চাশতের নামাজকে হাদীসে
‘সালাতুদ্ দুহা’ বলা হয়েছে।
‘দুহা’ শব্দের অর্থ ‘প্রভাত সূর্যের ঔজ্জল্য’,
যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়।
এই নামাজ প্রথম প্রহরের পর থেকে
দ্বিপ্রহরের পূর্বেই পড়া হয় বলে একে ‘সালাতুদ দুহা’ বা ‘চাশতের নামাজ’ বলা হয়।
নফল নামাজগুলোর মধ্যে
চাশতের নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই নামাজ সব সময় পড়েছেন এবং সাহাবাদেরকে নিয়মিত পড়তে উপদেশও দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,
‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে
তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন –
যা আমি মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ছাড়বো না।
১. প্রতি মাসের তিন রোজা,
২. চাশতের নামাজ (সালাতুদ্ দুহা),
৩. এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতর নামাজ আদায় করা।’
(বুখারী, হাদিস : ১১২৪; মুসলিম, হাদিস : ৭২১)
বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,
মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে।
অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো
প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদকা করা।’
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেন,
‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি (সাঃ) বললেন, ‘মসজিদে কোথাও কারো থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজই এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ, হাদীস : ৫২২২)
উপরোক্ত হাদীসটি মুলত চাশতের নামাজের অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বুঝা যায় যে, চাশতের নামাজ ৩৬০টি সাদাকার সমতুল্য।
চাশতের নামাজের রাকাত সংখ্যা:
চাশতের নামাজের সর্বনিম্ন ২ রাকাত পড়া যায়।
উপরে ৪, ৮, ১২ রাকাত পর্যন্ত হাদীসে পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানী (রাঃ) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং
সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন।
(বুখারী, হাদীস : ২০৭)
হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবু যর (রাঃ)-কে বলেছেন,
তুমি যদি চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়ো,
তাহলে তোমাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
আর যদি চার রাকাত পড়ো,
তাহলে তুমি নেককার মধ্যে গণ্য হবে।
আর যদি আট রাকাত পড়ো,
তবে সফলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আর যদি দশ রাকাত পড়ো তাহলে
কেয়ামত দিবসে তোমার কোনো গুনাহ থাকবে না।
আর যদি বারো রাকাত পড়ো,
তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য
জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করবেন।’
(সুনানে কুবরা লিল-বাইহাকী, পৃষ্ঠা : ৩/৪৮)
চাশতের নামাযের নিয়ম:
চাশতের নামাজ অন্য যেকোনো দুই রাকাত বিশিষ্ট সুন্নত বা নফল নামাজ আদায়ের মতই।
কোনো নফল নামাজে যেমন দুই রাকাত পড়ে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে থাকেন, এখানেও তেমনই। হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
‘দিন ও রাতের নফল নামাজ দুই দুই রাকাত করে।’
(তিরমিযি, হাদিস : ৫৯৭; আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৫)
চাশতের নামাজের সময়:
চাশতের নামাজের সময়টা আমরা ধরে নিতে পারি সকাল ৯ : ০০ থেকে বেলা ১১ : ০০ পর্যন্ত।
সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম।
কেননা, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন,
চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (সহীহ্ মুসলিম, হাদীস : ৭৪৮)
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের নামাজ বা সালাতুদ্ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা। (মাজমূ’ ফাতাওয়াহ্ লিল ইমাম আন-নাবাউয়ী, ৪/৩৬; আল-মাওসূ’য়াহ্ আল-ফিক্হিয়্যাহ্, ২৭/২২৪)