এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২

কাজী নির্জনের ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 মাঝরাতে ছেলেটা আমাকে মেসেজ দিয়ে বললো " ২৫ ডজন চুড়ি, ০৫ টা শাড়ি, ০৫ টা থ্রি পিছ, ০৫ জোড়া জুতা আরো অনেক কিছু অর্ডার করতে চাই। আপনি কি ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারবেন? "


আমি অবাক হয়ে গেলাম। সবেমাত্র কিছুদিন আগে থেকে শুরু করেছি আমার অনলাইনের এই ছোট্ট বিজনেস। কিছু কিছু গ্রুপের মধ্যে টুকটাক পোস্ট করি। কিন্তু এই লোকটা যে পরিমাণ লিস্ট দিয়েছে তাতে কমপক্ষে ত্রিশ হাজার টাকার শপিং হবে। 


আমি বললাম " ভাইয়া সবটাই যোগাড় করে দিতে পারবো, আপনার কবে নাগাদ লাগবে? " 


" আমার হাতে বারো দিন সময় আছে, আপনি সেই বারো দিনের মধ্যে সংগ্রহ করবেন। সবকিছু হিসাব করে দামটা বলেন। আমি আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দেবো। " 


এবার আরেকটু ভাবনা বেড়ে গেল। এতগুলো টাকা তিনি অগ্রিম দিতে চাইছেন। একদিকে যেমন ভাবছি, অন্যদিকে তেমন আনন্দ হচ্ছে। চোখ ভর্তি ঘুম ছিল, সব ঘুম হারিয়ে গেছে। আবার হঠাৎ করে মনে হলো কেউ ফাজলামো করে না তো। এমনও হতে পারে যে সবকিছু বলে তারপর আর নিবে না। 


বললাম " ঠিক আছে ভাইয়া, আমি আপনাকে সম্পুর্ন খরচের লিস্ট দিচ্ছি। " 


" ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করবেন, গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন উপলক্ষে গিফট করবো। " 


আমি সবকিছুর হিসাব করলাম। কিছু কিছুর দাম জানা নেই সেগুলোও জেনে ও আনুমানিক ভাবে হিসাব দিলাম। সবমিলিয়ে মোট তেত্রিশ হাজার সাতশো সত্তুর টাকা হলো। 


লোকটা আমার বিকাশ নাম্বার নিয়ে পঁচিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলেন। তারপর মেসেজ দিয়ে বললেন " বাকিটা আগামীকাল দেবো, আজকে আর পাঠানো যাবে না। আপনি সবগুলো সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করবেন। " 


" ঠিক আছে ভাইয়া, কিন্তু ঠিকানা? "


" ঠিকানা দেবো, আগে সংগ্রহ করেন। তাছাড়া লিস্টে আরো কিছু এড হতে পারে। আপনি সব সংগ্রহ করে আমাকে বলবেন। আর আমি পঁচিশটা চিরকুট দেবো, আপনি সেগুলো আলাদা আলাদা কাগজে লিখবেন। " 


" ঠিক আছে। " 


" আরেকটা কথা, আমার পরিচিত একজনের কাছ থেকে আপনার কথা জেনেছি। তাই আপনার কাছে সব অর্ডার দিলাম। তাছাড়া আমিও খুলনার মানুষ, আপনি আমি একই শহরের মানুষ। " 


" কে সে? " 


" তেমন কেউ না, বাদ দেন। " 


" আচ্ছা। " 


লোকটা শুভরাত্রি বলে অফলাইন হয়ে গেল। আমি আমার আইডি দিয়ে তার আইডির ভিতর গেলাম। অনেকটা কৌতূহল নিয়েই গেলাম। যিনি তার প্রিয়জনের জন্মদিনে এতকিছু দিচ্ছেন তার প্রতি কৌতূহল হতেই পারে। 


অনেক পোস্ট আর পিকচার আপলোড দেখলাম। একটা মেয়ের হাতে হাত রেখে, পিছন থেকে ও মেয়েটা হিজাব পরিধান করা অবস্থায় কিছু ছবি আছে। বুঝতে পারলাম এটাই সেই মেয়ে। সম্ভব বারো দিন পরে তার তার পঁচিশতম জন্মদিন। 

এদিকে আমি তেইশ বছরের হয়েও আজ পর্যন্ত কোনো মনের মতো কাউকে পেলাম না। অনেক ছেলে প্রপোজ করেছে কিন্তু তাদের কারো প্রতি নিজের দিক থেকে অনুভূতি আসেনি। 


পরদিন সকালে দুটো বান্ধবীকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম। প্রায় চার ঘন্টা ঘোরাঘুরি করে ৮০℅ কেনাকাটা হয়ে গেল। কিছু কসমেটিকস বাকি আছে সেগুলো বসুন্ধরা অথবা যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে নিতে হবে। 


সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আরো দশ হাজার টাকা বিকাশে এলো৷ ১২৩০ টাকা বেশি এসেছে। একটু পরে সেই লোকটা মেসেজ দিয়ে বললো, 


" আপনি সবকিছু কিনে ফেলুন। পরশু আমার অফিস বন্ধ, সেদিন আমি চিরকুট লিখে দেবো। আপনি এরমধ্যে কিনে নিয়ে সবকিছু আলাদা আলাদা প্যাকেট করবেন। " 


" ভাইয়া, যেগুলো প্রিন্ট ডিজাইন করার জন্য দিয়েছেন সেগুলো তিনদিন পরে পাবো! " 


" সমস্যা নেই হাতে তো সময় আছে। " 


" আপনি কিছু টাকা বেশি দিয়েছেন। " 


" ওটা আপনার আলাদা প্যাকেট করার জন্য। " 


" ওকে, তাহলে আপনি দ্রুত চিরকুটের জন্য লেখা পাঠিয়ে দেন। আমি আজকে রঙিন কাগজ নিয়ে এসেছি। " 


" খুব ভালো, খুব ভালো। " 


ছেলেটা অতিরিক্ত কোনো কথা বলে নাই। আমার নামটাও জিজ্ঞেস করেনি। অবশ্য সে নাকি আমার পরিচিত কাউকে চিনে, তাই হয়তো নাম জানে। আমি সবকিছু সামনে নিয়ে আমার কতো টাকা লাভ হবে সেই হিসাব করতে লাগলাম। 


শুক্রবার রাতে তিনি পঁচিশটা চিরকুটে লেখার জন্য আলাদা আলাদা বাক্য লিখে দিলেন। আমি সবগুলো পড়ার পরে মুগ্ধ হয়ে রইলাম। মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে সেটা আবারও চোখের সামনে জীবন্ত মনে হলো। 


রাত দুইটা পর্যন্ত বসে বসে সবগুলো চিরকুট লেখা শেষ করলাম। মাঝে মাঝে পাতা ছিঁড়তে হয়েছে। কাটাকাটি হয়েছে, বা দু একটা লাইন বাঁকা হয়ে গেছে এরকম কিছু দেইনি। এতো সুন্দর মানের লেখার মধ্যে কাটাকুটি আর বাঁকা লাইন মানায় না। 


তিনদিনের মধ্যে তার সবকিছু আমি সংগ্রহ করে ফেললাম। প্যাকিং কমপ্লিট করে তাকে মেসেজ দিয়ে কনফার্ম জানিয়ে দিলাম। কিন্তু লোকটা অনলাইনে ছিল না। 

পরদিন সারাদিন পেরিয়ে গেল তবুও তাকে অনলাইনে দেখতে পেলাম না। ভাবলাম হয়তো কাজের চাপে ব্যস্ত আছে। আমি সবকিছু রেডি করে রাখলাম যেন সে ঠিকানা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে পারি। 


আমরা চার বান্ধবী মিলে একসঙ্গে থাকতাম। তিনজন একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি আর বাকি আরেকজন অন্য ডিপার্টমেন্টে কিন্তু একই কলেজে। পরদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় আমার রুমমেট ইরা বললো 


" কিরে নওশিন, তোর সেই কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ডের কোনো খোঁজ পেলি? মেসেজ করেনি আর? " 


" নাহ করেনি, গতকাল থেকে তার কোনো পাত্তা নেই। কি হয়েছে কে জানে? যে নাম্বার দিয়ে টাকা পাঠিয়েছে সেই নাম্বারে আজকে কল দেবো ভাবছি। " 


" বিকাশ নাম্বার? " 


" হ্যাঁ। " 


" কিন্তু সেটা যদি কোনো দোকানের নাম্বার হয়? " 


" মনে হয় তার পারসোনাল নাম্বার, কারণ প্রথম রাতে সে প্রায় রাত দুইটার দিকে টাকা পাঠিয়েছে। তখন তো শহরের মধ্যে দোকান খোলা থাকার কথা নয়! "


" হতেও তো পারে তাই না? "


" তবুও চেষ্টা তো করবো যোগাযোগ করার। সম্ভবত সাতদিন পরে তার গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন। প্রথম রাতে বারো দিন বলেছিল, অলরেডি পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। " 


বাসায় ফিরে ওই নাম্বারে কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। এরপর থেকে যখনই মোবাইল হাতে নিতাম কিংবা তার কথা মনে পড়তো তখনই কল দিতাম। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলাম না। অনলাইনেও আর পেলাম না কয়েকদিন। 


আরো চারদিন পরে রাতে তার আইডির পাশে সবুজ বাতি দেখতে পেলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেসেজ দিলাম কিন্তু সিন করলো না। তারপর কিছু না ভেবেই মেসেঞ্জারে কল দিলাম, এবং রিসিভ করলো। 


আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বললাম, 


" আপনি কেমন আছেন? এতদিন কোথায় ছিলেন? " 


লোকটার কণ্ঠ শুনে আমি অবাক হলাম। খুব সান্ত কণ্ঠে তিনি বললেন, 


" আমি ভালো আছি, আপনি? "


" আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনার কোনো খোঁজ নেই। আমি সবকিছু রেডি করে বসে আছি। "


" আপনার জন্মদিন কবে? " 


" আরো প্রায় দু’মাস পরে, কেন? "


" সবগুলো জিনিস আপনি রেখে দিন। আসলে আমি যার জন্য অর্ডার করেছিলাম সে মা!রা গেছে। সেদিন আপনার সঙ্গে শেষ যেদিন কথা হয়েছে তার পরদিন সকালে ওর এক্সিডেন্ট হয়। তিনদিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে তারপর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। "


তিনি কলটা কেটে দিলেন, আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। শুধু চোখের সামনে আবছায়া হয়ে ভেসে আসে একটা প্রতিচ্ছবি। জীবন ও মরনের মাঝখানে যার বসবাস। 


সমাপ্ত।।। 

Copy
Pest

কোন মন্তব্য নেই:

এই ২০ টি এক্সেল ফর্মুলা সবার আগে শেখা উচিত।

 এক্সেলে নতুন হলে চাকরি, অফিস কিংবা ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে এই ২০ টি এক্সেল ফর্মুলা সবার আগে শেখা উচিত। এই ফর্মুলাগুলো জানলে এক্সেল...