এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৪

গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ! ___কাজী নজরুল ইসলাম পয়েট এন্ড পয়েম ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ! 

___কাজী নজরুল ইসলাম


স্বাধীনতা হারাইয়া আমরা যখন আত্মশক্তিতে অবিশ্বাসী হইয়া পড়িলাম এবং আকাশমুখো হইয়া কোন্ অজানা পাষাণ-দেবতাকে লক্ষ করিয়া কেবলই কান্না জুড়িয়া দিলাম, তখন কবির কণ্ঠে আশার বাণী দৈব-বাণীর মতোই দিকে দিকে বিঘোষিত হইল, ‘গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ’!’ বাস্তবিক আজ আমরা অধীন হইয়াছি বলিয়া চিরকালই যে অধীন হইয়া থাকিব, এরূপ কোনো কথা নাই। কাহাকেও কেহ কখনও চিরদিন অধীন করিয়া রাখিতে পারে নাই, কারণ ইহা প্রকৃতির নিয়ম-বিরুদ্ধ। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়া কেহ কখনও জয়ী হইতে পারে না। আজ যাহারা স্বাধীন হইয়া নিজের অধীনতার কথা ভুলিয়া অন্যকেও আবার অধীনতার জাঁতায় পিষ্ট করিতেছে, তাহারাও চিরকাল স্বাধীন ছিল না। শক্তি লাভ করিয়া যাহারা শক্তির এমন অপব্যবহার করিতেছে, কে জানে প্রকৃতি তাহাদের এই অপরাধের পরিণাম কত নির্মম হইয়া লিখিয়া রাখিয়াছে! ‘এয়সা দিন নেহি রহেগা’, চিরদিন কারুর সমান যায় না। আজ যে কপর্দকহীন ফকির, কাল তাহার পক্ষে বাদশাহ্ হওয়া কিছুই বিচিত্র নয়। অত্যাচারীকে অত্যাচারের প্রতিফল ভোগ করিতেই হইবে। আজ আমি যাহার উপর প্রভুত্ব করিয়া তাহার প্রকৃতি-দত্ত স্বাধীনতা, মনুষ্যত্ব ও সম্মানকে হনন করিতেছি, কাল যে সে-ই আমারই মাথায় পদাঘাত করিবে না, তাহা কে বলিতে পারে? শক্তি সম্পদের ন্যায্য ব্যবহারেই বৃদ্ধি, অন্যায় অপচয়ে তাহার লয়।


অন্যকে কষ্ট দিয়ে তাহার ‘আহা-দিল’ নিতে নাই, বেদনাতুরের আন্তরিক প্রার্থনায় আল্লার আরশ টলিয়া যায়। শক্তির অপব্যবহারের জন্য রোম-সাম্রাজ্য গেল, জার্মানির মতো মহাশক্তিরও পরাজয় হইল। কত উত্থান, কত পতন এই ভারত দেখিয়াছে, দেখিতেছে এবং দেখিবে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিবেক সর্বদাই মানবের পশুশক্তিকে সতর্ক করিতেছে। বিবেকের ক্ষমতা অসীম। যাহারা পশুশক্তির ব্যবহার করিয়া বাহিরে এত দুর্বার দুর্জয়, অন্তরে তাহারা বিবেকের দংশনে তেমনই ক্ষত-বিক্ষত, অতি দীন। তাহারা তাহাদের অন্তরের নীচতায় নিজেই মরিয়া যাইতেছে, শুধু লোক-লজ্জায় তাহাকে দাম্ভিকতার মুখোশ পরাইয়া রাখিয়াছে। সিংহের চামড়ার মধ্য হইতে লুকানো গর্দভ-মূর্তি বাহির হইয়া পড়িবেই। নীল শৃগালের ধূর্তামি বেশি দিন টিকিবে না। তাই বলিতেছিলাম, বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন না দিই। আজ যখন সমস্ত বিশ্ব মুক্তির জন্য, শৃঙ্খল ছিঁড়িবার জন্য উন্মাদের মতো সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিতেছে, স্বাধীনতা-যজ্ঞের হোমানলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা দলে দলে আসিয়া নিজের হৃৎপিণ্ড উপড়াইয়া দিতেছে, তাহাদের মুখে শুধু এক বুলি, ‘মুক্তি-মুক্তি-মুক্তি’। হস্তে তাহাদের মুক্তির নিশান – মুখে তাহাদের মুক্তির বিষাণ, শিয়রে তাহাদের মুক্তির তৃপ্তি-ভরা মহা-গৌরবময় মৃত্যু। – তখনও মুক্তির সেই যুগান্তরের নবযুগেও, আমরা কিনা পলে পলে দাসত্বের, মনুষ্যত্বহীন আত্মসম্মানশূন্য ঘৃণ্য কাপুরুষের মতো অধোদিকেই গড়াইয়া চলিতেছি! এতদূর নীচ হইয়া গিয়াছি আমরা যে, কেহ এই কথা বলিলে উল্টো আবার কোমর বাঁধিয়া তাহার সঙ্গে তর্ক জুড়িয়া দিই। আমাদের এই তর্কের সবচেয়ে সাধারণ সূত্র হইতেছে, দাসত্ব – গোলামি ছাড়িয়া দিলে খাইব কী করিয়া? কী নীচ প্রশ্ন! যেন আমাদের শুধু কুকুর-বিড়ালের মতো উদর-পূর্তির জন্যই জন্ম! এমন নীচ অন্তঃকরণ লইয়া যাহারা বেহায়ার মতো বেহুদা তর্ক করিতে আসে, তাহাদের উপর খোদার বজ্র কেন যে ভাঙিয়া পড়ে না, তাহা বলিতে পারি না! আজ সারা বিশ্ব যখন ও-রকম মরার মতো বাঁচিয়া থাকার চেয়ে মরিয়া মুক্তিলাভের জন্য প্রাণ লইয়া ছিনিমিনি খেলিতেছে, তখনও আমাদের এইরকম হৃদয়হীনতার, গোলামি মনের পরিচয় দিতে এতটুকু লজ্জা হয় না! বড়োই দুঃখে তাই বলিতে হয়, ‘এ অভাগা দেশের বুকে বজ্র হানো প্রভু, যদ্দিনে না ভাঙছে মোহ-ভার।’ আমাদের এই মোহ-ভার ভাঙিবে কে? এ-শৃঙ্খল মোচন করিবে কে? আছে, উত্তর আছে, এবং তাহা, ‘আমরাই!’ নির্বোধ মেষযূথের মতো এক স্থানে জড়ো হইয়া শুধু মাথাটা লুকাইয়া থাকিলে নেকড়ে বাঘের হিংস্র আক্রমণ হইতে রক্ষা পাইব না, তাহা হইলে আমাদের ওই নেকড়ে বাঘের মতো করিয়া কান ধরিয়া টানিয়া লইয়া গিয়া হত্যা করিবে।


দেশের পক্ষ হইতে আহ্বান আসিতেছে, কিন্তু কাজে আমরা কেহই সাড়া দিতে পারিতেছি না। অনেকে আবার বলেন যে, অন্যে কে কী করিতেছে আগে দেখাও, তার পর আমাদিগকে বলিয়ো। এই প্রশ্ন ফাঁকিবাজের প্রশ্ন। দেশমাতা সকলকে আহ্বান করিয়াছেন, যাহার বিবেক আছে, কর্তব্য জ্ঞান আছে, মনুষ্যত্ব আছে, সে-ই বুক বাড়াইয়া আগাইয়া যাইবে। তোমার কী নিজের ব্যক্তিত্ব নাই যে, কে কী করিল আগে দেখিয়া তবে তুমি তার পিছু পিছু পোঁ ধরিবে? নেতা কে? বিবেকই তো তোমার নেতা, কর্তব্য-জ্ঞানই তো তোমার নেতা! দেশনায়ক যাঁহারা, তাঁহারা তো তোমার নেতা, তোমার বিবেকেরই প্রতিধ্বনি করেন। কর্তব্য-জ্ঞানের কাছে, ত্যাগের কাছে সম্ভব-অসম্ভব কিছুই নাই। সুতরাং ‘উহা সম্ভব, ইহা অসম্ভব’ বলিয়া, ছেলেমানুষি করাও আর এক বোকামি। যাহা সম্ভব তাহা করিবার জন্য তোমার ডাক পড়িত কী জন্য? অসম্ভব বলিয়াই তো দেশ তোমার বলিদান চাহিয়াছে। স্বার্থের গণ্ডি না পারাইয়া ভিক্ষা দেওয়া যায়, ত্যাগ বা বলিদান দেওয়া যায় না। তোমার যতটুকু শক্তি আছে প্রয়োগ করো, দেশের কাছে, খোদার কাছে অসংকোচে দাঁড়াইবার পাথেয় সঞ্চয় করো, তোমার বিবেকের কাছে তুমি অগাধ শান্তি পাইবে! ইহাই তোমার পুরস্কার। অন্যে জাহান্নামে যাইবে বলিয়া কী তুমিও তার পিছু-পিছু সেখানে যাইবে?


আজ আমাদের শুধু ক্লান্তি, – শুধু শ্রান্তি কেন? ‘এমন করে কদ্দিন খাবি’ না গোলেমালে যদ্দিন যায় করে আর কতদিন চলিবে? আমরা আমাদের দেশের জন্য, মুক্তির জন্য কি দুঃখদৈন্যকে বরণ করিয়া লইতে পারিব না? ত্যাগ, বিসর্জন, উৎসর্গ, বলিদান ছাড়া কি কখনও কোনো দেশ উদ্ধার হইয়াছে, না হইতে পারে? স্বার্থত্যাগ করিতে হইলে দুঃখকষ্ট সহ্য করিতেই হইবে, ত্যাগ কখনও আরাম-কেদারায় শুইয়া হয় না। কিন্তু ওই দুঃখকষ্ট, ইহা তো বাহিরে; একটা সত্য মহান পবিত্র কার্য করিতে গেলে যে আত্মতৃপ্তি অনুভব করা যায়, অন্তরে যে-ভাস্বর স্নিগ্ধ দীপ্তির উদয় হইয়া সকল দেহমন আলোয় আলোকময় করিয়া দেয়, সারা দেশের ভাইদের বোনদের যে প্রশংসাভরা স্নেহকল্যাণময় অশ্রুকাতর দৃষ্টি ও সারা মুক্ত বিশ্বে সাবাসি পাওয়া যায়, তাহা এই বাহিরের দুঃখকষ্টকে কী ঢাকিয়া দিতে পারে না? কার মূল্য বেশি? বাহিরের এই নগণ্য দুঃখকষ্টের, না অন্তরের স্বর্গীয় তৃপ্তির? তুমি কী চাও? – কুকুর-বিড়ালের মতো ঘৃণ্য-মরা মরিতে, না মানুষের মতো মরিয়া অমর হইতে? তুমি কী চাও? – শৃঙ্খল, না স্বাধীনতা? তুমি কী চাও? – তোমাকে লোকে মানুষের মতো ভক্তিশ্রদ্ধা করুক, না পা-চাটা কুকুরের মতো মুখে লাথি মারুক? তুমি কী চাও? – উষ্ণীষ-মস্তকে উন্নত-শীর্ষ হইয়া বুক ফুলাইয়া দাঁড়াইয়া পুরুষের মতো গৌরব-দৃষ্টিতে অসংকোচে তাকাইতে, না নাঙ্গা শিরে প্রভুর শ্রীপাদপদ্ম মস্তকে ধারণ করিয়া কুব্জপৃষ্ঠে গোলামের মতো অবনত হইয়া হুজুরির মতলবে শরমে চক্ষু নত করিয়া থাকিতে? যদি এই শেষের দিকটাই তোমার লক্ষ্য হয়, তবে তুমি জাহান্নামে যাও! তোমার সারমেয়গোষ্ঠী লইয়া খাও দাও আর পা চাটো! আর যাহারা ত্যাগকে বরণ করিয়া লইতে পারিবে, যাহার ঘরে মুখ মলিন দেখিয়া গলিয়া যাইবে না, যাহাদের জান দিবার মতো গোর্দা আছে, আঘাত সহিবার মতো বুকের পাটা আছে, তাহারা বাহির হইয়া আইস! দেশমাতার দক্ষিণ হস্ত, আর কল্যাণ-মন্ত্রপূত অশ্রু-পুষ্প তোমাদেরই মাথায় ঝরিয়া পড়িবার জন্য উন্মুখ হইয়া রহিয়াছে। আমরা চাই লাঞ্ছনার চন্দনে আমাদের উলঙ্গ-অঙ্গ অনুলিপ্ত করিতে। কল্যাণের মৃত্যুঞ্জয় কবচ আমাদের বাহুতে উষ্ণীষে বাঁধা, ভয় কী? মনে পড়ে, সেদিন দেশমাতার আহ্বান নিয়া মাতা সরলাদেবী বাঙালার কন্যারূপে পাঞ্জাব হইতে সাহায্য চাহিতে আসিয়াছিলেন। কে কে সাড়া দিলে এ-জাগ্রত মহা-আহ্বানে? এমন ডাকেও যদি সাড়া না দাও,তবে জানিব তোমরা মরিয়াছ। বৃথাই এ-আহ্বান এ-ক্রন্দন তোমার, মা! যদি পার, সঞ্জীবনী সুধা লইয়া আইসো তোমার এ মরা সন্তান বাঁচাইতে। যদি তাহা না পার, তবে ইহাদিগকে ধুতুরার বীজ খাওয়াইয়া পাগলা করিয়া দাও। ইহাতে তাহারা ‘মানুষের মতো’ জাগিবে না, কিন্তু তবু জাগিবে! জানি, কুপুত্র অনেকে হয়, কুমাতা কখনও নয়, কিন্তু আর এমন করিয়া স্নেহের প্রশ্রয় দিলে চলিবে না, মা, এখন তোমাকে কুমাতা হইতে হইবে, তোমাকেই আঘাত দিয়া আমাদের জাগাইতে হইবে। আমরা পরের আঘাত চোখ বুজিয়া সহ্য করি কিন্তু স্বজনের আঘাত সইতে পারি না। তাই আর শুধু ডাকাডাকিতে কোনো ফল হইবে না। তোমার রুদ্রমূর্তি দিকে দিকে প্রকটিত হউক। যদিই এই রুদ্র ভীষণতার মধ্যে রণ-চণ্ডীর মহামারির মধ্যে, আমাদের মনুষ্যত্ব জাগে, যদি আঘাত খাইয়া খাইয়া অপমানিত হইয়া আবার আমরা জাগি, তাই আবার বলিতেছি, তোমরাও সাথে সাথে বলো,


গেছে দেশ দুঃখ নাই,

আবার তোরা মানুষ হ!

প্রবন্ধ - যুগবানী

পোয়েট এন্ড পয়েম ফেইসবুক থেকে 

সোমবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৪

বাঁচতে হলে জানতে হবে। মিনিকেট চালের ভাত গরমকালেও অনেকক্ষণ ভালো থাকে! আহারে! কত ভালো চাল! তাইনা? ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 একটি বিশেষ সতর্কতা মূলক পোষ্ট।


বাঁচতে হলে জানতে হবে। মিনিকেট চালের ভাত গরমকালেও অনেকক্ষণ ভালো থাকে! আহারে! কত ভালো চাল! তাইনা?


আসুন জেনে নিই আসলেই কি আমরা ভালো চাল খাচ্ছি?নাকি আবর্জনা?


❌ মিনিকেট নামে কোন ধান চাষ হয়না বাংলাদেশে। 

তাহলে, এই চাল বাজারে আসে কোথা থেকে- এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, মিনিকেট চাল তৈরী হয় কারখানায়।


🌾দেশী জাতের ধান (মোটা চালের) চালকলে আসার পর শুরু হয় তেলেসমাতি। প্রথমে ধানের খোসা ছাড়ান হয়। খোসা ছাড়ানোর পর চালের অকৃত্রিম/ন্যাচারাল রঙে কিছুটা খয়েরি/বাদামি আভা থাকে। এরপর কেমিক্যাল ও হোয়াইটনার মেশিনের মাধ্যমে চালের খয়েরি/বাদামি আভার আবরণটিকে আলাদা করা হয়। এই আবরণটি বাদ দেওয়ার পর চাল কিছুটা সরু ও সাদা হয়। এখানেই শেষ নয়, পলিশার মেশিনের মাধ্যমে পলিশ করলেই হয়ে গেল মিনিকেট চাল।


🗣️এবার প্রশ্নের তীর তাক করে কেউ বলতেই পারেন- মোটা চালকে এতোভাবে প্রসেস করে মিনিকেট বানালে তো চাল ব্যবসায়ীর ক্ষতি। 

এবার ক্ষতির হিসেবটা করা যাক- ১০০০কেজি মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানালে সাধারণত চাল পাওয়া যায় ৯৩৩কেজি, সাদা খুদ ২৬.৫ কেজি, কালো খুদ ১৪কেজি, মরা চাল ৪.৫ কেজি, ময়লা ০.৭৫ কেজি এবং পলিশ ২৭ কেজি। যোগ করলে দেখা যায় এক হাজার কেজি চাল প্রসেস করার পর পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৬কেজি বেশী। 

এই ছয় কেজি হচ্ছে জলীয় বাষ্প ও পানি। রাইস ব্রান তেল কারখানাগুলো পলিশ কিনে নেয়, সাদা খুদ বাজারে চালের অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। কালো খুদ আর মরা চাল পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি হয়। ভাবছেন চাল প্রসেসের খরচ কত? ১০০০কেজি মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানাতে খরচ হয় মাত্র ৯০০টাকা হতে ১৫০০টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৯০পয়সা থেকে দেড় টাকা।


🤔মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানিয়ে বিক্রেতা একটু বেশী লাভ করলে ক্রেতার ক্ষতি কি? 

ছোট ক্ষতি হচ্ছে ক্রেতা চিকন চালের দামে মোটা চাল কিনছেন, অর্থাৎ কেজিতে ১৫থেকে ২০টাকা পর্যন্ত ঠকছেন। বড় ক্ষতি হলো কেজিতে ১৫ থেকে ২০টাকা বেশী দিয়ে মিনিকেট চাল নয়, ক্রেতা কিনছেন মোটা চালের আবর্জনা। কারণ, প্রসেস করার মাধ্যমে চালের উপরি আবরণ (bran অর্থাৎ pericarp, seed coat, aleurone layer, embryo) বা পুষ্টিকর অংশ বাদ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, চালের সর্বমোট ৮৫ ভাগ ভিটামিন B3 থাকে pericarp–এ, প্রোটিন আর ফ্যাট থাকে Aleurone layer -এ, খনিজের ৫১ ভাগ ও মোট আঁশের ৮০ ভাগ থাকে bran –এ, ভিটামিন B1 ও ভিটামিন E থাকে embryo -তে। চালের সব পুষ্টিকর উপাদান তেলের মিলে বিক্রির জন্য প্রসেস করে আলাদা করার পর চাল আর চাল থাকেনা, হয়ে যায় চালের আবর্জনা।


❌ মিনিকেট চাল নামে চালের আবর্জনাকে যতোটা ক্ষতিকর মনে করছেন বাস্তবে আরও বেশী ক্ষতিকর। মোটা চালকে মিনিকেটে রূপান্তর করার বিভিন্ন পর্যায়ে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড + টুথপেস্ট +এরারুটের মিশ্রণ, সোয়াবিন তেল, ফিটকারি, বরিক পাউডার ব্যবহার করা হয়। প্রতি মৌসুমেই বের হয় নিত্য নতুন কৌশল।


❌ মিনিকেট চালে কখনো পোকা ধরেনা। কারণ পোকাও জানে এই চাল খাওয়ার যোগ্য নয়, এতে পুষ্টিগুণ নেই। 

অথচ দেখতে সুন্দর এই অখাদ্যকে আমি আপনি আমাদের পরিবার কে নিশ্চিন্তে খাওয়াচ্ছি এবং নিজেরাও খাচ্ছি! 

কিন্তু কেন!?😕


✨শুধু চাল নয়, এমন আরও হাজারো অখাদ্য, আবর্জনা আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে যাচ্ছি জেনে- না জেনে আর তার ফলাফল স্বরূপ ভুগতে হচ্ছে কঠিন কঠিন রোগে সেই সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছি এক ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনব্যবস্থা! 

হিসেব টা মেলানো খুবই সহজ, বাড়িতে কোনো মুরব্বী থাকলে একটু জেনে নিতে হবে আগেকার দিনে তারা কেমন খাবার খেয়ে জীবন যাপন করেছে আর তাদের রোগ বালাই কেমন ছিলো এবং তাদের চিকিৎসা-ই বা কেমন ছিলো।

আজকের দিনে আমরা হাজারো নিত্য নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আর নিত্য নতুন ঔষধ সেবন করে চলেছি যা একটা রোগকে ঠিক করে আরো শত রোগের জন্ম দিচ্ছে আমাদের শরীরে। এ যেনো এক চোরাবালির মধ্যে ডুবে আছি আমরা।


"সুস্বাস্থ্য যেমন

সকল সুখের মূল, 

ঠিক তেমন

স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্বাস্থের মূল।"


 (সংগৃহীত)

রিপোস্ট

ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়,,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়।


সাধারণত যৌন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুমড়াগোত্রীয় ফসলের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ কুমড়াগোত্রীয় ফসলের ফুল অসম্পূর্ণ হওয়ায় পরাগায়নের জন্য অন্য মাধ্যম যেমন কীটপতঙ্গের প্রয়োজন হয়। পরাগায়ন ঠিকমতো না হলে ফল শুকিয়ে পচে বা ঝরে গিয়ে প্রায় ৯৫% ফলন কমে যেতে পারে। তখন হাত পরাগায়নের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন করিয়ে দিতে হয়। এজন্য কুমড়াগোত্রীয় ফুল কখন ফোটে এবং হাত পরাগায়ন কখন করতে হয় সে বিষয়ে আমাদের জানা প্রয়োজন।


লাউ ফসলের ফুল সকাল ৯.০০টা থেকে ফুটতে শুরু করে এবং বিকাল ৪.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল প্রস্ফুটিত হয়। পরাগধানী সকাল ১১.০০টা থেকে ২.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত করে। লাউ ফুল ফোটার পর অল্প সময় খোলা থাকে ফলে  লাউয়ের পরাগায়ন বিকাল ৪.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০টার মধ্যে করতে হবে।


প্রতিদিন ভোরে সদ্যফোটা পুরুষ ফুল ছিঁড়ে পুংরেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিড়ে ফেলতে হয়। এরপর পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরে।


একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৫-৬ টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। এজন্য একটি লাউয়ের মাচায় শতকরা ১০টি পুরুষ ফুল রাখতে হয়। এতে শতকরা ৯৫টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে।


পুরুষ লাউ ফুল এবং স্ত্রী লাউ ফুল চেনার উপায়:


পুরুষ লাউ ফুলঃ ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফোটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকেনা। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদন্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকে।

পুংদন্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুন্ড থাকে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল।


লাউ এর স্ত্রী  ফুলঃ ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদন্ড থাকবে না। গর্ভদন্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদন্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে।


পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না।


লাউ চাষের ফলন বাড়াতে কি করবেন ?


১. গর্ভাশয় ঝরে পড়াকে অনেকেই মনে করে কচি লাউ ঝরে পড়ে। আসলে যেসব স্ত্রী ফুল পুংরেণু দ্বারা নিষিক্ত হয় না সেগুলো ঝরে পড়ে। এজন্য কৃত্রিম পরাগায়ন করাতে হবে

এরপরেও ঝরে পড়লে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হবে। গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে


২. কচি লাউ পচে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ফ্রুট ফ্লাই পোকা কচি লাউয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। এ ক্ষতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে লাউ পচিয়ে ফেলে। এ পোকা হাত দ্বারা মারা যায়। ছাই দেওয়া যেতে পারে অথবা ডায়াজিনন বা ডাইমেক্রন বা নগস দিতে পারেন।


৩. বীজের অঙ্কুরোদগমের পর প্রাথমিক/ প্রধান শাখাটির ১২ টি পাতা হলে তার অগ্রস্থ বা শীর্ষস্থ অংশের ছাঁটাই করে দিতে হবে। এরপর প্রধান শাখা হতে দ্বিতীয় বর্গের প্রশাখাগুলি ১২ ফুট অবধি লম্বা হলে ঠিক আগের মত এক্ষেত্রেও সেগুলির অগ্রভাগ ছাঁটাই করে দিতে হবে।


৪. লাউ লতা খুব বড় হয় কিন্তু ফুল কম ধরে। এ জন্য জৈব সার কম দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার সম্পূর্ণ মাত্রায় দিতে হবে। এছাড়াও গ্রোথ হরমোন স্প্রে করতে পারেন।


৫. ফুলের মধ্যে পিঁপড়া আক্রমণ করলে ছাই বা সেভিন দিতে পারেন।


অর্গানিক (জৈব) পদ্ধতির ফসল চাষ করুন। বিষমুক্ত খাবার উৎপাদন ও সরবরাহ করে নতুন প্রজন্ম কে বাচান।

ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

শ্রদ্ধা ভাজন বাচ্চু তালুকদার স্যারের ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 আমি আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতা  থেকে সেলসের সকল এর  উদ্দেশ্যে একটা ছোট্ট ট্রেনিং সেশন এর ব্যবস্থা করেছি। 

আশা করি সবার উপকারে আসবে। 

এখানে প্রতিদিন এক একটা বিষয় নিয়ে আমি আলোচনা করব। যে বিষয়টা নিয়ে আমি আলোচনা করব সে বিষয়ে সবাই যার যার অভিজ্ঞতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শেয়ার করবেন। 


# আলোচনার বিষয় ;


১. কিভাবে পার্টির সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হয়;

২. নতুন পার্টি কিভাবে তৈরি করতে হয় ;

৩. রিপোর্টিং সম্পর্কে ; 

৪. মার্কেটারদের জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় ;

৫. কিভাবে কোম্পানিতে ওনারশিপ নিয়ে কাজ করতে হয় ;

৬. কিভাবে কাজের ব্যস্ততা বাড়ানো যায়;

৭. সকল পণ্যর নমুনা সাথে রাকতে হবে ;

৮. কিভাবে বড় পার্টি পরিচালনা করতে হয়;

৯. স্টক অনুযায়ী অর্ডার নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে ;

১০. কিভাবে পার্টির সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে  ; 

১১. কিভাবে মার্কেট কাভারেজ বৃদ্ধি করতে হবে ; 

১২. দায় বদ্ধতার মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে ; 

১৩. নোটবুক মেইনটেইন করতে হবে এবং প্রতিদিনের ব্যক্তিগত অর্জন নোট করে রাখতে হবে ;

১৪.কিভাবে  রিপিট কাস্টমার তৈরি করতে হবে ;

১৫. কিভাবে টিম ওয়ার্ক ভাবে কাজ করতে হবে.


ধন্যবাদ 

মোঃ বাচ্চু তালুকদার।


২য় দিন
2.কী ভাবে নতুন পার্টি তৈরি করা যায়:

আমি আশা করি, আমরা যদি সাঁতরা স্টেপ ফলো করি। তাহলে অবশ্যই প্রত্যেকটা মার্কেটে আমরা নতুন পার্টি তৈরি করতে পারব। এবং আমাদের মার্কেট কাভারেজ বৃদ্ধি করতে পারবো। 

১. গ্যাপ মার্কেট খোঁজা:
আমাদের ওয়ার্কিং এরিয়াতে কোন কোন মার্কেটে আমাদের অ্যাক্টিভিটিস নাই এই গ্যাপ  মার্কেট গুলো খুঁজে বের করতে হবে। 
২. ট্রেডিং মার্কেট খোঁজা:
আমাদের গ্যাপ মার্কেট খুঁজে বের করার পরে। গ্যাপ মার্কেট  এর মধ্যে কোন কোন মার্কেটে আমরা যে প্রোডাক্ট  গুলো সেল করি এই প্রোডাক্ট গুলা বিক্রি করা যাবে এই ধরনের ট্রেডিং মার্কেট গুলোকে ফাইন্ডিং করতে হবে।
৩. বড় পার্টি খোঁজা: 
আমরা যে ট্রেডিং মার্কেট গুলা খুঁজে বের করলাম এই ট্রেনিং মার্কেটে আমরা যে প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করি এইগুলো কারা বিক্রি করে সেটা মার্কেট ছাড়বে করে বের করতে হবে। এবং বড় বড় পার্টি গুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। 
৪. প্রতিযোগীর ব্যবসায়িক দল খোঁজা;
বড় পার্টি গুলা খোজার পরে এই পাটিগুলা। কে কোন কোম্পানির সাথে বিজনেস করে সেগুলো বের করা। 
৫. ইতিবাচক বড় পার্টি  নির্বাচন করুন:
বড় পার্টি গুলো কে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করে।  এ গুলো বের করার পরে। আমাদের নতুন প্রোডাক্ট  করা বিক্রি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, আমাদের সাথে ইতিবাচক আচরণ করে, কোন পার্টি গুলা আমাদের প্রোডাক্টগুলো নিয়ে বিক্রি করতে চায় এই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করে এ ধরনের পার্টি গুলোকে ফাইন্ডিং করা। 
৬. ইতিবাচক  দলের সাথে সম্পর্ক বাড়ান:
যে পার্টিগুলো আমাদের সাথে ইতিবাচক আচরণ করে। আমাদের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চায়। তাদের সাথে সময়  দিয়ে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য গিফটের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা মার্কেটে গিয়ে যা খাই সেগুলো পার্টির ঘরের লোকদের সাথে শেয়ার করতে পারে। এভাবে সম্পর্ক বাড়বে। 
৭. আমরা যেন একটি বাজারে শীর্ষ তিনটি পার্টি  সাথে ব্যবসা করার চেষ্টা করি।

আশা করি এইভাবে স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করে কাজ করলে আমরা অবশ্যই নতুন পার্টি তৈরি করতে পারব।

ধন্যবাদ 
মোঃ বাচ্চু তালুকদার।

3. কি ভাবে রিপোর্টিং করবেন:

১. মাসের শুরুতে  পরবর্তী মাসের ট্যুর প্লান  করতে হবে। 
২. মাসের শুরুতে পরবর্তী মাসের টার্গেট সেট করতে হবে। 
৩. সকাল ৮.৩০ এর মধ্যে কোন এরিয়তে কাজ করবেন তার পরিকল্পনা দিবেন;
৪. প্রতিদিন নোটবুক লিখবেন; কি  পরিমাণ টার্গেট অরজন হল, আর কি পরিমান টার্গেট অরজন বাকি আছে তার হিসেবে লিখে রাখতে হবে। এবং টার্গেট অর্জনের  জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। 
৫. বিকাল 4.00টার মধ্যে ব্যাংকের আপডেট দিবেন; এবং
৬. বিকেল পাঁচটার মধ্যে পরের দিনের ডেলিভারি প্লান দিবেন।
৭. প্রতি শনিবারে সাপ্তাহিক এচিভমেন্ট রিপোর্ট দিবেন।

ধন্যবাদ 
মোঃ বাচ্চু তালুকদার।

4. মার্কেটারদের জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় : 
নিম্নবর্তী বিষয়গুলো প্রত্যেকটা মার্কেটারের মধ্যে অবশ্যই থাকা দরকার। 

1.পণ্যর জ্ঞান;
2. গ্রাহক জ্ঞান;
3. কোম্পানির জ্ঞান;
4. প্রতিযোগীর জ্ঞান;
5. নিজের দক্ষতা;
6. বিক্রয় দক্ষতা;
7. শারীরিক ভাষা;
8. উপস্থাপনা দক্ষতা;

পণ্যর জ্ঞান(১): 
পণ্যের জ্ঞান হল এমন একটি দক্ষতা, যেখানে আপনার কর্মীরা সম্পূর্ণ রূপে বুঝতে পারে এবং আপনার পণ্য, এরবৈশিষ্ট্য, সুবিধা, ব্যবহার এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গ্রাহকদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতেপারে। আমরা যে প্রোডাক্টটা বিক্রি করি। সেটা সম্পর্কে A to Z ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আমরা আরেকজনকে সুন্দর ভাবে আমাদের পণ্য  সম্পর্কে বোঝাতে পারবো। আমরা যে পণ্য  মার্কেটে বিক্রি করি সেটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে, এবং আমাদের পণ্যের কি কি বৈশিষ্ট্য আছে, কি কি গুনাগুন আছে সবকিছু ভালোভাবে জানতে হবে। অন্যদের পন্য সাথে আমাদের পণ্য পার্থক্য কি, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। যদি সবগুলো বিষয় ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পারি তাহলে আমরা আমাদের পার্টি কে বোঝাতে পারবো এবং সহজে আমাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবো ।
অতএব একজন সেলসম্যান এর জন্য পণ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ধন্যবাদ 
মোঃ বাচ্চু তালুকদার।


 4. মার্কেটারদের জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় : নিম্নবর্তী বিষয়গুলো প্রত্যেকটা মার্কেটারের মধ্যে অবশ্যই থাকা দরকার। 
২. গ্রাহক জ্ঞান;
৩. কোম্পানির জ্ঞান;
৪. প্রতিযোগীর জ্ঞান;
৫. নিজের দক্ষতা;
গ্রাহক জ্ঞান(২):
গ্রাহক জ্ঞান হল অভিজ্ঞতা, মূল্য এবং অন্তর্দৃষ্টি তথ্যের সমন্বয় যা গ্রাহক এবং কম্পানির মধ্যে লেনদেন এবং বিনিময়ের সময় ও প্রয়োজন তৈরি হয়। গ্রাহকদের মনমানসিকতা বুঝে তার সাথে কথা বলা। ব্যস্ত টাইমে তাকে ডিস্টার্ব না করা। যখন ফ্রি থাকে তখন তার সাথে কথা বলা।   গ্রাহকদের মেজাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে, কখন কোন ধরনের মেজাজ থাকে এগুলো সম্পর্কে বুঝতে হবে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে  ইত্যাদি। 
কোম্পানির জ্ঞান(৩):
একজন কর্মকর্তার অবশ্যই কোম্পানির কার্যকলাপ সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান থাকতে হবে। কোম্পানির মিশন এবং ভিশন সম্পর্কে জানতে হবে।, আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে, তার পর কাস্টমসকে সে অনুযায়ী জানাতে হবে ।
প্রতিযোগীর জ্ঞান(৪):
আপনার প্রতিযোগী কারা, এবং তারা কী অফার করছে তা জানা, প্রতিযোগী জ্ঞান আপনাকে আপনার পণ্য, পরিষেবা এবং বিপণনকে আলাদা করে তুলতে সাহায্য করে। আপনি এই জ্ঞান ব্যবহার করে মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে পারেন যা আপনার প্রতিযোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নেয় এবং আপনার নিজের ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা উন্নত করে।
নিজের দক্ষতা(৫):
ব্যক্তিগত দক্ষতা হল সেই দক্ষতা গুলি যা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি যখন আমরা পৃথকভাবে এবং দলগতভাবে অন্য লোকেদের সাথে যোগাযোগ করি। ব্যক্তিগত দক্ষতার দারা আপনাকে আলাদা করে দেখা হবে ? এখানে ব্যক্তিগতর দক্ষতার একটি তালিকা রয়েছে:
*সচেতনতা (নিজের এবং অন্যদের সম্পর্কে )
 * অন্যমানুষের প্রতি যত্নশীল।
 * অন্যদের সাথে একসাথে কাজ করা এবং ভালোভাবে কাজকরা।
 *লোকেদের প্রয়োজন হলে সান্ত্বনা দেওয়া।
 * পরিষ্কার যোগাযোগ দক্ষতা.
* সমস্যা খুজে বের করা এবং সমাধানের দক্ষতা অর্জন করা।

ধন্যবাদ 
মোঃ বাচ্চু তালুকদার।


বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

অভিশাপ – কাজী নজরুল ইসলাম ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 অভিশাপ

– কাজী নজরুল ইসলাম


যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ছবি আমার বুকে বেঁধে

পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে

ফিরবে মর” কানন গিরি,

সাগর আকাশ বাতাস চিরি’

যেদিন আমায় খুঁজবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!


স্বপন ভেঙে নিশুত্‌ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,

কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-

জাগবে হঠাৎ চমকে!

ভাববে বুঝি আমিই এসে

ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,

ধরতে গিয়ে দেখবে যখন

শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!

বেদ্‌নাতে চোখ বুঁজবে-

বুঝবে সেদিন বুজবে।


গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্‌বে যখন কান্না,

ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’

আস্‌বে ভেঙে কান্না!

প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,

কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!

প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি

অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি

ঘন ঘন মুছবে-

বুঝ্‌বে সেদিন বুঝবে!


আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,

তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-

কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!

শিউলি ঢাকা মোর সমাধি

প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!

বুকের মালা ক’রবে জ্বালা

চোখের জলে সেদিন বালা

মুখের হাসি ঘুচবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!


আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,

থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!

আসবে শিশির-রাত্রি!

থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,

থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,

বঁধুর বুকের পরশনে

আমার পরশ আনবে মনে-

বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!


আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-

তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,

আসবে না ক’ আর সে!

প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে

মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,

মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!

সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়

কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,

সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-

দুলবে তরী রঙ্গে,

প’ড়বে মনে সে কোন্‌ রাতে

এক তরীতে ছিলেম সাথে,

এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,

নদীর দু’ধার এমনি আঁধার

তেম্‌নি তরী ছুটবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!


তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,

আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-

সখার কারা-বন্ধ!

বন্ধু তোমার হান্‌বে হেলা

ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;

দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,

বইতে প্রাণের শান- এ ভার

মরণ-সনে বুঝ্‌বে-

বুঝবে সেদিন বুঝ্‌বে!


ফুট্‌বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,

আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্‌নী-

চৈতী-রাতের চাঁদ্‌নী।

ঋতুর পরে ফির্‌বে ঋতু,

সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!

চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,

আমার মতন চোখ ভ’রে চায়

যে-তারা তা’য় খুঁজবে-

বুঝ্‌বে সেদিন বুঝ্‌বে!


আস্‌বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,

কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-

টুটবে যবে বন্ধন!

পড়বে মনে, নেই সে সাথে

বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-

আপনি গালে যাচবে চুমা,

চাইবে আদর, মাগ্‌বে ছোঁওয়া,

আপনি যেচে চুমবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে।


আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্‌ত,

সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–

আসবে তখন পান’।

হয়ত তখন আমার কোলে

সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,

আপনি সেদিন সেধে কেঁদে

চাপ্‌বে বুকে বাহু বেঁধে,

চরণ চুমে পূজবে-

বুঝবে সেদিন বুঝবে!

ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

মিলন-মোহনায় (কাব্যগ্রন্থ- চক্রবাক) __ কাজী নজরুল ইসলাম ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 মিলন-মোহনায় (কাব্যগ্রন্থ- চক্রবাক)

__ কাজী নজরুল ইসলাম


হায় হাবা মেয়ে, সব ভুলে গেলি দয়িতের কাছে এসে!

এত অভিমান এত ক্রন্দন সব গেল জলে ভেসে !

কূলে কূলে এত ভুলে ফুলে কাঁদা আছড়ি পিছাড়ি তোর,

সব ফুলে গেলি যেই বুকে তোরে টেনে নিল মনোচোর!

সিন্ধুর বুকে লুকাইলি মুখ এমনই নিবিড় করে,

এমনই করিয়া হারাইলি তুই আপনারে চিরতরে –

যে দিকে তাকাই নাই তুই নাই! তোর বন্ধুর বাহু

গ্রাসিয়াছে তোরে বুকের পাঁজরে – ক্ষুধাতুর কাল রাহু!


বিরহের কূলে অভিমান যার এমন ফেনায়ে উঠে,

মিলনের মুখে সে ফিরে এমনই পদতলে পড়ে লুটে?

এমনই করিয়া ভাঙিয়া পড়ে কি বুক-ভাঙা কান্নায়,

বুকে বুক রেখে নিবিড় বাঁধনে পিষে গুঁড়ো হয়ে যায়?

তোর বন্ধুর আঙুলের ছোঁয়া এমনই কি জাদু জানে,

আবেশে গলিয়া অধর তুলিয়া ধরিলি অধর পানে!

একটি চুমায় মিটে গেল তোর সব সাধ সব তৃষা,

ছিন্ন লতার মতন মুরছি পড়িলি হারায়ে দিশা!

– একটি চুমার লাগি

এতদিন ধরে এত পথ বেয়ে এলি বেয়ে এলি কি রে হতভাগি?


গাঙ-চিল আর সাগর-কপোত মাছ ধরিবার ছলে,

নিলাজি লো, তোর রঙ্গ দেখিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে জলে।

দুধারের চর অবাক হইয়া চেয়ে আছে তোর মুখে,

সবার সামনে লুকাইলি মুখ কেমনে বঁধুর বুকে?

নীলিম আকাশে ঝুঁকিয়া পড়িয়া মেঘের গুণ্ঠন ফেলে

বউ-ঝির মতো উঁকি দিয়ে দেখে কুতূহলী-আঁখি মেলে।


‘সাম্পান’-মাঝি খুঁজে ফেরে তোর ভাটিয়ালি গানে কাঁদি,

খুঁজিয়া নাকাল দুধারের খাল – তোর হেরেমের বাঁদি!

হায় ভিখারিনি মেয়ে,

ভুলিলি সবারে, ভুলিলি আপনা দয়িতেরে বুকে পেয়ে!

তোরই মতো নদী আমি নিরবধি কাঁদি রে প্রীতম লাগি,

জন্ম-শিখর বাহিয়া চলেছি তাহারই মিলন মাগি!

যার তরে কাঁদি – ধার করে তারই জোয়ারের লোনা জল

তোর মতো মোর জাগে না রে কভু সাধের কাঁদন-ছল।

আমার অশ্রু একাকী আমার, হয়তো গোপনে রাতে

কাঁদিয়া ভাসাই, ভেসে ভেসে যাই মিলনের মোহানাতে,

আসিয়া সেথায় পুনঃ ফিরে যাই। – তোর মতো সব ভুলে

লুটায়ে পড়ি না – চাহে না যে মোরে তারই রাঙ্গা পদমূলে!

যারে চাই তারে কেবলই এড়াই কেবলই দি তারে ফাঁকি ;

সে যদি ভুলিয়া আঁখি পানে চায় ফিরাইয়া লই আঁখি!

–তার তীরে যবে আসি

অশ্রু-উৎসে পাষাণ চাপিয়া অকারণে শুধু হাসি!

অভিমানে মোর আঁখিজল জমে করকা-বৃষ্টি সম,

যারে চাই তারে আঘাত হানিয়া ফিরে যায় নির্মম!

একা মোর প্রেম ছুটিবে কেবলই নিচু প্রান্তর বেয়ে,

সে কভু ঊর্ধ্বে আসিবে না উঠে আমার পরশ চেয়ে –

চাহি না তাহারে! বুকে চাপা থাকা আমার বুকের ব্যথা,

যে বুক শূন্য নহে মোরে চাহি – হব নাকো ভার সেথা!

সে যদি না ডাকে কী হবে ডুবিয়া ও-গভীর কালো নীরে,

সে হউক সুখী, আমি রচে যাই স্মৃতি-তাজ তার তীরে!

মোর বেদনার মুখে চাপিয়াছি নিতি যে পাষাণ-ভার!

তা দিয়ে রচিব পাষাণ-দেউল সে পাষাণ-দেবতার!


কত স্রোতধারা হারাইছে কূল তার জলে নিরবধি,

আমি হারালাম বালুচরে তার, গোপন-ফাল্গুনদী!

ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

নদীপারের মেয়ে (কাব্যগ্রন্থ- চক্রবাক) __কাজী নজরুল ইসলাম,,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 নদীপারের মেয়ে  (কাব্যগ্রন্থ- চক্রবাক)

__কাজী নজরুল ইসলাম


নদীপারের মেয়ে!

ভাসাই আমার গানের কমল তোমার পানে চেয়ে।

আলতা-রাঙা পা দুখানি ছুপিয়ে নদী-জলে

ঘাটে বসে চেয়ে আছ আঁধার অস্তাচলে।

নিরুদ্দেশে ভাসিয়ে-দেওয়া আমার কমলখানি

ছোঁয় কি গিয়ে নিত্য সাঁঝে তোমার চরণ, রানি?

  

                       নদীপারের মেয়ে!

গানের গাঙে খুঁজি তোমায় সুরের তরি বেয়ে।

খোঁপায় গুঁজে কনক-চাঁপা, গলায় টগর-মালা,

হেনার গুছি হাতে বেড়াও নদীকূলে বালা।

শুনতে কি পাও আমার তরির তোমায়-চাওয়া গীতি?

ম্লান হয়ে কি যায় ও-চোখে চতুর্দশীর তিথি?

  

                       নদীপারের মেয়ে!

আমার ব্যথার মালঞ্চে ফুল ফোটে তোমায়-চেয়ে।

শীতল নীরে নেয়ে ভোরে ফুলের সাজি হাতে,

রাঙা উষার রাঙা সতিন দাঁড়ায় আঙিনাতে।

তোমার মদির শ্বাসে কি মোর গুলের সুবাস মেশে?

আমার বনের কুসুম তুলি পর কি আর কেশে?

  

                       নদীপারের মেয়ে!

আমার কমল অভিমানের কাঁটায় আছে ছেয়ে!

তোমার সখায় পূজ কি মোর গানের কমল তুলি?

তুলতে সে-ফুল মৃণাল-কাঁটায় বেঁধে কি অঙ্গুলি?

ফুলের বুকে দোলে কাঁটার অভিমানের মালা,

আমার কাঁটার ঘায়ে বোঝ আমার বুকের জ্বালা?

ফেইসবুক থেকে নেওয়া,,, 

বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

উপন্যাস- হাজার বছর ধরে ২ _____ জহির রায়হান poyet and poyem ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 উপন্যাস- হাজার বছর ধরে

_____ জহির রায়হান

                                   দুই- 


ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম শিকদার বাড়ি।


ঘুমে ঢুলু ঢুলু বউ দুটোর গা বেঁয়ে দরদর ঘাম নামে। এতক্ষণে রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছে ওরা। আচলটা কাঁধের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে, সামনে হাত রাখার বাঁশের ওপরে গুটিয়ে রেখেছে দুজনে। মাঝে মাঝে তুলে নিয়ে বুক আর গলার ঘাম মুছে নিচ্ছে। ঘামে কাপড়টা চপ চপ করছে ওদের।


সেদিকে খেয়াল নেই মকবুলের। ও ভাবছে অন্য কথা।


বাড়ির ওপরের জমিটাতে লাঙ্গল না দিলে নয়। অথচ হাল যে একটা ধার পাবে সে সম্ভাবনা নেই। লাঙ্গল অবশ্য যা হোক একটা আছে ওর। অভাব হলো গরুর। গরু না হলে লাঙ্গল টানবে কিসে। আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়। মকবুল ভাবলো, বউ দুটোকে লাঙ্গলে জুড়ে দিয়ে, দূর এটা ঠিক হবে না। লোকে গালাগাল দেবে ওকে। বলবে, দেহ বউ দুইড্যা দিয়া লাঙ্গল টানায়। তার চেয়ে এক কাজ করলে কি ভালো হয় না? না। বউদের দিয়েই লাঙ্গল টানাবে সে। দিনে নয়, রাতে। বাইরের কোন লোকে দেখবার কোন ভয় থাকবে না তখন। বউরা অবশ্য আপত্তি করতে পারে। কিন্তু ওসব পরোয়া করে না মকবুল। মুফত বিয়ে করে নি সে। পুরো চার চারটে টাকা মোহরানা দিয়ে এক একটা বিয়ে করেছে। হুঁ।


ভাবছিলো আর সোনারঙ ধানগুলো ঢেঁকির নিচে ঠেলে দিচ্ছিলো মকবুল। হঠাৎ একটা তীব্র আর্তনাদ করে হাতটা চেপে ধরলে সে। অসতর্ক মুহূর্তে ঢেঁকিটা হাতের ওপর এসে পড়েছে ওর। আল্লারে বলে মুখ বিকৃত করলো মকবুল।


টুনি আর আমেনা এতক্ষণে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ঢেঁকির উপর। ঘোর কাটতে ছুটে নেমে এলো ওরা। ওদের কাছে এগিয়ে আসতে দেখে ওদের গায়ের ওপরে থুতু ছিটিয়ে দিল মকবুল, দূর-হ দূর-ই আমার কাছ থাইকা। বলতে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত চাপালো মকবুল।


আমেনা বললো, দেহ কারবার, নিজের দোষে নিজে দুঃখ পাইল আর এহন আমাগোরে গালি দেয়। আমরা কি করছি।


তোরা আমার সঙ্গে শতামি করছল। বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো মকবুল। তোরা দুই সতীনে ইচ্ছা কইরা আমার হাতে ঢেঁকি ফালাইছল। তোরা আমার দুশমন।


হ্যাঁ দুশমনই তো। দুশমন ছাড়া আর কি। কাপড়ের অ্যাঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছলো আমেনা।


টুনি এগিয়ে গেলো ওর ফুলো হাতে একটা ভিজে ন্যাড়া বেঁধে দেয়ার জন্যে। লাফিয়ে তিন হাত পিছিয়ে গেলো মকবুল। দরকার নাই, দরকার নাই। অত সোয়াগের দরকার নাই। বলে একখানা সরু কাঠের টুকরো নিয়ে ওর দিকে ছুঁড়ে মারলো মকবুল।


বিষ উঠছে নাহি বুড়ার? এমন করতাছে ক্যান। চাপা রোষে গজগজ করতে করতে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো টুনি। খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়াতে ঠাণ্ডা বাতাসে দেহটা জুড়িয়ে গেলো ওর। হঠাৎ মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। উঠোন থেকে মন্তুর ঘরের দিকে তাকালো ও। একটা পিদিম জ্বলছে সেখানে। একবার চারপাশে দেখে নিয়ে মন্তুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো টুনি।


মাচাঙের ওপর থেকে কথা বালিশ নামিয়ে নিয়ে শোবার আয়োজন করছিলো মন্তু।


টুনি দোরগোড়া থেকে বলে, বাহ, বারে।


মন্তু মুখ তুলে তাকায় ওর দিকে। বলে, ক্যান কি অইছে?


টুনি ফিসফিসিয়ে বলে, আজ যাইবা না?


মন্তু অবাক হয়, কই যামু?


টুনি মুখ কালো করে চুপ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে, ক্যান ভুইলা গেছ বুঝি?


মন্তুর হঠাৎ মনে পড়ে যায়। বেড়ার সঙ্গে ঝােলান মাছ ধরার জালটার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে, অ- মাছ ধরতে।


যাইবা না? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে টুনি।


মন্তু হেসে বলে, যা যামু। কিন্তু পরক্ষণে চিন্তিত হয়ে পড়ে সে, বুড়ো যদি টের পায় তাইলে কিন্তুক জানে মাইরা ফালাইবো।


হঠাৎ ফিক করে হেসে দেয় টুনি। মারেরে ডরাও নাকি?


মন্তু সে কথার জবাব না দিয়ে টুনি বলে, ভাত আইছ?


না। তুমি খাইছ?


হুঁ। তুমি গিয়া খাইয়া আস যাও। জলদি কইরা আইসো। বিছানাটা আবার গুটিয়ে রেখে। বেড়ার সঙ্গে ঝােলান জালটা মাটিতে নামিয়ে নেয় মন্তু।


ও ঘর থেকে আমের ডাক শোনা যায়, টুনি বিবি কই গেলা, খাইতে আহ!


আহি, বলে সেখান থেকে চলে যায় টুনি।


আজকাল রাতের বেলা আমেনার ঘরে শোয় মকবুল। টুনি থাকে পাশের ঘরে। আগে, ফাতেমা আর ও দুজনে এক সঙ্গে থাকতো। মাসখানেক হলো ফাতেমা বাপের বাড়ি গেছে। এখন টুনি একা। রাতের বেলা ইচ্ছেমত যেখানে খুশি ঘুরে বেড়ালেও ধরবার উপায় নেই। রাত জেগে মাছ ধরাটা ইদানীং একটা নেশা হয়ে গেছে ওদের। ঘুঘুটে অন্ধকার রাতে গ্রামের এ পুকুর থেকে অন্য পুকুরে জাল মেরে বেড়ায় ওরা। হাতে একটা টুকড়ি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে থাকে টুনি। জালে ওঠা মাছগুলো ওর মধ্যে ভরে রাখে।


পর পুকুরের মাছ ধরতে গিয়ে সমস্ত সময় সজাগ থাকতে হয় ওদের। চারপাশে দৃষ্টি রাখতে হয়। একদিন প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলো দুজনে। জমীর মুন্সির বড় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছিলো সেদিন। আকাশে চাঁদ ছিলো কিন্তু চাদনী ছিলো না। কালো মেঘে ছেয়ে ছিলো পুরো আকাশটা।


এক হাঁটু পানিতে নেমে জালটাকে সন্তর্পণে ছুঁড়ে দিয়েছিলো সে। পুকুরের মাঝখানটাতে। শব্দ হয় নি মোটেও। কিন্তু পুকুর পাড় থেকে জোর গলায় আওয়াজ শোনা গেল, কে, কে জাল মারে পুকুরে?


এক হাঁটু পানি থেকে নীরবে এক গলা পানিতে নেমে গেলো মন্তু। টুনি ততক্ষণে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।


জমীর মুন্সির হাতের টর্চটা বিদ্যুদ্বেগে ছুটে গেল পুকুরের এপার থেকে ওপারে। মনে মনে বার বার খোদাকে ডাকছিলো মন্তু, খোদা তুমিই সব।


একটু পরে পাড়ের ওপর থেকে টুনির চাপা গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো, এই উইঠা আহ। মুন্সি চইলা গেছে। বলে খিল খিল করে হেসে উঠে সে। ওর হাসির শব্দে রাগে সমস্ত দেহটা জ্বালা করে উঠেছে মন্তুর। এমন সময়ে মানুষ হাসতে পারে?


তারপর থেকে আরো সাবধান হয়ে গেছে মন্তু। গনু মোল্লার কাছ থেকে তিন আনা পয়সা খরচ করে একটা জোরদার তাবিজ নিয়েছে সে। রাতে বিরাতে গাঁয়ের পুকুরে মাছ ধরে বেড়ানো, বিপদ আপদ কখন কি ঘটে কিছুতো বলা যায় না। আগে থেকে সাবধান হয়ে যাওয়া ভালো। সগন শেখের পুকুর পাড়ে এসে, বাজুর ওপরে বাঁধা তাবিজটাকে আর একবার ভাল করে দেখে নিলো মন্তু। তারপর বুনো লতার ঝোপটাকে দুহাতে সরিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো সে। টুনি পেছন থেকে বললো, বারে, অত জোরে হাঁটলে আমি চলি কি কইরা? মন্তু জালটাকে গুছিয়ে নিতে নিতে বললো, আস্তে আহ, তাড়া কিসের? টুনি বলে বারে, আমার বুঝি ডর ভয় কিছুই নাই। যদি সাপে কামড়ায়? সাপের কথা বলতে না বলতেই হঠাৎ একটা অ্যাঁধি সাপ ফোঁস করে উঠে সরে যায় সামনে থেকে। অ্যাঁতকে উঠে দুহাত পিছিয়ে আসে মন্তু। ভয় কেটে গেলে থুতু করে বুকের মধ্যে একরাশ থুতু ছিটিয়ে দেয় সে। পেছনে টুনির দিকে তাকিয়ে বলে, বুকে থুক দাও তাইলে কিছু অইবো না। কোন রকম বিতর্কে না এসে নীরবে ওর কথা মেনে নেয় টুনি। কপালটা আজ মন্দ ওদের। অনেক পুকুর ঘুরেও কিছু চিংড়ি গুঁড়ো ছাড়া আর কিছু জুটল না। মাছগুলো কেমন যেন সেয়ানা হয়ে গেছে। পুকুরের ধারে কাছে থাকে না। থাকে গিয়ে একেবারে মাঝখানটিতে, এতদূর জাল উড়িয়ে নেয়া যায় না। টুনি বলে থাক, আইজ থাউক, চলো বাড়ি ফিইরা যাই। জালটাকে ধুয়ে নিয়ে মন্তু আস্তে বলে, চলো।


সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুলো হাতটা কোলে নিয়ে বসে বসে আবুল আর হালিমার ঝগড়া দেখছিলো মকবুল।


অনেকক্ষণ কি একটা বিষয় নিয়ে তর্ক চলছে ওদের মধ্যে। দাওয়ায় বসে বসে যা মুখে আসছে ওকে বলে যাচ্ছে আবুল। হালিমাও একেবারে চুপ করে নেই। উঠানে একটা লাউয়ের মাচা বাধতে বাঁধতে দুএকটা জবাবও দিচ্ছে সে মাঝে মাঝে।


মকবুল হাতের ব্যথায় মৃদু কাতরাচ্ছিলো আর পিটপিট চোখে তাকাচ্ছিলো ওদের দিকে। হঠাৎ দাওয়া থেকে ছুটে এসে মূহুর্তে হালিমার চুলের গোছাটা চেপে ধরলো আবুল। তারপর কোন চিন্তা না করে সজোরে একটা লাখি বসিয়ে দিলো তলপেটে। উঃ মাগো, বলে পেটটা দুহাতে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লো হালিমা। রাগে তখন ফোপাচ্ছে আবুল, আমার ঘরের ভাত ধ্বংস কইরা রাস্তার মানুষের লগে পিরীত। জানে খতম কইরা দিমু না তোরে। কাইটা রাস্তায় ভাসায় ডিমু না। বলে আবার ওর চুলের গোছাতে হাত দিতে যাচ্ছিলো আবুল, বুড়ো মকবুল চিৎকার করে উঠলো, খবরদার আবুইল্যা, তুই যদি বউ-এর গায়ে আরেকবার হাত তুলছস তাইলে ভালো অইবো না কিন্তুক।


আমার ঘরণীর গায়ে আমি হাত তুলি কি যা ইচ্ছা তাই করি, তুমি কইবার কে, অ্যাঁ? পরক্ষণে আবুল জবাব দিলো, তুমি যখন তোমার ঘরণীরে তুলা পেড়া কর তহন কি আমরা বাধা দেই?


অমন কোণঠাসা উত্তরের পর আর কিছু বলার থাকে না মকবুলের। শুধু জুলন্ত দৃষ্টিতে এক নজর ওর দিকে তাকালো মকবুল। আবুল তখন ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে চলেছে হালিমাকে। ভেতরে নিয়ে ঝাঁপি বন্ধ করে মনের সুখে মারবে। ওর ইচ্ছে হয়তো বুঝতে পেরেছিলো হালিমা। তাই মাটি অ্যাঁকড়ে ধরে গোঙাতে লাগলো সে, ওগো তোমার পায়ে পড়ি। আর মাইরো না, মইরা যামু।


চুপ, চুপ, তীব্র গলায় ওকে শাসিয়ে ঝাঁপিটা বন্ধ করে দেয় আবুল। হেঁচকা টানে ওর পরনের হেঁড়া ময়লা শাড়িটা খুলে নিয়ে ঘরের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। তালি দেয়া পুরান ব্লাউজটা অ্যাঁটসাঁট করে বাঁধা ছিলো টেনে সেটাও খুলে ফেলে আবুল। তারপর দু’পায়ে ওর নগ্ন দেহটাকে প্রচণ্ডভাবে মাড়াতে থাকে সে।


বেড়ার সঙ্গে পুরান একটা ছড়ি ঝোলান ছিলো। সেটা এনে হালিমার নরম তুলতুলে কপালে কয়েকটা অ্যাঁচড় টেনে দেয় আবুল। এইবার পিরীত কর। আরো পিরীত কর। রাস্তার মানুষের লগে।


আহারে। এর মাইয়াডারে মাইরা ফালাইস না। ওরে ও পাষাইন্যা, দরজা খোল মারিস আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু’হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। অবুল একবার তাকালো সেদিকে কিন্তু ঝাঁপি খুললো না।


বউ মারায় একটা পৈচাশিক আনন্দ পায় আবুল। পান বিডির মত এও যেন একটা নেশা হয়ে গেছে ওর। মেরে মেরে এর আগে দু’দুটো বউকে প্রাণে শেষ করে দিয়েছে সে।


প্রথম বউটা ছিলো এ গাঁয়েরই মেয়ে। আয়েশা। একটু বেঁটে একটু মোটা আর রঙের দিক থেকে শ্যামলা। অপূর্ব সংযম ছিলো মেয়েটির। অপূর্ব শান্তি স্বভাব। কত মেরেছে ওকে আবুল। কোনদিন একটু শব্দও করে নি। পিঠটা বিছিয়ে দিয়ে উপুর হয়ে চুপচাপ বসে থাকতো। কিল, চাপড়, ঘুষি ইচ্ছেমত মারতো আবুল।


একটা সামান্য প্রতিবাদ নেই।


প্রতিরোধ নেই।


শুধু আড়ালে নীরবে চোখের পানি ফেলতো মেয়েটা।


তারপর একদিন ভীষণভাবে রক্তবমি শুরু হলো ওর। জমাট বাঁধা কালো কালো রক্ত। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে মারা গেলো আয়েশা।


আয়েশা টিকেছিলো বছর তিনেক। তার পরেরটা কিন্তু ওর চাইতেও কম। মাত্র দুবছর।


অবশ্য জমিলার মাত্র দুবছর টিকে থাকার পেছনে একটা কারণও আছে। ও মেয়েটা ছিলো একটা বাচাল গোছের আর একটু রুক্ষ মেজাজের। সহজে আবুলের কিল চাপড়গুলো গ্রহণ করতে রাজি হতো না সে। মারতে এলে কোমরে অ্যাঁচল বেঁধে রুখে দাঁড়াতো।


হাজার হোক মেয়েতো। পুরুষের সঙ্গে পারবে কেন? বাধা দিতে গিয়ে পরিণামে আরো বেশি মার খেতো জমিলা। ও যখন মারা গেল আর ওর মৃত দেহটা যখন গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করছিলো সবাই তখন ওর সাদা ধবধবে পিঠের ওপর সাপের মত অ্যাঁকাবাকা ফুলে ওঠা রেখাগুলো দেখে শিউরে উঠেছিলো অনেকে। ওরে পাষাইন্যারে এমন দুধের মত মাইয়াটারে শেষ করলি তুই।


আয়েশা মারা যাবার পর অবশ্য ভীষণ কেঁদেছিলো আবুল। গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলো সারা উঠোনে। পাড়াপড়শীদের বলেছিলে, আহা বড় ভালো বউ আছিলো আয়েশা। আমি পাষাইন্যা তার কদর বুঝলাম না। আহারে এমন বউ আর পামু না জীবনে।


আয়েশার শোকে তিনদিন এক ফোঁটা দানাপানিও মুখে পোরে নি আবুল। তিন রাত কাটিয়েছে ওর কবরের পাশে বসে আর শুয়ে। পাড়াপড়শীরা ভেবেছিলো ওর চরিত্রে বুঝি পরিবর্তন এলো এবার। এবার ভালো দেখে একটা বিয়ে শাদি করিয়ে দিলে সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করবে আবুল।


কিন্তু জমিলার সঙ্গেও সেই একই ব্যবহার করেছে আবুল। একই পরিণাম ঘটেছে জমিলার জীবনেও।


দ্বিতীয় বউ-এর মৃত্যুতে আবুলের গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার কোন মূল্য দেয় নি পড়শীরা। মুখে বিরক্তি এনে বলেছে, আর অত ঢঙ করিস না আবুইল্যা। তোর ঢঙ দেইখলে গা জ্বালা করে।


আমার বউ-এর দুঃখে আমি কাঁদি, তোমাগো গো জ্বালা করে ক্যান? ওদের কথা শুনে ক্ষেপে উঠে আবুল। কপালে এক মুঠো ধুলো ছুঁইয়া সহসা একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে সে, এই তৌবা করলাম বিয়া শাদি আর করমু না খোদা, আমারে আর বিয়ার মুখ দেখাইও না। খোদা, আমার শত্রুরা আরামে থাহুক। বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে আবুল।


পড়শীরা গালে হাত দিয়ে বলেছে, ইয়া আল্লা, এই কেমনতর কথা। বউ মারলি তুই, সেই কথা বইলা কি শতামি করলাম নাকি আমরা। সাচা কথা কইলেই তো মানুষ শত্রু হয়।


ঠিক কইছ বঁইচির মা, সাচা কথা কইলেই এমন হয়। তা, আমাগো কইবারও বা দরকার কি। ওর বউরে মারুক কি কাটুক কি নদীতে ভাসায়া দিক, আমাগো কি আছে তাতে।


সেদিন থেকে আবুলের সাতে পাঁচে আর কেউ নেই ওরা।


আজকাল হালিমাকে যখন প্রহর অন্তর একবার করে মারে আবুল তখন কেউ কিছু বলে। চুপ করে থাকে। মাঝে মাঝে বুড়ো মকবুল এক-আধটু বাধা দেবার চেষ্টা করে। আবুইল্যা তোর কি মানুষের পরান না, এমন কইরা যে মারছ বউডারে তোর মনে একটুও চোট লাগে না আবুইল্যা? বউদের অবশ্য মকবুলও মারে। তাই বলে আবুলের মত অত নির্দয় হওয়াটা মোটেই পছন্দ করে না সে। মারবি তো মার; একটুখানি সইয়া মার। অপরাধের গুরুত্ব দেইখা সেই পরিমাণ মার। এ হলো মকবুলের নিজস্ব অভিমত। অপরাধ, এমন কোন সাংঘাতিক করে নি হালিমা। পাশের বাড়ির নুরুর সঙ্গে কি একটা কথা বলতে গিয়ে হেসেছিলো জোরে। দূর থেকে সেটা দেখে গা জ্বালা করে উঠেছে আবুলের। একটা গভীর সন্দেহে ভরে উঠেছে মন।


এমন মন খোলা হাসিতো আবুলের সঙ্গে কোনদিন হাসে নি হালিমা।


বেহুঁশ হালিমাকে ভেতরে ফেলে রেখে আবুল যখন বাইরে বেরিয়ে এলো তখন সর্বাঙ্গে ঘামের স্রোত নেমেছে ওর। পরনের লুঙ্গি দিয়ে গায়ের ঘামটা মুছে নিয়ে দাওয়ার ওপর দম ধরে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিলো আবুল। মাটির কোটাকে নেড়েচেড়ে কি যেন দেখলো, তারপর কলকেটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।


রশীদের বউ সালেহা উঠোনে বসে চাটাই বুনছিলো। আবুলকে এদিকে আসতে দেখে মুখ টিপে হেসে বললো, বউ-এর পিরীত বুঝি আর সইলো না মিয়ার।


আর সইব, বহুত সইছি। মুখ বিকৃত করে পুরনো কথাটাই আবার বলে গেলো আবুল, আমার ঘরের ভাত খাইয়া রাস্তার মানুষের সঙ্গে পিরীত। তুমি কও ভাবী, এইডা কি সহ্য করন যায়।


হ্যাঁ তাতো খাঁটি কথাই কইছ। সালেহা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ঘরনী যদি মনের মত না হয় তাইলে কি তারে নিয়ে আর সুখে ঘর করন যায়? আর ভাবী দুনিয়াদারী আর ভাল লাগে না। ইচ্ছা করে দুই চোখ যেই দিকে যায় চইল্যা যাই। বলে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে আবুল। তারপর সালেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, চুলায় আগুন আছে? একটু আগুন দাও।


আর আস্কারা কি এমনে কম পাইছে। চারদিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে চাপা স্বরে সালেহা বললো, নূরুর সঙ্গে কি আজকা কথা কইছে? ওতো রোজ রোজ কথা কয়।


কি? চোখ জোড়া আবার ধপ করে জ্বলে উঠলো আবুলের। আমারে এতদিন কও নাই ক্যান?


সালেহা বললো, কি দরকার বাপু আমাগো মিছামিছি শত্রু বইনা। কইম গেলে তো অনেক কথাই কইতে অয়। তাকি আর একদিনে শেষ করা যায়।


কি কথা কও ভাবী। খোদার কসম ঠিক কইরা কও। তামাক খাওয়াটা একবারে ভুলে গেলো আবুল।


সালেহা আস্তে করে বললো, যাই কও বাপু কারো বদনাম করার অভ্যাসই আমার নাই। কিন্তুক কই কি এই বউডা তোমার বড় ভালো হয় নাই। আমরা তো আয়শারেও দেখছি, জমিলারেও দেখছি। ওরাতো আমাগো হাতের ওপর দিয়েই গেছে। চরিত্রে ওগো তুলনা আছিলো না। কিন্তু হালিমার স্বভাব চরিত্র বাপু আমার বড় ভালো লাগে না। বলতে গিয়ে বার কয়েক কাশলো সালেহা। কাশটা গিলে নিয়ে আবার সে বললো, ইয়ে মানে, বাইরের মানুষের সঙ্গে হাসাহাসি আর ঢলাঢলি। একটুহানি লজ্জা শরমও তো থাকা চাই। কথা শেষে আবুলের রক্তলাল চোখ জোড়া দিকে দৃষ্টি পড়তে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো সাহেলা। একটু ধমকের সুরে বললো, দেইখো বাপু, তুমি মাইয়াডারে মারতা শুরু কইরো না। এমনিতেই বহুত মারছ। এতে যদি শিক্ষা না হয় তাইলে আর জন্মেও হইবো না। সালেহার কথাটা শেষ হবার আগেই সেখান থেলে চলে গেছে আবুল। কল্‌কেটা নিয়া যেতে ভুলে গেছে সে। একটু পরে আবার হালিমার কান্নার শব্দ শোনা গেলো ঘর থেকে। আবুল আবার মারছে তাকে।


চলবে,,,,,

হাজার বছর ধরে __ জহির রায়হান,,,,,,,,,, poyet and poyem ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 হাজার বছর ধরে

__ জহির রায়হান


এক


মস্ত বড় অজগরের মত সড়কটা একেবেঁকে চলে গেছে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে।


মোঘলাই সড়ক।


লোকে বলে, মোঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে শাহ সুজা যখন আরাকান পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন যাবার পথে কয়েক হাজার মজুর খাটিয়ে তৈরি করে গিয়েছিলো এই সড়ক।


দুপাশে তার অসংখ্য বটগাছ। অসংখ্য শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সগর্বে দাড়িয়ে রয়েছে সেই দীর্ঘকাল ধরে। ওরা এই সড়কের চিরন্তন প্রহরী।


কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম।


চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা।


মাঝে মাঝে ধান ক্ষেত সরে গেছে দূরে। দুধারে শুধু অফুরন্ত জলাভূমি। অথৈ পানি। শেওলা আর বাদাবনের ফাঁকে ফাঁকে মাথা দুলিয়ে নাচে অগুণিত শাপলার ফুল।


ভোর হতে আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়োরা ছুটে আসে এখানে। এক বুক পানিতে নেমে শাপলা তোলে ওরা। হৈ-হুল্লোর আর মারামারি করে কুৎসিত গালাগাল দেয় একে অন্যকে। বাজারে দর আছে শাপলার। এক অ্যাঁটি চার পয়সা করে।


কিন্তু এমনো অনেকে এখানে শাপলা তুলতে আসে, বাজারে বিক্রি করে পয়সা রোজগার করা যাদের ইচ্ছে নয়।


মন্তু আর টুনি ওদেরই দলে।


ওরা আসে ধলপহরের আগে যখন পূর্ব আকাশে শুকতারা ওঠে। তার ঈষৎ আলোয় পথ চিনে নিয়ে চুপি চুপি আসে ওরা। রাতে শিশির ভেজা ঘাসের বিছানা মাড়িয়ে ওরা আসে ধীরে ধীরে। টুনি ডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে থাকে।


মন্তু নেমে যায় পানিতে।


তারপর, অনেকগুলো শাপলা তুলে নিয়ে, অন্য সবাই এসে পড়ার অনেক আগে সেখান থেকে সরে পড়ে ওরা।


পরীর দীঘির পাড়ে দুজনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। শাপলার গায়ে লেগে থাকা অ্যাঁশগুলো বেছে পরিষ্কার করে।


মন্তু বলে, বুড়ো যদি জানে তোমারে আমারে মাইরা লাফাইবো।


টুনি বলে, ইস, বুড়ার নাক কাইটা দিমু না।


নাক কাইটলে বুড়ো যদি মইরা যায়?


মইরলে তো বাঁচি। বলে ফিক করে হেসে দেয় টুনি, বলে, পাখির মত উইড়া আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু। বলে আবার হাসে সে, সে হাসি আশ্চর্য এক সুর তুলে পরীর দীঘির চার পাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।


এ দীঘি এককালে এখানে ছিলো না।


আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়োদের প্রশ্ন করলে তারা মুখে মুখে বলে দেয় এ দীঘির ইতিহাস। কেউ চোখে দেখে নি, সবাই শুনেছে। কেউ শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে। তার বাবা জেনেছে তার দাদার কাছ থেকে। আর তার দাদা শুনেছে তারও দাদার কাছ থেকে।

আকাশ থেকে খন্তা কোদাল আর মাটি ফেলবার ঝুড়ি নিয়ে এলো ওরা।


বৈশাখী পূর্ণিমার রাত।


রুপালি জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরেছিলো এই সীমাহীন প্রান্তর। দক্ষিণের মৃদু বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিলো পরীদের হাসির শব্দে।


কথায় গানে আর কাজে।


রাত ভোর হবার আগে দীঘি কাটা হয়ে গেল।


পাতাল থেকে কলকল শব্দে পানি ওঠে ভরে গেল দীঘি।


সেই দীঘি।


তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রাম। এক নয়, অনেক।


গভীর রাতে ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম করে গ্রামগুলো।


জোড়া বউকে ঢেঁকির উপরে তুলে দিয়ে রাত জেগে ধান ডানে বুড়ো মকবুল। পিদিমের শিখাটা ঢেঁকির তালে তালে মৃদু কাপে।


মকবুল ধমকে উঠে বউদের, কি, গায়ে শক্তি নাই? এত আস্তে ক্যান। আরো জোরে চাপ দাও না। এমনভাবে গর্জে উঠে মকবুল, যেন ক্ষেতে লাঙ্গল ঠেলতে গিয়ে রোগী। লিলিকে গরু জোড়াকে ধমকাচ্ছে সে। হুঁ, হট হট। আরো জোরে। আরো জোরে। ধমক খেয়ে ঢেঁকিতে আরো জোরে চাপ দেয় ওরা। টুনি আর আমেনা। পাশের বাড়ি থেকে আম্বিয়ার গান শোনা যায়। স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার, স্বপ্নে গেলো চইলারে। দুধের মত সুন্দর কুমার কিছু না গেল বইলারে।


ঢেঁকিতে চড়লেই গান গাওয়ার সখ চাপে আম্বিয়ার। সতেরো আঠারো বছর বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনো বিয়ে হয় নি ওর। অ্যাঁটসাঁট দেহের খাঁচে খাঁচে দুরন্ত যৌবন, আট-হাতি শাড়ির বাঁধন ভেঙ্গে ফেটে পড়তে চায়। চেহারায় মাধুর্য আছে। চোখ জোড়া বড় বেশি তীক্ষ্ণ। ঢেঁকিতে চড়লে, টেকিকে আর সুখ দেয় না ও। এত দ্রুত তালে ধান ভানতে থাকে, মনে হয় টেকিটাই বুঝি ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।


ধান ভানা শেষ হলে গায়ে দর দর ঘাম নামে ওর। একটা চাটাইয়ের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে জোরে শ্বাস নেয় আম্বিয়া।।


ঢেঁকির পাশে বসে এই মুহূর্তে বারবার আম্বিয়ার কথা মনে পড়ছিলো বুড়ো মকবুলের। দাঁত মুখ খিচে বউদের আবার ধমক মারলো, ও শুনছনি, আম্বিয়া কেমন ধপাস ধপাস কইরা ধান বাইনতাছে। আর তোরা, কিছু না কিছু না, বলে বার কয়েক মাটিতে থুতু ফেললো মকবুল। বাঁ হাতে কপালের ঘামগুলো মুছে নিল সে।


দাওয়ার ওপাশে পিদিম হাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছিলো ফকিরের মা। সেখান থেকে বললো, আহা, মকবুল! বউগুলোরে বুঝি এই রাতের বেলাও আর শান্তি দিবি না তুই। সারাদিন তো খাটাইছস, এহন দুপুর রাইতেও, বলে টুনি আর আমেনার জন্য আফসােস করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেল ও।


এ বাড়িতে মোট আট ঘর লোকের বাস।


সামনে নুয়ে পড়া ছোট ছোট ঘরগুলো একটার সঙ্গে একটা লাগানো। বাঁশের তৈরি। বেড়ার ভাঙ্গা অংশগুলো তালপাতা দিয়ে মোড়ান । চালার স্থানে স্থানে খরকুটো উঠে ফুটো হয়ে গেছে। দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ এসে একবার করে সে ফুটো দিয়ে উঁকি মেরে যায় ঘরের ভেতরে। আম, কাঁঠাল, পাটি পাতা আর বেতাক বনে ঘেরা বাড়ির চারপাশ। মাঝে মাঝে ছোট বড় অনেকগুলো সুপুরি আর নারকেল গাছ লাগানো হয়েছে অনেক আগে । দু’একটা খেজুর গাছও ছড়িয়ে রয়েছে এখানে সেখানে। ছোট পুকুর। পুকুরে শিং কই আর মাগুর মাছের কমতি নেই। দিনরাত শব্দ করে ঘাই দেয় ওরা। পানিটাকে সারাক্ষণ ঘোলাটে করে রাখে। সামনে মাঝারি উঠোন। শীত কিংবা গ্রীষ্মে শুকিয়ে একরাশ ধুলো জমে। বর্ষায় এক হাঁটু কাদা। কাদার ওপর ছোট ছোট ব্যাঙ এসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। হাঁস কি মোরগ দেখলেই তাড়া করে ওদের। ধরে ধরে মারে। পুবের সারে উত্তরের ঘরটা মকবুলের। বাড়ির অন্য সবার চেয়ে ওর অবস্থাটা কিছু ভালো।


মকবুল তিন বিয়ে করেছেন। তিন বউই বেঁচে আছে ওর।


বড় বউ আমেনা। কালো মোটা আর বেঁটে। বয়স প্রায় ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেছে এবার। খুব ঘন ঘন কথা বলে। কথা বলার সময় পোকায় খাওয়া দাঁতের ফাঁক দিয়ে থুতু ছিটিয়ে সামনের লোকগুলোকে ভিজিয়ে দেয়। পারিবারিক কলহ বাধলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবার হুমকি দেখায়।


মেজ ফাতেমা। দেখতে রোগা, হ্যাংলা আর লম্বা। বছরে তিন মাস পেটের অসুখে ভোগে। ছ’মাস বাপের বাড়িতে কাটায়। বয়সের হিসেবটা সে নিজেও জানে না। কেউ পনেরো বললেও সায় দেয় না। পঁচিশ বললেও মেনে নেয়।


সবার ছোট টুনি। গায়ের রং কালো। ছিপছিপে দেহ। আয়ত চোখ। বয়স তার তেরচৌদ্দর মাঝামাঝি। সংসার কাকে বলে সে বোঝে না। সমবয়সী কারো সঙ্গে দেখা হলে সব কিছু ভুলে গিয়ে মনের সুখে গল্প জুড়ে দেয়। আর হাসে। হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি দেয় টুনি।


বুড়ো মকবুলের পরিবারে আরো একজন আছে।


নাম তার হীরন। ও তার বড় মেয়ে। বড় বউ-এর সন্তান। এবার দশ ছেড়ে এগারোয় পড়লো সে। এখন থেকে মকবুল ওর বিয়ের জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছে। দুএক জায়গায় এর মধ্যে সম্বন্ধও পাঠিয়েছে সে। বড়, মেজ আর ছোট এই তিন বউ নিয়ে মকবুলের সংসার। তিন বউকে বসিয়ে খাওয়ানোর মত জমিজমা নেই ওর। আসলে বউদের আয় দিয়ে চলে ও। বড় দুই বউ দিব্যি আয় করে। বাজার থেকে পাতা কিনে এনে দিয়েই খালাস মকবুল। দুই বউ মিলে একদিনে তিন চারটে চাটাই বুনে শেষ করে। মাঝে মাঝে টুনিও বসে পড়ে ওদের সঙ্গে কাজ করে। চাটাইগুলো বাজারে বিক্রি করে লাভের অংশ দিয়ে পেঁয়াজ, লঙ্কা, পান-সুপুরি কেনে মকবুল।


 


ফসলের দিনে সবাই যখন গরু দিয়ে ধান মাড়ায় তখন তিন বউকে লাগিয়ে ধান মাড়ানোর কাজটা সেরে ফেলে ও। বর্ষা পেরিয়ে গেলে বাড়ির উপরে যে ছোট জমিটা রয়েছে তাতে তিন বউকে কোদাল হাতে নামিয়ে দেয় মকবুল। নিজেও সঙ্গে থাকে। মাটি কুপিয়ে কুমড়ো আর সিমের গাছ লাগায়। দুবেলা জল ঢেলে গাছগুলোকে তাজা রাখে। সুখ আছে আবার সুখ নেইও মকবুলের জীবনে। তিন বউ যখন ঝগড়া বাঁধিয়ে চুল ছেঁড়ার লড়াই শুরু করে তখন বড় বিস্বাদ লাগে ওর। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে তিনজনকে সমানে মারে সে। কাউকে ছাড়াছাড়ি নেই।


মকবুলের পাশের ঘরটা ফকিরের মার.


তার পাশেরটা আবুলের।


তার পাশে থাকে রশিদ।


পাশাপাশি তিনটে ঘর।


সবার দক্ষিণে যে ঘরটা সবার চেয়ে ছোট, ওটায় থাকে মন্তু। একা মানুষ। বাবা মা ভাইরোন কেউ নেই। বাবাকে হারিয়েছে ও জন্মের মাসখানেক আগে। মাকে, দশ বছর বয়সে। লোকে বলে, মণু নাকি বড় একগুয়ে আর বদমেজাজী। স্বভাবটা ঠিক জানোয়ারের মত।


টুনি বলে, অমন মাটির মানুষ নাকি এ জন্মে আর দেখেনি সে।


আহা অমনটি আর হয় না।


ওপাশে আর কোন ঘর নেই।


পশ্চিমের সারে, দক্ষিণের ঘরটা মনুর।


তার পাশে থাকে সুরত আলী।


খুব জোর নব্বই বছর হবে।


সেই তেরশ সনের বন্যা।


অমন বন্যা দুচার জন্যে কেউ দেখেনি।


মাঠ ভাসলো, ঘাট ভাসলো, ভাসলো বাড়ির উঠান।


ঘর আসলো বাড়ি ভাসলো, ভালো কাজীর কুশান।


কিছু বাদ নেই। ঘরবাড়ি গোয়াল গরু সব। এমন কি মানুষও ভাসলো। জ্যান্ত মানুষ। মরা মানুষ।


তাল গাছের ডগায় ঝােলান বাবুই পাখির বাসায়ও কিছুকালের জন্য পরম নিশ্চিন্তে ঘর বেঁধেছিলো পুঁটি মাছের ঝাঁক।


রহমতগঞ্জ কুলাউড়া নিজামপুর ভেসে সব একাকার হলো।


বুড়ো কাসেম শিকদার ছিলো কুলাউড়ার বাসিন্দা।


বুড়ো আর বুড়ি। ছেলেপিলে ছিলো না ওদের। মাটির নিচে তে রাখা টাকা ভরা কলসিটা বুকে জড়িয়ে ধরে বানের জলে ভাসান দিলো বুড়ো আর বুড়ি।


কলা গাছের ভেলায় চারদিন চার রাত। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই। একেবারে উপোস।


তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাবার উপক্রম। ভেলা ভাসছে আর ভাসছে।


অবশেষে এসে ঠেকল এই দীঘির পাড়ে।


লাল পরীর নীল পরী আর সবুজ পরীর দীঘি।


ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত উঁচু যার পাড়।


গ্রামটা পছন্দ হয়ে গেল কাশেম শিকদারের।


কলসী থেকে টাকা বের করে দুচার বিযে জমি কিনে ফেললো সে। গোড়াপত্তন হলো এ বাড়ির।


বাড়ির চারপাশে আম কঁঠাল সুপুরি আর নারকেলের গাছ লাগালে কাশেম শিকদার। পুকুর কাটলো। ভিটে বাঁধলো। পছন্দ মত ঘর তুললো বড় করে। কিন্তু মনে কোন শান্তি পেলো না সে। ছেলেগুলে নেই। মারা গেলে কে দেখবে এত বড় বাড়ি।


মাঝে মাঝে চিন্তায় এত বিভোর হয়ে যেত যে খাওয়া-দাওয়ার কথা মনে থাকতো না। তার। বুড়ি ছমিরণ বিবি লক্ষ্য করতেন সব। বুঝতেন কোন স্বামীর মনে সুখ নেই, চোখে ঘুম নেই, আহারে রুচি নেই। মনে মনে তিনিও দুঃখ পেতেন।


তারপর, একদিন জলভরা চোখে স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ালেন ছমিরণ বিবি।


আস্তে করে বললেন, তুমি আর এক নিকা কর। বলতে গিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। তাঁর। দুগণ্ড বেয়ে অবিরাম পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।


তবু স্বামীকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিলেন ছমিরণ বিবি। হাতে মেহেদি দিলেন। মাথায় পাগড়ি পরালেন। ঘরটা লেপে মুছে নিয়ে নিজ হাতে বিছানা পাতলেন স্বামী আর তার নতুন বিয়ে করা বউ-এর জন্য। আদর করে হাত ধরে এনে শোয়ালেন তাদের।


নতুন বউ-এর কাঁচা হলুদ ঝলসানো দেহের দিকে তাকাতে সাহস পেলেন না ছমিরণ বিবি। ছটে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছুরির তীক্ষ্ণ ফলা দিয়ে কে যেন তখন কলজেটা কুটিকুটি করে কাটছিল তাঁর। নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারলেন না তিনি। পুকুর পাড়ে ধুতরা ফুলের সমারোহ। গুনে শুনে চারটে ফুল হাতে নিলেন। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো মুখে পুরে দিয়ে নীরবে ঘুমিয়ে পড়লেন। দীঘির পাড়ে উঁচু ঢিপির মত তার কবরটা আজো চোখে পড়ে সবার আগে।


চলবে---------

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

সন্তান বড় হলে বিছানা আলাদা করা অবশ্য কর্তব্য! কেন করবেন,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 সন্তান বড় হলে বিছানা আলাদা করা অবশ্য কর্তব্য! কেন করবেন?


রিবা (ছদ্ম নাম)। বয়স সাত। ওয়ানে পড়ে। ধবধবে ফর্সা। মাথা ভর্তি কোকড়ানো চুল। টলটলে চোখ। মনে হয় একটু ছুঁয়ে দিলেই ব্যস। চোখের মায়া আবীর হয়ে হাতে লেগে যাবে। প্রজাপতির রঙের মতো।


মায়ের সাথে ডাক্তারের চেম্বারে এসেছে। প্রসাবে জ্বালা পোড়া। তল পেটে ব্যথা। মায়ের ভাষ্য, ম্যাডাম, পিসাব করনের সময় খালি কান্দে আর লাফায়। পেট চেপে খিচ্চা বইসা থাকে।


পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে, প্যান্ট খুলে রিবার মা যা দেখালো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, বললেই ভালো। সরাসরি জিজ্ঞেস করলে মা বলবে, কী যে কন, ছোট মানুষ। মনেমনে দু-একটা গালি ও যে দিবে না, বলা যায় না।


ডাক্তারদের এ এক জীবন! কত কী যে দেখতে হয়! ঘুরিয়ে প্যচিয়ে জিজ্ঞেস করি, বাড়িতে কে কে আছে?


ওর বাপ আর আমি।


আর কেউ না?


না স্যার । তবে পাশেই ভাসুরের বাসা।


ও কার সাথে খেলাধুলা করে?


আমার ভাশুরের পোলার সাথে। বয়স এগারো বারো। সিক্সে পড়ে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি। ভিডিও গেমস, ইউটিউব নাকি কি কয় এসব নিয়া থাকে। সারা বাড়িতে আর বাচ্চাকাচ্চা নাই তো। অরা অরাই খেলে। আমিও তেমন খেয়াল করি না। আহারে বাচ্চারা!


বাড়িতেই তো থাকে সারাদিন। হয় দাদির ঘর, নয় চাচির ঘর। আসলে মাইয়া আমার এই একটাই। মিছা কইয়া লাভ নাই। চাচা চাচিও আদর করে। খুব। মিতুল (ছদ্ম নাম) তো বইন বলতে অজ্ঞান।


কখনো জিজ্ঞেস করেছেন, কি খেলা খেলে?


না ম্যডাম। কী খেলব আর, চোর পলান্তি। পুতুল খেলা। এই সব আরকি। জিগানোর কী আছে?


আছে, এখন জিজ্ঞেস করেন তো।


রিবা, মিতুল ভাইয়ার সাথে কি খেলাধুলা করো বলো তো মা?


বউ জামাই খেলি।


বউ জামাই খেলা কী করে খেলো?


মেয়ে যা বর্ণনা দিলো, শুনে মা মুর্ছা যান আরকি! ছোট বাচ্চার আর দোষ কি? বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। এটা সবাই জানে। বড়রা অবিবেচকের মতো কাজ করবে আর বাচ্চাকাচ্চা দেখে শুনে চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবার কারণ নেই। আসলেই নেই।


ওহ, ভালো কথা। রিবা মিতুল কাকে অনুসরণ করল? বাবা মাকে? টিভি সিনেমাকে? নাকি ইউটিউবকে? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই।


রিবা, এ ধরনের খেলা তো ভালো না মা। এটা পঁচা কাজ। কথা শেষ করতে দেয় না পাকনি বুড়িটা। টাসটাস করে মুখের ওপর বলে ওঠে, বাবা মা খেলে যে! তাহলে বাবা-মা কি পঁচা?


কী উত্তর দেবে রিবার মা? উত্তর দেয়ার কি মুখ থাকে? মহিলা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। যেনো পায়ের তলায় কোন মাটি নেই। বেচারা!


রিবার মাকে প্রশ্ন করি, আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী রিবাকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমান?


হ ম্যাডাম। ছোট বাচ্চা। ওর বাপে কয়, কী বুঝব? ও ঘুমালেই তো কাদা। লোকটার খাই বেশি। বাচ্চা ঘুমালো কি ঘুমালো না। তর সয় না। আমি আগেই কইসিলাম। হাহাকার থই থই কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। আহারে!


দেখুন, আমরা বাচ্চাদের যতটা নির্বোধ মনে করি, আসলে ততটা নির্বোধ ওরা না। বরং একটু বেশিই বুদ্ধি রাখে ওরা। শুধু আমরা বড়রাই এ কথাটা মানতে চাই না। আমাদের দিয়ে ওদের হিসেব করি। কিন্তু ওরা হিসেবে বাবা মা'দের চেয়ে পাকা। যে কাজটা বাবা মা করে, সে কাজটা খারাপ কিভাবে হয়? কাজেই বাবা মা, বাবা মা খেলা তারা খেলতেই পারে। তাদের তো দোষ দেয়া যায় না। একটু ভেবে বলুন তো, যায় কি?


আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সন্তানদের বিছানা আলাদা হওয়াই বাঞ্চনীয়। সবার পক্ষে হয়তো, সন্তানদের জন্য আলাদা আলাদা রুম দেয়া সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে অন্তত বিছানাটা আলাদা করা যায়। বাবা মায়ের বিছানাটা কাপড় দিয়ে পার্টিশন দেয়া যায়। মশারির মতো। আর নিতান্তই যদি সম্ভব না হয়, শিশু সম্বলিত সংসারে দম্পতিদের অবশ্যই সর্বোত্তম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কী সেটা আমি জানিনা। আর সবার ঘরে নিশ্চয় একরকম ফর্মূলা চলবে না। নিজের ঘর অনুযায়ী নিজেদের ফর্মূলা তৈরী করুন প্রিয় অভিভাবক।


আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাই। মজার মজার খাবার খাই। দামী দামী গেজেট দেই। নতুন নতুন ট্রেন্ডি জামা কাপড় পরাই। কিন্তু সবচেয়ে দামী যে লেসন সেটাই দেই না। হেলথ এডুকেশন, সেক্স এডুকেশন। কত্ত জরুরি যে এসব জীবনমুখী শিক্ষা। কী আজব আমরা! কবে বুঝব এর গুরুত্ব? আর কত ভুলবার্তা দেহ মনে নিয়ে বড় হবে আমাদের শিশুরা?


বাচ্চাদের কি কি করা উচিৎ আর কি কি না সেটা বলুন। ছোটদের কাজ, বড়দের কাজ কি কি জানান। ধীরে ধীরে নিজের শরীর সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। নারী পুরুষের যৌন জীবন সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। ধীরে ধীরে, সহজ করে। কাজের লোক কিংবা ক্যানভাসারের কাছে ভুল জানার চেয়ে, বাবা মার কাছে জানা ভালো নয় কি?


প্রিয় অভিভাবকগন, সন্তানের কথা বিশ্বাস করুন। সন্তানের বন্ধু হোন। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করুন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করুন। মনে রাখা ভালো, লালনপালন করাই কিন্তু শেষ কথা না। সন্তানকে সুরক্ষিত রাখাও বাবা মার পবিত্র দায়িত্ব। আসুন ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করি। ওদের জীবনটা আরেকটু সহজ করি।

ধন্যবাদ সবাইকে🥀🤍


 ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং নিয়মিত গল্প পেতে আইডিতে  ফলো করে  সাথে থাকার অনুরোধ রইলো)

শেষ গল্পের- ডায়েরি

কপি

পেস্ট 

সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে।

 সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে। ক্লিওপেট্রা ....মিশ...