মুক্তির তিন পথ
সূরা হুদে বেশ কজন নবীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবীগণকে চূড়ান্ত বিজয় ও জালিমদের কবল থেকে মুক্তি দান করেছেন। পুরো সূরা জুড়ে নবীগণের সংগ্রাম ও বিজয়গাঁথা বলার পর শেষে এসে আল্লাহ তাআলা পরপর বলেছেন,
প্রথম আয়াতঃ
وَلَا تَرۡكَنُوۤا۟ إِلَى ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟
এবং (হে মুসলিমগণ)! তোমর ওই জালেমদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না (১১৩)।
দ্বিতীয় আয়াতঃ
وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَیِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفࣰا مِّنَ ٱلَّیۡلِۚ
এবং (হে নবী!) দিনের উভয় প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে নামাজ কায়েম করুন (১১৪)।
তৃতীয় আয়াতঃ
وَٱصۡبِرۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا یُضِیعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِینَ
এবং সবর অবলম্বন করুন। কেননা আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না (১১৫)।
চতূর্থ আয়াতঃ
তারপর বলা হয়েছে,
فَلَوۡلَا كَانَ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مِن قَبۡلِكُمۡ أُو۟لُوا۟ بَقِیَّةࣲ یَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡفَسَادِ فِی ٱلۡأَرۡضِ
তোমাদের আগে যেসব উম্মত গত হয়েছে, তাদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধির অবশেষ আছে এমন কিছু লোক কেন হল না, যারা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করত? (১১৬)।
তারপর সিদ্ধান্তমুলকভাবে বলা হয়েছে,
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِیُهۡلِكَ ٱلۡقُرَىٰ بِظُلۡمࣲ وَأَهۡلُهَا مُصۡلِحُونَ
তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি জনপদসমূহ অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, অথচ তার বাসিন্দাগণ সঠিক পথে চলছে (১১৭)।
এই আয়াতে আগের আয়াতগুলোর নতিজা বা ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন, নেককারদের মুক্তি তিনটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত।
ক. জালেমদের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা থাকা। দূরে সরে থাকা। জালেমের সংশ্রব এড়িয়ে চলা। বাহ্যিকভাবে তো বটেই, মনে মনেও তাদের প্রতি কোনো রকমের ঝোঁক বা আগ্রহ না রাখা।
খ. ফাসাদ বা বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। জালেমদের সংশ্রব এড়িয়ে চলার মানে, প্রতিরোধ ছেড়ে দেয়া নয়। জালেমদের সংখ্যা সর্বকালেই মাজলুমের তুলনায় নিতান্তই কম। জালেম সংখ্যায় কম হয়েও যদি জুলুম চালিয়ে যেতে পারে, মাজলুম কেন সংখ্যায় বেশি হয়েও প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে না? মাজলুম একজোট হয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আয়াতে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গ. জালিমের সংশ্রবত্যাগ ও ফাসাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য শক্তি অর্জিত হবে দুটি ইবাদতের মাধ্যমে
ক. সলাত (১১৪ আয়াত)।
খ. সবর (১১৫)।
১ঃ সলাতের কথা বলা হয়েছে। কারণ সলাতের মাধ্যমে কলবে আল্লাহর বড়ত্বের আকীদা পোক্ত হয়। ফলে সাময়িক ব্যর্থতায় নৈরাশ্য আসে না। আস্থা ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে না। জালেম ও তার সহযোগির দবদবা-রমরমা দেখেও বুক কাঁপে না। অকুতোভয়ে জালিমশাহির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সলাতের মাধ্যমে সংগ্রামকারীর মানসিক অবসাদ কেটে যায়। কর্মক্লান্তি দূর হয়ে যায়। কঠিন পরিস্থিতিতে, সঙ্গিন অবস্থায়ও পরাজয়ের নেতিবাচক চিন্তা সংক্রামিত হতে পারে না। সলাত এসবের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জালিমের পক্ষ থেকে আসা যাবতীয় ক্লেদ, কলুষতাকে ধুয়েমুছে সাফসুতরো করে দেয়। এটাই এই আয়াতে সলাতের প্রসঙ্গ আনার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক।
২ঃ সবরের কথা বলা হয়েছে। কারণ সবরের মাধ্যমেই পাহাড়সম জুলুম, বাধাবিঘ্ন ও দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনঢ় অবিচল থাকার প্রেরণা লাভ হবে। জালিমের সহযোগীদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার হিম্মত লাভ হবে।
কপি
পেস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন