মধ্যযুগের আলকেমিস্টরা আজীবন স্বপ্ন দেখতেন—সিসাকে বা অন্যান্য ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করা এবং অমরত্বের ওষুধ তৈরি করা। যদিও সিসা (Lead) ও সোনা (Gold) একেবারে আলাদা মৌলিক পদার্থ, পার্থক্য মাত্র নিউক্লিয়াসের তিনটি প্রোটন। সোজা বাংলায়, সিসা থেকে যদি ঠিক তিনটি প্রোটন সরানো যায়, তাহলেই তা সোনায় পরিণত হবে। কিন্তু এটা শুনতে যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে Large Hadron Collider (LHC)-এ চলমান ALICE নামের এক গবেষণা প্রকল্প। যারা LHC-র নাম প্রথম শুনছেন তাদের বলে রাখি, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্টিকেল অ্যাক্সেলারেটর, যেটা সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত। এখানে কণাগুলোকে প্রায় আলোর গতিতে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঠানো হয়।
গবেষকদের লক্ষ্য ছিল এর ভেতরে বিগ ব্যাং-এর মতো একটি অবস্থা তৈরি করা। এজন্য তারা সিসার পরমাণু একে অপরের দিকে ছুড়ে দেন, প্রায় আলোর গতিতে। এই সংঘর্ষে নিউক্লিয়াসগুলো তীব্র শক্তির মুখোমুখি হয়। সাধারণত এতে পরমাণু ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু কখনো কখনো ঘটে ‘near miss’ অর্থাৎ উক্লিয়াসগুলো খুব কাছ দিয়ে চলে যায়, ধাক্কা না খেয়ে।
তখন কেবল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বল কাজ করে এবং তৈরি হয় এক ভয়াবহ ইলেকট্রিক ফিল্ড। এই শক্তিশালী ফিল্ড সিসার নিউক্লিয়াস কাঁপিয়ে তোলে, ফলে মাঝে মাঝে তা কিছু প্রোটন ছুড়ে ফেলে। যদি কোনো নিউক্লিয়াস ঠিক তিনটি প্রোটন হারায়, তাহলে সেটি আর সিসা থাকে না—সেটা পরিণত হয় সোনায়।
গবেষকরা বিশেষ ডিটেক্টরের সাহায্যে দেখেছেন, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮৯,০০০টি সোনার পরমাণু তৈরি হচ্ছে! যদিও এগুলোর মোট ওজন মাত্র ২৯ ট্রিলিয়ন ভাগের এক গ্রাম এবং এই সোনার অস্তিত্ব ছিল খুবই ক্ষুদ্র সময়ের জন্য, পরবর্তীতে সেটা ধ্বংস হয়ে যায়।
কয়েকশো বছর আগে আলকেমিস্টদের যেটা ছিল কল্পনা, আজ তা বিজ্ঞানের হাত ধরে বাস্তব হয়েছে। এটি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এমন ছোট ছোট পর্যবেক্ষণই ভবিষ্যতের বড় গবেষণার ভিত্তি গড়ে তোলে। Compiled by: বিজ্ঞান্বেষী
#Bigganneshi #schoolofsciencelab #hilightseveryonefollowers #Metaquest3 #science #socialmediasupport
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন