বাংলাদেশে ছেঁড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত টাকা বদলানোর নিয়ম খুবই পরিষ্কার।
১. ছেঁড়া টাকা ব্যাংক কি বদলে দেবে?
হ্যাঁ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক বাধ্য ছেঁড়া, পুরনো, ময়লা বা ক্ষতিগ্রস্ত নোট গ্রহণ করতে এবং নতুন নোট দিয়ে দিতে।
২. নতুন নোট কি যেকোনো ব্যাংক দিতে বাধ্য?
হ্যাঁ, ব্যাংকগুলো নতুন নোট দেয়, কিন্তু…
• নতুন নোট সব সময় সব ব্যাংকে পাওয়া যায় না,
• সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়,
• উৎসবের সময় (ঈদের আগে) নতুন নোট বেশি দেওয়া হয়।
৩. টাকা বদলাতে কি কোনো চার্জ লাগে?
না! একদম ফ্রি।
একটা টাকাও কাটার অধিকার কোনো ব্যাংকের নেই।
৪. কোন নোট বদলাবে, কোনটা বদলাবে না?
যা বদলাবে:
বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নোট প্রত্যর্পণ প্রবিধান ২০২৫’ অনুযায়ী নতুন সার্কুলার মূল পয়েন্টগুলো:
ছেঁড়া, পোড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত নোটের বিনিময়মূল্য ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম করা হয়েছে।
নোটের ৯০% বা বেশি অংশ থাকলে পুরো মূল্য ফেরত।
৭৫–৯০% থাকলে ৭৫% মূল্য।
৫১–৭৫% থাকলে ৫০% মূল্য।
৫১% এর কম থাকলে কোনো বিনিময়মূল্য দেওয়া হবে না।
একাধিক খণ্ডে থাকলে, দুই প্রান্তের সিরিয়াল নম্বর মিললে এবং কমপক্ষে ৬০% অংশ থাকলে ৫০% মূল্য পাওয়া যায়।
পোড়া নোটেও নির্দিষ্ট শর্তে মূল্য ফেরত দেওয়া হয়।
এই সার্কুলারটি তৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এবং পুরোনো “নোট রিফান্ড রেগুলেশনস-২০১২” বাতিল করেছে। 
এখন শুধু “বাণিজ্যিক ব্যাংক” নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা ও সব অফিস থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত নোট বদল/বিনিময় করা যাবে এবং কত টাকা পাবেন সেটা স্পষ্ট শতাংশ ভিত্তিতে নির্ধারণ আছে। 
যা বদলাবে না:
• নোটের অর্ধেকের কম থাকলে
• সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেলে
• জাল নোট
ব্যাংকে নিয়ে গেলে
• টাকা ফ্রি বদলাবে
• যেকোনো ব্যাংক বদলাতে বাধ্য
• নতুন নোট সম্ভব হলে দেবে, নইলে বলবে কোন শাখায় পাওয়া যাবে।
ব্যাংকে সরাসরি যেসব নোট বদলে দেওয়া হয়, সেগুলোর জন্য সাধারণ নিয়ম হলো
• নোট দুই টুকরোর বেশি না হলে
• বড় অংশটি মোট নোটের প্রায় ৯০% বা তার বেশি হলে
ব্যাংক অভার দ্য কাউন্টার–ই বদলে দেয়।
আর যখন নোটের অংশ ৫০% এর নিচে থাকে বা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন ব্যাংক সেটি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়, এবং গ্রাহককে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক যেটুকু অনুমোদন করে, সেটুকুই পরে কাস্টমার পায়।
দুই খণ্ডে টুকরো নোটের ক্ষেত্রেও সবসময় ১০০% মূল্য ফেরত দেওয়া হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের Note Refund Act 2012–এ এটার বিস্তারিত শর্ত উল্লেখ আছে।
ছেঁড়া নোট না নিলে কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করতে হবে:
১. বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ (সরাসরি সবচেয়ে কার্যকর)
বাংলাদেশ ব্যাংকের Customer Complaint Management System (CCMS) আছে।
অভিযোগ করার উপায়:
• বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে “Complaint/CCMS” সেকশন
• সেখানে ব্যাংকের নাম, শাখা, ঘটনা এসব লিখে সাবমিট
• অভিযোগ রেজিস্টার হলে ব্যাংককে উত্তর দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে
এটা সবচেয়ে শক্তিশালী অভিযোগ ব্যাংকগুলো ভয় পায়।
২. ব্যাংকের হেড অফিসে অভিযোগ
যে ব্যাংক আপনাকে সেবা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের নিজের Head Office Customer Service Desk–এ ইমেইল করে বা ফোন করে জানাতে পারেন।
উদাহরণ:
• সোনালি ব্যাংক হেড অফিস
• জনতা ব্যাংক হেড অফিস
• বা যেই ব্যাংক হোক প্রতিটিরই Customer Complaint Cell থাকে।
হেড অফিসের চাপ পেলে শাখা আর টালবাহানা করে না।
৩. ব্যাংকিং মোবাইল অ্যাপ/ফেসবুক পেজ
অনেক ব্যাংক এখন ফেসবুক পেজ বা ইনবক্সে দেওয়া অভিযোগও গুরুত্ব সহকারে নেয়।
কারণ পাবলিক ইমেজ!
৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের হেল্পলাইন (টেলিফোন)
১৬২৩৬
এটা ব্যাংক ও আর্থিক সেবার সব অভিযোগের কমন হেল্পলাইন।
ছেঁড়া নোট না নেওয়াও এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।
কি বলবেন অভিযোগে?
খুব ছোট করে:
“আজ [তারিখ], [শাখা/ব্যাংকের নাম] আমার ক্ষতিগ্রস্ত নোট বদলাতে অস্বীকার করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মবিরুদ্ধ।”
একটা কথা জেনে রাখুন:
যদি আপনি অভিযোগ করেন, অধিকাংশ সময় ব্যাংক ক্ষমা চেয়ে নোট বদলে দেয়।
সমস্যা হচ্ছে আমরা অভিযোগ করি না বলে তারা ভাবছে, “কে আর মাথা ঘামাবে?”
রুপা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন