এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

একটি প্রেমের শিক্ষামূলক গল্প ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 ''অহনা আপু, আমার ভাইয়ার সাথে ১৫ দিন ভালোবাসার অভিনয় করবেন?'


'এই কি বলো এসব?'


'প্লিজ আপু মানা করেন না।'


'মাথা কি গেছে তোমার?'


মেয়েটা আমার হাত দুটো ধরে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো, 


'প্লিজ আপু, আপনি আমার কথায় রাজী হয়ে যান।'


আমি হাত ঝাড়া মেরে রাগত্ব স্বরে বললাম,

'তুমি তো বোন নামে কলঙ্ক। কেউ ভাইয়ের সাথে অভিনয় করার জন্য এভাবে কাউকে ফোর্স করে তোমাকে না দেখলে জানতামই না।'


মেয়েটা বিষাদের হাসি হাসলো। চোখ নামিয়ে নিচুস্বরে উত্তর দিলো,


'ভাইকে কয়েকটা দিন ভালো রাখতে যদি এতোটা নিচে নামতে হয় যে লোক ধিক্কার জানাবে। তাহলে আমি তাতেও রাজী।'


চকিতে তাকালাম মেয়েটার দিকে। চোখ বেয়ে তার নোনাজল গড়াচ্ছে। মনে হলো, এখানে ভিন্ন কোন কাহিনি আছে। ওকে বললাম,


'চলো সামনের পার্কটায় বসে তোমার কথা শুনি। কেন তুমি এমন আজব আবদার করলে আমার কাছে।'


মেয়েটা চোখ মুছে আমার সাথে হাঁটতে লাগলো। পার্কের ভোতরে গিয়ে একটা উঁচু সিমেন্টের টিলায় আমরা দুজন বসলাম। স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলাম,


'এবার বলো, তোমার ভাইয়ের সাথে অভিনয় করতে কেন বলছো?'


মেয়েটা করুন চোখে তাকিয়ে বলতে আরম্ভ করলো,

'আমার নাম সেতু। আমার ভাইয়ার নাম হাসান।আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। বাবা মারা গেছে বহু আগে। ভাইয়া আমাদের পরিবারের সব কিছু দেখাশোনা করে। আমাদের দুই বোনের যাবতীয় খরচ, মায়ের ঔষধপাতি সবদিকে সমান নজর তার। আমাদের পড়াশোনা করাতে গিয়ে ভাইয়া নিজে পড়াশোনা করতে পারেনি৷ এসএসসি পাস করার পর স্থানীয় এক বেকারি দোকানে কাজ নেয়। ধীরে ধীরে পুঁজি জমিয়ে একটা ছোট বেকারি দিয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে ভাইয়া জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। ভাইয়া নিজের ব্যাপারে অনেক উদাসীন। রোগটাকে সে একদম হেলা করেছে। যার দরুন তা গাঢ়িয়ে গেছে। পাশের গ্রামের কবিরাজের চিকিৎসা করেছে। কিন্তু ফলাফল ভালো নয়। ভাইয়া আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু ভাইয়াকে কিছুতেই শহরের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজী করাতে পারিনি। কিছু বললে বলতো, এমনি ভালো হয়ে যাবো। ডাক্তারের কাছে গেলে কত খরচ হবে। এতো টাকা পাবো কোথায়? অবস্থা যখন অনেক খারাপ তখন আমরা জোর করে ভাইয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম।'


সেতু এতটুকু বলে কান্নায় ভেঙে পরলো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 


'তারপর ডাক্তার কি বললো?'


'ডাক্তার বললো আপনারা অনেক দেরী করে ফেলছেন। জন্ডিসকে অবহেলা করে ভাইয়া ঠিক করেনি।লিভারের ভেতরের দিকে পচন ধরে গেছে।অবস্থা অনেক খারাপ। তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তার হাতে সময় আছে ধরেন ১৬-১৭ দিন। আমরা কিছু করতে পারবো না। তাকে বাসায় নিয়ে যান। এই কথা শোনার পর আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরছে আপু। কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। তবুও ভাইয়ার সামনে হাসিমুখে থাকতে হচ্ছে।'


'সবই বুঝলাম কিন্তু আমাকে অভিনয় করতে কেন বলছো?'


'আপনাকে অনেক আগের থেকে আমার ভাইয়া ভালোবাসে। কিন্তু বলেনি। আপনার পরিবার কখনও আমাদের মতো পরিবারে আপনাকে বিয়ে দিবে না তাই। কিন্তু এই শেষ মুহুর্তে ভাইয়ার মুখে হাসি ফুটাতে আমার আপনার কাছে আসতেই হলো। আমার ভাইটা অন্ততপক্ষে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগে একটু খুশি নিয়ে যাক।'


'কিন্তু এটা তো তাকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।'


'তাকে ভালো রাখার জন্য আপাতত আর কোন অপশন নেই আমার। প্লিজ অহনা আপু। আপনি রাজী হয়ে যান।'


মেয়েটার জোরজবরদস্তি আর করুন চেহারা দেখে আমি মানা করলাম না। ওকে বলে দিলাম আগামীকাল ওর ভাইকে যেনো বলে আমাকে প্রপোজ করতে। খুশিমনে সেতু আমায় জড়িয়ে ধরে প্রস্থান করলো। 


পরেরদিন যথারীতি ওর ভাইয়ের সাথে সেতু হাজির। আমি পার্কের ভেতরের দিকে ছিলাম। হাসান আমায় দেখে উসখুস করছে। আমি হাসিমুখে সামনে এগিয়ে এসে বললাম,


'কি মিস্টার শুনলাম আমায় নাকি ভালোবাসেন?'


সে মাথা নিচু করে ফেললো। বোকার মতো মাথার পেছনটা চুলকে লাজুক হাসি দিলো। সেতু হাসানকে দিয়ে আমাকে প্রপোজ করালো। আমি পূর্বের কথার ন্যায় তার তা এক্সেপ্ট করলাম। মনে মনে আল্লাহর কাছে তোওবা কাটলাম। কাউকে কিছু দিন ভালো রাখার জন্য এভাবে অভিনয় করতে হবে কখনও ভাবিনি।


এরপর প্রতিদিন আমার ও হাসানের দেখা হতো।আমরা পার্কে বসে কখনো একসাথে বাদাম চিবুতাম।কখনো বা নদীর পাড়ে বসে গল্প জমাতাম। ছেলেটা ভীষণ সহজ সরল। চুপচাপ, ঠান্ডা স্বভাবের। চেহারা মা শা আল্লাহ! রোগা শরীরে মলিন হাসি সবসময় লেগে থাকতো। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম কথা জানে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে দিয়ে দেখা গেলো সে অনেক ফাজিল। কথা বলার অঙ্গিভঙ্গি দিয়ে প্রচুর হাসাতে পারে। এর সাথে থাকলে সময় ঘোড়ার দৌড়ের গতিতে পেরিয়ে যায়। মন ভালো করার ম্যাজিকাল পাওয়ার আছে হাসানের কাছে। সপ্তাহ ঘুরতেই তাকে আমার ভালো লেগে গেলো। একদিন বিকেলে তার সাথে নদীর পাড় ঘেঁষে হাঁটছি। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস কন্ঠে বললো,


'অহনা, যদি কখনো তোমায় ছেড়ে চলে যাই তুমি কি আমায় মিস করবে?'


আমি চমকে উঠলাম। কোনভাবে হাসানকে জেনে গেলো ও যে বেশি দিন বাঁচবে না? আমি নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,


'কি ধরনের কথা এটা?'


হাসান ম্লান হেসে বললো, 

'আমি জানি আমার কপালে এতো সুখ সইবে না।'


আমি কিছু বলার আগে সে কথা ঘুরিয়ে ফেললো।আমি শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুখন। জীবনটা দু পাতার মতো। এক পাতা পড়ে বুঝতে বুঝতে আরেক পাতা শেষ হয়ে যায়। তবে বইয়ের পাতা তো ফের পড়া যায়। কিন্তু জীবনের পাতা! আর পড়ার সুযোগ নেই। 


পরেরদিন সেতু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আত্মহারা। আমি কারণ জিজ্ঞেস করতে সে বললো,


'ভাইয়াকে আজকাল অনেক খুশি দেখায়। যা তোমার কারণে সম্ভব হয়েছে। ধন্যবাদ অহনাপু!'


সময়ের কাটা বোধহয় খুব দ্রুত চলে গেলো। হাসানের সাথে অভিনয় করতে করতে কখন যে সত্যি সত্যি পছন্দ করে ফেলেছি নিজেই জানি না। দুই সপ্তাহ পরের ঘটনা। ১৪ দিনের মাথায় হাসানকে কল করে মোবাইল বন্ধ পেলাম। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। সময় তো ঘনিয়ে এসেছে। কোন খারাপ সংবাদ নয় তো। সেতুর নাম্বারে কল করে ব্যস্ত পাচ্ছি। আমার হাত-পা কাপছে। হাসানের মোবাইল কখনও বন্ধ পাইনি। গতকাল রাতে বললো শরীরটা বেশি ভালো লাগছে না। মনটা আমার কু ডাকছে। অস্থিরতায় আমার সারা শরীর ঘেমে দরদর করে ঘাম পরছে। প্রায় বিশ মিনিট পর সেতুর কল। আমি রিসিভ করে দ্রুত জিজ্ঞেস করলাম, 


'সেতু, হাসান কোথায়? ওর মোবাইল বন্ধ। ও ঠিক আছে তো?কথা বলছো না কেন?'


সেতুর চাপা স্বরের কান্না শুনে আমার হৃৎপিণ্ড অনরবত লাফাতে আরম্ভ করেছে। কিছু সময় সেতুর কান্নায় হেঁচকি উঠে গেছে। আমি রিতীমত বিরক্ত। হাসানের কোন খবর দিচ্ছে না কেন? সেতু নিজেকে একটু সামলে বললো,


'তোমার ঋণ কিভাবে শোধ করবো জানি না আপু। তুমি আমাদের অনেক বড় উপকার করছো।'


আমি অস্থির গলায় বললাম,

'এসব কথা রাখো। আগে বলো হাসান কেমন আছে?'


'অনেক ভালো আছে আপু। ঐ যে,উঠানের খাটটায় শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।'


'মানে?'


'আমার ভাইয়া আর নেই গো আপু। ফজরের পর সে না ফেরার দেশে চলে গেছে।'


সমাপ্ত


দু_পাতার_জীবন

ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন। কিন্তু বকা দিয়েন না☹️।

কোন মন্তব্য নেই:

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...