ভারতবর্ষের জমিনে বিখ্যাত একজন আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন হযরত কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রহমাতুল্লাহ আলাইহি)
তিনি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহিমাহুল্লাহর শিষ্য এবং খলিফা ছিলেন। তার নামেই দিল্লীর বিখ্যাত কুতুব মিনার উৎসর্গ করা হয়।
উনার জন্ম-১১৭৩ সালে আউশ নামক জায়গায় , বর্তমানে কিরিগিজিস্তান।
উনি প্রিয় নবীজি মুহাম্মাদ (ﷺ) এর বংশধর ছিলেন।
মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে খাদেম কে ডেকে বলেন,
'আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাঁচবো না, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে চলে যাবো কিন্তুু যাওয়ার পূর্বে আমার দুইটা ওছিয়ত সম্পূর্ণরূপে পালন করার চেষ্টা করবা'
প্রথম ওছিয়ত- “মৃত্যুর পর আমার জানাযা খুব দ্রুত সম্পন্ন করা। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন 'মাইয়াতকে যত দেরি করে জানাজা দেওয়া হয় মাইয়াত তত কষ্ট পায়। তাই আমার জানাযা দ্রুত শেষ করা।”
দ্বিতীয় ওছিয়ত- “আমার জানাযা যে পরাবে অন্তত তার চারটি গুন থাকতে হবে।যদি কারও এই চারটা বৈশিষ্ট্য না থাকে তাহলে আমার লাশ কে মাঠের মধ্যেই রেখে যাওয়া এবং জানাযা না পরানো।”অবশ্য তিনি জানতেন এক জন লোকের মধ্যে এই চারটা বৈশিষ্ট্য অবশ্যই বিদ্যমান থাকবে। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী রহিমাহুল্লাহ আখিরাতের পথে পাড়ি জমালেন।
তার জানাযার দিন,গোটা ভারত বর্ষ থেকে বিখ্যাত বিখ্যাত আলেমগন আসলেন তার জানাযায় শরিক হওয়ার জন্য। সবার মধ্যে এক প্রকারের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হল যে কে তার জানাজা পড়াবে।
কিন্তু তখনই তার খাদেম ফরমান করলেন চারটা বৈশিষ্ট্য গুনের সম্পন্ন হলেই তার জানাযা পরাতে পারবে কেও,তা হলো-
১.যে ব্যক্তি আসরের চার রাকাত ফরজের নামাযের আগের চার রাকাত সুন্নত নামায কখনো ছাড়েনি।
২.যে ব্যক্তি কখনো জবান দিয়ে মিথ্যা কথা বলে নি।
৩.যে ব্যক্তি কখনো বেগানা নারীর দিকে তাকায় নি।
৪.যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত জীবনেও ত্যাগ করেনি।
এই কঠিন চারটি গুণের কথা শুনে পুরো ময়দান স্তব্ধ হয়ে গেল। খাদেম অতঃপর বললেন- হুজুর বলেছেন যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যে এই চারটা গুণের বৈশিষ্ট্য না থাকে তাহলে আমার লাশ এখানেই রেখে যাওয়া এবং জানাজার নামাজ সম্পন্ন না করা।
পুরো নিস্তব্ধ ময়দানে হঠাৎ করে পিছনের কাতার হতে
একজন চাদর পরিহিত লোক আওয়াজ করে বললেন আমাকে একটু জায়গা করে দিতে মাইয়াতের সামনে যাওয়ার। তিনি মাইয়াতের সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন-“একি করলেন আপনি, আমার এই গোপন চারটা গুনের কথা তো আমার স্ত্রীও জানতো না,কিন্তু আপনি সবার সামনে তা ফাঁস করে দিলেন।
আমি ভয় করি; আমার আমলগুলো প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় না জানি আমি ধ্বংস হয়ে যাই।"
উপস্থিত লোকবৃন্দ অধীর আগ্রহে সাথে দেখতে চাইলেন উনি কে! অতঃপর তিনি তার চাদর খুললেন
সবাই দেখে অবাক হয়ে গেলেন যে তিনি দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এবংমামলুক সালতানাতের সুলতান (শামসুদ্দিন আলতামাশ) যাকে আমরা ইলতুতমিশ নামেও চিনি।
একদিকে তিনি ভারতবর্ষ রাজত্ব করতেন অন্যদিকে এই কঠিন চারটা গুণের একটিও তার ছোঁটে নি।
এমনি জীবন হয় আল্লাহ ওয়ালা মুত্তাকী বান্দাদের,
যে সময় যে অবস্থাই হোক না কেন আল্লাহ তায়ালার নির্দিষ্ট হুকুম পালন থেকে তারা কখনোই বিরত থাকেন না।
কপি
পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন