এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আজব প্রানি ফেইসবুক থেকে নেওয়া

-মিসেস স্নেহা আপনাকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় ফাঁসি দেওয়া হবে।আপনার কি কোন শেষ ইচ্ছে আছে?"

কথাটি পুলিশ অফিসার আসিফ সাহেব শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে বলেন।আমি মুচকি হেসে কিছুক্ষণ তার পাণে চেয়ে বললাম - " অফিসার সাহেব আমার শেষ দুইটা ইচ্ছে আছে।পুরন করবেন?"


অফিসার সাহেব আমার মুচকি হাসির বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-" মানুষের দেখি হাজারো ইচ্ছে থাকে। আপনার দেখি দুটো।না-কি দুটো বলে আবার অনেকগুলো পরবর্তীতে বলবেন?"


আমি উচ্চস্বরে হেসে বলি-"অফিসার সাহেব আমি খুনি হতে পারি মিথ্যাবাদী নই।কিংবা কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করি না।"


অফিসার সাহেব দুই হাত বুকের মাঝে গুটিয়ে বলেন-"বাহ্!আজকাল দেখি খুনিও ডিজিটাল হয়ে গেছে।ওকে! আপনি যখন বলেছেন দুটো ইচ্ছের কথা আমি না হয় শেষ আপনার ইচ্ছেটা পুরন করবো।"


কথাটুকু শেষ করে তিনি চলে যান।মাথার উপরে থাকা হলুদ বাতিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জীবনের কিছু হিসাব মেলাচ্ছি।কোথায় ছিলাম আমি, আজ কোথায় আছি?ভাগ্য কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় বলা বড় দ্বায়।কারো মনে কি প্রশ্ন জাগে না, আমি কেন আজ খুনি?কিভাবে খুনি হলাম?এ সমাজে আমি শুধু একা খুনি নই,আমার আড়ালেও রয়েছে হাজারো খুনি।কেউ আসে পুলিশের প্রকাশে তো কেউ রয়ে যায় পুলিশের আড়ালে।এ খুনি হওয়ার পিছনে যে রয়েছে এক বিশাল অতীত কেউ কি তা দেখেছে?উহু!আমরা যে বাঙ্গালী।হায় বাঙালি তুমি বড়ই মহান,সত্য না খুঁজে খোঁজ সত্যকে বানানো মিথ্যার পাহাড়। 


পরদিন দুপুর ৪টা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টিভির লাইভে আমার কথায় আমাকে আনা হয়।আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।অথচ আমার মাঝে নেই কোন ভাবান্তর।এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে আমাকে যে বলতে হবে আমার না বলা কিছু কথা।জানাতে যে হবে কেউ নিজের ইচ্ছে খুনি হয় না।তাকে বাধ্য করা হয় খুনি হতে।সারা দেশের জনগণ খুব আগ্রহ নিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছে।পৃথিবীর এই প্রথম কোন ফাঁসির আসামি মনে হয় তাদের মতে নিজের ইচ্ছে পুরন করতে টিভিতে লাইভে আসছে।কি অদ্ভুত নিয়ম। ও আপনাদের তো বলা হয়নি।আমার দুটো ইচ্ছে সম্পর্কে।এক. আমার ইচ্ছে ছিলো আমার মতো মানুষেরা কিভাবে খুনি হয় সে সম্পর্কে পৃথিবীকে জানানো।দুই. আমার বাবাকে পাশে বসিয়ে নিজের নিকৃষ্ট অতীতের গল্প শোনানো।হ্যাঁ?!অফিসার সাহেব আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।


একজন উপস্থাপক এসে আমার ও আমার বাবার সাথে কৌশল বিনিময় করে আমাকে প্রশ্ন করেন -" আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এই প্রথম কোন খুনি লাইভে এসে পৃথিবীকে তার খুন সম্পর্কে জানাবে।আমার লাইফে অনেক নারী খুনির কথাই শোনেছি।কিন্তু আপনার মতো কারো কথা শোনা হয় নি।তাও আবার কি-না সাইলেন্ট কিলার। আপনি সত্যি এক সাহসী নারী।"


আমি মুচকি হেসে বলি- "তাহলে আজ শোনে নি এক ভীতু নারী থেকে সাহসী নারী হওয়ার গল্প।শোনে নিন সাহসী থেকে খুনি হওয়ার অন্য আরও একটি সত্য।"


তিনি আমার কথার বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-"তাহলে আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারি কি বলেন?"


মুচকি হেসে আমি মাথা নেড়ে "হ্যা" বুঝাই।


ক্যামেরা অন করা হয়।চারপাশের লাইট ক্যামেরা আমার দিকে ফোকাস করা হয়।জনগণ আমার কথা শোনার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন টিভির সামনে।আমি শান্ত ভাবে বলা শুরু করি-


"আমি মিসেস স্নেহা রহমান।সচারাচর সবাই আমাকে একজন খুনি হিসেবেই চিনেন।কেউ তো আবার অবাকও হচ্ছেন আমি একজন মেয়ে হয়ে কিভাবে সাইলেন্ট কিলার হলাম?এটা আপনাদের কাছে যেমন অবাক হওয়ার তেমনই আমার কাছে অবাক হওয়ার মতোই ছিলো।কিন্তু এখন আমি স্বাভাবিক।হ্যাঁ! একদম স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারি আমি সেই মেয়ে যে একজন সাইলেন্ট কিলার।কয়েকশত খুন আমি নিজ হাতেই করেছি।কেন করেছি আজ সে গল্প আপনাদের সাথে করার জন্যই এই লাইভে আসা।আপনারা সবাই জানেন আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।এখন আমার ভয় পাওয়ার কথা।সরকারের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে ফাঁসি না দেওয়ার আকুতি জানানো। কিন্তু আমি সে সব করবো না।আমিও চাই আমার ফাঁসি হউক।অন্তত এই নিকৃষ্ট সমাজ থেকে তো বেঁচে যাবো।চাইলে আমি আত্মহত্যা করতে পারতাম।করিনি কেন জানেন?আত্মহত্যা পাপ বলে।যার জন্য আমার কাজ শেষ করে আমি প্রশাসনের কাছে নিজের আত্মসমর্পণ করি।"


দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"এবার আসি আসল কথায়।আমি খুবই সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলাম।বাবা দিন মজুরের কাজ করতেন।মা গৃহিণী ছিলেন।আমরা তিন বোন দুই ভাই ছিলাম।টানা পোড়ার সংসার ছিলো আমাদের।ভাই বোনদের মাঝে আমি ছিলাম চার নাম্বার।বড় দুই বোনকে বাবা কোন রকম বিয়ে দেন।এক ভাইকে চট্রগ্রাম কাজের জন্য পাঠান।বাকী ছিলাম আমি আমার ছোট ভাই।হঠাৎ একদিন আমার বাবা-মা,ভাই বাসায় ছিলেন না।বাবা কাজে বের হয়ে যান।মা পাশের কোন এক চাচির কাছে যান।ছোট ভাই স্কুলে ছিলো।বাসায় আমি একা ছিলাম।সেদিন আমার এক খালাতো ভাই আসে আমাদের বাসায়।আমি সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলাম।কারণ ভাইয়া এসেছে।বড় ভাই বলে কথা।তিনি এসে আমাকে ভালোর কথা জিজ্ঞাসা করে বলেন " মা কোথায়?" আমি হেসে বলি -"ভাইয়া মা পাশের বাসায় গেছেন।আপনি বসেন আমি ডেকে আনি।"হুট করে তিনি আমায় টেনে তার পাশে বসিয়ে বলেন "তোর যেতে হবে না।তুই আমার পাশে বস।"


আমি বোকার মতো ভাইয়ার পাশে বসি।তখন বয়স আমার কতই আর হবে?৯ কিংবা ১০ হবে।আমি হেসে হেসে ভাইয়াকে খালা-খালু,ভাবির কথা জিজ্ঞাসা করি।ভাইয়া হেসে বলেন "আছে সবাই ভালো।" কথার এক পর্যায় ভাইয়া আমার নিষিদ্ধ স্থানে হাত ছুঁয়ে দেন।আমি যখন চেচিয়ে বলি ভাইয়া আপনি কি করেন এগুলো?তিনি আমায় বলেন-"তেমন কিছু না। যা করতেছি করতে দে।আর একটু চুপ থাক।"ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথায় আমি কিছু না বুঝে চিৎকার করতে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি আমার মুখ চেপে ধরেন।"


কয়েক মিনিট চুপ থেকে আমি আবার বলা শুরু করি,


"সেদিন আমি ধর্ষিতা হয়।হ্যাঁ! খালাতো ভাই নামক মানুষটির কাছে আমি খুব বাজে ভাবে ধর্ষিতা হই।তখন তো আর বুঝতাম না ধর্ষিতার মানে কিন্তু এখন তো সেটা বুঝি।মায়ের কাছে অনেক বার কাঁন্না করে বলেছিলাম -" মা ভাইয়া আমাকে খুব বাজে ভাবে ছুঁয়েছে।মা আমায় সেদিন ধমক দিয়ে বলেন আমি মিথ্যা বলি।ভাইয়া এসব করতে পারেন না।এভাবেই চলছিলো আমার জীবন।যখনই তিনি আসতেন আমার সাথে কিছু না কিছু করতে চেষ্টা করতেন।আমি তখন এতটুকুই বুঝতাম তিনি খারাপ। খুব বাজে লোক।ভয়ে সেদিনের পর আর যাওয়া হয়নি ওনার কাছে।একদিন ভাইয়াদের বাড়িতে দাওয়াত পড়ে।আমি না করলেও মা আমায় জোর করে নিয়ে যান।সেদিনও ছিলো আমার জীবনের আরও ভয়ংকর রাত।মানুষ বেশি হওয়ায় ভাইয়ার মেয়ে আর আমাকে দেওয়া হয় ভাইয়ার সাথে ঘুমানোর জন্য।আমি যাবো না বলায় মা আমাকে খুব করে বকা দেন।শেষ আমাকে মেরে ভাইয়ার রুমে পাঠান।ভয়ে ভয়ে আমি ভাইয়ার মেয়েকে ওনার পাশে রেখে খাটের এক কোণে শুয়ে পড়ি।সেদিনও এই নরপিশাচ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে ছাড় দেয়নি।তারপর দিন যখন বাসায় আসি সে থেকে ওনার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।একা কখন ওনার সামনে যেতাম না।আস্তে আস্তে বড় হয়।ভালো-মন্দ বুঝতে শিখি।তখন বুঝতে পারি ঐ লোকটি ঘরে বউ সন্তান রেখেও অন্যান্য মেয়েদের সাথে খারাপ কাজ করে।এমন কি এক মেয়ে তার সন্তানের মা হতে চলেছে শোনেও লোকটি অস্বীকার করে।এক সময় মেয়েটি আত্মহত্যা করে।"


বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা একপলকে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার পাণে।আমি মিষ্টি এক হাসি দিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তখন বাবা তার পছন্দ করা ছেলের কাছে আমায় জোর করে বিয়ে দেন।বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি তার পরকীয়া চলছে নিজ বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে।তখন নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা শুরু হয়।একদিন সকালে ভাবির মেয়ে তানহা এসে আমায় ভয়ে ভয়ে বলে-" কাকীমনি কাকা আমায় বাজে ভাবে ছুঁয়েছে আজ।" ছোট বাচ্চার কথাটি শোনে আমার পুরনো অতীত মনে পড়ে যায়।সেদিন চিন্তা করেছে যে দেশে ধর্ষকের বিচার হয়না সে দেশ থেকে তাদেরকে আমিই দূর করবো।একজন সাধারণ মেয়ে থেকে আমাকে সাহসী হতে হবে হাজারো স্নেহা,হাজারো তানহার মতো মেয়েদের জন্য।আমি চুপ করে থাকলে দেশ চুপ করে থাকবে।আমি রুখে দাঁড়ালেই তবে দেশ রুখে দাঁড়াবে।সে শপথ নিয়ে সর্বপ্রথম আমি আমার স্বামীকে খুন করি।খুন করে নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য ছোট একটা মিথ্যা নাটক সাজাই।বাস আমার নাটকই আমার জন্য সেদিন যথেষ্ট ছিলো।রোড এক্সিডেন বলেই খুনটা ধামাচাপা পড়ে যায়।তারপর শুরু হয় ধর্ষকদের খুঁজে খুন করার প্ল্যান।খালাতো ভাই নামক নরপিশাচ কে মারার অনেক সুযোগ খুঁজেছি।কিন্তু সে আর হয়ে উঠেনি।একদিন সে আমার জালে পা রাখে।সেদিন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে খুন করে দেই।অত:পর প্রশাসনের কাছে আমি আত্মসমর্পণ করি।


আজ আমি মেয়েদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, তোমরা কখনো কোন পুরুষকে সুযোগ দিবেনা।না কখনো নিজের সন্তানের কথা মিথ্যা বলে চালিয়ে দিবে।ছোট বাচ্চারা কখনো মিথ্যা বলে না।তারা নিষ্পাপ হয়।কখনো নিজের সিন্তানকে পরপুরুষের কাছে একা যেতে দিবে না।নিজের সম্মান নিজেকে রক্ষা করার জন্য যদি নিজেকে শেষ করতে হয় তবে তাই করো।প্রয়োজনে ধর্ষকদের খুন করো।তবুও তাদের হাতের পুতুল হবে না।এই দেশে ধর্ষকদের কেউ দোষ দেয় না দেয় ধর্ষিতাদের।"


আমার কথা শেষ করে যখন চারপাশে তাকাই দেখি সবার চোখে পানি।যে অফিসার সাহেব গতকাল আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে আজ সে মাথা নিচু করে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছেন।হা!হা!কি অদ্ভুত নিয়ম।উপস্থাপক আমায় কিছু বলতে যাবেন তার আগে আমি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অফিসারকে বলি -"আমার ফাঁসির সময় হয়ে গেছে এবার চলুন।আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।"


বাবার দিকে তাকিয়েই "ভালো থাকবেন বাবা" কথাটুকু বলে বের হয়ে চলে আসি।পিছনে ফিরিয়ে মায়া বাড়াতে চাইনা।আমার জন্য মায়া মানায় না।না মানায় আমায় নিয়ে কেউ আফসোস করা।আমার জীবনের নেই কোন গতি।থেমে গেছে জীবনের ঘটী।নাম না জানা এক পথে পাড়ি জমিয়েছি।কোথায় থেকে শুরু আর কোথায় তার হবে শেষ সে নিয়ে নাই কোন আক্ষেপ।শুধু ধর্ষিতা নারীর প্রতি রয়ে গেলো এই সাইলেন্ট কিলারের দুটো লাইন-


"হে!ধর্ষিতা নারী তুমি ফিরে তাকাও,রুখে দাঁড়াও হায়নাদের দমন করতে,

তবেই হবে তুমি শ্রেষ্ঠ নারী,হবে তুমি ধর্ষিতাহীন।"


_____সমাপ্ত______

ছোট গল্প ঃঃসাইলেন্ট কিলার। 


ভুল_ত্রুটি_ক্ষমার_দৃষ্টিতে_দেখবেন_ 

কোন মন্তব্য নেই:

জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************

 ★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...