জ্বীনের তাল পত্র??
নবাবপুর তখনো আজকের মতনই জমজমাট!!
প্রতিটা রন্ধে রন্ধে খালি টাকা!
কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো দিনে!
অবশ্য এখন প্রতি মিনিটেই কোটি টাকার লেনদেন হয়!
ননবেঙ্গলী একজন উঠতি বয়সী লোক সবকিছু ছেড়ে বিক্রি করে নবাবপুরে এসে একটি খুপরি দোকানে উঠেছেন!
এই দোকানই তার সবকিছু!
এখানেই থাকেন, খাওয়া দাওয়া করেন।সমস্যা হয় প্রাকৃতিক সাড়া দেয়ার কাজে!
সেটারো ব্যবস্থা আছে বটে।তবে সেটা পাশের মার্কেটে!চাইলেই যাওয়া আসা করা যায় না।তবে কাজ চলে যা!
তারকাঁটার ব্যবসা করেন।এখানে ব্যবসা হয় ঘড়ি ধরে!
ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু সাথে শুরু হয় ব্যবসা ব্যাংক লেনদেন বন্ধ ব্যবসাও বন্ধ!
এখনো নবাবপুরের আদর্শ ব্যবসায়ী বলতে যা বুঝায় বেলাল সেটা হননি।
তার ক্যাপাসিটি কম তাই দিনে হাজার বারোশ পর্যন্ত ব্যবসা হয়!
এতেই তার চলে যায়।প্রতি ওয়াক্ত নামাজ একদম নিয়ম মেনে আদায় করেন।আজান দেয়া মানেই তার কার্যক্রম জামাত আদায় করা পর্যন্ত স্থগিত থাকে
রাত্রে দোকানেই যেহেতু থাকেন সেখানেই তাহাজ্জুদ কুরআন পাঠ করেন
এভাবেই তার দিন চলে যাচ্ছিলো!!
এদিকে ২০১২ সালের ঘটনা।আমি ঘটনাক্রমে সেই ব্যবসায়ীর দোকানের পাশে দাড়িয়ে একটা ফ্রেম দেখে থমকে দাড়াই
তখন নবাবপুর তথা দেশের সবচেয়ে ধনীদের মধ্যে উনি ১০০ জনে থাকবেনই!
তো ফ্রেম দেখে অবাক হয়েছিলাম।সেই ফ্রেমে বাঁধানো আছে কোন গাছের পাতা!
পাতায় কিছু পোকামাকড় সাদৃশ্য কিছু লেখা ছিলো!
দোকানে গেলে আপনি যত টাকারই মাল কিনেন না ক্যান?
সেই ফ্রেম বরাবর দাড়াতে পারবেন না।তারাই সরিয়ে দিবে!
তো যাইহোক পুরোনো ঘটনায় যাই।একদিনের কথা।বেলাল তাহাজ্জুদ পড়ে দোকানের বাইরে এসে দাড়ালেন
লোডশেডিং চলছে।ভেতরে ভালো গরম!
বাধ্য হয়ে বাইরে আসা।আজকে মনে হচ্ছে ফজর পড়েই ঘুমাতে হবে।কে জানে এর মধ্যে কারেন্ট আসবে কি না!
হঠাৎ ধরাম করে কিছু একটা পড়লো!
পড়েই সেটা মাটিতে বাউন্স করেই একদম বেলাল এর দোকানে ঢুকে গেল!
দ্রুত চার্জার লাইট নিয়ে ভেতরে ঢুকে জিনিসটা খুঁজে পেলেন
একটা তালপাতার হাতপাখার মতন জিনিস।পুরো পাতায় আঁকা বুকি করা!
জাদুটোনা??
তাকে ঘায়েল করার কেউই নাই।এখানে উনি ভীনদেশী!
একটা উঁচু জায়গায় রেখে দিতেই কারেন্ট চলে আসলো
সেদিনই উনার ফজর নামাজ মিস হলো
অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখলেন তার দোকানের বাইরে একটা অদ্ভুত প্রানী দাড়িয়ে আছে!
সে দোকানে ঢোকার জন্য হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে!
সকালে কাজের ব্যস্ততায় সেই তালপাতার কথাই মনে রইলো না
কাজ কর্ম শেষ করে দোকানে গা এলিয়ে দিতেই মনে পড়লো তালপাতার কথা!
অদ্ভুত লেখা সব।কি আছে এখানে??
কোন নিশি পাখি নিয়ে যাচ্ছিলো??
তার ঠোঁট ফসকে পড়ে গেছে??
সেটা খুবই যত্নে রাখলেন।চাইলেই ফেলে দিতে পারতেন
সেদিনই স্বপ্ন দেখলেন সেই অচেনা প্রানী দলবদ্ধ হয়ে এসেছে!
তারাও নানান চেষ্টা করছে দোকানে ঢোকার!
অনেকদিন কেটেছে। তালপাতার কিছু ব্যপার তাকে ভাবাচ্ছে!
সেটা যেখানেই রাখেন না ক্যান??জায়গা মতন পাওয়া যায় না!
অবশ্য রাত্রে রাখা জায়গায় ঠিক থাকে। আর প্রতি রাত্রে সেই একই রকম স্বপ্ন!
অচেনা প্রানী হয়ে দাড়ায় থাকে।যেন তারা দোকান খোলার অপেক্ষায় থাকে!
ব্যবসা হু হু করে বাড়তেই থাকলো!
ব্যস্ততা শেষে সময় পাওয়া যায় না।তবু আমল এদিক-সেদিক করেন নি!
বছর শেষ হতে না হতেই বেলাল দুটো দোকান একটি বিশাল গোডাউন এর মালিক হলেন
পরের বছর কিনলেন তিনতলা রেডিমেড একটি বাড়ি
স্থির করলেন হজ্বে যাওয়ার।
একদম শেষদিকে সেই তালপাতার দিকে চোখ গেল
কি মনে করে সাথে নিলেন!
তার বিখ্যাত একটি ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার কথা। আপন ভাগ্নে সেখানে চান্স পেয়ে পড়াশোনা করে!
তাকে আলাদা দাওয়াত দিয়ে রেখেছে!
যাইহোক হজ্ব এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গেলেন ভাগ্নের কাছে!
তার কাছে আসার একটাই মতলব তালপাতা দেখানো এবং প্রতিদিন দেখা স্বপ্নের ব্যখা জানা!
পৃথিবীর বিখ্যাত ইসলামি ইউনিভার্সিটি বলে কথা!
ভাগ্নে মেহমানদারির চূড়ান্ত করলো।
তার জন্যই এখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলেই বিগলিত হচ্ছে ভাগ্নে
তার তালপাতা নিয়ে একজন অধ্যাপক এর নিকটে গেল
ভাগ্নে আগেই নাকি তার অধ্যাপককে জিজ্ঞেস করেছিলো।উনিই সব নিয়ে দেখা করতে বললেন!
অধ্যাপক বেলালের চেয়ে বেশি আগ্রহী হলেন তার কাছে রাখা সেই তালপাতার দিকে!
উনি বলতে গেলে ছিনিয়ে নিলেন!
চোখ বড়বড় করে দেখলেন আর নিজের ভাষায় কি সব বলতে লাগলেন!
ভদ্রলোক মিশরীয়!
আল আজহার ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রভাষক!
এবার তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন "এইটা তালপত্র।প্রাচীনকাল এর নানান পত্র এখানে লিখা হতো।তখনকার খাতা নোটবুক!
এটা সাধারণ কোন তালপত্র নয়।এটা জ্বীনের কিতাব!
এখানে তাদের জন্য কোন দিক নির্দেশনা অথবা বিধিনিষেধ লেখা আছে!
প্রয়োজনীয় কিছু অবশ্যই আছে!
এটা কোন জ্বীনে কাছ থেকেই ছিটকে পড়েছে সোজা তোমার দোকানে। তুমি স্পর্শ করায় তারা এটা আর গ্রহন করতে পারছে না।এদিকে এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ
তারা তোমার রেখে দেয়া জায়গা থেকেই পাঠ করে।
তোমার প্রতি তারা কৃতজ্ঞ তুমি ফেলে দাও নি।অথবা নষ্ট করে ফেলো নাই
তারা এসে তোমার এখানে সেটা দেখে এবং পাঠ করে!
তুমি এটা স্বযত্নে একটি জায়গায় রেখে দিও।তারা তোমাকে স্বপ্নে জ্বালাবে না
এইটা করলেই হবে!
তোমার সমস্যা শেষ হবে!
বেলাল এসে সেই থেকে দোকানের সামনে তালপত্র সংরক্ষণ করে রেখে দিলেন!
তার স্বপ্ন দেখা শেষ হলো!
ঘটনায় লিখা নাম,ঠিকানা,ব্যক্তি কাল্পনিক!
বাকি ঘটনা বিশ্বাস না করলেও সত্যি!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন