এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

সকাল ০৭ টার সংবাদ তারিখ: ০৯-০৫-২০২৪

 সকাল ০৭ টার সংবাদ

তারিখ: ০৯-০৫-২০২৪


সংবাদ শিরোনাম:


আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর ও টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার - জাতীয় সংসদে বললেন প্রধানমন্ত্রী। 


মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমানোর পাশাপাশি বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আরও ভালো এবং মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি করতে পারে - চলতি বছরের হজ্ব কর্মসূচি উদ্বোধনকালে বললেন শেখ হাসিনা।


গতকাল অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী।


উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক - বললেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।


তথ্য অধিকার আইনের আওতায় গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে   - বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।


গাজার রাফাহ শহরে স্থল অভিযান চালালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে অস্ত্রের সরবরাহ স্থগিত করবে - হুঁশিয়ারি জো বাইডেনের।


আজ সিলেটে পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ নারী দল।

ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 আমার স্ত্রীকে আমি ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম।

কিন্তু যখন পরিপাটি প্রেমিকাটা অগোছালো স্ত্রী হয়ে গেলো।

তখন কেন জানি আমার আর ওকে ভালো লাগত না।

মেয়েটা অল্পতেই খুশি হয়ে যেত।

আমার মনে আছে যখন ওর সাথে আমার বিয়ে হয়।

তখন আমার মাস শেষে বেতন ছিলো পনেরো হাজার।

এই টাকায় ও কতটা হ্যাপি ছিলো তা আমি কাউকেই বোঝাতে পারবো না।

আমি থেকে শুরু করে আমার পরিবারের প্রতিটা মানুষের খেয়াল ও রাখতো।

আর দিন শেষে চাইতো একটু ভালোবাসা। 

যেটা আমি সময়ের সাথে সাথে দেওয়া কমিয়ে দিলাম।

আস্তে আস্তে আমার পজিশন ভালো হতে রইলো।

আমার চিন্তাধারা হলো উন্নত। 

কিন্তু সংসারের চাপে পরে ও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেলো।আমার পনেরো হাজার বেতন ত্রিশ হাজারে গিয়ে ঠেকলো।

ঘর পরিবর্তন হলো আমি পরিবর্তন হলাম।

শুধু পরিবর্তন হলো না কবিতা।

হ্যা আমার স্ত্রী নিজেকে পরিবর্তন করলো না।

টাকার নেশা আমাকে গ্রাস করে দিলো আস্তে আস্তে। 

ভুলে গেলাম আমি আমার প্রিয় অতীতকে।সুখ পেয়ে ভুলে গেলাম দুঃখের দিনে পাশে থাকা মানুষ গুলোকে।

সারাদিন খাটাখাটনি করে খাবার টেবিলে যখন কবিতা অপেক্ষা করতো।

আমি বলতাম যতো সব আদিখ্যেতা।

বৃষ্টি হলেই আমার হাত দু'টো ধরে যখন বলতো।

চলোনা একটু দু'জনে বৃষ্টি বিলাস করি।আমি তখন বলতাম বয়স তো কম হলো না এখন এসব পাগলামি ছাড়ো।

মাঝ রাতে যখন পিরিয়ডের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠতো।

আমি নাক সিটকে পাশের রুমে ঘুমাতে চলে যেতাম। 

দিনের পর দিন তাঁর ভালোবাসা বেড়ে ছিলো আমার প্রতি।

আর আমার অবহেলা।

একটা সময় পর আমার পরিবারও ওকে অবহেলা করতে শুরু করলো।

যাঁর হাতের রান্না সবাই তৃপ্তি নিয়ে খেত।

এখন নাকি তাঁর রান্না ভালো হয় না।

যে ঔষধ না দিলে আমার বাবা-র ঔষধ খাওয়ার কথা মনে থাকত না।

আজকাল নাকি সে ভুল ঔষধ দিয়ে আমার বাবাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে। 

একটা সময় আমাদের বাড়িতে থাকার মতো কোন সম্ভল খুঁজে পেলো না কবিতা।

তাই সরাসরি বলেই দিলাম আমি তোমায় ডির্ভোস দিতে চাই। 

সে সেদিন খুব অবাক নয়নে চেয়েছিলো।

কোন প্রতিবাদ করেনি।

হয়তো সে বুঝতে পেরেছিলো তাঁর এই বাড়ির প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

তারপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত সময় এলো যখন কবিতা আর আমার ডির্ভোস হবে।

সেদিনও সবটা কি সুন্দর করে মেনে নিয়েছিলো।

কোন প্রতিবাদ করেনি।

এমন কি খোরপোষের টাকা টাও দাবি করলো না।

উকিল যখন বললো সে কেন টাকাটা নিবে না।

তখন ও বললো।

যে মানুষটাই আমার হয়নি তাঁর টাকা দিয়ে আমি কি করবো।

ওর বাবা সেদিন আমায় একটা কথা বলেছিলো। 

ভগবান দিয়ে ধন দেখে মন,কাইরা নিতে কতক্ষণ। 

কথাটার মানে সেদিন না বুঝলেও আজ ঠিক বুঝতে পারি।

তিন মাসের মাথায় মিথ্যা অপবাদে আমার চাকরি চলে যায়।

বড় বোন টাকে মাঝে মাঝেই তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মেরে ধরে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

বাবা ভুল ঔষধের রিয়াকশনে আজ বিছানার সাথে মিশে আছে।

মা প্রায় আজকাল তরকারিতে নুন,হলুদ দিতে ভুলে যায়।

আর আমি উন্নতমানের চাকরি থেকে ফুটপাতে ছোট্ট একটা ফুলের দোকান নিয়ে বসে আছি।

আজ ওই কথাটার মানে বুঝলাম।

দিয়ে ধন দেখে মন, কাইরা নিতে কতক্ষণ। 

লুকিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম কবিতার।

শুনেছি অন্য জায়গায় তাঁর বাবা বিয়ে দিয়েছে।

স্বামী একজন ডাক্তার। 

খুব সুখে আছে।

খুব ভালো ভাগ্য সেই মানুষটার, যাঁর সাথে কবিতার বিয়ে হয়েছে। 

গেছে মাসে নাকি তাঁদের একটা মেয়েও হয়েছে। 

সে সুখের আশা করেনি তাই তাঁর এতো সুখ।

আর আমি সুখের আশা করে মানুষকে অমানুষ ভেবেছি। 

তাই আজ আমার এই পরিস্থিতি।

তাইতো বলে,শেষ হাসিটা তাঁরাই হাসে।

যাঁরা নিজেকে নয় অন্যকে ভালোবাসে।


ভালোবাসা ||

সমদ্রিত সুমি

বিঃদ্র--সবাই টাকায় সুখ খোঁজে না,

প্রিয় মানুষটার মাঝেও কেউ সুখ খোজে

পরিবারকে বঞ্চিত করবেন না। 

 🔴এখানে খাব, ওখানে খাবো, গরু খাবো,  হাঁস খাব, বার্গার খাব, চাইনিজ খাব কিংবা আজকে বাইরে খাব। অমুক হোটেলে খাব, তমুক হোটেলে খাব, এসব বলে পরিবারকে বঞ্চিত করবেন না। 


🔴আপনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যেসব খাবার খাবেন তার অর্ধেক টাকা দিয়ে একটি হাঁস অথবা মুরগি কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে সবাই মিলে খেয়ে দেখেন আপনার বাইরে খাওয়ার চেয়ে কত গুণ আনন্দ হয়।


🔴ভাবির হোটেলের হাঁস, বুড়ির হোটেলের গরু, মামীর হোটেলের কবুতর ইত্যাদি বলে তারা ক্রেতা জোগাড় করে। 

এর চেয়ে অনেক গুণ  ভালো হবে সবাই মিলে বাড়িতে রান্না করে খেলে। 


🔴যখন আপনি বাজার করে নিয়ে বাড়িতে ঘোষণা করবেন যে সবাই মিলে খাব তখন দেখবেন আপনার রাঁধুনিও খুব মনোযোগ দিয়ে রান্না করেছে তাতে খাবারের স্বাদ বেড়ে গিয়ে যে কোন হোটেলের চেয়ে বেশি অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ। 


🔴পরিবারকে বঞ্চিত করা থেকে বিরত থাকুন কারণ পরিবারই আপনার শুরু পরিবারই আপনার শেষ।


🔴বিভিন্ন রকম ভনিতা করতে গিয়ে হোটেল বিল ৫/৭০০ টাকাও কিছু মনে হয় না, কিন্তু মাসের পর মাস বাড়িতে গরুর মাংস ওঠে না টাকা নেই এই অজুহাতে। 


🔴অথচ এই পরিবারের সদস্যদের এক এক করে ওইসব হোটেলে খাওয়ালে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বিল উঠবে।

মাত্র ১ হাজার টাকা বাজেট করে দেখুনই না কি মজা!!!

অর্থনৈতিক সাশ্রয় এর পাশাপাশি কি মানসিক শান্তি!!!

                    

খোরশেদ আলম

বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

ক্লিওপেট্রা 17 বছর বয়সে মিশরের রানী হয়েছিলেন। তিনি 9টি ভাষা জানতেন।

 ক্লিওপেট্রা

17 বছর বয়সে মিশরের রানী হয়েছিলেন।

তিনি 9টি ভাষা জানতেন।

ইতিহাস ভূগোল শরীরবিদ্যা রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি প্রাণিবিদ্যা রসায়ন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই তিনি জানতেন।

নিঃসন্দেহে তিনি প্রভাবশালী রানী ছিলেন মিশরের। এবং তিনি মিশরের আদিবাসী না হয়েও মিশরের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী নারী ছিলেন, মাত্র 22 বছর রাজত্ব করার পর সাপের কামড়ে তিনি মারা যান।

তার মৃত্যু আজও রহস্য।


নিজের ভাইকে বিয়ে করেন এই সম্রাজ্ঞী, তাকে নদীর জলে ডুবিয়েও মারেন।

তার বাবা যখন মারা যান তখন তার বয়স ছিল 18 বছর। নিজেও কিশোরী, তার 2 ভাইও তখন কিশোর। সেই সময় বাবার মৃত্যুশোক কাটিয়ে তিনি ১৮ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার 2 ভাইকেই বিয়ে করবেন। এবং তাদের বিবাহ করেনও। 


তবে এর পিছনে ছিল অন্য কারণ।

তিনি চেয়েছিলেন ভাইদের সঙ্গে তিনিও সিংহাসনের সমান দাবিদার হবেন। তাই সহজ পন্থা হিসেবে তাদের বিবাহ করার পথ বেছে নেন। 

তবে এটা খুব অবাক বিষয় ছিলনা। কারণ তার পরিবারে তার বাবা মা ছিলেন সম্পর্কে ভাইবোন। আবার তার অনেক তুতো ভাইবোনও নিজেদের মধ্যে বিবাহ করেন।


সেই সময়ের মিশর রাজ পরিবার বিশ্বাস করত তাদের পরিবার দেবতার আশীর্বাদ ধন্য। মূলতঃ রাজরক্ত যাতে পবিত্র থাকে সেই জন্য রাজ পরিবারে নিজেদের ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ চালু ছিল।


যাইহোক তিনি নিজের 2 ভাইকে বিবাহ করে সিংহাসনে নিজের দাবি সুনিশ্চিত করার পর কিন্তু এক ভাই তথা পতি তাকে  সিংহাসনের দাবি থেকে সরিয়ে দেন। 


এতে সম্রাজ্ঞী কিন্তু দমে যাননি। তিনি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেননা।

তাই মিশরের এই বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী হাত মেলান জুলিয়াস সিজারের সঙ্গে। তারপর ভাই তথা স্বামীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সেই সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার কাছে যুদ্ধে হেরে যান তার ভাই।


ক্লিওপেট্রা আর তাকে বাঁচিয়ে রাখার রাস্তায় হাঁটেননি। নীল নদের জলে ভাই তথা স্বামীকে ডুবিয়ে হত্যা করেন অতি সুন্দরী সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা।


বলা হয় ক্লিওপেট্রা নাকি নিজের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে অনেক শক্তিধর রাজাকে সেই সময় এক এক করে বশবর্তী করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র সংক্রান্ত অনেক গোপন তথ্যও নিজেকে ব্যবহার করে আদায় করে নিতেন ক্লিওপেট্রা। 

ঠিক এভাবেই তিনি এন্টনি নামক সিজারের এক সেনানায়কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এবং নিজের সঙ্গে মিশরের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছিলেন।


বলা হয় তিনি unknown nine দ্বারা chosen one হিসেবে বসেছিলেন মিশরের সিংহাসনে কোন এক বিশেষ লক্ষ্য পরিপুরণের জন্য, সেই লক্ষ্য পরিপূরণ হয়ে যাওয়ার পরেই তিনি সর্পাঘাতে মারা যান। 

কিভাবে মারা যান তিনি আজও রহস্য ময়।

তার মৃত্যুর পর রোমে এবং মিশরে অদ্ভুতভাবে christianity জোরদার ভাবে চালু হয়ে যায়।


#সংগৃহীত

অভ্যাস এবং দাম্পত্য,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 এক সাথে একই বিছানায় ঘুমালেই কিন্তু !!

মানুষটার কাছে যাওয়া যায়না। দুজন মানুষ একশো স্কয়ার ফিটের একটা রুমের ভেতর বছরের পর বছর থেকেও মাঝে মাঝে কাছে আসতে পারেনা।


আমি এরকম বেশ কিছু দম্পতিকে চিনি, যারা বহু বছর পরও সংসারের মানে বুঝে উঠতে পারেনি। সংসার করতে করতে একসময় মানুষ ধরে নেয়, একই বালিশে ঘুমানো, একই টেবিলে খাওয়া, একই রুমে ঘুরাঘুরি করা আর মাঝে মাঝে সঙ্গমে অংশগ্রহন করাটাই সংসার।


ব্যপারটা কি আসলে তাই? তাহলে, কিছু সংসার কখনো কখনো টিকে না কেন? তারাও তো একই বিছানায় ঘুমায়, একই টেবিলে খাবার খায়, একজন অন্যজনকে সঙ্গমে কো-অপারেট করে। তবুও, সংসারগুলো ভাঙে কেন?


তুমি একটা মানুষের সাথে আছো, পাশে আছো, চোখের সামনে আছো। তবুও মাঝখানে একটা দূরত্ব থাকে, এই দূরত্বটা অন্যরকম। বলা যায় না, বুঝানো যায় না, সহ্যও করা যায় না। কারো বুকের উপর শুয়েও মাঝে মাঝে নিজেকে একা লাগে। দাম্পত্য জীবনে আমি আসলে কি চাই?


সবই চাই, যা যা সবাই করে। আমি সেটাও চাই, যেটা অনেকেই করে না। সংসার মানে আসলে অভ্যাস, এই কনসেপ্টটা থেকে আমরা কেন জানি বের হতে পারি না। অভ্যাস অবশ্যই, তবুও সবই কি অভ্যাস?

নতুন কিছুই কি থাকে না? আমরা একই ছাদের নিচে থাকি, অথচ কখনো একসাথে আকাশ দেখি না।


কখনো সমুদ্র পাড়ে বসে কফির মগ হাতে নিয়ে নির্ভরশীলতার কাঁধে মাথা রাখি না। আমরা কখনো জিজ্ঞেস করিনা " তুমি কেমন আছো? তোমার মন খারাপ কেন? আমরা হাত ধরে বসে থাকি না। আমরা সঙ্গম ছাড়া একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরি না।


আমরা বুঝি না, আমার সমস্ত সময় তার সাথে কাটানোর পরও তাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। আমরা শরীরের দিক থেকে কাছে আসি রোজ রোজ। অথচ, আমাদের মনের দূরত্ব বেড়ে চলে। রান্না করার জন্য বুয়া রাখলেও হয়, সঙ্গমের জন্য পতিতাই এনাফ। তবুও সংসার কেন করা লাগে?


সংসারের ডেফিনেশনটা শুধু নিঃশ্বাসের আদ্রতা অনুভব করার মাঝেই সীমাবদ্ধ না, এর বাইরেও অনেক কিছু থাকে। আমি একা, তুমি একা, আমরা একা; প্রচন্ড রকমের একা। একই বিছানায় নগ্ন শরীরের উপরও একা, সঙ্গম শেষেও আমরা একা।


অথচ, দিনশেষে আমার একটা আশ্রয় প্রয়োজন হয়। একজন মানুষ প্রয়োজন হয়, একটা ব্যক্তিগত নির্ভরশীলতার জায়গা প্রয়োজন হয়। সমঝোতা প্রয়োজন হয়, কারো কন্ঠস্বরে আমার জন্য একটু গভীর ভালোবাসা প্রয়োজন হয়। একটা পবিত্র স্পর্শ প্রয়োজন হয়।


এই স্পর্শটা কামনার স্পর্শ নয়, এটা একটা ভালোবাসার স্পর্শ। কাম ছাড়া ভালোবাসা পূর্নতা পায়না এটা ঠিক, তবে কাম ও যে সবসময় ভালোবাসার জন্ম দিতে পারে না, এটাও ঠিক। সংসারকে অভ্যাস বলে চালিয়ে দেওয়া মানুষরা আসলে ভালোবাসার দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যেতে চায়।


যে দাম্পত্যে প্রেম থাকে না, সেখানে অভিনয় করে বাঁচতে হয়। এরকম অনেক দম্পতিই আছে, যারা শুধু অভিনয় করেই একটা জীবন একটা অপছন্দের মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দেয়। সারাদিন কাজ করে ঘরে ফিরে স্ত্রীকে সময় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করা স্বামীও নিয়ম করে সঙ্গমটা ঠিকঠাক করে।


ব্যস্ততা আসলে একটা অজুহাত, অত'টা ব্যস্ত আসলে মানুষ থাকে না। চাইলেই একটু সময় বের করা যায়। কি জানি, আমরা হয়তো চাই ই না। প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার জন্মদিন আমাদের মনে থাকে। অথচ, নিজের স্ত্রীর জন্মদিনটা মাঝে মাঝে ভুলে যাই। সংসারের গুরুত্বটা যেন তেমন কিছুই না।


যার সাথে সারা জীবন কাটাতে হবে, যার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করি। যাকে ভালো রাখার চেষ্টা করি,

মাঝে মাঝে বুঝিই না, সে ভালো নেই। দাম্পত্য জীবনে কলহ থাকবেই। এটাকে ইন্সটেন্ট সমাধান করার ক্ষমতা সবার থাকে না। ঝগড়া হওয়ার পর কান্না কাটি না করে, মানুষটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলে কেমন হয়।


মানুষ কি এতটাই নি'ষ্ঠুর, যে ভালোবাসাকে অবহেলা করতে পারে। সংসার শুধু একটা অভ্যাস, এটা থেকে বের হতে হবে। সংসার একটা স্বর্গ, এখানে শুধু যো'নী, লি'ঙ্গ, দুবেলা খাবার আর একই বিছানায় ঘুমানোর বাইরেও প্রেম, ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা, গুরুত্ব, প্রায়োরিটি, শ্রদ্ধাবোধ, এডজাস্টমেন্ট সব প্রয়োজন হয়, সব মানে সব।


দাম্পত্য জীবন সুন্দর তখনি হয়, যখন আমরা অভ্যাস থেকে বের হতে পারি। মানুষটা একটা অস্তিত্ব হোক! অধিকার হোক, বেঁচে থাকার ডেফিনেশন হোক। একটা এডিকশন হোক, আমাদের সংসার হোক আমাদের নে'শাগ্রস্থ থাকার অ্যালকোহল। আমাদের মাঝে ভালোবাসার মাদকতা থাকাটা জরুরী, ভীষন জরুরী !!


অভ্যাস এবং দাম্পত্য

কে  ছিলেন জীবনানন্দের বনলতা সেন? কাজী জহিরুল ইসলাম,,,,

 কে ছিলেন জীবনানন্দের বনলতা সেন?

কাজী জহিরুল ইসলাম✍️ 


কবি নয়, এককভাবে বাংলা ভাষার সর্বাধিক পঠিত কবিতা যদি খুঁজতে যাই, দুটি কবিতার নাম উঠে আসে সবার ওপরে। একটি কাজী নজরুল ইসলামের "বিদ্রোহী", অন্যটি জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন"। এই দুটি কবিতা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আলোচনাও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জসীম উদদীনের "নিমন্ত্রণ" এবং "কবর", রবীন্দ্রনাথের "সাধারণ মেয়ে", সুনীলের "কেউ কথা রাখেনি", আল মাহমুদের "সোনালী কাবিন", শামসুর রাহমানের "স্বাধীনতা তুমি", রফিক আজাদের "ভাত দে হারামজাদা", সৈয়দ শামসুল হকের "পরাণের গহীন ভিতর" প্রভৃতিও বহুল পঠিত কবিতা। তবে জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন" শুধু বহুল পঠিতই নয়, এই কবিতা নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। ভিঞ্চির মোনালিসার মত বনলতা সেন হয়ে উঠেছে বাঙালির এক রহস্যময় নারী চরিত্র। অনেকেই অনুসন্ধান চালিয়ে বের করার চেষ্টা করেছেন কে এই বনলতা সেন? আদৌ কি নাটোরে কোনো অনিন্দ্য সুন্দরী বনলতা সেন ছিলেন, যিনি কুহেলিকাময় কবি জীবনানন্দ দাশকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলেন?


আমলা, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক আকবর আলী খান লিখেছেন, নাটোরে চাকরি করতে গিয়ে ব্রিটিশ আমলের নথিপত্র ঘেঁটে তিনি আবিস্কার করেন একসময় নাটোরে বারবনিতাদের আখড়া ছিল এবং বনলতা সেন তাদেরই একজন। যে স্নিগ্ধ, অনিন্দ্য, মায়াবী ইমেজ বনলতা সেন নামের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে বাঙালি-মানসে, আকবর আলীর এই অনভিপ্রেত আবিস্কারে তাতে বড়োসড়ো একটি ধাক্কা লাগে। কবিতায় লেখা বনলতা সেন বা নীরাকে যদি আমরা এভাবে খুঁজি তাহলে বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই জুটবে না। নাটোর এবং বনলতা সেন দুটোই মেটাফোরিক। মেটাফোর বলেই থেমে যাওয়া যেত হয়ত। কল্পনায় এক সুন্দরী বনলতা সেনের ছবি এঁকে নেওয়া যেত। কিন্তু জীবনানন্দ দাশ এমন এক কবি যিনি তার প্রায় সমস্ত সাহিত্যকর্মে নিজেকেই এঁকেছেন। তাই কোনো এক রক্তমাংসের বনলতা সেন যে তাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলেন এটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। কিন্তু কে সেই বনলতা সেন? শাহাদুজ্জামান রচিত জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক-জীবনীগ্রন্থ "একজন কমলালেবু" পড়তে পড়তে আমি মনে হয় বুঝে ফেলেছি কে সেই বনলতা সেন। তিনি আর কেউ না, তারই কাকাত বোন শোভনা দাশ বেবী। 


শোভনার নিবিড় সান্নিধ্য তিনি মাত্র একবারই পেয়েছিলেন। প্রথম বই "ঝরা পালক" তিনি উৎসর্গ  করেন কোনো এক নামহীন কল্যাণীয়াসুকে। ঝরা পালক বের হয় ১৯২৭ সালে। কে এই কল্যাণীয়াসু তা আমরা জেনে যাই জীবনানন্দের ডায়রি থেকে। বইটি প্রকাশের পর ডাকযোগে কলকাতা থেকে আসামে শোভনা দাশকে তিনি পাঠিয়ে দেন। শোভনা এতে রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন এবং উৎসর্গপত্রে নিজেকে আবিস্কার করে বইটি লুকিয়ে রেখেছিলেন।


জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে জীবনের শেষ দিককার অনুরাগী ভূমেন্দ্র গুহ খুঁজে বের করেন শোভনাকে। একদিন তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। লাঠিতে ভর দিয়ে বার্ধক্যে উপনীত, ফর্শা, ছিপছিপে, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার শোভনা ভূমেন্দ্রর সামনে এসে দাঁড়ান। এক পর্যায়ে শোভনা বলেন, 'আমি নিজের জীবন নিয়েই তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, মিলুদার কবিতার খোঁজ-খবর আর রাখতে পারিনি...খুব মনে আছে তার প্রথম কবিতার বইটা আমাকে উৎসর্গ করেছিলেন।'


পিতার ব্রাহ্মসমাজ-যোগসূত্রে প্রাপ্ত ব্রাহ্ম এডুকেশন সোসাইটি-প্রতিষ্ঠিত সিটি কলেজের চাকরি চলে গেলে তিনি বরিশালে ফিরে আসেন। এ সময়ে তিনি হতাশ এক যুবক। বাগেরহাটের পিসি কলেজে মাস কয়েকের জন্য একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নেয়া হবে জেনে তাতে যোগ দেন। কিন্তু মেয়াদ শেষে আবার ফিরে আসেন বরিশালে। আয়-রোজগার নেই, কবিতা লিখেও আশানুরূপ স্বীকৃতি কিংবা অর্থ কিছুই মিলছে না। বরং তার কবিতা ও তাকে নিয়ে কলকাতার বোদ্ধা সমাজ ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপই করছে বেশি। ঠিক এই সময়টাতে আসামের বন বিভাগের কর্মকর্তা তার কাকা অতুলানন্দ চিঠি লিখে মিলুকে আসামে যেতে বলেন। কত লোকই তো বনের কাঠ বেচে ধনী হচ্ছে। মিলু চাইলে কাঠের ব্যবসাও করতে পারে। জীবনানন্দের মনে যতটা না প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তার চেয়েও অধিক শোভনার সান্নিধ্য পাবার আগ্রহ মাথাচারা দিয়ে ওঠে। 


আসামে গিয়ে শোভনার নিবিড় সান্নিধ্য তিনি পেয়েছিলেন। আসামের ডিব্রুগড়ে কাটানো সময়কালে তিনি যে শোভনার নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছিলেন তা তার ডায়রিতে লেখা আছে। শোভনার প্রতি তার প্রেম ছিল তীব্র, সমস্ত জীবন এই প্রেমেই তিনি আচ্ছন্ন ছিলেন, স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে তার একটি স্বাস্থ্যসম্মত দাম্পত্য সম্পর্ক কখনোই গড়ে ওঠেনি।


কনভেন্টে পড়া শোভনা আর সকলের চেয়ে আলাদা। তার হাঁটাচলা, কথা বলা, সাজ-পোশাক সবই ভিন্ন। গোল বা চৌকোনো নয়, তিনি পরেন সরু চশমা, মাথার মাঝখানে প্রচলিত সিঁথি নয়, তিনি সিঁথি করেন মাথার এক পাশে। জীবনানন্দদের বাড়িতে যৌথ পরিবারের একটি গ্রুপ ছবি আছে। সেই ছবিতে মিষ্টি মুখের তন্বী শোভনাকে দেখা গেছে সামনের দিকে ঝুঁকে বিশেষ এক কায়দায় তাকিয়ে আছেন ক্যামেরা তথা পৃথিবীর দিকে। এই দৃষ্টিই মিলুকে খুন করেছে।


শোভনা তখন হাই স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্রী। নতুন বর্ষার উচ্ছলতা দেহ ও মনে। কনভেন্ট স্কুলের বাস এসে সকালে নিয়ে যায় শোভনা ওরফে বেবীকে। সারাদিন মিলু অপেক্ষা করে কখন ফিরবে তার শোভনা। স্কুল থেকে ফিরলে বাংলোর কোনো এক ঘরে দরজা বন্ধ করে গল্পে মেতে ওঠে দুজন। কথা ওঠে বই উৎসর্গ নিয়েও। শোভনা জানতে চায়, আচ্ছা মিলুদা তুমি আমাকে বইটা উৎসর্গ করতে গেলে কেন? জবাবে জীবনানন্দ তাকে শুনিয়ে দেয় একটি কবিতা 'তুমি এই রাতের বাতাস,/ বাতাসের সিন্ধু-ঢেউ,/ তোমার মত কেউ/ নাই আর।/ অন্ধকার - নিঃসাড়তার/ মাঝখানে/ তুমি আনো প্রাণে/ সমুদ্রের ভাষা,/ রুধিরে পিপাসা,/ যেতেছ জাগায়ে,/ ছেঁড়া দেহ - ব্যাথিত মনে ঘায়ে/ ঝরিতেছে জলের মতন,-/ রাতের বাতাস তুমি, - বাতাসের সিন্ধু- ঢেউ/ তোমার মতন কেউ/ নাই আর।'


এই কবিতা পড়ার পরে কী মনে হয় না যে কবি, প্রেমিক তৈরি হচ্ছেন 'বনলতা সেন' কবিতাটি লেখার জন্য? সেই সময়ে জীবনানন্দ দাশ তার ডায়েরিতে লেখেন, "A (blind) love does so much injury". তিনি তখন শোভনার প্রতি অন্ধ প্রেমে নিমজ্জিত। এরপর তার ডায়েরিতে পাওয়া যায়, " Love & Kiss & everything - but all she refuses on her health ground, hot water bag and all that".


ডিব্রুগড়ের স্মৃতি নিয়ে জীবনানন্দ আরো লিখেছেন - 'এই তো সেদিন/ ডিব্রু নদীর পাড়ে আমরা ঘুরছিলাম/  মনে হয় যেন হাজার বছরের ওপারে চলে গিয়েছ তুমি/ শুধু অন্ধকারে বাবলা ফুলের গন্ধ যখন পাই/ কিংবা কখনও কখনও গভীর রাতে ঘাস মাড়িয়ে/ তারার আলোয় সেই ব্যথিত ঘাসের শব্দ যখন শুনি/ রক্তের বিমূঢ় উত্তেজনায়/ যখন তোমাকে আমি পাখির মত পাখিনীর কাছে পাই'


শোভনাকে তিনি কিছুতেই পাবেন না। এক পরিবারের হলেও আর্থিক সঙ্গতির দিক থেকে মিলু শোভনার স্বামী হবার যোগ্যতা রাখে না। তা ছাড়া হিন্দু সমাজে এ-ধরণের বিয়ে গ্রহনযোগ্য নয়। 


শোভনার ছবি হৃদয়ের কেন্দ্রে নিয়েই তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ততদিনে শোভনাও এই ঘোর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। মিলু দাকে স্বাভাবিক করতেই তিনি চিঠি লিখে জানান, দাদার বিয়েতে অনেক আনন্দ করতে তিনি বরিশালে আসছেন। বিয়ে বাড়িতেও জীবনানন্দ নানান অজুহাতে শোভনার সান্নিধ্য পেতে চেয়েছেন।


বাকী জীবনেও শোভনার সান্নিধ্য পাবার অনেক চেষ্টা তিনি করেছেন কিন্তু শোভনা খুব কমই সাড়া দিয়েছেন। সমস্ত জীবন এই একটি নারীই তার অস্তিত্ব জুড়ে বর্তমান ছিল। ডিব্রুগড়ের বাংলোতে শোভনার সঙ্গে কাটানো দুদণ্ড সময়ই ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ক্রিস্টোফার মার্লোর সেই বিখ্যাত লাইনের মত, 'হেলেন হে প্রিয়তমা, আমাকে অমর করো একটি চুম্বনে', শোভনার ঠোঁটে ঠোঁট রাখাই হয়ত জীবনানন্দকে অমর করেছে। তিনি লিখেছেন, 


হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।


ডিব্রুগড়ের ঘটনার প্রায় ৬/৭ বছর পরে বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা' পত্রিকায় ১৯৩৫ সালে ছাপা হয় 'বনলতা সেন'। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র এবং অধ্যাপক ছিলেন। পশ্চিমের সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা, প্রচুর পড়তেন। অ্যাডগার অ্যালান পোর 'টু হেলেন' কবিতাটি তার না পড়বার কথা না। নানান সময়ে ডায়েরিতে তিনি যেসব বিদেশি কবির কথা লিখেছেন তাদের মধ্যে পো-এর নামও পাওয়া যায়। অনেকে বলেন, পো-এর টু হেলেন পড়েই তিনি বনলতা সেন কবিতাটি লিখেছেন। আমি মনে করি, সেই কবিতাটির দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারেন তবে অ্যালান পো'র টু হেলেনের চেয়ে জীবনানন্দের বনলতা সেন অনেক বেশি উঁচু মাপের কবিতা। আজকের এই রচনায় বনলতা সেনকে আবিস্কারের খানিক চেষ্টা করলাম মাত্র। অন্য আরেকদিন কবিতাটির সাহিত্য-মূল্য নিয়ে আলোচনা করবো।


হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২১ এপ্রিল ২০২২।

কাজী জহিরুল ইসলাম ✍️❤️

সকাল ০৭ টার সংনাদ তারিখ: ০৮-০৫-২০২৪ ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 সকাল ০৭ টার সংবাদ

তারিখ: ০৮-০৫-২০২৪


সংবাদ শিরোনাম:


প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ - অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন।


প্রকল্প গ্রহণের আগে তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও উপকারভোগীদের সুবিধা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। 


আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে নতুন উৎস হতে রোহিঙ্গাদের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহের  আহ্বান শেখ হাসিনার।


চলতি বছর পাঁচ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ - কেউ অবৈধভাবে ধান মজুদ করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি খাদ্যমন্ত্রীর।


নানা আয়োজনে দেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩-তম জন্মবার্ষিকী।


গাজা ও মিসরের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী রাফাহ সীমান্ত প্রবেশ পথের ফিলিস্তিন অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।


সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন-শূন্যতে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

নৌকা ভাসলো মামদো নদীতে রূপান্তরের গল্প ৩৭১ #রূপান্তরেরগল্প

 নৌকা ভাসলো মামদো নদীতে

রূপান্তরের গল্প ৩৭১ #রূপান্তরেরগল্প


ভারী কুয়াশার মধ্যে চলছে গাড়ি। ছোট সড়ক। দুই পাশে মাছের ঘের। একটু এদিক সেদিক হলেই গাড়ি পড়বে খাদে। কী যন্ত্রণায় যে পড়লাম। ওদিকে জামু ভাইয়ের ফোন বন্ধ। আলিফের ফোনে চেষ্টা করছি, কোনো সাড়া নাই। 


রাত দশটা হবে। প্রথম গিয়ারে চলছে গাড়ি। রাস্তা এদিকে এতো সরু! সামনে থেকে আরেকটি গাড়ি আসলে কী যে হবে! কপাল ভালো। এদিকের লোকজন মনে হয় আগেই ঘুমিয়ে যায়। গাড়ির সামনে বসা আমি। চোখ সামনের দিকে। দুই পাশে তাকিয়ে রাস্তা মাপছি আর আগাচ্ছি। 


বংশীপুর থেকে এই রাস্তায় ঢুকেছি আধা ঘণ্টার বেশি হলো। এদিক দিয়ে আগেও চলাফেরা করেছি। গেছি সীমান্ত ঘেঁষা কৈখালীতে। একবার ওদিক দিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবন গেছিলা। সীমান্ত নদী ধরে কাচিকাটায় রাত কাটিয়েছি। উত্তর তালপট্টি পর্যন্ত ঘুরে আবার ফিরেছি। সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তির পর দেখতে গিয়েছিলাম আসলে দক্ষিণ তালপট্টি আছে কী না তা দেখতে। 


সেবার মটরসাইকেলে গেছিলাম। এবারের গন্তব্য অবশ্য তারও আগে, কালিঞ্চি। কিন্তু নিজে নিজে পথ চিনে যেতে পারবো না। তার উপর গাড়ি নিয়ে যেতে হিমসিম খাচ্ছি। আধা ঘণ্টার পথকেই অনেক লম্বা মনে হচ্ছে। দুশ্চিন্তার আরেকটি কারণ জামু ভাইকে ফোনে না পাওয়া। আরেকটি সমস্যা হলো, যতো এগুচ্ছি ততোই ফোনের নেটওয়ার্ক কমছে। কমারই কথা। সামনেই ভারত সীমান্ত। 


মিনিট দশ পর একটি সেতু পড়লো। রাস্তা থেকে একটু উঁচু। জামু ভাই একটি ব্রিজ পর্যন্ত আসতে বলেছিলেন। সম্ভবত এটাই সেই ব্রিজ। কারণ এখানেই গাড়ির রাস্তা মনে হচ্ছে শেষ। গাড়ি থামালাম। বলা যায় থামতে হলো।


ফোনটা হাতে নিয়ে নামলাম। তীব্র শীত। কুয়াশার মধ্যে হাল্কা বাতাস দিচ্ছে। একদম হীম শীতল। হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এমনিতে শীত মোকাবেলার অভ্যাস আছে। তবে আজ বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ ক্ষুধা লেগেছে। সহকর্মী পলিন গাড়ির ভেতর ঘুমাচ্ছেন। পরিস্থিতি যতো জটিলই হোক, তার ঘুমের কোনো সমস্যা হয় না। একবার ভাবলাম ডেকে তুলি। আবার ভাবলাম, থাক। দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে লাভ নাই, নিজের মধ্যেই থাকুক।


ব্রিজের রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছি। মনে হয় নতুন হয়েছে। নিচ দিয়ে বয়ে গেছে একটি মাঝারি খাল। নদীও হতে পারে। পুরো জোয়ার চলছে। তীব্র স্রোত। সেই স্রোতের সাথে চলছে একটার পর একটা ডিঙ্গি নৌকা। কুয়াশায় সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে নৌকা বাওয়ার শব্দ আর জেলেদের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছি।


রাত প্রায় এগারোটা। দূর থেকে মটরসাইকেলের শব্দ আসছে। ঘন ঘন হর্ন বাজাচ্ছে চালক। কয়েক মিনিট পর কাছাকাছি এসে থামলো তারা। ভাবছি আমার কাছে জামু আসবেন তো?


ওদিকে টর্চ হাতে কেউ একজন হেঁটে আসছে। ঘন ঘন আলো জ্বলছে আর নিভছে। টর্চের লক্ষ্য আমাদের দিকে। আশায় বুক বাঁধলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে লুঙ্গি পড়া একজন এসে দাঁড়ালেন। গাড়িতে আলো ফেলে নিশ্চিত হলেন। তারপর বললেন, মোহসীন ভাই? বললাম, জামু ভাই নাকী? বললেন, জ্বি ভাই। রাতের বেলা খুব কষ্ট হয়ে গেলো। খেয়া ঘাটে নৌকা ছিলো না। তারপর মটর সাইকেল জোগাড় করতেও দেরি হলো। এই রাতে কে দিবে গাড়ি? 


বললাম,আমাকে একটু জানাবেন তো? অচেনা জায়গায় দাঁড়ানো সেই কতোক্ষণ ধরে। দেখলে কে কী মনে করবে সেটাও ভাবছিলাম। সীমান্ত এলাকায় রাতের বেলা যারা চলাফেরা করা তারা সবাই সবাইকে সন্দেহ করে। অন্ধকারে একটা অঘটনও ঘটে যেতে পারে না? জামু বললেন, এদিকে নেটওয়ার্ক থাকেই না। তার উপর খেয়া পার হতে গিয়ে ফোনটা পানিতে পড়ে গেলো। আমি কি আর বসে আছি ভাই। আপনার সাথে কথা বলার পর পরই রওনা দিলাম। যাই হোক, চলেন। লোকটির মুখ ঢাকা মাফলার দিয়ে। চেহারাটা দেখতে পারলাম না।


একটা মাত্র মটরসাইকেল। মানুষ আমরা তিনজন। তাতেও অসুবিধা ছিলো না। আমাদের ব্যাগ বোঁচকা নিবো কী করে? অবশেষে শুধু শীতের কাপড়, মোবাইল ফোন আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে তৈরি হলাম। গাড়ি ঘুরিয়ে দিলাম। চালককে বললাম, সাতক্ষীরা শহরে গিয়ে থাকবে।  আমি ফোন দিলে চলে আসবে এখানে। 


শুনেছি যাত্রীবাহী মটরসাইকেলকে এদিকে হেলিকপ্টার বলে। এর উৎপত্তি অবশ্য সাইকেল থেকে। এই অঞ্চলে সাইকেলের ক্যারিয়ারের সাথে কাঠের তক্তা বেঁধে আরেক জনের বসার ব্যবস্থা করা হতো। সেজন্যই ওই দুই চাকার বাহনকে মজা করে হেলিকপ্টার বলা হতো। এখন তার জায়গায় নেমেছে ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল। 


সামনে জামু ভাই। তিনিই চালাচ্ছেন। মাঝে আমি, আমার পেছেন পলিন। অন্ধকার ফুঁড়ে চলছে মটরসাইকেল। কোনো রকমে বসেছি। বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ পাকা রাস্তা থেকে আমরা নেমে পড়েছি ইটের রাস্তায়। মাছের ঘেরের মাঝখানের সরু পথ।  


কিছু দূর গিয়ে মটরসাইকেল থেমে গেলো। নামলাম আমরা। বললাম, ভালো রাস্তা নাই ভাই? মটরসাইকেলে কিক দিতে দিতে বললেন, সোজা রাস্তায় গেলে মানুষ দেখে ফেলবে না? আমরা যে কাজে যাচ্ছি বুঝতে পারেন? বললাম, তা বুঝি। কিন্তু কষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে!


এর মধ্যে মটরসাইকেলের ইঞ্জিন চালু হলো। উঠে বসলাম আবার। তারপর আরও মিনিট কুড়ি চললাম। থামলাম একটি খেয়া ঘাটে। জায়গার নাম কালিঞ্চি। নৌকা ঘাটেই বাঁধা। মটরসাইকেল ঘাটে রেখেই উঠে পড়লাম। উল্টো পাশের লোকালয়ের নাম গোলাখালী। সুন্দরবনের ভেতরে বাংলাদেশের একমাত্র বসতি এটি। দুই দিকে নদী। বাকী দুই পাশে সুন্দরবন। গোলাখালীর সাথে সুন্দরবন একদম লাগানো। মাঝে মাঝেই বাঘ আসে। 


জঙ্গলের পাশ দিয়ে হাঁটছি আমরা। ভেড়ি বাঁধে মাটি কাটা হয়েছে ইদানিং। বাম পাশে জঙ্গল, ডানপাশে মাছের ঘের। হাঁটতে হাঁটতে এক কোণায় পৌঁছালাম। সেখানে ভাসমান একটি ঘর আছে। ভেতরে জ্বলছে কুপি বাতি। 


নাম ধরে ডাক দিলেন জামু ভাই। সাথে সাথেই সাড়া এলো। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলেন এক বৃদ্ধ। সাথে ছোট্ট একটি ছেলে, বয়স হবে বড়জোর আট বছর। জামু বললেন, মেহমান আসছে। একটু নামো। দেখো কয়টা চিংড়ি মাছ পাও কী না। বললাম, শীতের রাতে কষ্ট করায়েন না ভাই। আমরা ডাল ভাত খাবো। আর কিছু লাগবে না। 


উনি বললেন, আপনি আমাদের সাহেবের মেহমান। ভালো মন্দ না খাওয়ালে হবে? বলেই নেমে পড়লেন ঘেরে। সাথে যোগ দিলেন প্রবীন ব্যক্তি ও তাঁর নাতি। কয়েক মিনিটের চেষ্টা ধরা হলো কেজি পাঁচেক চিংড়ি মাছ, হরিণা চিংড়ি। সাথে বেশ কয়েকটি কাঁকড়া। 


মাছ-কাঁকড়া নিয়ে আবার দশ মিনিট হাঁটলাম। চারপাশে ঘের দিয়ে ঘেরা একটি বাড়িতে ঢুকলাম। এই রাতেও সেখানে ব্যস্ততার শেষ নাই। ভাবী বাচ্চারা রান্নাঘরে কাজ করছে। এর মধ্যে দেশি মুবগির ঝোল হয়েছে। ঘেরের পারশে মাছ ভাজা চলছে। একটু আগে ধরা চিংড়িও রান্না হবে। কাঁকড়াগুলো কাটতে না করলাম। 


রান্না শেষ হতে হতে রাত বারোটা বাজলো। লদিকে ক্ষুধায় কাহিল আমরা। তবে সেকথা বলছি না। এমনিতেই ওদের ব্যস্ততার শেষ নাই। লোকালয়ের শেষ প্রান্তের এই ছোট্ট জনপদ গোলাখালীতে শ খানেক ঘর আছে। জেগে আছে শুধু এই ঘরের মানুষ। 


বড় বড় পারশে মাছ, চিংড়ি ভুনা, দেশি মোরগের ঝোল আর গরম ভাত। সাথে পাতলা ডালও রেঁধেছেন জামু ভাইয়ের স্ত্রী। পলিনসহ বসে পড়লাম। ভরপেট খেয়ে সেখানেই ছেড়ে দিলাম শরীরটাকে। সেই সকালে রওনা দিয়েছি। একটানা প্রায় ষোল ঘণ্টা সফর করেছি আজ। ক্লান্তির কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় ছিলো না। এর মধ্যে চা হয়েছে। ডাকাডাকি করেও নাকী জাগানো যায়নি আমাকে। 


রাত দুইটার দিকে ঘুম ভাঙলো। দেখি কম্বল, কাঁথা বালিশ নিয়ে তৈরি জামু ভাই। সাথে আরও দুইজন। বাজারের ব্যাগ-বোঁচকা আর কয়েকটি হাঁস-মুরগি নিয়ে দাঁড়ানো। চোখ ডলতে ডলতে উঠলাম। দেখি পলিন দাঁড়ানো। হাতে তার চায়ের কাপ। বললেন, আমরা মনে হয় রওনা দিবো ভাই। আপনি উঠেন। চোখমুখে একটু পানি দেন। তারপর চায়ে চুমুক দেন। 


শীতে কাবু আমরা। ভেড়ি বাঁধের রাস্তা ধরে হাঁটছি। কষ্ট হচ্ছে। শরীরটাকে টেনে নিচ্ছি তবুও। কুয়াশা পড়ে মাটির পথটি বেশ পিচ্ছিল। পা ফেলতে হচ্ছে সতর্কতার সাথে। অবশ্য পলিন এক হাতে আমাকে ধরে আছেন। আরেক হাতে টর্চ। পা টিপে টিপে হাঁটছি। কোন পর্যন্ত যাবো জানি না।


কতোক্ষণ হাঁটবো আমরা? জামু ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, এই তো ভাই। বেশিক্ষণ না। অর্ধেক ভাটায় নদীতে চর জেগে গেছে। নৌকা এই ঘাট পর্যন্ত আনতে পারেনি ওরা। 


হাঁটছি আর ভাবছি মংলা দিয়ে কাজটা কতো সহজ। ট্রলার তৈরি থাকে। বেলায়েত সর্দার বাজার সদা করে তৈরি থাকেন। আমি শুধু গাড়ি থেকে নেমে উঠে পড়ি। আজকেও সুন্দরবনে যাচ্ছি। একটি দস্যুদলের কাছে যাচ্ছি। কিন্তু এবারের পথটি একেবারেই অন্য রকম। একই সাথে ভাবছি, এখানে যদি অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তবুও তাদের সম্ভব না। সুন্দরবনের ভেতর থেকে অপরাধী ধরা তো আরও দূরের কথা। এদিকে অভিযান চালানো সম্ভব। কিন্তু ততোক্ষণে অপরাধীদের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না কেউ। এদিকের বনদস্যু ও চোরাকারবারীরা এই সুযোগটিই নেয়। 


একটি ডিঙ্গি নৌকা ভিড়ানো নদীর পাড়ে। যতোটা সম্ভব কাছাকাছি আনা। আমরা উঠার আগে নৌকার মাঝিরা উঠলো। জিনিষপত্রগুলো রাখলো নৌকায় পাটাতনের তলায়। ভালো করে সেঁচে জমা হওয়া পানি ফেললো। তারপর ছইয়ে ভেতরে পাতা হলো মোটা কম্বল। আরেকটি ভারী কম্বল গায়ে দিবো। বালিশগুলো জামু সাহেবের বাসা থেকে আনা, বেশ আরাম হবে। 


নৌকায় উঠলাম। ছইয়ের ভেতরে ঢুকে বসলাম। শীতের মধ্যে বিষয়টি বেশ উপভোগ করার মতো। গোলপাতার ছইয়ের ভেতরটা বেশ ছোট। তবে আরামের যে ব্যবস্থা রাখা তা বলে বুঝানো যাবে না। 


ঠেলে নামানো হলো নৌকা। পানিতে ভাসলাম। সামেন পেছনে দুইজন মাঝি। ছইয়ের ভেতরে আমি আর পলিন। আমাদের পেছনে বসেছেন জামু ভাই। লোকটি রহস্যময়। নাম শুনেছি তার। কিন্তু তার সাথে মিলাতে পারছি না একদম। আজ তিনিই আমার একমাত্র ভরসা। নিয়ে যাবেন আলিফ ডাকাতের কাছে। 


নৌকা চলছে। কোনো বাতি জ্বালানো হয়নি। কুয়াশা ঘেরা নদীতে কিছুই দেখছি না। মনে মনে ভাবছি কোন জায়গায় আমরা। কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছে না। শেষ পর্যন্ত জামু ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলাম, কোন নদীতে আমরা? বললেন, মাহমুদা নদী। এই নদীতে আগেও এসেছি। তবে এর সাথের খালগুলো ভালো চিনি না। বললাম, কতোক্ষণের পথ? উনি বললেন, তা কে কবে? ওরা কোথায় আছে এখন কে জানে? আমরা বাইতে থাকবো, ওরা সিগন্যাল দিয়ে ডেকে নিবে। বললাম, তাহলে নৌকা চলতে থাকুক। আমি একটু ঘুম দেই। 


এমন সফরে আসলে আমার ঘুম আসে না। দুই তিন দিন ঘুমাইনি এমন সময়ও গেছে। তবে আজ ঘুম আসছে। কম্বল টেনে নিলাম। ওম আর ক্লান্তি মিলিয়ে বেশ লাগছে। চোখ বন্ধ করলাম। তবে যতোক্ষণ পারলাম কান খোলা রাখলাম। মাঝিরা একে অন্যের সাথে কথা বলছে। নিচু স্বরে বললেও বুঝতে পারছি। 


ভাটার স্রোতের সাথে চলছি আমরা। নদীটির আনুষ্ঠানিক নাম এখন মাহমুদা। তবে এর মূল নাম মামদো। এখান থেকে সোজা নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে। কম্বল মুড়ি দিয়ে জেলেদের কথোপকথন শুনছি। পেছনের মাঝি জানতে চাইলো, দয়াল আছে কোন খালে? জামু ভাই বললেন, ওই শোব্দে-গুব্দের দিকে যাও।


চলবে....


(২৫ জানুয়ারি ২০১৭, সুন্দরবন)

যারাযারা ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত উপন্যাস 'মাদার' পড়েছেন তারা পাভেল এবং তার মা আনাকে চেনেন। পাভেলের বাবা মাইকেল ভলাসব ছিল কারখানার শ্রমিক।

 যারাযারা ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত উপন্যাস 'মাদার' পড়েছেন তারা পাভেল এবং তার মা আনাকে চেনেন। পাভেলের বাবা মাইকেল ভলাসব ছিল কারখানার শ্রমিক।


ভোর হতে না হতেই কারখানার বাঁশি বেজে ওঠার সাথে সাথে ঢুকে যেত কারখানার ভেতরে। হাতে তুলে নিত হাতুড়ি। সারাদিন সে কারখানার আগুনে কয়লার মত জ্বলে পুড়ে সন্ধ্যার সময় ছাইয়ের মত রাস্তায় এসে পড়ত। সেখান থেকে সোজা চলে যেত ভাটিখানা। হাড়ভাঙা খাটুনি, জীবনের সব হাহাকার, যন্ত্রণা ভুলে থাকতে সারাদিনের রোজগার দিয়ে সস্তার মদ খেত। বাড়ি ফিরে অভুক্ত স্ত্রী আর পুত্রকে ঠ্যাঙাত। তারপর ঘুমিয়ে পড়ত। পরের দিন ভোররাত্রে আবার কারখানা। অত্যাধিক মদ খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মারা গেল সে।


শ্রমিকদের এই দুর্দশার চিত্র শুধু রাশিয়ার একটি শহরের খণ্ডচিত্র নয়। সেই সময় পৃথিবীর যেখানে যেখানে পুঁজিপতি শ্রেণী ও কলকারখানার উদ্ভব হয়েছে, সেই সব অঞ্চলের সামগ্রিক চিত্র।


বাবার মৃত্যুর পর পাভেলও হয়ে গেল কারখানার শ্রমিক। সেও মদ খেয়ে রাতে ফিরতে আরম্ভ করলো। কিন্তু সমাজতন্ত্রী শ্রমিক আন্দোলনের সংস্পর্শে এসে সে বদলে গেল। বুঝতে পারল কারখানার কাজের বাইরেও একটি সুস্থ জীবন শ্রমিকদের প্রাপ্য। বুঝতে পারল ফল থেকে যেমন রস নিংড়ে ছিবড়ে ফেলে দেয়, তেমনি মালিক শ্রেণী তাদের জীবন থেকে সমস্ত আনন্দ নিংড়ে বার করে নিচ্ছে। তারপর ছিবড়ের মতো পড়ে থাকছে জীবন। মে দিবস পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলো পাভেল। তার নিরক্ষর মা আনা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে গেল। তাকে নিয়েই 'মাদার' উপন্যাস।


যদিও রাশিয়ায় নয়, মে দিবসের সূচনা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ধনতান্ত্রিক দেশে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় কলকারখানা এবং পুঁজিপতি শ্রেণীর দ্রুতহারে প্রসার ঘটতে থাকে। সাথে সাথে বাড়তে থাকে শ্রমিক শ্রেণীর সংখ্যা।


'সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত' – এই ছিলো তখনকার দিনে কাজের ঘণ্টা। ১৮০৬ সালে ফিলাডেলফিয়াতে জুতো শ্রমিকদের নেতাদের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্রের মামলা চলছিল, তখন প্রকাশ পায় যে, শ্রমিকদের দিনে উনিশ থেকে কুড়ি ঘণ্টাও খাটানো হচ্ছিল। 


১৮২০ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত কাজের সময় কমিয়ে দশ ঘণ্টা করা এবং শ্রমিক শ্রেণীর উন্নতির জন্য কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ধর্মঘটের পর ধর্মঘট হয় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। এর ফলে স্থানীয় ভাবে কিছু সফলতা পাওয়া যায়। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে ১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দের ২০ শে আগস্ট ৬০ টি ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে 'ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন' প্রতিষ্ঠা করেন। সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা হলো “এই দেশের শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য এই মুহূর্তে প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন হলো এমন একটি আইন পাশ করা- যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত রাজ্যেই সাধারণ কাজের দিন হবে আট ঘণ্টার। এই মহান লক্ষ্য পূর্ণ করার পথে সমগ্র শক্তি নিয়োগ করার সংকল্প আমরা গ্রহণ করছি।”


একই সঙ্গে ঐ বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে সদস্যরা উক্ত দাবীর সমর্থন করেন। ১৮৭২ সালে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে সদর দপ্তর স্থানান্তরের পরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রথম আন্তর্জাতিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭৬ সালে সরকারি ভাবে একে ভেঙে দেওয়া হয়।

যে সমস্ত সংগ্রাম মে দিবসের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে 'আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবার' নামে একটি শ্রমিক সংগঠন তাদের সম্মেলনে ঘোষণা করে যে - '১৮৮৬ সালের ১লা মে তারিখ থেকে দৈনিক আটঘন্টাকেই কাজের দিন বলে গণ্য করা হবে। আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা আমোদ প্রমোদ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম। সারা দেশ জুড়ে শ্রমিকদের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়। ধর্মঘট করার ফলে যে সমস্ত সদস্যকে দীর্ঘকাল কর্মস্থান থেকে বাইরে থাকতে হবে তাদের জন্য ধর্মঘটকালীন সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। ধর্মঘটের দিন ১লা মে ঘোষণার সাথে সাথে সংগ্রামের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। ১৮৮১ সাল থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৫০০টি ধর্মঘট হয়। ১৮৮৫ সালে দাঁড়ায় ৭০০টি। ১৮৮৬ সালে ধর্মঘটের সংখ্যা আগের বছরের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়, সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৭২টি।


১৮৮৬ সালের ১লা মে সমস্ত আমেরিকা জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। ধর্মঘটের কেন্দ্র ছিল শিকাগো। ধর্মঘট আন্দোলন সেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যাপকতা লাভ করে। তাছাড়াও অন্যান্য শহর, যেমন- নিউইয়র্ক, বালটিমোর, ওয়াশিংটন, মিলওয়াকি, সেন্টলুই, পিটার্সবার্গ, ডেট্রয়েট- ও ১ তারিখের সংগ্রামে সামিল হয়। থমকে যায় কারখানার চাকা, থমকে যায় উৎপাদন। 


ওদিকে মালিকপক্ষ ও সরকার চুপচাপ বসে ছিল না। ৩রা মে শিকাগোতে এক কারখানার ধর্মঘটী শ্রেণিরদের সভায় পুলিশ হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছ'জন শ্রমিককে হত্যা করে এবং বহু শ্রমিক আহত হয়। এর প্রতিবাদে ৪ঠা মে হে মার্কেট স্কোয়ারে একটি সভা হয়। সভা শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছিল এবং সেদিনকার মতো শেষও হতে যাচ্ছিল। এমন সময় বিনা প্ররোচনায় শ্রমিকদের পুলিশ আবার আক্রমণ করে। চারজন শ্রমিক মারা যায়। পার্সনস, স্পাইজ, ফিসার প্রমুখ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয় এবং অনেক সংগ্রামী নেতাকে জেলে পোরা হয়। তাঁদের এই আত্মবলিদান ব্যর্থ হয়নি। তিন বছরের মধ্যেই মে দিবস পরিণত হয় একটি আন্তর্জাতিক দিবসে। 


১৮৮৯ সালে বাস্তিল দূর্গ পতনের শতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা দেশ থেকে সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের নেতারা প্যারিসে জড় হন। তাঁদের লক্ষ ছিল প্রথম আন্তর্জাতিকের ছাঁচে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করা। পরবর্তী কালে যার নাম হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক। এই সম্মেলনেই দেশ বিদেশের প্রতিনিধিরা আমেরিকার প্রতিনিধিদের কাছে শুনতে পেলেন মে দিবসের আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে আন্দোলনের কাহিনী। আমেরিকান শ্রমিকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১লা মে আন্তর্জাতিক বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলশ্রুতি হিসাবে পরের বছরই ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা সহ বহু দেশে শ্রমিকেরা ১লা মে ধর্মঘট করে। 

সমাজতন্ত্রীদের স্বর্গ রাজ্য রাশিয়াতে কিন্তু প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯শে এপ্রিল তারিখে। কারণ সেসময় পশ্চিম ইউরোপের ক্যালেন্ডার থেকে রাশিয়ার ক্যালেন্ডার ১৩ দিন পিছিয়ে ছিল।


মে দিবস আন্দোলনে আট ঘণ্টার কাজের দাবির সাথে আরও সব তাৎপর্যপূর্ণ দাবি যুক্ত হয়। যেমন- সার্বজনীন ভোটের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও ঔপনিবেশিক অত্যাচারের বিরোধিতা, মিছিল ও ধর্মঘটের অধিকার, রাজবন্দীদের মুক্তি, শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন গড়ার অধিকার ইত্যাদি। মালিকপক্ষের সমস্ত দমন ও পীড়নকে অগ্রাহ্য করে মে দিবস শ্রমিকদেত মধ্যে ধীরে ধীরে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে তারা অনেক দাবি আদায় করতে সমর্থ হয়। 


বিভিন্ন সংস্কার পন্থী দলের নেতারা বারবার চেষ্টা করেছে মে দিবসের গুরুত্ব খর্ব করতে। সংগ্রামের দিনের পরিবর্তে বিশ্রাম ও আমোদ প্রমোদের দিনে পরিণত করতে। এর জন্য তারা চেষ্টা করত মে দিবস মে মাসের প্রথম রবিবার পালন করতে। কারণ রবিবার শ্রমিকদের ধর্মঘট করার প্রয়োজন হবে না। রবিবার এমনিতেই কারখানা বন্ধ থাকে। ১৯২৮ সালে আমেরিকাতে ১লা মে কে শিশু স্বাস্থ্য দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লক্ষ যেন তেন প্রকারেণ ১লা মে'র মে দিবস বা কমিউনিস্ট দিবস হিসাবে পরিচিতি নষ্ট করা। 


তবু একশো চল্লিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আজও লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে মে দিবস পালন করে। মে দিবস আজও মানুষকে স্বপ্ন দেখায় শোষণ পীড়নমুক্ত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার পথ প্রস্তুত করার।


©ঐন্দ্রিল ভৌমিক #viralpost #followers #everyone #highlight


ভোর হতে না হতেই কারখানার বাঁশি বেজে ওঠার সাথে সাথে ঢুকে যেত কারখানার ভেতরে। হাতে তুলে নিত হাতুড়ি। সারাদিন সে কারখানার আগুনে কয়লার মত জ্বলে পুড়ে সন্ধ্যার সময় ছাইয়ের মত রাস্তায় এসে পড়ত। সেখান থেকে সোজা চলে যেত ভাটিখানা। হাড়ভাঙা খাটুনি, জীবনের সব হাহাকার, যন্ত্রণা ভুলে থাকতে সারাদিনের রোজগার দিয়ে সস্তার মদ খেত। বাড়ি ফিরে অভুক্ত স্ত্রী আর পুত্রকে ঠ্যাঙাত। তারপর ঘুমিয়ে পড়ত। পরের দিন ভোররাত্রে আবার কারখানা। অত্যাধিক মদ খাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মারা গেল সে।


শ্রমিকদের এই দুর্দশার চিত্র শুধু রাশিয়ার একটি শহরের খণ্ডচিত্র নয়। সেই সময় পৃথিবীর যেখানে যেখানে পুঁজিপতি শ্রেণী ও কলকারখানার উদ্ভব হয়েছে, সেই সব অঞ্চলের সামগ্রিক চিত্র।


বাবার মৃত্যুর পর পাভেলও হয়ে গেল কারখানার শ্রমিক। সেও মদ খেয়ে রাতে ফিরতে আরম্ভ করলো। কিন্তু সমাজতন্ত্রী শ্রমিক আন্দোলনের সংস্পর্শে এসে সে বদলে গেল। বুঝতে পারল কারখানার কাজের বাইরেও একটি সুস্থ জীবন শ্রমিকদের প্রাপ্য। বুঝতে পারল ফল থেকে যেমন রস নিংড়ে ছিবড়ে ফেলে দেয়, তেমনি মালিক শ্রেণী তাদের জীবন থেকে সমস্ত আনন্দ নিংড়ে বার করে নিচ্ছে। তারপর ছিবড়ের মতো পড়ে থাকছে জীবন। মে দিবস পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলো পাভেল। তার নিরক্ষর মা আনা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে গেল। তাকে নিয়েই 'মাদার' উপন্যাস।


যদিও রাশিয়ায় নয়, মে দিবসের সূচনা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ধনতান্ত্রিক দেশে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় কলকারখানা এবং পুঁজিপতি শ্রেণীর দ্রুতহারে প্রসার ঘটতে থাকে। সাথে সাথে বাড়তে থাকে শ্রমিক শ্রেণীর সংখ্যা।


'সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত' – এই ছিলো তখনকার দিনে কাজের ঘণ্টা। ১৮০৬ সালে ফিলাডেলফিয়াতে জুতো শ্রমিকদের নেতাদের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্রের মামলা চলছিল, তখন প্রকাশ পায় যে, শ্রমিকদের দিনে উনিশ থেকে কুড়ি ঘণ্টাও খাটানো হচ্ছিল। 


১৮২০ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত কাজের সময় কমিয়ে দশ ঘণ্টা করা এবং শ্রমিক শ্রেণীর উন্নতির জন্য কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ধর্মঘটের পর ধর্মঘট হয় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। এর ফলে স্থানীয় ভাবে কিছু সফলতা পাওয়া যায়। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে ১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দের ২০ শে আগস্ট ৬০ টি ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে 'ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন' প্রতিষ্ঠা করেন। সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা হলো “এই দেশের শ্রমিক শ্রেণীকে পুঁজিবাদীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য এই মুহূর্তে প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন হলো এমন একটি আইন পাশ করা- যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত রাজ্যেই সাধারণ কাজের দিন হবে আট ঘণ্টার। এই মহান লক্ষ্য পূর্ণ করার পথে সমগ্র শক্তি নিয়োগ করার সংকল্প আমরা গ্রহণ করছি।”


একই সঙ্গে ঐ বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে সদস্যরা উক্ত দাবীর সমর্থন করেন। ১৮৭২ সালে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে সদর দপ্তর স্থানান্তরের পরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রথম আন্তর্জাতিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৮৭৬ সালে সরকারি ভাবে একে ভেঙে দেওয়া হয়।

যে সমস্ত সংগ্রাম মে দিবসের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে 'আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবার' নামে একটি শ্রমিক সংগঠন তাদের সম্মেলনে ঘোষণা করে যে - '১৮৮৬ সালের ১লা মে তারিখ থেকে দৈনিক আটঘন্টাকেই কাজের দিন বলে গণ্য করা হবে। আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা আমোদ প্রমোদ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম। সারা দেশ জুড়ে শ্রমিকদের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়। ধর্মঘট করার ফলে যে সমস্ত সদস্যকে দীর্ঘকাল কর্মস্থান থেকে বাইরে থাকতে হবে তাদের জন্য ধর্মঘটকালীন সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। ধর্মঘটের দিন ১লা মে ঘোষণার সাথে সাথে সংগ্রামের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। ১৮৮১ সাল থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৫০০টি ধর্মঘট হয়। ১৮৮৫ সালে দাঁড়ায় ৭০০টি। ১৮৮৬ সালে ধর্মঘটের সংখ্যা আগের বছরের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়, সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৭২টি।


১৮৮৬ সালের ১লা মে সমস্ত আমেরিকা জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। ধর্মঘটের কেন্দ্র ছিল শিকাগো। ধর্মঘট আন্দোলন সেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যাপকতা লাভ করে। তাছাড়াও অন্যান্য শহর, যেমন- নিউইয়র্ক, বালটিমোর, ওয়াশিংটন, মিলওয়াকি, সেন্টলুই, পিটার্সবার্গ, ডেট্রয়েট- ও ১ তারিখের সংগ্রামে সামিল হয়। থমকে যায় কারখানার চাকা, থমকে যায় উৎপাদন। 


ওদিকে মালিকপক্ষ ও সরকার চুপচাপ বসে ছিল না। ৩রা মে শিকাগোতে এক কারখানার ধর্মঘটী শ্রেণিরদের সভায় পুলিশ হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছ'জন শ্রমিককে হত্যা করে এবং বহু শ্রমিক আহত হয়। এর প্রতিবাদে ৪ঠা মে হে মার্কেট স্কোয়ারে একটি সভা হয়। সভা শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছিল এবং সেদিনকার মতো শেষও হতে যাচ্ছিল। এমন সময় বিনা প্ররোচনায় শ্রমিকদের পুলিশ আবার আক্রমণ করে। চারজন শ্রমিক মারা যায়। পার্সনস, স্পাইজ, ফিসার প্রমুখ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয় এবং অনেক সংগ্রামী নেতাকে জেলে পোরা হয়। তাঁদের এই আত্মবলিদান ব্যর্থ হয়নি। তিন বছরের মধ্যেই মে দিবস পরিণত হয় একটি আন্তর্জাতিক দিবসে। 


১৮৮৯ সালে বাস্তিল দূর্গ পতনের শতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা দেশ থেকে সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের নেতারা প্যারিসে জড় হন। তাঁদের লক্ষ ছিল প্রথম আন্তর্জাতিকের ছাঁচে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করা। পরবর্তী কালে যার নাম হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক। এই সম্মেলনেই দেশ বিদেশের প্রতিনিধিরা আমেরিকার প্রতিনিধিদের কাছে শুনতে পেলেন মে দিবসের আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে আন্দোলনের কাহিনী। আমেরিকান শ্রমিকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১লা মে আন্তর্জাতিক বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলশ্রুতি হিসাবে পরের বছরই ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা সহ বহু দেশে শ্রমিকেরা ১লা মে ধর্মঘট করে। 

সমাজতন্ত্রীদের স্বর্গ রাজ্য রাশিয়াতে কিন্তু প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯শে এপ্রিল তারিখে। কারণ সেসময় পশ্চিম ইউরোপের ক্যালেন্ডার থেকে রাশিয়ার ক্যালেন্ডার ১৩ দিন পিছিয়ে ছিল।


মে দিবস আন্দোলনে আট ঘণ্টার কাজের দাবির সাথে আরও সব তাৎপর্যপূর্ণ দাবি যুক্ত হয়। যেমন- সার্বজনীন ভোটের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও ঔপনিবেশিক অত্যাচারের বিরোধিতা, মিছিল ও ধর্মঘটের অধিকার, রাজবন্দীদের মুক্তি, শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন গড়ার অধিকার ইত্যাদি। মালিকপক্ষের সমস্ত দমন ও পীড়নকে অগ্রাহ্য করে মে দিবস শ্রমিকদেত মধ্যে ধীরে ধীরে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে তারা অনেক দাবি আদায় করতে সমর্থ হয়। 


বিভিন্ন সংস্কার পন্থী দলের নেতারা বারবার চেষ্টা করেছে মে দিবসের গুরুত্ব খর্ব করতে। সংগ্রামের দিনের পরিবর্তে বিশ্রাম ও আমোদ প্রমোদের দিনে পরিণত করতে। এর জন্য তারা চেষ্টা করত মে দিবস মে মাসের প্রথম রবিবার পালন করতে। কারণ রবিবার শ্রমিকদের ধর্মঘট করার প্রয়োজন হবে না। রবিবার এমনিতেই কারখানা বন্ধ থাকে। ১৯২৮ সালে আমেরিকাতে ১লা মে কে শিশু স্বাস্থ্য দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লক্ষ যেন তেন প্রকারেণ ১লা মে'র মে দিবস বা কমিউনিস্ট দিবস হিসাবে পরিচিতি নষ্ট করা। 


তবু একশো চল্লিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আজও লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে মে দিবস পালন করে। মে দিবস আজও মানুষকে স্বপ্ন দেখায় শোষণ পীড়নমুক্ত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার পথ প্রস্তুত করার।


©ঐন্দ্রিল ভৌমিক #viralpost #followers #everyone #highlight

আলামোহন কিন্তু প্রথম জীবনে ছিলেন সুরেন্দ্র মোহন  প্রশ্ন হল কিভাবে আলামোহন দাস তাঁর এই নাম পেলেন!

 মায়ের হাতে ভাজা মুড়ি  বিক্রি করতে গিয়ে লোকের বাড়ির বারান্দায় বসেছেন, গলাধাক্কাও খেয়েছেন। তারপর সেই মানুষ নিজের পরিশ্রম আর নিষ্ঠার জোরে একদিন হয়ে উঠলেন বিখ্যাত শিল্পপতি, তিনি আলামোহন দাশ একমাত্র বাঙালি শিল্পপতি যাঁর নামে একটা আস্ত শহর গড়ে উঠেছে,হাওড়ার দাশনগর।


নিজের চেষ্টায়  গড়ে তুলেছিলেন একের পর এক কারখানা। জুট মিল, চিনির কারখানা, ওষুধ কোম্পানি, কটন মিল, কী করলেন না? 

ভারত জুট মিল,দাশ মেশিনারি, এশিয়া ড্রাগ কোম্পানি,গ্ৰেট ইন্ডিয়ান স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি,আরতি কটন মিল সহ অনেক নামী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার নাম আলামোহন দাশ।প্রায় একশ বছর আগে তিনি তৈরি করেছিলেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। তিনিই তো প্রকৃত অর্থে শিল্পপতি, দাশনগরের প্রতিষ্ঠাতা। 

© জোৎস্না  


আলামোহন কিন্তু প্রথম জীবনে ছিলেন সুরেন্দ্র মোহন 

প্রশ্ন হল কিভাবে আলামোহন দাস তাঁর এই নাম পেলেন!

  আমতা থানার অন্তর্গত খিলা গ্রামে সুরেন্দ্র মোহন দাস এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বয়স যখন মাত্র দুই, তখন তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়েছিলেন এবং স্থানীয় কবিরাজ তাঁকে সুস্থ করতে পারেননি।  অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয় এবং একদিন আত্মীয়রা ছোট্ট শিশুটিকে মৃত ভেবে শ্মশানে নিয়ে যায় কিন্তু তাঁর ছোট মামা হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে সুরেন্দ্র মোহনের চোখের পাতা নড়ছে, জীবনের লক্ষণ দেখাচ্ছে এবং শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। সবাই শিশুটিকে ‘এলা চেলে’ (প্রাণহীন ছেলে) বলে ডাকতে লাগলেন।  নামটি পরে আলা হয় এবং সুরেন্দ্র মোহন হয় আলামোহন। এই ঘটনাকে মিরাকেল ছাড়া আর কি বলবেন!


মারণ রোগ কালাজ্বরের প্রতিষেধক ইউরিয়া স্টিবামাইন  আবিষ্কার করে স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শুধু ওষুধ আবিষ্কার করলেই সেটি রোগীর কাছে পৌঁছয়না। মেশিনে মাপ মত বড়ি কেটে প্যাকিং দরকার। সেই মেশিন বিদেশ থেকে আনতে হবে ততদিন বহু মানুষ মারা যাবেন। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, আলামোহন দাশের শরণাপন্ন হলেন, আলামোহন নিজের কারখানায় বাঙালি কারিগরদের দিয়ে ওষুধের বড়ি কাটা ও প্যাকিংয়ের মেশিন তৈরি করে দিলেন। ব্রহ্মচারী মহাশয় অবাক হয়ে গেলেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি এত কম সময়ে এদেশের একজন মানুষ এত কম সময়ে বিদেশের থেকেও ভাল মানের মেশিন তৈরি করতে পারে।


এরপর আসল বিষ্ময় অপেক্ষা করেছিল স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্য । এগিয়ে এসে উপেন্দ্রনাথ আলামোহন কে তাঁর কর্মক্ষমতার জন্য

ধন্যবাদ দিলেন। তখন আলামোহন বললেন তাঁর বাড়ির বারান্দায় তিনি মুড়ি বেচতেন, সামনের স্কুলের ছেলেরা সেই মুড়ি কিনত।ওই বাড়ির বারান্দায় বসার অপরাধে দারোয়ান তাঁকে গলাধাক্কাও দিয়ে বেরও করে দেয়।এসব শুনে স্যার উপেন্দ্রনাথের চোখে জল ওদিকে আলামোহনও স্যার উপেন্দ্রনাথের হাতে মেশিন তুলে দিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।


পরাধীন ভারতবর্ষের বাঙালি বিজ্ঞান সাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় আলামোহন সম্পর্কে বলেছেন : “আমার বিশ্বাস আমার দেশবাসীগণ আলামোহন দাশের নাম শুনিয়াছেন। শুধু তাঁহার অসাধারণ কার্য্যকুশলতা দেখিবার সুযোগ পান নাই। যে লোকটি প্রথম জীবনে ৭-৮ বৎসর কলিকাতার রাস্তায় রাস্তায় খৈ-মুড়ি বিক্রয় করিয়া কর্মজীবন শুরু করিয়াছিল সেই আলামোহন ও এই আলামোহন দাশ যে একই লোক এ-কথা চোখে দেখিলেও বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না। কয়েকটি মাত্র অক্লান্ত কর্মী সহযোগীর সহিত দিবারাত্র পরিশ্রম করিয়া আলামোহন দাশ যে সব বিরাট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিয়াছেন তাহা দেখিয়া মনে হয় আমি এক স্বপ্নরাজ্যে আসিয়াছি। আলামোহন দাশের জুটমিল ও তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখিয়াছি। এগুলি শুধু কারখানা নহে, মরণোন্মুখ বাঙালীর তীর্থক্ষেত্র।”

সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।

ধ্রুবতারাদের খোঁজে ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত 


#alamohandas 

#industrialists 

#Howrah

#Dasnagar 


পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, হাসিকান্না হীরাপান্না চণ্ডী লাহিড়ী ও আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন


(Collected)

বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। ---

 🎋বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। --- 🔖 Ledum Palustre 30 🌹 প্রধান লক্ষণ: ▪ গেঁটে বাতের ব্যথা, যা নিচ থে...