এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মাইকেল মধুসূদন দত্তের দশটি জনপ্রিয় কবিতা।

 ☘️  মাইকেল মধুসূদন দত্তের দশটি জনপ্রিয় কবিতা।

✅ কেউ বিষ খেলে কী করবেন ??

 জানা থাকলে বেঁচে যাবে অনেক জীবন!

পরিবারের কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে যে কেউ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে৷ 


আবার কেউ মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে জীবন ধ্বংসকারী কোন ওষুধ পান করে৷ এছাড়াও বড়দের অসতর্কতার কারণে বাচ্চারা ভুলবশত বিষ পান করে।


প্রায়ই বিষপানের রোগী পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য: কীটনাশক পান করা, অনেক পরিমাণে ঘুমের ঔষধ খাওয়া, কেরোসিন পান করা, ধুতরার বীজ খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া, কোনো ঔষধ ভুলক্রমে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলা, বিষাক্ত মদ্যপান বা অতিরিক্ত মদপান ইত্যাদি৷ 


বিষপানের রোগী আসা মাত্র বিষপানের ধরণ সম্পর্কে আন্দাজ করা সম্ভব৷ সাধারণভাবে বিষপানের পর দেরী না করে নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হাসপাতালে পাঠাতে হবেঃ-

১) রোগী শ্বাস নিতে না পারলে তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।

২) সজ্ঞান রোগীকে সর্বপ্রথম একগ্লাস পানি বা দুধ পান করানো ভালো। কারণ এতে বিষ পাতলা হয়ে যায় ও বিষের ক্ষতির প্রভাব কমে আসে৷ 

৩) শিশুদের ক্ষেত্রে আধা গ্লাসের মতো পানি বা দুধ রোগীকে পান করানো ভালো৷ ৪) অজ্ঞান রোগীকে তরল দেয়া যাবে না৷ তাকে সুবিধাজনক স্থানে শুইয়ে দিতে হবে।


রোগীকে বমি করানো উচিত কিনা তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ কারণ সকল বিষপানের পর বমি করানো যাবে না৷ রোগীর শরীরে খিঁচুনি থাকলে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রোগীকে বমি করানো যাবে না৷ কিছু বিষ যা প্রবেশের সময় মুখ, মুখগহ্বর ও অন্ননালীতে প্রদাহের বা দগ্ধতার সৃষ্টি করে অথবা ফুসফুসে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করে এরূপ বিষপানের রোগীকে কোনক্রমেই বমি করানো উচিত নয়৷ কারণ বমি করার সময় উল্লেখিত পদার্থগুলো পুনরায় ক্ষতিসাধন করে ক্ষতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।


পোড়া ও ক্ষত সৃষ্টিকারী বিষঃ

----------------------------

১) অম্ল বা এসিড।

২) ক্ষার বা এলকালি

৩) গৃহে ব্যবহৃত বিশোধক

৪) গোসলখানা পায়খানা নর্দমা পরিষ্কারকারক বিশোধক।


প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিষঃ

----------------------

১) কেরোসিন

২) তারপিন তেল

৩) রঙ এবং রঙ পাতলাকারক দ্রব্য

৪) পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য।


রোগী কোন ধরনের বিষ পান করেছে তা রোগীর মুখ, মুখগহ্বর ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করলে অতি সহজেই অনুমান করা যায়ঃ-

১) পোড়া ও ক্ষত সৃষ্টিকারী বিষপানে রোগীর মুখ ও মুখগহ্বরে পোড়া ক্ষত বা ফোসকা দেখা যাবে।

২) কেরোসিন জাতীয় বিষপানে রোগীদের শ্বাসে উক্ত দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যাবে।


৪ ঘণ্টার ভেতর বিষ খেয়ে থাকলে এবং জ্ঞান থাকলে রোগীকে নিম্নলিখিতভাবে বমি করানো যেতে পারেঃ

১) মুখের মধ্যে আঙুল প্রবেশ করিয়ে বমি করানো যায়।খারাপ স্বাদযুক্ত ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম স্বল্প গরম দুধসহ বা স্বল্প গরম লোনা পানি পান করালে অনেকেরই সহজে বমি হয়ে যায়৷ 

২) তিতা কোন দ্রব্য মুখের মধ্যে দিয়েও বমি করানো যেতে পারে


বমি করানোর সময় বিশেষভাবে নজর দিতে হবে যেন বমিকৃত কোনো জিনিস বা পানীয় ফুসফুসে প্রবেশ না করে৷ এজন্য বমি করানোর সময় রোগীর মাথা নিচের দিকে ও মুখ পাশে কাত করিয়ে রাখতে হবে৷ হাসপাতালে রোগীকে বিষ অপসারণের ক্ষেত্রে রাইলস টিউবের (একটি বিশেষ নল) সাহায্যে করা যেতে পারে৷


বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর ঔষধ প্রয়োগঃ কিছু বিষকে নিষ্ক্রিয় করার ঔষধ রয়েছে৷ রোগী কোন বিষ দ্বারা আক্রান্ত তা জানতে পারলে সেই বিষকে নিষ্ক্রিয় করা ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীর অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব৷ এক্ষেত্রে চিকিৎ্সকের পরামর্শ নিতে হবে৷

১. বঙ্গভাষা 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;-

তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,

পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।

অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ,

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;-

কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে-

``ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!''

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে

মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥


২. কপোতাক্ষ নদ 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে |

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে ;

সতত ( যেমতি লোক নিশার স্বপনে

শোনে মায়া-যন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে

জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!---

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,

কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্ম-ভূমি-স্তনে!

আর কি হে হবে দেখা?---যত দিন যাবে,

প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে

বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে

বঙ্গজ-জনের কানে, সখে, সখা-রীতে

নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে

লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে!


৩. কবি 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


কে কবি--- কবে কে মোরে? ঘটকালি করি,

শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,

সেই কি সে যম-দমী? তার শিরোপরি

শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন?

সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী

যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন,

অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি

ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ।

আনন্দ, আক্ষেপ ক্রোধ, যার আজ্ঞা মানে

অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে;

নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে

পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে;

মরুভূমে--- তুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে

বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে!


৪. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।

করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,

দীন যে, দীনের বন্ধু !-- উজ্জল জগতে

হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।

কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,

যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,

সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে

গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !

দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।

যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে

দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।

পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে,

দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,

নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।


৫. কমলে কামিনী 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে

কালিদহে | বসি বামা শতদল-দলে

( নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে

মনোহরা|)  বাম করে সাপটি হেলনে

গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে |

গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,

বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে|---

কার না ভোলে রে মনঃ, এ হেন ছলনে!

কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,

ধন্য তুমি বঙ্গভূমে!যশঃ-সুধাদানে

অমর করিলা তোমা অমরকারিণী

বাগ্ দেবী!ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,

এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?----

বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী||


৬. অন্নপূর্ণার ঝাঁপি

 (চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


মোহিনী-রূপসী-বেশে ঝাঁপি কাঁখে করি,

পশিছেন, ভবানন্দ, দেখ তব ঘরে

অন্নদা!বহিছে শূন্যে সঙ্গীত-লহরী,

অদৃশ্যে অপ্সরাচয় নাচিছে অম্বরে|----

দেবীর প্রসাদে তোমা রাজপদে বরি,

রাজাসন, রাজছত্র, দেবেন সত্বরে

রাজলক্ষ্মী; ধন-স্রোতে তব ভাগ্যতরি

ভাসিবে অনেক দিন, জননীর বরে|

কিন্তু চিরস্থায়ী অর্থ নহে এ সংসারে;

চঞ্চলা ধনদা রমা, ধনও চঞ্চল;

তবু কি সংশয় তব, জিজ্ঞাসি তোমারে?

তব বংশ-যশঃ-ঝাঁপি---- অন্নদামঙ্গল---

যতনে রাখিবে বঙ্গ মনের ভাণ্ডারে,

রাখে যথা সুধামৃতে চন্দ্রের মণ্ডলে||


৭. রসাল ও স্বর্ণ-লতিকা


রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে;--

“শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে!

নিদারূণ তিনি অতি;

নাহি দয়া তব প্রতি;

তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে|

মলয় বহিলে, হায়,

নতশিরা তুমি তায়,

মধুকর-ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া;

হিমাদ্রি সদৃশ আমি,

বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী,

মেঘলোকে উঠে শির আকাশ ভেদিয়া!

কালাগ্নির মত তপ্ত তপন তাপন,---

আমি কি লো ডরাই কখন?

দূরে রাখি গাভী-দলে,

রাখাল আমার তলে

বিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,--

শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন!

আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন|

কেহ অন্ন রাঁধি খায়

কেহ পড়ি নিদ্রা যায়

এ রাজ চরণে|

শীতলিয়া মোর ডরে

সদা আসি সেবা করে

মোর অতিথির হেথা আপনি পবন!

মধু-মাখা ফল মোর বিখ্যাত ভুবনে!

তুমি কি তা জান না, ললনে?

দেখ মোর ডাল-রাশি,

কত পাখী বাঁধে আসি

বাসা এ আগারে!

ধন্য মোর জনম সংসারে!

কিন্তু তব দুখ দেখি নিত্য আমি দুখী;

নিন্দ বিধাতায় তুমি, নিন্দ, বিধুমুখি!”

যুদ্ধার্থ গম্ঙীরতার বাণী তব পানে!

সুধা-আশে আসে অলি,

দিলে সুধা যায় চলি,---

কে কোথা কবে গো দুখী সখার মিলনে?

“ক্ষুদ্র-মতি তুমি অতি”

রাগি কহে তরুপতি,

“নাহি কিছু অভিমান? ধিক্ চন্দ্রাননে!”

নীরবিলা তরুরাজ; উড়িল গগনে

যমদূতাকৃতি মেঘ গম্ভীর স্বননে;

আইলেন প্রভঞ্জন,

সিংহনাদ করি ঘন,

যথা ভীম ভীমসেন কৌরব-সমরে|

আইল খাইতে মেঘ দৈত্যকুল রড়ে:

ঐরাবত পিঠে চড়ি

রাগে দাঁত কড়মড়ি,

ছাড়িলেন বজ্র ইন্দ্র কড় কড় কড়ে!

ঊরু ভাঙ্গি কুরুরাজে বধিলা যেমতি

ভীম যোধপতি;

মহাঘাতে মড়মড়ি

রসাল ভূতলে পড়ি,

হায়, বায়ুবলে

হারাইলা আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে!

ঊর্দ্দ্বশির যদি তুমি কুল মান ধনে;

করিও না ঘৃণা তবু নীচশির জনে!

এই উপদেশ কবি দিলা এ কৌশলে||


৮. সমাধি-লিপি     


দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে

(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি

বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত

দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!

যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে

জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি

রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী!


[স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিন দিন পরেই কলকাতা জেনারেল হাসপাতালে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত পরলোক গমন করেন। তাঁকে কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড ক্রিশ্চিয়ান সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়।তাঁর বিখ্যাত সমাধি-লিপি তিনি নিজেই লিখে গিয়েছিলেন।]


৯. ঈশ্বরী পাটনী 

(চতুর্দশপদী কবিতাবলী)


“সেই ঘাটে খেয়া দেয় ঈশ্বরী পাটনী |”

                 -অন্নদামঙ্গল |


কে তোর তরিতে বসি, ঈশ্বরী পাটনি?

ছলিতে তোরে রে যদি কামিনী কমলে,---

কোথা করী, বাম করে ধরি যারে বলে,

উগরি, গ্রাসিল পুনঃ পূর্ব্বে সুবদনী?

রূপের খনিতে আর আছে কি রে মণি

এর সম? চেয়ে দেখ, পদ-ছায়া-ছলে,--

কনক কমল ফুল্ল এ নদীর জলে---

কোন্ দেবতারে পূজি, পেলি এ রমণী?

কাঠের সেঁউতি তোর, পদ-পরশনে

হইতেছে স্বর্ণময়!এ নব যুবতী---

নহে রে সামান্যা নারী, এই লাগে মনে;

বলে বেয়ে নদী-পারে যা রে শীঘ্রগতি|

মেগে নিস্, পার করে, বর-রূপ ধরে

দেখায়ে ভকতি, শোন্, এ মোর যুকতি!


১০. মেঘনাদ ও বিভিষণ

 ( মেঘনাদবধ কাব্য থেকে, ষষ্ঠ সর্গের অংশবিশেষ )


"এতক্ষণে"--অরিন্দম কহিলা বিষাদে

"জানিনা কেমনে আসি লক্ষণ পশিল

রক্ষঃপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব

একাজ, নিকষা সতী তোমার জননী,

সহোদর রক্ষশ্রেষ্ঠ?--শূলী-শম্ভূনিভ

কুম্ভকর্ণ?ভ্রাতৃপুত্র বাসব বিজয়ী?

নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?

চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?

কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরুজন তুমি

পিতৃতুল্য|ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,

পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,

লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে|"

   উত্তরিলা বিভীষণ;--"বৃথা এ সাধনা,

ধীমান্!রাঘবদাস আমি; কি প্রকারে

তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে

অনুরোধ?" উত্তরিলা কাতরে রাবণি;--

"হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!

রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে

আনিলে ও কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!

স্থপিলা বিধুরে বিধি স্থানুর ললাটে;

পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি

ধুলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে

কে তুমি? জনম তব কোন্ মহাকুলে?

কেবা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে

করে ফেলি রাজ হংস পঙ্কজ কাননে;

যায় কি সে কভু, পঙ্কিল সলিলে,

শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী

কবে, হে বীর-কেশরী, সম্ভাষে শৃগালে

মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,

অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে|

ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষণ; নহিলে

অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?

কহ, মহারথি, একি মহারথিপ্রথা?

নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে

এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া

এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,

বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!

দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,

রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কি দেখি

ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?

নিকুম্ভিলা-যজ্ঞাগারে প্রগল্ ভে  পশিল

দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে|

তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে

বনবাসী! হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে

ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে

কীটবাস? কহ, তাত, সহিব কেমনে

হেন অপমান আমি,--ভ্রাতৃ পুত্র তব?

তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?"

   মহামন্ত্রবলে যথা নম্রশিরঃ ফণী,

মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী

রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;--

"নহি দোষী আমি, বত্স; বৃথা ভর্ত্স মোরে

তুমি! নিজ কর্ম দোষে হায় মজাইলা

এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!

বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে

পাপপূর্ণ লঙ্কা পুরী; প্রলয়ে যেমতি

বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কাল-সলিলে!

রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী

তেঁই আমি! পরদোষে কে চাহে মজিতে?"

  রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি

নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,

কহিলা বীরেন্দ্র বলী;--"ধর্মপথগামী,

হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে

তুমি;--কোন্ ধর্মমতে, কহ দাসে, শুনি,

জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,--এ সকলে দিলা

জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি

পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি

নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!

এ শিক্ষা হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?

কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,

হে পিতৃব্য, বর্বরত কেন না শিখিবে?

গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি|"


কোন মন্তব্য নেই:

জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************

 ★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...