“আমি মানুষকে হাসাতে ভালোবাসি।” এই একটি বাক্যতেই যেন লুকিয়ে রয়েছে তার জীবনের সারমর্ম। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ,
যিনি চার দশকের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে দর্শকদের অসংখ্য হাসি উপহার দিয়েছেন, আজ তার জন্মদিন। ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই অমর শিল্পী আজও দর্শকের হৃদয়ে উজ্জ্বল।
টেলি সামাদের পুরো নাম ছিল আবদুস সামাদ। এই নাম পরে পরিবর্তন হয় ‘টেলি সামাদ’ নামে। বিটিভির জিএম এবং পরিচালকেরা তার প্রতিভা দেখে এই নাম প্রস্তাব করেন। তারা মনে করেছিলেন, এই নামই তার বহুমুখী প্রতিভার সঙ্গে সবচেয়ে মানানসই। তার এই নামের পেছনে ‘ট্যালেন্ট’ শব্দটির যোগসূত্রও ছিল।
টেলি সামাদ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও সৃজনশীল। তার বড় ভাই ছিলেন বিশিষ্ট চারুশিল্পী আব্দুল হাই, যিনি টেলি সামাদের সৃজনশীলতাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। টেলি সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। পেশাগতভাবে অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি চারুকলার প্রতি গভীর অনুরাগ পোষণ করতেন এবং এ ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন প্রতিভাবান। এরপর ১৯৬৬ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে টেলি সামাদের অভিনয়জীবন শুরু হয়। এই চলচ্চিত্রে তার কৌতুকপ্রদর্শন দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছিল। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চার দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
দর্শকদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেওয়া তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘পায়ে চলার পথ,’ ‘নয়নমণি,’ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত,’ ‘গোলাপী এখন ট্রেনে,’ ‘সুজন সখী,’ ‘ভাত দে,’ এবং ‘জিরো ডিগ্রি’। তার অভিনয় শুধু চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি টেলিভিশন নাটক ও মঞ্চনাটকেও সমান পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
টেলি সামাদের অভিনয় দক্ষতা শুধু কৌতুকেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কাজী হায়াতের পরিচালিত ‘দিলদার আলী’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন জুলিয়া। এই চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সাফল্য পায়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, কৌতুকাভিনেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও তিনি একজন পরিপূর্ণ অভিনেতা।
টেলি সামাদের শিল্পীসত্তা ছিল বহুমুখী। তিনি প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন এবং একটি একক অ্যালবামও প্রকাশ করেছিলেন। ‘মনা পাগলা’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। তার কণ্ঠে সুরেলা গান দর্শকদের বিনোদনের আরেকটি মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
তার জীবনের শেষের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাব তিনি অনেকটাই একা হয়ে পড়েছিলেন। তার আফসোস নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার তিনটি ইচ্ছে ছিল—টেলিভিশনে গান করা, নায়ক হিসেবে একটি সিনেমায় অভিনয় করা, এবং আত্মজীবনীমূলক একটি বই লেখা। দুর্ভাগ্যবশত কোনো ইচ্ছাই পূরণ হয়নি।”
বিখ্যাত এই কিংবদন্তির মৃত্যু হয় ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল, ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৪ বছর। মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তিনি। তিনি আমাদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, এবং চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন। আজ তার জন্মদিনে, বাংলার প্রাঙ্গণের পক্ষ থেকে তাকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার কাজ ও সৃষ্টিগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল।
তথ্যসূত্র : (ইন্টারনেট)
#সিনেমা #বাংলাদেশ #কৌতুক #চলচ্চিত্র #শিল্প
(অনুমতি ছাড়া রিপোস্ট করবেন না)
#বাংলার_তথ্যপট (বিস্তারিত জানুন কমেন্টে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন