♦ প্রসঙ্গঃ যেভাবে স'তীদাহ প্রথা পালিত হত।
♦ সতীদা'হ মূলত উচ্চ বর্ণের হিন্দু পরিবারগুলোতেই করা হত। হাজার হাজার বছর ধরে অগণিত ভারতীয় হিন্দু নারী জী'বিত অবস্থায় চিতার লেলিহান আ'গুনে প্রবেশ করেছেন- কখনও স্বেচ্ছায়, কখনও বা জো'র করে।
♦ স্বেচ্ছায় হলেও মানবতার বিচারে এই প্রথার পৃষ্ঠপোষকতা ভারতীয় সভ্যতার একটি অন্যতম ক"লঙ্ক-বিন্দু।
♦ কিন্তু কীভাবে পালিত হত এই ব'র্বর প্রথা?
♦ এই ব্যাপারে গোরাচাঁদ মিত্রের লেখা 'স'তীদাহ' বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
♦ তারই কিছু অংশ নীচে তুলে ধরলাম-
♦ স্বামীর মৃতদেহ চিতায় শায়িত । নাপিত এসে বিধবা নারীর নখ কে'টে দিয়ে গেলেন ।
♦ শাকে স্তব্ধা স্ত্রী হাতের শাখা ভেঙে চললেন স্নানে - শুচিশুদ্ধ হবার জন্য ।
♦ স্নানের পর চিতারোহণের সাজ । আত্মীয়রা এগিয়ে এসে পরিয়ে দিলেন লাল চেলী , হাতে বেঁধে দিলেন রাঙা সুতা দিয়ে আলতা , গাটো কপাল জুড়ে লেপে দিলেন টকটকে লাল সিঁদুর – নিপুণ করে আঁচড়ানো চুলে থরে থরে চিরুনির বাহার ।
♦ গাটো দেহে মূল্যবান অলংকারের সমারাহে । স্বামীহারা স্ত্রী দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলতেও বিস্তৃত হয়েছেন তিনি যেন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের হাতের পুতুল ।
♦ কুশ হাতে নিয়ে পুবমুখী বসে আচমন করলেন নারী ।
♦ হাতে নিলেন তিল , জল ও কুশনির্মিত ত্ৰিপত্র ।
♦ উপস্থিত ব্রাহ্মণগণ উচ্চারণ করলে – 'ওঁ তৎসৎ' । ধ্বনিত হল বিধবার নিম্ন কন্ঠে -"নমঃ , আজ অমুক মাসে , অমুক পক্ষে , অমুক তিথিতে , অমুক গাত্রে ঐ অমুক দেবী বশিষ্ঠেব পত্নী অরুন্ধতীর সমমর্যাদায় স্বর্গে যাওয়ার জন্য ,
♦ মানুষের শরীরে যত লোম আছে তত বছর অর্থাৎ তিনকোটি বছর স্বামীর সঙ্গে স্বর্গসুখ উপভোগের আশায় , মাতৃকুল , পিতৃকুল ও পতিকুল — তিন কুলকেই পবিত্র করার অভিপ্রায়ে , চতুর্দশ ইন্দ্রের রাজত্বকাল পর্যন্ত স্বর্গসুখ ভোগের কামনায় এবং যদি স্বামী ব্রহ্মহত্যাকারী , কৃতঘ্ন ও মিত্রদ্রোহী হন , তাহলে তাকে পবিত্র করার জন্য , আমি স্বামীর জলন্ত চিতায় অধিরোহণ করছি '।
♦ হে অষ্টলাক পালগণ , হে সূর্য , চন্দ্র , বায়ু , হে অগ্নি , আকাশ , ভূমি , জল , হে অন্তর্যামিন আত্মাপুরুষ , হে যম , দিন , রাত্রি , সন্ধ্যা , হে ধর্ম , আপনারা সকলে সাক্ষী থাকুন , আমি প্রজ্বলিত চিতায় আরাহণ করে স্বামীর অনুগামিনী হচ্ছি ।"
♦ এরপর খই , খণ্ড ও কড়ি আঁচলে বেঁধে সতীনারীর চিতাপ্রদক্ষিণের পালা - বার বার সাতবার ।
♦ ব্রাহ্মণ পুরোহিত কণ্ঠে প্রয়োজনীয় মন্ত্রাদি বিবৃত হবার পর বিধবা স্ত্রী স্বামীর পাশে চিতাশয্যা গ্রহণ করলেন ।
♦ আত্মীয়স্বজনেরা মহোল্লাসে গাছের ছালের দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে চিতার সঙ্গে বাঁধলেন তাকে ।
♦ পুত্র বা নিকট কোন আত্মীয় এগিয়ে এলেন চিতায় অগ্নিসংযাগোর জন্য ।
♦ উপস্থিত দর্শকবৃন্দের পৈশাচিক উল্লাস ও ঢাক - ঢোলে , কাসরের প্রচণ্ড আর্তনাদে চতুর্দিক স্তম্ভিত । দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো চিতা ।
♦ তাও যেন আশ মেটে না পুণ্যার্থীদের ! ঝুপঝাপ করে শর ও পাকাটির আঁটি ফেলতে লাগলেন সবাই চিতার আগুনে ।
♦ অগ্নিসংযোগের পর পাছে সতীনারীর আরও কিছুদিন পৃথিবীর আলা- বাতাস ভাগোর শখ হয় তাই চিতার পাশেই মোটা মোটা বাশ নিয়ে 'ধর্মসংস্থাপনাকারীরা' অপেক্ষমান ।
♦ বিধবা স্ত্রী বাঁচ'বার সামান্যতম চেষ্টা করলেই বাঁশের উপর্যুপরি আ'ঘাতে তার ভবলীলা সাঙ্গ করা হত।
© কোন না'রী দৈবক্রমে চিতা থেকে পালিয়ে গেলে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত তার পিছু নিতেন অনুষ্ঠান কর্তা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা , পলায়মানা না'রীকে ল'জ্জাকরভাবে বাহুবলে পরাস্ত করে আবার চিতায় চাপানো হত — না হলে যে বংশের মুখে চুনকালি পড়বে !
♦ সম্মিলিত প্রতিরোধে কাছে ফুৎকারে নিভে যেত সতীনারীর বাঁচার আশা ।
♦ ধীরে ধীরে এক সময় নিভে যেত চিতার আগুন । কিন্তু তা বলে পুরোহিতের বিশ্রাম নেই ।
♦ তিনি তখন শকুনির মত ঘেটে চলেছেন চিতার ছাই - ভস্ম - সতীর গায়ের বল মূল্য অলংকারগুলি বর্তমান মালিক তো তিনিই ।
♦ অন্যদিকে বংশগৌরবের উজ্জ্বলতা বিচার করতে করতে ঘরে ফিরে চলেছেন মৃতের আত্মীয়স্বজন - চাদরের তলায় কর গুণে-গুণে হিসেব করছেন স্ত্রীর মৃত্যু হবার দরুণ মৃতের কতখানি স্থাবর - অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হলেন তারা অনেক ক্ষেত্রে দাহকার্যের পূর্বে মদ , ভাঙ , ইত্যাদি উত্তেজক দ্রব্য খাইয়ে সতীনারীর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলা হত ।
♦ ভাবলে বিস্ময় লাগে। এক অদ্ভুত অপার্থিব সুখভােগের আশায় , স্বর্গ নামক এক অজ্ঞাত মনোহারী স্থানে মিষ্টি সুখে স্বামী-সঙ্গ লাভের কামনায় তারা দলে দলে শিকার হয়েছেন পৃথিবীর নৃশংসতম প্রথার ।
♦ তথ্যসূত্রঃ সতীদাহ | লেখকঃ গোরাচাঁদ মিত্র | শঙ্খ প্রকাশনী (পৃষ্ঠা ২-৩)
#অমানবিকতা #reality
#গল্প
#Arifenglishtutorial
#fblifestyle
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন