এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

ভালোবাসার_শীতলতা #লেখক_তৌফিক ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 নিজের বাবা কে যদি দুটো ভালো কাপড় দিতে না পারো, তবে কখনো আমার জন্য কিচ্ছু এনো না, আবিদ।


হাসিমুখে শ্বশুরকে শীতের কাপড় এগিয়ে দিতে গিয়ে শ্বশুরের উপরোক্ত কথা শুনে থমকে যায় আবিদ। নিমিষেই মুখ থেকে হাসিটা উধাও হয়ে যায়।


আবিদের শ্বশুর, রাহাত সাহেব, আবারও বলে উঠেন,


"আমি না হয় আমার কন্যাকে জন্ম দিয়েছি বলে, তার টান আমার ওপর সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তোমার বাবা তো তোমায় জন্ম দিয়েছে। কই, তার ওপর তো তোমার কোনো টান দেখিনা! কারণে-অকারণে আমাকে এটা-ওটা কিনে দাও। বলি, তোমার পিতাকে কিছু কিনে দিয়েছো?"


আবিদ মুখটা কালো করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্ত্রী শাম্মির দিকে তাকায়। স্বামীর কালো মুখ দেখে দ্রুত শাম্মি ওর বাবাকে বলে ওঠে,


"বাবা, তুমি এসব কী বলছো? আমার স্বামী তোমার সন্তানের মতোই... সে তোমাকে দুটো দিতেই পারে। এতে অন্যজনকে না দিলে তোমার কী? তাছাড়া আমার শ্বশুর কুঁড়ে লোক, ঘর ছেড়ে বের হন না, তাই তাকে কিনে দিতে হয় না। আর তুমি দশ বাজার ঘুরে বাজার করো, তোমার ভালো কাপড় না হলে হয় বলো?"


মেয়ের কথা শুনে রাহাত সাহেব রাগের চোটে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে হুংকার ছেড়ে বলেন,


"শাম্মি, তুই এতটা নিচ! এতটা নিকৃষ্ট হয়েছিস! তোর মা তো এমন ছিল না। তুই এমন হলি কী করে! আরে, আমার জামাইয়ের কিছুর প্রয়োজন নেই। আল্লাহ দিলে আমার দুটো পুত্র সন্তান আছে, যাদের আমি মানুষ করতে পেরেছি। আমাকে একটা দিলে তার শ্বশুরকেও একটা দেয়। আমি খুশি হই এতে। কিন্তু তোর জামাই তো কাপুরুষ। নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার বসালেও মনের মাঝে পশু ভাবটা আছে। সে শিক্ষিত হয়েছে, মানুষ হয়নি।"


আবিদ পুরোটা সময় ওর শ্বশুরের কথাগুলো শুনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওর স্ত্রী শাম্মির দিকে তাকিয়ে থাকে। শাম্মি চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকে। তাছাড়া, কী বা করবে, আবিদের দিকে তাকানোর সাহসও তার নেই।


অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আবিদ বলে ওঠে,


"বাবা, আমাকেও দুটো থাপ্পড় দিন। দুটো থাপ্পড় আমারও প্রাপ্য।"


রাহাত সাহেব আবিদের কথায় পরপর কষে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দেন। পাথরের মতো শক্ত হাতের থাপ্পড় খেয়ে আবিদের চোখ-মুখে অন্ধকার নেমে আসে। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে মুচকি হেসে আবিদ বলে,


"বাবা, আর্মিদের হাত এত শক্ত হয় জানা ছিল না।


আজ শুধু গালে পড়েছে। এরপর পিঠেও পড়বে। আমি ভাবতেই শিউরে উঠি। তুমি কেমন সন্তান, যে নিজের বাবাকে ভালো শীতের পোশাক না কিনে দিয়ে বউয়ের বাবা কে কাপড় দিতে এসেছো? তোমার বাবার অসহায় চাহনি আমি সেদিন দূর থেকে দেখেছিলাম। সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি লজ্জায়। কারণ তখন আমার গায়ে ছিল তোমার দেওয়া আরেকটা শীতের পোশাক।"


আবিদ নিশ্চুপ। রাহাত সাহেব অগ্নি চোখে শাম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,


"তোকে আর যেন এ বাড়িতে না দেখি। যতদিন না নিজের শ্বশুরকে বাবা মতো ভালোবাসতে পারবি, ততদিন এ বাড়িতে আসবি না। বেরিয়ে যা তোরা দুটো অমানুষের দল।"


আবিদ শাম্মির হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসে শ্বশুরবাড়ি থেকে। রাস্তায় কেউ কারো সাথে কথা না বললেও বাসায় আসতেই আবিদ ওর শাম্মিকে নিজের ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,


"শাম্মি, এসবের মানে কী! তোমার বাবা আমায় ভুল বুঝলো! আরে, আমি তো দুজনের জন্যই কাপড় কিনতে টাকা দিয়েছিলাম। তুমি কি আমার বাবাকে কিনে দাওনি?"


শাম্মি মুখটা নিচু করে ভয়ে ভয়ে বলে,


"আ...আসলে আবিদ..."


"বলো..."


"আসলে ভেবেছিলাম তোমার বাবার আছেই। তাই টাকা নষ্ট করিনি।"


আবিদ আর নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রচণ্ড জোরে জানালার থাই গ্লাসে ঘুষি মেরে হনহন করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।


আজ অনেকদিন পর বাবার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আবিদ। কমসে কম ছয় মাস তো হবেই। অফিসের কাজে এই ট্যুর, ওই ট্যুর করতে করতে বাসায় তেমন একটা আসেনি। আসলেও তখন ওর বাবা বাসায় থাকতো না। রাতেও তেমন দেখা হতো না ওদের। আর তাই আবিদ ওর স্ত্রীকে সব দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে ভাবেনি শাম্মি এমন কিছু করবে।


আবিদ দরজায় নক করে,


"বাবা, আছো?"


ভেতর থেকে আবিদের বাবা আহমেদ সাহেব সাড়া দেন,


"হ্যাঁ, আছি। ভেতরে এসো, আবিদ।"


আবিদ মাথাটা নিচু করে ওর বাবার পাশে গিয়ে বসে। আহমেদ সাহেব বহুদিন পর ছেলেকে দেখে হাসি মুখে বলেন,


"বহুদিন পর তোমায় দেখলাম... আজকাল খুব ব্যস্ত হয়ে গিয়েছো?"


আবিদ ওর বাবার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ছলছল চোখে বলে,


"বাবা, আসলে অফিসে কাজের চাপ ছিল খুব, তাছাড়া..."


আবিদকে বাকিটা বলতে না দিয়েই আহমেদ সাহেব বলে ওঠেন,


"থাক, আমি বুঝি। তা শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলে যে? আর তোমার হাত কেটে গেলো কীভাবে?"


আবিদ মাথাটা নিচু করে বলে,


"আসলে বাবা..."


আহমেদ সাহেব চোখ দুটো বন্ধ করে নেন। মিনিট খানেক বন্ধ করে রাখার পর ধীরে ধীরে চোখ খুলে বলেন,


"বাইরে বেশ ঠান্ডা। তুমি বলেছিলে, আমার কিছু লাগলে বউমাকে বলতে। অনেকদিন হলো, বউমাকে শীতের পোশাক আর একটা জুতো কিনে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সে দেয়নি। তোমার কাছে কিছু টাকা থাকলে আমাকে দিয়ে যেও। বউমাকে বলতে আমার লজ্জা লাগে ভীষণ।"


আবিদ বলেন, "বউমাকে বলতে হবে না বাবা। আমি আছি। চলো বের হই।"


আহমেদ সাহেবকে নিয়ে আবিদ সারাদিন ঘোরাঘুরি করে এবং শীতের পোশাক কিনে দিয়ে বাসায় ফেরে রাতে। আজ আবিদ বেশ খুশি। বহুদিন পর বাবার মুখে হাসি দেখে।


রাত ১২টা। আবিদ নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখে শাম্মি সেই আগের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ কয়েক পলক শাম্মির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,


"কি হলো, শাম্মি? এভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন! কিছু হয়েছে?"


শাম্মি আবিদের কথা শুনে তড়িৎ গতিতে আবিদের পা দুটো জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে। শাম্মির এমন আচরণে আবিদ অবাক হয়ে বলে,


"এই, কি করছো! পা ছাড়ো।"


"না, তুমি আগে আমায় ক্ষমা করে দাও।"


আবিদ থমথমে কণ্ঠে বলে,


"সে তো তোমার বাবার হাতের দুটো থাপ্পড় খাওয়ার পরই হয়ে গেছে। এখন উঠে এসো, বউ।"


আবিদ শাম্মিকে পা থেকে টেনে তুলে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে আদুরে গলায় বলে,


"আচ্ছা শাম্মি, তুমি টাকাগুলো কী করেছো, বলো তো?"


শাম্মি আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,


"ওগুলো ড্রয়ারেই রেখে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, টাকা নষ্ট করে কী হবে! জমিয়ে রাখি।"


"তাহলে নিজের বাবারটা কিনে কেন নষ্ট করেছিলে! ওটাও জমিয়ে রাখতে পারতে।"


শাম্মি নিশ্চুপ। আবিদ শাম্মিকে আরও শক্ত করে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে,


"এমন স্বভাবের হইয়ো না, শাম্মি। তোমার পেটের মাঝেও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে আমাদের অনাগত সন্তান।"


"আমি ভুল করেছি, আবিদ।"


"হুম, প্রথম ভুল। ক্ষমা করাই যায়। তবে পরের বার আর করোনা প্লিজ।"


"প্রমিজ, আর করবো না।"


আবিদ  পরম মমতায়  শাম্মির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে  দেয় শিউরে উঠে শাম্মি শক্ত করে জরিয়ে ধরে আবিদ কে,,,,


কখনো কখনো গায়ে হাত দিয়ে বা চিৎকার করে কিছু হয়না।বুঝিয়ে বলতে হয় আশা করি তারা বুঝবে।


#ভালোবাসার_শীতলতা

#লেখক_তৌফিক

কোন মন্তব্য নেই:

সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে।

 সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে। ক্লিওপেট্রা ....মিশ...