"কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর বিখ্যাত (মহররম) কবিতা
"কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে কারবালার সমস্ত নির্মম ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠে।
"মহররম"
-- কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
--------------------------------------------
নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া - আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া, কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে? সে কাঁদনে আসু আনে সিমারের ও ছোরাতে।
রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া দামেস্কে - জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে? হায় হায় হোসাইন ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়, তলোয়ার কেঁপে ওঠে এজিদের পাঞ্জায়
উন্ মাদ দুল দুল ছুটে ফেরে মদিনায় আলীজাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়।
মা ফাতিমা আসমানে কাঁদি খুলি কেশপাশ বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস রণে যায় কাসিম ঐ দু'ঘড়ির নওশা মেহেদির রঙটুকু মুছে গেল সহসা !
‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা-‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেল সকীনা!’
কাঁদে কে রে কোলে ক’রে কাসিমের কাটা-শির ?
খান্ খান্ হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর ! কেঁদে গেছে থামি’ হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র !
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,“আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!” নিয়ে তৃষা সাহারার,দুনিয়ার হাহাকার, কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার ! দুই হাত কাটা তবু শের-নর আব্বাস,
পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশ মনও ‘সাব্বাস' !
দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা, হাঁকে বীর “শির দেগা,নেহি দেগা আমামা !
কলিজা কাবাব সম ভূনে মরু রোদ্দুর খাঁ খাঁ করে কারবালা নাই পানি খজ্জুর মার স্তনে দুধ নাই বাচ্চারা তড়পায় জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়
দাও দাও জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর কাঁদে বানু পানি দেও মরে যাদু আসগর পেলনাতো পানি শিশু পেয়ে গেল কাঁচা খুন ডাকে মাতা পানি দেব ফিরে আয় বাছা শোন - পুত্র হীনা আর বিধবার কাঁদনে ছিড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাধনে।
তাম্বুতে সজ্জায় কাঁদে একা জয়নাল দাদা তেরি ঘর কিয়া বরবাদ পয়মাল ‘হাইদরী-হাঁক-হাঁকি দুলদুল-আসওয়ার শম শের চমকায় দুষমনে ত্রাস বার।
খ’সে পড়ে হাত হ’তে শত্রুর তরবার, ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার! নিঃশেষ দুষমন ; ও কে রণ-শ্রান্ত ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি-প্রান্ত ?
কোথা বাবা আসগর? শোকে বুক-ঝাঁঝরা পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন