একোনাইট নেপিলাসঃ
তরুণ শিক্ষার্থী বন্ধুদের সহজে মনে রাখার সুবিধার্থে একোনাইট'কে "ভীষণ" শব্দটি দিয়ে চিত্রিত করতে চেষ্টা করব। আসুন, সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নিই -
সদৃশ :
যে উপাদান থেকে যে ওষুধ'টি তৈরি হয়, সে উপাদানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে ঐ ওষুধের মূল লক্ষণসমূহের অনেক ক্ষেত্রে সদৃশ থাকে।
যথা : Aconite অর্থ ধুলামুক্ত।
একোনাইট উদ্ভিদটি মাটি থেকে টান দিয়ে উঠানোর সময় এর শিকড়ে বিন্দু পরিমান ধূলিকণা লেগে থাকেনা যে কারণে একোনাইট কে ধুলামুক্ত উদ্ভিদ বলা হয়।
হয়তো সে কারণেই একোনাইট এর রোগীরা ধুলামুক্ত অবস্থায় সুস্থ থাকে ও ধুলাযুক্ত অবস্থায় অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ হয়।
বিষয়টি পরিষ্কার করে বলি, এর রোগীরা শুষ্ক, ঠান্ডাযুক্ত আবহাওয়ায় বেশি অসুস্থ হয়, অর্থাৎ হেমন্ত, শীত ও বসন্ত কালে বেশি অসুস্থ হয়। কারণ এইসব ঋতু বেশি ধুলাযুক্ত থাকে।
বর্ষাকাল ধুলামুক্ত থাকে বলে হয়তো এই ঋতুতে অপেক্ষাকৃত অনেক কম অসুস্থ হয়।
Nap অর্থ জুয়াখেলার বাজিতে, একবারে সব অর্থ বাজি ধরা।
হেরে গেলে সব শেষ। বাজিতে যেমন টেনশন থাকে হেরে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে।
ঠিক তেমনি,
একোনাইট এর মানুষেরা অসুস্থ হলে মনে করে আমি বুঝি এইবারে শেষ। আর বাঁচবো না। ঠিক যেন জুয়াখেলার বাজির মতো টেনশন।
আকৃতি : একোনাইট এর রোগীরা রক্তপ্রধান, স্বাস্থবান, হৃষ্টপুষ্ট।
কারণ : ভীষণ ভয়, ভীষণ ঠাণ্ডা বাতাস, ভীষণ গরম, ভীষণ শীত।
রোগের কারণের মধ্যে এই ৪টি লক্ষণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
জিহ্বা : ভীষণ শুষ্ক। (ফার্স্ট গ্ৰেড)।
ভীষণ ও হঠাৎ আক্রমণ। কালবৈশাখী ঝড়ের মত ভীষণ ও হঠাৎ আক্রমণ।
ভীষণ অস্থিরতা ও ছটফটানি।
ভীষণ মৃত্যুভয়।
ভীষণ অন্তর্দাহ বা জ্বালা।
ভীষণ ব্যাকুলতা ও উৎকণ্ঠা।
ভীষণ পিপাসা।
হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া ভীষণ দ্রুত হওয়া বা অস্বাভাবিক হওয়ায় উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, ভয় ও মৃত্যু ভয় এর কারণ।
মৃত্যুভয় এত ভীষণ হয় যে, রোগী নির্দিষ্ট করে তার মৃত্যুর সময় বলে। বলতে থাকে আমি আর বাঁচবো না, চিকিৎসা করে লাভ নাই, আত্মীয়স্বজনকে ডেকে ক্ষমা চাই, শেষ বিদায় চাই, এমন আচরণে স্বজনরা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
ডেলিভারীর পূর্ব মুহূর্তে গর্ভবতী মা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে ভীষণ ভয়, যদি মরে যায়, এই ভয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। একজন মনীষী রসিকতা করে বলেছেন ওকে ক্ষমা নয়, ২ডোজ একোনাইট দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভয় কেটে যাবে।
ভীষণ ক্রোধ ও উত্তেজনা প্রবণতা।
ভীষণ হতাশা।
ভীষণ এক্সিডেন্টের ভয়, ফলে মানুষের ভীড়, গাড়ি-ঘোড়ার ভীড়, সকল প্রকার ভীড়, এমনকি সেতু বা রাস্তা পারাপারে, দুই বিল্ডিং এর মাঝে, সরু রাস্তায় চলতে ভীষণ ভয়।
উত্তেজনাপ্রবণ জায়গায় যেতে ভীষণ ভয়।
কথাবার্তা সবকিছুতেই ভীষণ তাড়াহুড়া করে।
ভীষণ ব্যস্তবাগীশ ও কর্মঠ তবে কুমারী মেয়েরা অলস।
ভীষণ দ্রুত কথা বলে।
একোনাইট এর রোগ ভীষণ হলেও সাধারণত পুরাতন বা স্থায়ী হয় না। ডা. কেন্ট।
আমাশয় রোগে ভীষণ কোঁথুনি, শুলুনী ব্যথা ও লাল, তাজারক্ত থাকে।
ভীষণ ঠান্ডার জন্য পক্ষাঘাত হলে ইহা প্রযোজ্য তবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত জায়গাটি ঝিঝি ধরা ও ঠান্ডা থাকে।
ভীষণ অধৈর্য : কোন কিছু চাইলে বা করতে নির্দেশ দিলে, দ্রুত করতে হবে, না হলে ভীষণ রেগে যাবে।
ভীষণ অধৈর্য হয়ে চিৎকার করে, মুখ খারাপ করে গালাগালি করে, কেউ যদি তার কথার প্রতিবাদ করে তবে।
মুখমন্ডলে ভীষণ ভয়ের সুস্পষ্ট ছাপ থাকলে, হঠাৎ আক্রমণকারী যে কোন রোগের প্রথম অবস্থায় এখনাইট প্রয়োগে দ্রুত সুস্থ হয়। অধ্যাপক ডা. আবু বকর।
ভীষণ কথা বলে, অনর্গল কথা বলতে থাকে।
ভীষণ মানসিক ভয়, উদ্বেগ লক্ষণ বর্তমান থাকলে, পুরাতন ব্যাধি বা প্রতি ঋতু পরিবর্তনে বারবার আক্রমণ করে এমন ব্যাধিতে ইহা দারুন কাজ করে।
ভীষণ ভয় অন্ধকারে।
ভীষণ শ্বাসরোধ হওয়ার ভয়।
ভীষণ উত্তেজনাপ্রবণ ব্যক্তিরাই একনাইট, শান্ত প্রকৃতির মানুষেরা সাধারণত একোনাইট নয়।
সবকিছুতেই হঠাৎ ভীষণ উত্তেজিত বা রাগ হয়। আবার হঠাৎ শান্ত হয়ে যায়।
ভীষণ সন্দেহপ্রবণ। (ফাস্ট গ্রেড)।
ভীষণ উদ্ভট একটা লক্ষণ একোনাইটে পাবেন, এর ধারণা, তার চিন্তাভাবনা পাকস্থলী থেকে আসে, মস্তিষ্ক থেকে নয়।
অভিজ্ঞান :
জেনে রাখা ভালো সবল, হৃষ্টপুষ্ট মানুষেরা অচির রোগে, যে ভাবে হঠাৎ ভীষণভাবে আক্রান্ত ও উত্তেজনা প্রবণ হয়,
দুর্বল মানুষেরা সাধারণত সেইভাবে হঠাৎ ভীষণ ভাবে আক্রান্ত ও উত্তেজনা প্রবণ হয় না।
বরং দুর্বল লোকেরা ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়।
শিশু জন্মের পর প্রস্রাব বা পায়খানা না হলে কিংবা বন্ধ হয়ে গেলে দারুণ কাজ করে।
তুলনা :
একোনাইট রক্তসঞ্চালনে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
বেলাডোনা মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
ক্যামোমিলা মেজাজ কে উত্তেজিত করে।
ওষুধের নামের মধ্যেই ওষুধের মূল লক্ষণসমূহ অন্তর্নিহিত যথা :
Aconite Nap :
A : Anguish : মারাত্মক যন্ত্রণা।
C : Confusion of mind : মনের বিশৃঙ্খলা।
O : Offended easily : সহজে ক্ষুব্ধ হয়।
N : News bad from, ailments : দুঃসংবাদ হতে অসুস্থ।
I : Impatience : অধৈর্য।
T : Touched anger : স্পর্শ করলে রাগ হয়।
E : Excitement : উত্তেজনা।
N : Narrow place of fear : সংকীর্ণ জায়গায় ভয়।
A : Attacks of anxiety : আক্রমণের আশঙ্কা।
P : Panic : উদ্বেগ।
ত্রুটি মার্জনীয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন