ভুল টাইপিং করে জীবন শেষ।
বই অর্ডার দিতে গিয়ে ভুল করে বউ অর্ডার দিয়ে ফেললাম। কীভাবে এতো বড় একটা মিস্টেক হয়ে গেলো!
এবার আসল ঘটনায় যাই। একটা পেজে বইয়ের জন্য তাদের মেসেজ দিয়েছিলাম। তো সেখানে আমি বই লিখতে গিয়ে বউ লিখে ফেলছি, টাইপ মিস্টেক যেটাকে বলে আরকি। আমি মেসেজ টা ভালো ভাবে না পড়েই সেন্ট করি। মেসেজটা সেন্ট হওয়ার সাথে সাথে আমি লক্ষ্য করলাম যে আমি বইয়ের যায়গায় বউ লিখে ফেলছি। তারা এখনও আমার মেসেজ সিন করেনি, আমি মেসেজটি রিমুভ করার চেষ্টা করলাম। তখনই আমার একটা বন্ধু এসে আমাকে ধাক্কা দিতেই আমার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে ডিসপ্লে চলে যায়। কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি! এদিকে মেসেজ ভুল করছি, আবার এখন ফোন নষ্ট হয়ে গেছে। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গিয়েছে। কপাল এতো খারাপ যে টেনশনে আমি নিজের ফেসবুক পাসওয়ার্ড ও ভুলে গেছি। এখন যে অন্যের ফোনে আইডি লগিন দিয়ে মেসেজ রিমুভ দেবো সেই উপায় ও নেই। আমি সময় নষ্ট না করে বাজারে চলে গেলাম। তারপর মোবাইলের দোকানে গিয়ে আমার সমস্যার কথা বললাম। তারা বললযে মোবাইলের ডিসপ্লে নাকি এখানে পাওয়া যাবেনা। তাদের একদিন সময় দিতে হবে। এটা শুনে আমি তো পুরো থ খেয়ে গেলাম। কি আর করার মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম। ওটা তো বইয়ের পেজ তারা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।
আমার সেই বন্ধু বলল -- ভাই বিশ্বাস কর আমি খেয়াল করিনি। তুই চিন্তা করিস না, তোর ফোনের যত টাকা খরচ হয় সব টাকা আমি দিয়ে দেবো।
-- আরে ভাই টাকাটা বড় কথা না। আমি চিন্তা করছি অন্য কিছু নিয়ে।
-- কি নিয়ে? গার্লফ্রেন্ড সমস্যা?
-- আমার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই। আসলে আমি একটা বইয়ের জন্য মেসেজ দিছিলাম, যে আমার একটা বউ লাগবে। আমি ওখানে বই লিখতে গেছিলাম। কিন্তু টাইপিং মিস্টেক হয়ে গিয়েছে।
আমার কথা শুনে বন্ধু হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
-- আরে এতো চিন্তা করিস না। পেজে কেউ বউ অর্ডার করে নাকি? তারা বই পাঠাবে। যা বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নে।
তারপর আমি বাড়িতে চলে এলাম। দোকানে মোবাইল জমা দিয়ে এসেছি কিন্তু সিম সাথেই ছিলো। কারণ সিমে জরুরী কল আসবে। একটা বাটন ফোনে সিম ব্যাবহার করছি। পরের দিন সকালে আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো।
-- হ্যালো কে বলছেন?
-- জ্বী ভাইয়া আপনার নামে একটা পার্সেল এসেছে। আপনি যে ঠিকানা দিয়েছেন আমি সেখানে এসেছি। একটু তাড়াতাড়ি এসে আপনার পার্সেল টা নিয়ে যান।
এই কথা বলে লোকটা কল কেটে দিয়েছে। আমি টেনশনে পড়ে গেছি। যাইহোক পার্সেল যেহেতু বলছে তাহলে অবশ্যই বই নিয়েই আসবে। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলাম। আমি যে লোকেশন দিয়েছি লোকটা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে একা দেখে কিছুটা ভয় কেটে গিয়েছে। আমি তার সামনে যেতেই বলল,
-- আপনি কি আমাদের পেজে একটা পার্সেল অর্ডার করছেন?
-- জ্বী ভাই।
-- আচ্ছা আপনি এক মিনিট দাঁড়ান, আপনার পার্সেল গাড়ির ভিতরে আছে।
এটা শুনে আমার বুকের ভিতরে ধুকধুক শব্দ শুরু হলো। এরা সত্যি সত্যিই কি বউ নিয়ে এলো? সেটা কীভাবে হয়? হঠাৎ করে লোকটা গাড়ির ভিতর থেকে একটা মেয়েকে বের করে নিয়ে আসলেন। মেয়েটার পড়নে বউয়ের সাজ। এটা দেখে তো আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা। যেই ভয়টা এতক্ষণ পাচ্ছিলাম সেটাই হচ্ছে!
মেয়েটাকে নিয়ে লোকটা আমার কাছে এসে বলল,
-- এই-যে ভাই আপনার পার্সেল বুঝে নেন। আপনি এমন একটা জিনিস অর্ডার দিছেন যেটা আমাদের কাছে নেই। তাই আমাদের পেজের মালিক বাধ্য হয়ে তার নিজের বউকে দিয়ে দিছে।
-- ভাই আসলে আমার একটা মিস্টেক হয়ে গিয়েছে।
তারপর আমি লোকটাকে আমার সব ঘটনা খুলে বললাম। আমার কথা শুনে সে বলল,
-- এখন তো আর কিছু করার নেই ভাই। আপনাকে রেখে দিতেই হবে। বিক্রি করা জিনিস আমরা ফেরত নেইনা। ওহ হ্যাঁ পার্সেলের সাথে একটা চিঠি ও আছে।
আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।
চিঠি- প্রিয় গ্রাহক পত্রের শুরুতে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি এমন একটা জিনিস অর্ডার দিছেন যেটা দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। কারণ এই বউয়ের যন্ত্রণায় আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে আমি মুক্তি, আর সব থেকে বড় কথা আমরা আমাদের গ্রাহকদের খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনা। আপনার আমাকে কোনো টাকা দিতে হবে না। এই প্রডাক্ট আপনাকে ফ্রী তে দেওয়া হলো। আপনি আমাকে বাঁচালেন ভাই। ধন্যবাদ আমাদের পেজের সাথে থাকুন।
চিঠিটা পড়া শেষ করেই আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।
সমাপ্ত।
#টাইপিং_মিস্টেক
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ
সংগ্রহীত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন