![]() |
শীত_আসার_সঙ্গে_সঙ্গে_হাঁপানি_রোগ_বৃদ্ধি_পায়ঃ-
হাঁপানি বা এ্যাজমা কি ?
দীর্ঘমেয়াদী হাঁপ বা বারবার হাঁপের আক্রমণকে হাঁপানি বলে। হাঁপানি শ্বাসতন্ত্রের ক্রনিক প্রদাহ জনিত ও ক্ষুদ্র শ্বাস নালীর রোগ, যাতে ক্ষুদ্র শ্বাসনালীগুলো সর্বদা প্রদাহজনিত কারণে লাল এবং সংবেদনশীল থাকে। এ সংবেদনশীল ক্ষুদ্র শ্বাসনালীগুলো যদি ঠাণ্ডা, ভাইরাস জীবাণু অথবা হাঁপানি উদ্দীপক অন্য কোন বস্তুর সংস্পর্শে আসে তখন সেগুলোতে প্রতিক্রিয়া জনিত সংকোচন ঘটে ফলে শ্বাস নালী সংকীর্ণ হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় এবং রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়।
হাঁপানির কারণঃ
হোমিওপ্যাথি মতে সোরা ও সাইকোসিস উপবিশ এর প্রধান কারণ।যেমন কারো গনোরিয়া বা চর্ম রোগ মলম দিয়ে বা বিসদৃশ পন্থায় চিকিৎসা করার পরে এ রোগটি ফুসফুসে আক্রমণ করলে রোগের নাম হয় হাঁপানি,লিভারে আক্রমণ করলে এর নাম হয় লিভার সিরোসিস, কিডনিতে আক্রমণ করলে এর নাম হয় নেফরোসিস এবং বংশানুক্রমিক বিস্তার লাভ করে।এলার্জির কারণে হাঁপানি হতে পারে।ধূলা, বালি, ফুলের রেণু, পশুপাখির লোম,পালক,বিভিন্ন ধরনের খাদ্য যেমন – ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, বেগুন, ডিম ইত্যাদিতে যদি কারো এলার্জি থাকে তবে এগুলোর সংস্পর্শে এলে বা খেলে হাঁপানি হতে পারে। কম্বল, কার্পেট, লোমশ পোশাক অনেক সময় কারণ হতে পারে।যদি কারো বংশে হাঁপানির ইতিহাস থাকে তবে তার হাঁপানি হতে পারে। ধূমপান করলে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রকার ভেদ (Classification) :
ক)ক্রনিক হাঁপানি (Chronic Asthma) : এটা এপিসোডিক হাঁপানি যা বছরের পর বছর রোগীকষ্ট পায়।কিন্তু ভালো সময়ে কিছু পরিমাণ শ্বাস কষ্ট থাকে।কাশি মিউকাস মিশ্রিত থুথু এবং বার বার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামণ দেখা যায়। যখন রোগের অন্য লক্ষণ থাকে না তখনও Bronchi দেখা যায়।হঠাৎ মারাত্মক আকার ধারন করে।
খ)হাঁপানি (Acute severe Asthma) : এ ধরনের খুবই মারাত্মক।এই হাঁপানি থেকে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ:
নাড়ীর গতি হঠাৎ ১২০ বারের বেশী সেই সাথে পালসাস প্যারাডক্সাস থাকে এবং পরে কমতে থাকে।
এক সাথে পুরো বাক্য বলে শেষ করতে পারে না।সেন্ট্রাল সায়ানোসিস থাকতে পারে।অবসন্নতা,রক্তচাপ প্রথমে বাড়ে পরে কমতে থাকে।ফুসফুসের কোন শব্দ না হওয়া (Silent chest)।মারাত্মক হাঁপানির চিকিৎসার প্রধান কথাই হল রোগীকে দ্রুত বিপদ মুক্ত করতে হবে। হোমিও ঔষধ দিয়ে রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। হোমিও ঔষধে কাজ হলে হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বেই রোগী সুস্থ অনুভব করবে।রোগী সহনশীল অবস্থায় ফিরে এলে লক্ষণ ভিত্তিক হোমিও চিকিৎসা করতে হবে।
প্রতিরোধ (Prevention):
রোগীর অভিজ্ঞতা অনুসারে যে যে কারণে (আবহাওয়া,বিশেষ খাদ্য ও পানিয়,গোসল ও পরিবেশ ইত্যাদি) হাঁপানির টান বেড়ে যায় তা থেকে রোগীকে দূরে থাকতে হবে।ধূমপান এবং সব রকমের ধোয়া থেকে রোগীর দূরে থাকা প্রয়োজন।কম্বল,কার্পেট,লোমশ পোশাক,ঘর ঝাড়া,কুকুর,বিড়াল,খরগোস ইত্যাদির মাধ্যমে হাঁপানির সংক্রমণ ঘটতে পারে তাই এ গুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
হাঁপানির রোগীর কারণ ভিত্তিক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনঃ-
জন্মগত কারণে হাাঁপানির রোগীর সদৃশ ঔষধঃথুজা,নেট্রাম সাল্ফ,কেলি কার্ব,কার্বো ভেজ ইত্যাদি।
বুকে চাপা বা আঘাতের কারণে হাপনি হলে সদৃশ ঔষধঃআর্ণিকা মন্টেনা, রাস টক্স ইত্যাদি।
গর্ভবতির ধুমপানের কারনে অথবা কৃত্তিম দুধের কারণে হাঁপানি হলে সদৃশ ঔষধঃ এলুমিনা,সোরিনাম ইত্যাদি।
এলার্জিক কারণে হাঁপানি হলে সদৃশ ঔষধঃডলকামারা, রাসটক্স, ব্রাইয়োনিয়া এলবম ইত্যাদি।
রক্তের দূষণের কারণে হাঁপানি হলে সদৃশ ঔষধঃফেরম ফস,সাইলেসিয়া ইত্যাদি।
হাঁপানির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধের লক্ষণভিত্তিক আলোচনাঃ
এমেন কার্ব:পুরাতন হাপানি সিড়ি বেয়ে দু’এক ধাপ উপরে উঠিলে শ্বাসটান বৃদ্ধি,মুক্ত বায়ুতে রোগীর আরাম বোধ,উষ্মবায়ুতে দম বন্ধের ভাব,মুখ নিলাভ হয় খুকখুক কাশিসহ শ্বাসকষ্ট ও সামান্য পরিশ্রমেই হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি হলে উক্ত ঔষধ জরুরী।
এন্টিম টার্ট:অত্যধিক শ্বাসকষ্টের জন্য রোগী উঠিয়া বসিতে বাধ্য হয়।শেষ রাত্রিতে বিশেষ করে রাত তিনটায় রোগের বৃদ্ধি।বুকের ভিতরপ্রচুর শ্লেষ্মা জমে,ঘড়ঘড় শব্দ করে ,শ্লেষ্মা উঠাইতে পারে না ফলে শ্বাসটান বাড়ে ,কাশির সাথে শ্লেষ্মা উঠিলে আরাম হয় সেই রোগীর জন্য উক্ত ঔষধ জরুরী প্রয়োজন।
আর্সেনিক এলবম:দুর্নিসহ শ্বাসটান,রাত একটার পর রোগের বৃদ্ধি,অত্যধিক উদ্বেগ ও অস্হিরতা শ্বাসরোধ হওয়ার ভয়ে শুইতে ভয় পায়,সারা রাত বসিয়া থাকে,সামান্য নড়াচড়ায় বৃদ্ধি,সিড়ি বেয়ে উপরে উঠিতে পারে না,উত্তাপে ও গরম ঘরে আরাম বেধ হলে আর্সেনিক এলবম প্রয়োগ জরুরী।
কেলি বাইক্রম:শ্বাসনালির প্রদাহসহ হাপানি,কফ আঠাল দড়িরমত,রাত তিন চারটার দিকে হাপানির টান বাড়ে,শীতকালে ও গ্রীষ্মকালে রোগ বাড়ে,সামনের দিকে ঝুকিলে ও দড়িরমত আঠাল কফ বাহির করিতে পারিলে আরাম হয়,রোগী অত্যধিক দুর্বল হলে চোখের উপর পাতা ফোলা ভাব হলে কেলিবাইক্রম জরুরী প্রয়োগ প্রয়োজন।
লোবেলিয়া:বুকের মধে আরষ্টতা বোধ,সামান্য নড়াচড়ায় কষ্ট,পাকাশয়ের উপরে অস্হিরকর দর্বলতা,দ্রুত চলাফেরা করিলে আরাম পাইলে,হাপানি বাড়ার আগে শরীর চিটমিট করে তবে এই ঔষধ প্রয়োজন।
ল্যাকেসিস:হাপাঁনির কারনে নিদ্রা ভাঙ্গ,বুকের উপর সামান্য চাপও সহ্য হয় না,কাশির সাথে সামান্য তরল কফ বাহির হলেও আরাম হয়।ঘুমের পরে রোগের আরাম হলেে,আহারের পরে আরাম হলে এবং গলার কাছে কাপড়ও না রাখতে দিলে,গরম ঘরে রোগ বৃদ্ধি হলে ল্যাকেসিস প্রয়োজন।
ব্রোমিয়াম:সমুদ্রতীরে গেলে হাঁপানি বাড়লে,শ্বাস গ্রহনে কষ্ট হলে,রোগী যদি মনে করে ফুস ফুসে বায়ু প্রবেশ করাইতে পারিলেই আরাম হবে তবে রোগীর জন্য ব্রোমিয়ামই উপযুক্ত ঔষধ।
ইপিকাক:আক্ষেপিক হাঁপানির টানের এটি শ্রেষ্ঠ ঐষধ।বুকের মাঝে সংকোচন বোধ,বুকের মাঝে বুজবুজ শব্দ,দমবন্ধের ভাব,সামান্র নড়াচড়ায় বৃদ্ধি,বুকের মাঝে অনেক কফ,কাশিবার সময় ঘরঘরানি শব্দ,কফ উটিতে চায না,হাঁপানির সাথে বমি ও বোমিভাব,হাতপায়ে ঠান্ডা ঘাম হলে ইপকাক প্রয়োজন।
সালফার:চর্মরোগের কুচিকিৎসার পরেঅর্থাৎ মলম ও বিসদৃষ ঔষধ দ্বারা চিকিৎসার ফলে হাাঁপানি রোগ হলে,মাঝ রাতে শ্বাসটানের বৃদ্ধি হলে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর রোগের কষ্ট বুদ্ধি হলে ঘরের দরজা জানালা খুলিয়া দিতে বলে ,মনে করে খোলা বাতাসে আরাম পাবে,মাথা ও পায়ে জ্বালা অনুভব হলে,দুপুরের পুর্বে পাকাশয়ে শুন্যতা অনুভব হলে সাথে অবসন্ন বোধ করলে সালফার জরুরী প্রয়োজন।
গ্রাফাইটিস:শ্বাসটানের কারনে ঘুম ভাংলে,সামান্য আহারে আরাম পাইলে,রোগী মোটা,শীতকাতর,কোষ্ঠব্ধ হলে,শীত ও গ্রীষ্ম উভই তার জন্য কষ্টকর,গরমঘরেহাাঁপানির বৃদ্ধি,মুক্ত বায়ুতে আরাম হলে গ্রাফাইটিস প্রয়োজন।
এন্টিম আর্স:এমফাইজিমাসহ হাঁটপানি রাগীর প্রবল শ্বাসটান,মুক্ত বায়ুতে আরাম,আহারের পরে ওশয়নকালে শ্বাসটানে বৃদ্ধি হলে এন্টিম আর্স প্রয়োজন।
এপিস মেল:অত্যধিক শ্বাসকষ্ট;রোগী মনে করে সে শ্বাস নিতেই পারবেই না;বাতাস করিতে বলে।শ্বাসের অভাবের সময় গলায় হাত দিতে দেয় না।গরমঘরে শ্বাসটানের বৃদ্ধি।আমবাত সারার পরে হাঁপানির বৃদ্ধি হলে এপিস মেল প্রয়োজন।
কার্বোভেজ:দুর্বল বৃদ্ধহাপানির রোগীর জন্য কার্বোভেজ প্রয়োজন।রোগী মনে করে সে মারাই যাবে।শীতকাতর রোগীঅত্যন্ত শ্বাসটান,শরীর নিরাভ হয়,হৃতপ্রদেশে উদ্বেগ শ্বাস গ্রহনের জন্য শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে।রোগী হঠাৎ রোগীর শ্বাসটান শয়নেবৃদ্ধি হয় ।অধিক বায়ুর আশায় পাখার বাতাস চায়।
কুপ্রম মেট: আক্ষেপিক শ্বাসটান দমবন্ধভাব,গলাব্দ হয়,,মুখমন্ডল নিলাভ,হঠাৎ হাপানির বৃদ্ধি রাত ২/৩টায় হঠাৎ আরাম। মানসিক বিকার জনিত হাঁপানি।রাতের বেলায় মাসিকের পুর্বে রোগের বৃদ্ধি।
ডলকামারা:শীতল ও স্যাতসেতে আবহাওয়ায় হাাঁপানির বৃদ্ধি,সরল ঘরঘরে কাশি,বর্ষাকালে রোগের বৃদ্ধি হলে ।
লাইকোপোডিয়াম:বুকেরমাঝে ঘরঘর শব্দ কাশির সাথে পুজসহ হলুদ কফ।মুক্ত বায়ুতে,চিৎ হয়ে শয়নে,নিদ্রাকালে,সামান্য পরিশ্রমে,অথবা আবদ্ধ গরম ঘরে শ্বাসটানের বৃদ্ধি।পেটের গোলযোগসহ হাঁপানির রোগীর জন্য উপযোগী।
নেট্রাম সাল্ফ:বৃষ্টির দিনে শ্বাসটানের বৃদ্ধি।বুকের মধে ঘরঘরানিসহ শ্বাসটান।প্রাতকালিন উদরাময়সহ হাঁপানির রোগী,প্রমেহ দোষগ্রস্হ রোগী,সকালবেলায় হাপানির বৃদ্ধি ও প্রচুর সবুজাভ কফ।
নাক্স ভোম:খিটখিটে রোগীর অজীর্ণসহ হাপানির রোগী।আহারের পরেপেটে চাপ বোধঅস্হে ও বুকের মাঝে সংকোচন বোধ,কাপড় ঢিলা করে দিলে উদগার উঠিলে উপশম।শীতল বায়ুতে,পরিশ্রমে,সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠিলে হাঁপানির বৃদ্ধি।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন