এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

আইনস্টাইনের প্রেমের চিঠি আকবার হোসেন প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, 

 আইনস্টাইনের প্রেমের চিঠি

আকবার হোসেন

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, 

বিজ্ঞানের কিংবদন্তি আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রেমের চিঠি নিলামে উঠেছে। মহান এ বিজ্ঞানীর প্রেমিক-মনের অনেক কিছু উন্মুক্ত হয়েছে ইতিমধ্যে। লিখেছেন আকবার হোসেন


আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) বিজ্ঞানের এক মহাতারকা। নিজের জীবদ্দশায় তিনি বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী গবেষণা প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ‘আপেক্ষিক তত্ত্ব’ তাকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। যার ঠিক ১২ বছর পর আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু এসব অর্জন করার শক্তি, অনুপ্রেরণা ও সময় তিনি কোথায় পেলেন? ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রেম এবং কফি তৈরি এই তিন আইনস্টাইনের জীবনের মূল রসায়ন। বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ এবং জেনার ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর জিওএনথ্রোপোলজির অধ্যাপক ইয়ুর্গেন রেন ২০০৫ সালে ‘আমি রবিবারে ঠোঁটে তোমাকে চুমু দেব’ বইয়ে আইনস্টাইন এবং তার প্রথম স্ত্রী মিলেভা মেরিকোর মধ্যে ১৮৯৭ এবং ১৯০৩ সালে প্রেমের চিঠির একটি সংগ্রহ প্রকাশ করেন। চিঠির এই সংগ্রহ ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘আলবার্ট আইনস্টাইনের সংগৃহীত কাগজপত্র’ বইয়ের একটি অংশ। যা রেন ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সহ-সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি বলেন, চিঠিগুলো তখন কেবল  আবিষ্কৃত হয়েছে, আমার কাজ ছিল সেগুলো পড়া, সেগুলোর ওপর মন্তব্য করা এবং সেগুলোকে ঐতিহাসিকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, এটি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। কারণ এসব চিঠি কেবল প্রেমের সাক্ষ্য ছিল না বরং আইনস্টাইনের সবচেয়ে সৃজনশীল পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক উপাদানও ছিল, যা তিনি তার বান্ধবী এবং পরবর্তী স্ত্রীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করেন।


বিজ্ঞান এবং প্রেম


চিঠিগুলো শুধু তরুণ আলবার্ট আইনস্টাইনের আবেগময় জগতের একটি অন্তর্দৃষ্টিকে উপস্থাপন করে না। ঘটনাচক্রে সেগুলো তার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর বিকাশেরও সাক্ষ্য দেয়। আইনস্টাইন এবং এক তরুণ সার্বিয়ান নারী মিলেভা মেরিক ১৮৯৬  সালে জুরিখের পলিটেকনিকামে দেখা করেন। তখন মেরিকোর বয়স ছিল ২০ এবং আইনস্টাইনের বয়স ১৭। মিউনিখের গ্রামার স্কুল থেকে ড্রপ আউট করার পর আইনস্টাইন সুইজারল্যান্ডে তার এ-লেভেল সম্পন্ন করেছিলেন। আর মেরিকো  ভোজভোডিনা থেকে আসেন। যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ। জাগরেবের একটি ছেলেদের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এরপর জুরিখে পদার্থবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। তিনি ছিলেন পদার্থে অধ্যয়নরত তার সময়ের একমাত্র নারী এবং প্রথম সার্বিয়ান। আইনস্টাইন সম্ভবত সেই সময়ের জীবনকে উপভোগ করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার-এর লেখা গোগ্রাসে গিলছিলেন এবং বুর্জোয়াবিরোধী মনোভাব পোষণ শুরু করেন। মেরিকো এবং অ্যালবার্টের মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয় এবং যা বাড়তে থাকে। রেন বলন, আইনস্টাইন নিজের বৈজ্ঞানিক জীবনের সঙ্গে নিজের প্রেমের জীবনকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন। রেন বলেন, তারা আক্ষরিক অর্থে সবকিছু সম্পর্কে কথা বলতে পারতেন! মিলেভা স্পষ্টতই গাণিতিক বিষয়ে অ্যালবার্টের সমতুল্য ছিলেন। যে কারণে বিশেষজ্ঞরা এখনো আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিকাশে মিলেভার অবদান সম্পর্কে অনুমান করে থাকেন। আইনস্টাইন তার মিলেভাকে ১৯০১ সালের দিকে লিখেছিলেন, ‘প্রিয় ডক্সারল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার প্রিয় কুমারী... শেষবার যখন আমাকে তোমার প্রিয় ছোট্ট মানুষটিকে আমার কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, প্রকৃতি যেমন দিয়েছিল, চুম্বন করেছিল তখন কত সুন্দর ছিল। আমি এটার জন্য সবচেয়ে আন্তরিক, আপনি প্রিয় আত্মা! যাই হোক ‘ডক্সারল’ দক্ষিণ জার্মান উপভাষায় পুতুল।


চিঠিপত্রের হিসাবে ছয় বছর আলবার্ট এবং মিলেভার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মিলেভা অল্প বয়সে প্রেমে পড়েন। ১৯০১ সালে গর্ভবতী হন এবং একটি সন্তানের জন্ম দেন। ১৯০৩ সালে তাদের বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তারা তিনটি সন্তানের জন্ম দেন। তাদের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এরপর আইনস্টাইন চিঠিতে লেখেন, আপনি আমার সঙ্গে সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক ত্যাগ করুন। আইনস্টাইন ১৯১৪ সালে ওই চিঠিতে স্পষ্ট করে বলেন, আমার কাছ থেকে কোনো স্নেহ আশা করার অধিকার আপনার নেই বা আমাকে কোনোভাবেই তিরস্কার করবেন না। তাদের বিচ্ছেদের নিষ্পত্তিতে আইনস্টাইন বলেন, যদি নোবেল পুরস্কার পান তাহলে সেখান থেকে অর্থের ভাগ দেবেন মেরিকোকে।


চুলের ব্রাশ


ডয়চে ভেলে তাদের প্রতিবেদনে আরও জানাচ্ছে, গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে আইনস্টাইনকে তার বার্লিনে বসবাসরত বছরগুলোতে জর্জরিত করেছিল। জুরিখ এবং প্রাগে থাকার পর তিনি ১৯১৪ থেকে শুরু করে স্প্রিতে বসবাস করেন। ১৯৩৩ সালে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বার্লিনে থাকাকালে তার কাজিন একজন অভিনেত্রী এবং আবৃত্তিকার এলসা লোভেন্থাল  অসুস্থ আইনস্টাইনের যতœ নেন। তাদের সম্পর্ক অনেক গভীরে চলে যায়। মিলেভার সঙ্গে বিচ্ছেদের অল্প সময় পর আলবার্ট তাকে বিয়ে করেন। তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ঝগড়ার। উদাহরণস্বরূপ, এলসা আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সমালোচনা করতেন। তিনি তাকে একটি চুলের ব্রাশ উপহার দেন। এবং লিখে ছিলেন, যদি আমি আপনার জন্য খুব অপ্রীতিকর হয়ে থাকি, তাহলে এমন একজন বন্ধুকে খুঁজে বের করুন যিনি নারীর রুচির সঙ্গে যান। কিন্তু আমি আমার স্বাধীনতা রক্ষা করব। তবে এসব আচরণ নারীর ওপর তার প্রভাবকে হ্রাস করে বলে মনে হয় না। বরং উল্টো ঘটনা ঘটে। তিনি যেখানে যেতেন, নারীরা তাকে ঘিরে ধরত।  বক্তৃতা দিতে অনেক ঘন ঘন সফরে বের হলে আইনস্টাইন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন। এমনকি এটাও শোনা যায় যে বার্লিনে তার একজন উপপতœী ছিল। যেমনটি আইনস্টাইনের জীবনীকার আরমিন হারম্যান লিখেছেন, এলসার সঙ্গে তার বিয়ের বিষয়ে। আইনস্টাইনের প্রেমপত্রের মুখবন্ধে হারমান উল্লেখ করেন, বিয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চাপ ছিল আইনস্টাইনের দিক থেকে। আইনস্টাইন নারীসুলভ সবকিছুর প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট ছিলেন।


শৈশবের ভালোবাসা


পরে আরও জানা যায় যে আইনস্টাইনের প্রথম বান্ধবী ছিলেন ম্যারি উইনটেলার। যার সঙ্গে সম্পর্ক যৌবনের প্রথম দীক্ষা নেওয়ার চেয়ে বেশি কিছু ছিল। আইনস্টাইন করুণভাবে লিখেছিলেন সেই চিঠিতে, যখন আমি আপনার চিঠি পড়ি, তখন মনে হয়েছিল যে আমার কবর খোঁড়া হচ্ছে।  আমি যে সামান্য সুখ রেখেছিলাম তা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা অবশিষ্ট রয়েছে তা কর্তব্যের নির্জন জীবন। আইনস্টাইন তার প্রথম স্ত্রী মিলেভা, দ্বিতীয় স্ত্রী ও চাচাতো বোন এলসা বা তার অনেক উপপতœীর কাউকে এমন নাটকীয় এসব বাক্য সম্বোধন করেননি। আর ওই চিঠি তিনি লিখেছিলেন তার শৈশবের প্রিয়তমা ম্যারিকে। আইনস্টাইন তার হাই স্কুল ডিপ্লোমা অর্জনের সময় কিশোর বয়সে যার সঙ্গে এক বছর প্রেম করেন। তবে এ প্রেম  স্বল্পস্থায়ী ছিল এবং শিগগিরই তার প্রিয়জন হিসেবে মেরিকোর আবির্ভাব ঘটে। মিষ্টি কিন্তু ছটফটে স্বভাবের মারির সঙ্গে আইনস্টাইনের বুদ্ধিমত্তার মস্ত ফারাক ছিল। জুরিখে এসে আইনস্টাইন চিঠি লেখালেখি বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটান। যদিও জানা যায়, শুরুর দিকে জুরিখে এসে প্রথম কিছু দিন নিজের জামাকাপড় মারিকে ডাকে পাঠাতের আইনস্টাইন। সেসব ধুয়ে আবার ডাকে ফেরত পাঠাতেন মারি। এর প্রত্যুত্তরে ধন্যবাদও দিতেন না আইনস্টাইন। যার কারণে আক্ষেপ করে মারি লেখেন, ‘চোখে শুধু খুঁজে মরি তোমার হাতে লেখা দু-একটি বাক্য। কিন্তু পাওয়ার মধ্যে পাই তোমার হাতে লেখা ওই ঠিকানাটুকু।’


প্রথম চিঠি


প্রেমিকা মারির বোন আনা তখন আইনস্টাইনকে বর্ণনা করেছেন এ ভাবে, ‘ওর দারুণ রসবোধ ছিল। আর সময়-সময় আলবার্ট প্রাণভরে হাসত।’ সেই সময়ে আরেক নারীর বর্ণনায় আইনস্টাইন ছিলেন এমন, ‘মেয়েদের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো পুরুষালি চেহারা ছিল ওর। ঢেউ খেলানো কালো চুল, অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ ও চাহনি, চওড়া কপাল আর খোশমেজাজি স্বভাব। ওর মুখের নিচের অংশ কোনো ইন্দ্রিয়াসক্ত পুরুষের, যার জীবনের প্রতি টানের অভাব নেই।’ মারি নতুন বছরে আলবার্টের মাকে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠালে তিনি উষ্ণতার সঙ্গে জবাব দিলেন, ‘তোমার ছোট্ট চিঠি, স্নেহের মারি, আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছে।’ সেই বছরের বসন্তে বাড়ি ফিরে আলবার্ট মারিকে তার প্রথম প্রেমপত্র লেখেন। ‘প্রিয়তমা, অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমার ছোট্ট মিষ্টি চিঠির জন্য, যা আমাকে অশেষ আনন্দ দিয়েছে। ওই টুকরো কাগজ বুকে ধরে কী যে একটা অনুভূতি হলো! কারণ ওই পাতায় দুটি প্রিয় চোখ তোমার দৃষ্টি ফেলেছে আর ওর ওপর তোমার নরম হাত দুটি চলাফেরা করেছে। এত দিনে টের পাচ্ছি, ছোট্ট দেবদূতি আমার, মন কেমন করা আর মিলনাকাক্সক্ষা কী বস্তু! তবে বিরহ যত না বেদনা আনে তার চেয়ে ঢের বেশি সুখ আনে প্রেম...। মা তোমাকে না চিনেই ভালোবেসে ফেলেছেন। শুধু তোমার দুটো মিষ্টি চিঠি তিনি পড়েছেন। মা খুব হাসাহাসি করেন আমাকে নিয়ে, কারণ আমি আর আগের মতো অন্য মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হই না। আমার কাছে সারা জগতের থেকেও তোমার মূল্য অনেক বেশি এখন।


নিলাম


আইনস্টানের প্রেমের এসব চিঠি ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়ার আগে দীর্ঘদিন ধরে সুইজারল্যান্ডের বার্নিশেস হিস্টোরিচেস মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল। শতাব্দীর বিশেষ প্রতিভা আলবার্ট আইনস্টাইনকে দেখা গেছে প্রেমকে মহিমান্বিত করতে। তিনি লিখেছেন, ‘কী অসীম সুখের অনুভূতি’, ‘আমরা একসাথে এক আত্মা’। অথবা তিনি লিখেছেন, ‘ভালোবাসা আমাদের মহান এবং ধনী করে এবং কোনো দেবতা আমাদের থেকে তা কেড়ে নিতে পারে না।’ আইনস্টাইনের প্রেমের চিঠিগুলো পদার্থবিদ বিজ্ঞান, বন্ধুত্ব এবং নারীকে ভালোবাসার এক অনন্য দলিল। তিনি কেবল সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত প্রতিভা ছিলেন না। তার জীবনে অনেক জটিল প্রেমের গল্পও ছিল। তার প্রথম স্ত্রী মিলেভার চিঠিপত্রসহ  ‘আইনস্টাইন লাভ লেটারস’ গত বুধবার লন্ডনের ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয়। যার দর উঠেছে ৫৬২,০০০ ডলার।


সোর্স দেশ রুপান্তর

কোন মন্তব্য নেই:

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...