জীবনে এগিয়ে যেতে মানতে হবে ২০টি সোনালী নীতি!
১. যারা তোমাকে খুঁজছে না, তাদের খুঁজতে যেও না।
ব্যাখ্যা:
সব সম্পর্কই জোর করে টিকে থাকে না। যারা তোমার উপস্থিতি, মেধা বা ভালোবাসা মূল্যায়ন করে না তাদের পেছনে অতিরিক্ত সময় ও শক্তি নষ্ট করলে তুমি নিজেকেই দুর্বল করবে।
করণীয়:
সম্পর্কগুলোর তালিকা করো যারা প্রথম ৩০ দিনে ভাইব রিপ্রোস করে না, তাদের কাছে তুমি বেশি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত।
২. ভিক্ষা করা বন্ধ করো।
ব্যাখ্যা:
এখানে ‘ভিক্ষা’ মানে হচ্ছে অনুমোদন, স্বীকৃতি বা ভালোবাসার জন্য অনবরত ভিড়ানো। নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে, মর্যাদা বজায় রেখে যাও এটা ভিন্ন। ভক্তি নয়, যোগ্যতা তৈরি কর।
করণীয়:
নিজের স্কিল বা আচরণে কি উন্নতি করা যায় সেটার একটি মাসিক পরিকল্পনা বানাও এবং প্রতি মাসে এক কাজ শেষ।
৩. প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বলা বন্ধ করুন।
ব্যাখ্যা:
অতিরিক্ত কথা অনেক সময় শক্তি-হ্রাস করে, ভুল বোঝাবুঝি বাড়ায় এবং তোমার মর্যাদা কমায়। শান্ত অভিব্যক্তি ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য মানুষের মনে বেশি প্রভাব ফেলে।
করণীয়:
কথা বলার আগে তিন সেকেন্ড নাও তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া অনেক কমে যবে।
৪. যখন লোকেরা তোমাকে অসম্মান করে, তখন সাথে সাথে তাদের মুখোমুখি হও।
ব্যাখ্যা:
অসম্মান সহ্য করলে সেটি একেবারে গৃহীত বার্তা হয়ে যায়। সম্মান দাবি করা সাহসের কাজ— কিন্তু তা সদয় ও দৃঢ়ভাবে করা উচিত, উগ্রতায় নয়।
করণীয়:
সরল, সংক্ষিপ্ত ও সম্মানজনক বাক্য রপ্ত করো (যেমন: “মুটামুটি এই কথাটা আমাকে আঘাত করলো; অনুগ্রহ করে এমনভাবে বলবে না”) এবং প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করো।
৫. অন্যদের খাবারের প্রতি লোভী হয়ো না।
ব্যাখ্যা:
এটা কেবল খাবার নয় অন্যদের সাফল্য, সুযোগ বা সম্পদের প্রতি অতি-ঋণশীলতা। নিজের পথে ফোকাস করো; অন্যের জিনিস নিয়ে লোভ তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
করণীয়:
প্রতিদিন নিজের কৃতিত্বের তালিকা লিখো এটি ঈর্ষা কমাতে সহায়ক।
৬. কিছু লোকের সাথে দেখা করার ধরণ কমিয়ে দিন, বিশেষ করে যদি তারা প্রতিদান না দেয়।
ব্যাখ্যা:
সম্পর্ক দুই-থেকে চলতে হয়। একমুখী সম্পর্ক মানে তুমি দিচ্ছে, তারা নিচ্ছে এটা দীর্ঘমেয়াদে ক্লান্তিকর। সীমা নির্ধারণ করা সুস্থতার জন্য জরুরি।
করণীয়:
এমন মানুষদের সঙ্গে দেখা সপ্তাহে একবার বা অনুরূপ সীমায় রাখো; আর প্রয়োজনীয় হলে অনলাইন সাময়িক যোগাযোগ রাখো।
৭. নিজের উপর বিনিয়োগ করো। নিজেকে খুশি করো।
ব্যাখ্যা: আত্ম-উন্নয়ন ও স্ব-যত্ন মানে তুমি নিজেরে মূল্য দিচ্ছ এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং জীবনমান উন্নত হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানসিক সচ্ছলতায় বিনিয়োগ করো।
করণীয়:
মাসিক বা বাৎসরিক ‘নিজের উন্নয়ন’ বাজেট রাখো কোর্স, বই বা স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থায় খরচ করো।
৮. অন্যদের সম্পর্কে পরচর্চা বন্ধ করো।
ব্যাখ্যা:
গসিপ আগ্রাসনটিই মানসিক সময় নষ্ট করে এবং মনকে নিম্নমানে নিয়ে যায়। অন্যের দুর্বলতা নিয়ে কথা বললে তোমার নিজের মর্যাদাও ছোট হয়।
করণীয়:
পরচর্চা শুরু হলে কথাটিকে অন্যদিকে ঘোরানোর একটি নিরাপদ বাক্য রপ্ত রাখো (উদাহরণ: “চল, এই বিষয়ে আর বলি না; তুই কেমন আছিস?”)।
৯. কথা বলার আগে ভাবো মানুষের ধারণার ৮০% তোমার কথাই গঠন করে।
ব্যাখ্যা:
তোমার ভাষা, সুর ও শব্দচয়নই মানুষকে তোমার সম্পর্কে ধারনা দেয়। অপূর্ব শব্দ কিংবা অযথা কথা দুটোই প্রভাব ফেলে। দয়া, স্পষ্টতা ও সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখো।
করণীয়:
“ট্রু-নেসেসারি-কাইন্ড” (সত্য, প্রয়োজনীয়, দয়ালু) এই তিনটি প্রশ্ন করো কথার আগে।
১০. সর্বদা তোমার সেরাটা দেখাও; যেভাবে সম্মান পাওয়া উচিত সেভাবে সাজো।
ব্যাখ্যা:
নিজের উপস্থাপনা পোশাক, আচরণ, ভাষা সবই মানুষের অবচেতন মূল্যায়নে কাজ করে। তুমি নিজেকে কিভাবে দেখাও, অনেকেই সেটাকে মাপকাঠি হিসেবে নেয়।
করণীয়:
একটি ‘ক্রিয়ার' লুক রেখো নিতে পারে: পরিস্কার পোশাক, সময়মত কাটা, মৌলিক শিষ্টাচার এগুলো রপ্ত করো।
১১. একজন সফল ব্যক্তি হও তোমার লক্ষ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকো।
ব্যাখ্যা:
লক্ষ্য ছাড়া সময় নষ্ট হয়। স্পষ্ট লক্ষ্য থাকলে প্রতিদিনের কাজগুলো অর্থ পায়; ব্যস্ততা সফলতার পথে শক্তিশালী ধাক্কা।
করণীয়:
৬ মাসের লক্ষ্য ও দৈনন্দিন তিনটি টাস্ক লিখে রাখো প্রতিদিন সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করো।
১২. তোমার সময়কে সম্মান করো।
ব্যাখ্যা:
সময় জীবনের মূলধন। তুমি নিজের সময়কে সম্মান করলে অন্যরাও তা মূল্যায়ন করতে শিখবে। ‘না’ বলা শেখা সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
করণীয়:
প্রতিটি সপ্তাহে ‘নো-এপয়েন্টমেন্ট’ ব্লক রাখো সেই সময় নিজের কাজে ব্যয় করো।
১৩. এমন সম্পর্ক থেকে দূরে থাকো যেখানে তুমি সম্মানিত বা মূল্যবান বোধ করো না।
ব্যাখ্যা:
সম্পর্ক যদি বারবার তোমার আত্মসম্মান নষ্ট করে, তাহলে তার থাকা অপ্রয়োজনীয়। সাহসিকতার সাথে প্রস্থানই কখনোই দুর্বলতা নয় এটা নিজের মর্যাদার রক্ষা।
করণীয়:
সম্পর্ক ছাড়ার জন্য ছোট্ট একটি পরিকল্পনা তৈরি করো কখন ও কিভাবে মুলতবি করা হবে তা নির্ধারণ করো।
১৪. নিজের উপর টাকা খরচ করতে শিখো তাহলে অন্যরাও তোমার উপর খরচ করবে।
ব্যাখ্যা:
নিজের প্রতি বিনিয়োগ মানুষকে বার্তা দেয় “আমি নিজের মূল্য বুঝি”। এটা আচরণগত ও আর্থিকভাবে নিজের উপরে দায়িত্বশীল হওয়া।
করণীয়:
নিজের জন্য একটি ‘ইনভেস্টিং ইন ইউ’ ফান্ড রাখো বছরে অন্তত একবার তা কাজে লাগিয়ে নিজের স্কিল বাড়াও।
১৫. মাঝে মাঝে দুর্লভ হও।
ব্যাখ্যা:
সবসময় সহজলভ্য হলে তোমার মান কমে যেতে পারে; মাঝেমধ্যে অনুপস্থিতি বা সীমাবদ্ধতা মানুষকে তোমার মূল্য স্মরণ করায়।
করণীয়:
প্রতি মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে এক দিন ‘অ-উপলব্ধ’ থাকো ফোন, সামাজিক মিডিয়া ছেড়ে নিজেকে সময় দাও।
১৬. গ্রহীতার চেয়ে দাতা হও।
ব্যাখ্যা:
দানশীলতা মানসিক ও সামাজিক সম্মান বাড়ায়। মানুষ যে দেয়, সে শক্তিশালী তবে দান করা মানে নিজের ক্ষতি করা নয়; সীমাবদ্ধতা থাকা জরুরি।
করণীয়:
সামান্য নিয়মিত দান গড়ে তুলো মনোনীত কারণে বা জান-মাল সাহায্যে।
১৭. যেখানে তোমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সেখানে যিও না; আমন্ত্রণ পেলে অতিরিক্ত সময় কাটিও না।
ব্যাখ্যা:
অনুমতি ছাড়া উপস্থিতি বা দীর্ঘ স্টে দুইই অশান্তি তৈরি করতে পারে। মানুষ সম্মান পেতে চাইলে সীমানা মানে, আমন্ত্রণ ও বিদায়ের সময় মেনে চলা জরুরি।
করণীয়:
আমন্ত্রণ না থাকলে আসবে না আসলে, শেষ হওয়ার পরে ১০–১৫ মিনিটের মধ্যে বিদায় নেয়ার চেষ্টা করো।
১৮. মানুষের সাথে ঠিক সেইভাবে আচরণ করো যেমনটা তারা প্রাপ্য।
ব্যাখ্যা:
এখানে ‘প্রাপ্য’ বলতে মানে প্রতিদান ও ন্যায্যতা ভদ্রতা ভদ্রতাকে, দৃঢ়তার দরকারে দৃঢ়তা। তবে প্রতিশোধ নয় ন্যায় আর সীমা বজায় রাখা।
করণীয়:
কাউকে আচরণ করার আগে নিজেকে বলো: “আমি কি সদয়/ন্যায়সঙ্গত আচরণ করছি?” প্রয়োজনে আচরণ সামঞ্জস্য করো।
১৯. যদি তারা তোমার কাছে টাকা পাওনা না থাকে, দু’বার যোগাযোগ করাই যথেষ্ট; তারপর থেমে যাও।
ব্যাখ্যা:
বারবার চেয়ে চাওয়া মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এবং সময় নষ্ট করে। দুইবার স্মরণ করালে অনেকেই মনযোগ দেয়; না দিলে নিজেদের মূল্য রাখাও জরুরি।
করণীয়:
প্রথম রিমাইন্ডার শিষ্টাচারপূর্বক; দ্বিতীয় একটু দৃঢ়; তৃতীয়বারে আর যোগাযোগ করবে না।
২০. যাই করো, তাতে উৎকৃষ্ট হও।
ব্যাখ্যা:
কাজটা ছোট হোক বা বড় দক্ষতা আর নিষ্ঠা তোমাকে আলাদা করে। ধারাবাহিক অনুশীলন, প্রতিফলন ও উন্নতি এসবই দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য এনে দেয়।
করণীয়:
একটি দক্ষতা বেছে নাও এবং প্রতি সপ্তাহেনায় ৩ ঘণ্টা অনুশীলন বা শেখার সময় নির্ধারণ করো।
মনে রাখো, এই নীতিগুলো শুধু পড়ার জন্য নয় মেনে চলার জন্য। আজ থেকেই শুরু করো, কাল থেকেই দেখবে তুমি বদলে যাচ্ছো।
-সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন