড়ি থেকে ভাত চেয়ে আনতে পারেন। তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা ভদ্রলোক কে নিঃসঙ্কোচে বলে দিতে পারেন এখন বিয়ে করবেন না।আর বিয়ে করতে চাইলে কনের নাক ক ইঞ্চি বা চামড়া কেমন দেখবেন না,যদি দেখতেই হয় তাহলে ব্লাড স্পিউটাম ইউরিন রিপোর্ট দেখবেন।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
ইংরেজি ক্যালেণ্ডারে ১৯২৮সাল, হ্যারিসন রোড দিয়ে হাঁটছেন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তখন প্রায় রাত এগারোটা,হঠাৎ বনফুলের মাথায় অদ্ভুত একটা বুদ্ধি খেলল। তাঁর পায়ে দামী জুতো,চট করে জুতো জোড়া খুলে একটা দোকানের দরজায় রেখে দিলেন।সঙ্গী বন্ধু পরিমল গোস্বামী কে বললেন দেখা যাক চুরি হয় কিনা। পরিমল বললেন চুরি তো হবেই,তবু বনফুল পরীক্ষা করবেন। বললেন সকাল বেলা এসে দেখবেন।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল,খালি পায়ে দোকানে এসে বনফুল দেখলেন তাঁর দামী জুতো জোড়া সত্যিই চুরি হয়েছে।হয়ত সেদিন ওই পরীক্ষার কোনও প্রয়োজন ছিল না।
একবার তিন বন্ধুর খেয়াল চাপল কলকাতার বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাক। তিন বন্ধু বনফুল,শিব মৈত্র,পরিমল গোস্বামী শিয়ালদহ এলে সব পয়সা এক জায়গায় করে বনফুলের হাতে তুলে দেওয়া হল। তিনি টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বললেন 'দাদা তিন খানা রিটার্ন টিকিট দিন '। কোথাকার?বনফুল বললেন 'তিতোবিরক্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি দাদা,যে কোন স্টেশনে দিন, আটকাবে না কিছু '।
কাউন্টার থেকে তিনটি কাঁচরাপাড়ার টিকিট পাওয়া গেল। ট্রেনে এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমে উঠেছে, তিনি কাঁচরাপাড়া যাবেন। বনফুল তাঁর সঙ্গে রীতিমত ভাব জমিয়ে দাদা বলতে লাগলেন, এরপর প্রস্তাব দিলেন তাঁর বাড়িতে গিয়ে বৌদির হাতে রান্না খেয়ে অন্যকথা। ভদ্রলোক বেশ বিপদে পড়লেন। তিনি যত অন্যপ্রসঙ্গে যেতে চান বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের তত তাঁর ও সহধর্মিণীর কথা বলতে থাকেন। কাঁচরাপাড়ায় নেমে তিন বন্ধু পথ চলতে আরম্ভ করলে ভদ্রলোক নানা ভাবে তাদের নিরুৎসাহ করতে থাকেন।
বললেন 'রাত্রি বেশি হলে ফেরবার আর গাড়ি পাবেন না, আপনাদের ভীষণ কষ্ট হবে,আপনারা সত্যি আসবেন না,আমার বাড়ি এখান থেকে চার মাইল 'ইত্যাদি। সত্যি বলতে নিছক মজা করতে তিন বন্ধু তাঁর সঙ্গে মাইল খানেক গিয়েছিলেন। এই হলেন বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী মানুষ বনফুল। বোধহয় সেই কারণে তাঁর লেখায় এত বৈচিত্র্য,এত মিষ্টতা,এত চমকপ্রদ, পাঠককে ক্লান্ত হতে হয় না।।
সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
#balaichandmukherjee
#litterature
#untoldstories
#dhrubotaraderkhonje
পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,স্মৃতি চিত্রণ,পরিমল গোস্বামী
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন