সক্রেটিস ছিলেন গ্রিক দার্শনিক। প্লেটো সক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন এবং এরিস্টটল ছিলেন প্লেটোর ছাত্র। এ হিসেবে প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনজন দার্শনিকের মধ্যে প্রথম সক্রেটিস, প্লেটো দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এরিস্টটল।
দর্শন সম্বন্ধে চমৎকার একটি কথা প্রচলিত আছে —
তা হল : "দর্শন হচ্ছে গুরুমারা বিদ্যা ; প্রকৃত দার্শনিক তার ছাত্রদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করবেন। শিক্ষক যা বলেছেন যদি ছাত্র অন্ধভাবে সে কথারই পুনরাবৃত্তি মাত্র করেন, তা হলে সেটা আর যাই হোক দর্শন হবে না।"
সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটল এই তিন গুরুশিষ্যই পশ্চিমা দর্শনের ভিত রচনা করেছেন বলা যায়। প্লেটো একাধারে গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক ভাষ্যের রচয়িতা হিসেবে খ্যাত। তিনিই পশ্চিমা বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এটি ছিল এথেন্সের আকাদেমি।
দার্শনিক প্লেটোকে নিয়ে মজার অনেক গল্প প্রচলিত আছে। দার্শনিক প্লেটো একবার মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষ হচ্ছে পালকবিহীন দ্বিপদ একটি প্রাণী।’ এই সংজ্ঞা শুনতে পেয়ে আরেক দার্শনিক ডায়োজেনিস একটি মুরগি জবাই করে সবগুলো পালক ফেলে দিয়ে প্লেটোকে পাঠিয়ে দিলেন। সঙ্গে একটি কাগজে লিখলেন, ‘এটাই তোমার সংজ্ঞায়িত মানুষ।’
সক্রেটিসকে নিয়েও মজার মজার অনেক গল্প প্রচলিত হাজার বছর ধরে। সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হল — সক্রেটিসের স্ত্রী তাকে সব সময় বাক্যবাণে জর্জরিত করত। কারণ তিনি যতই বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তি হোন না কেন, টাকা পয়সা কি করে রোজগার করতে হয় সে বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ ছিলেন। এ জন্য তাঁর স্ত্রী সব সময় খেপে থাকতেন। বলতেন, এহ, কত জ্ঞানী লোক। জ্ঞান দিয়ে কি হবে যদি টাকা-পয়সা আনতে না পারো। ওই দেখো অমুককে, ব্যবসা করে কত বড়লোক হয়েছে। বউকে কত দামে দামী গয়না পোষাক কিনে দেয়। আর তুমি? একেবারে অপদার্থ। ইত্যাদি ইত্যাদি...
একদিন তাঁর সঙ্গে একজন দেখা করতে এল। তখন তাঁর স্ত্রী ঘরের মধ্যে থেকে তাঁর উদ্দেশ্যে বাক্যবাণ বর্ষণ করছিলেন। আগত ব্যক্তি বললেন,
- এ সব কি? আপনার মত বিখ্যাত ব্যক্তিকে এই সব কথা বলছে?
- না না মনে হয় অন্য কাউকে বলছে। আমার স্ত্রী খুব ভাল।
- নাহ। আপনাকেই তো বলছে। আমি ভাল করে শুনেছি।
- হ্যাঁ ও একটু রাগী। রাগ হলেই এই সব বলে। কিন্তু কখনও মারেনি আমাকে। যতই রাগুক আমার গায়ে হাত তোলে না।
সক্রেটিসের স্ত্রী খুব চেঁচামিচি করতে করতে বেরিয়ে এসে বললেন —
- অ্যাঁঁ? এত কথা বলছি কিছু গায়ে লাগছে না?
এই বলে তাঁর গায়ে এক গামলা নোংরা জল ঢেলে দিলেন।
আগত ব্যক্তি বলল —
- মারে না তো বুঝলাম। এটা কি হল?
- বুঝলে না? মেঘ গর্জনের পরই তো বারিবর্ষণ হয়।
সক্রেটিসের যখন মৃত্যুদন্ড হয় তখন তাঁর স্ত্রী এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল —
- বিনা দোষে ওরা তোমাকে শাস্তি দিল।
সক্রেটিস হেসে বলেছিলেন —
- দোষ করে শাস্তি পেলে কি তুমি খুশী হতে?
লেখা : রাজিক হাসান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন