অফিসে বসে মিটিং করছি, ঠিক এমন সময় আমার বউ অনন্যা ফোন দিলো,
ইমরান! তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিক্যালে আসো, তোমার ছেলে আত্মহত্যা করার চেস্টা করেছে!
.
কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি বের হলাম অফিস থেকে, ডাইভার গাড়ি চালাচ্ছে, আমার ছেলের নাম আয়ান! বয়স ২৫ , আইবিএ তে এবার পড়ছে, অনেক ভালো ছাত্র সে! চাকুরি নিয়েও তার কোন টেনশান নাই, তবে কেন সে এমন করলো?
.
তাহলে কি কোন প্রেম ঘটিত ব্যাপার? এমন হলে সে তো জানাতো! সে আমাকে অনেক ভয় পাই তবে তার মা আছে, ছোট বোন আছে, তার ভার্সিটির কয়েক টা ছেলে আমার কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকুরি করে, তাদের কে ফোন করে একটু খোজ নিতে বললাম, বাবা হিসাবে আমার দায়িত্ব আছে !
.
খোজ নিয়ে জানলাম, একটা মেয়েকে প্রস্তাব দিয়েছিলো, সে অপমান করেছে সবার সামনে, গতকাল ভার্সিটির ঘটনা!
মেয়েদের এই জিনিসটা খুব খারাপ লাগে, পছন্দ নাই হতে পারে তাই বলে সবার সামনে অপমান কেন করবে? আমার ছেলেটা তো খারাপ না, আমি তাকে ভালো করে চিনি নিজের ছায়ার মত করে বড় করেছি!
.
হাসপাতালে যাওয়া মাত্রই আমাকে দেখে অনন্যা কাঁদতে শুরু করলো, ডাক্তার সাহেব বলল, তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বড় কোন ক্ষতি হয় নাই! এই যাত্রায় সে বেঁচে গেছে, কালকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো!
আমি দেখা করতে যাবো ছেলের সাথে এমন সময় অনন্যা হাত ধরে বলল, তুমি প্লিজ এখন ওকে বকো না!
আমি- আরে না! তুমি আমার কড়া শাসন টাই দেখলা, কখনো বাবার ভালোবাসা বুঝো নাই।
.
ঘরে গেলাম, দেখলাম দরজা খোলা মাত্রই উলটো হয়ে শুয়ে গেলো!
ঘরে আমার মেয়ে ছিলো, তাকে বললাম, আইরিন! তুই বাইরে যা, তোর ভাইয়ের সাথে আমার কিছু কথা আছে, ঘরে কেউ যেন না আসে!
.
আয়ান! আমি যখন ভার্সিটিতে পড়তাম! একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়! অনেক সুন্দর ছিলো মেয়েটা! শহরের মেয়ে ছিলো, অনর্গল ইংরেজিতে কথা, ব্যাবহার টাও মুগ্ধ করতো বার বার!
আমি গ্রামের ছেলে ছিলাম! তোদের শহরের ভাষায় যেটা খ্যাত বলিস!
গরীব বাবার ছেলে ছিলাম আমি, খেয়ে না খেয়ে আমি পড়াশুনা করতাম! কিভাবে প্রেম হলো আমি জানি না, কারন আমি চা খেলে সে কফি খায় এমন মেয়ে সে!।
.
ভার্সিটির এমন কোন জায়গা ছিলো না যেখানে আমারা বসি নাই! আমরা এক সাথে কয়েকটা কদম আর কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েছিলাম! যার মধ্যে এখনো ৩ টা গাছ বেঁচে আছে, ওর কদম আর কৃষ্ণচূড়া ফুল খুব পছন্দ ছিলো!
.
এভাবে ৫ টা বছর চলে যায়! তখন আমি মাস্টার্স পরীক্ষা দিবো এমন সময় তার হটাৎ করে বিয়ে হয়ে যায়!
অনার্সের টপ করা ছেলে আমি মাস্টার্সে ফেল করি!
আমিও অনেক বার চেয়েছি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো, চাকু নিয়ে ঘন্টার ঘন্টার বসে থেকেছি, ফাঁসির জন্য বাজার থেকে দড়ি কিনেছি, হোস্টেলের ছাদে বসে থেকেছি, কিন্তু সাহস করতে পারি নাই, সুধু গরীব বাবা-মায়ের মুখের কথা মনে পড়তো! আমার জন্য শেষ সম্বল এক টুকরো জমি সেটাও বাবা বিক্রি করে দিয়েছিলো!
.
তাই আমি আর সাহস করে উঠতে পারি নি রে! সুধু সেই মেয়ের এক বোন বলেছিলো, ভাইয়া তাকে তো জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় নাই, সে তো হাসি মুখেই বিয়ে তে রাজী হয়েছিলো!
বেইমানের জন্য নিজের জীবন কেন দিবো? আর এর বিনিময়ে কি আল্লাহ আমাকে কম দিয়েছে?
.
জানিস আয়ান! সে খুব ভালো রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারতো! আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম!
এই বর্ষার দিন বৃষ্টিতে ভিজে পুরো ক্যাম্পাস হাঁটতাম! সে বলতো আমারা যেখানেই থাকি না কেন? এই বর্ষায় এই কদমের নীচে আমারা আসবো, আমাদের বাচ্চা হলেও আসবো!
.
আমি গত বছর ও গেছিলাম! গত ৩০ বছরেও হয়তো সে আসে নি, আমি গেছি, ঠিক ওই সময় যে সময় সে বলেছিলো.
.
আচ্ছা তোর ভাষায় ভালোবাসা বলতে কি বুঝায়? আমার এটা কি ভালোবাসা ছিলো না?
কিন্তু তারপর ও আমি তাকে পাই নাই! কেন পাই নাই, এই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা!
মাস্টার্স শেষ করার পর এই কোম্পানিতে চাকুরি শুরু করি, তার ৩ বছর পর তোর নানা আমার সাথে তোর মায়ের বিয়ে দেয়! তোর মা কি খারাপ? এই কথাগুলো তোর মা ও জানে না, বলি নাই, কষ্ট পাবে সে শুনলে!
তাই বলে তোর মা কে কখনো অবহেলা করি নাই! নিজেকে পুনরায় জন্ম দিয়েছি, আবার হাঁসতে শিখেছি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতো, একদিন নাকি ঘুমের ঘোরে সেই মেয়ের নাম বার বার বলেছিলাম, সে অনেক হাত পা ধরে আমি সেটা তোর মা কে বুঝিয়ে মাফ নিয়েছি,
আয়ান- আব্বু! সে মেয়ের নাম কি ছিলো?
আমি- মেয়েটার নাম ছিলো আইরিন!
আয়ান- তার মানে এজন্য আমার বোনের নাম নাম আইরিন রেখেছো?
আমি- হ্যাঁ !
.
তবে তুই হবার পর আর তেমন সমস্যা হয় নাই! তোকে পেয়ে আবার আমি পুরনো নিজেকে ফিরে পেয়েছি! অফিস থেকে ফিরেই তুই আমাকে পাগল করে দিতি, সবাই মা মা করে কাঁদে আর তুই আব্বু আব্বু করে! আমার বুকেই ঘুমাইতি তুই! তোর মা মাঝে মাঝে রাগ করতো, বলতো সারা দিন অফিস করো, বাসায় ফিরে সুধু ছেলে, বউ বলেও তো কেউ আছে নাকি?
.
আমি মুচকি হেঁসে বলতাম, ছেলে তো তোমার, তাকে ভালোবাসা মানে তোমাকেই ভালোবাসা!
তোর মা অভিমান করে বলতো, আমি আমাকেই ভালোবাসা চাই! আমার অংশ আমি চাই!
.
তুই তো অনেক সাহসি রে! তুই ভালোবাসার জন্য সাহস করতে পেরেছিস! কিন্তু আমি যতদূর জানি, মেয়েটা তোকে ভালোই বাসে নি! তাহলে দুঃখ কিসের?
.
বাবা মায়ের কথা মনে পড়লো না? তোর কিছু হলে আমাদের কি হবে? আজকাল কের ছেলে মেয়ে তোরা জানি কেমন? একটুতেই হার মেনে নিস!
লড়াই করতে জানিস না! সব চেস্টায় কি সফল হয়?
.
আয়ান- সরি বাবা! আমাকে মাফ করে দাও! আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি! আমি আর এমন কোন দিন করবো না!
.
ঠিক এমন সময়, পিছন থেকে অনন্যা বলে উঠলো,
অনন্যা- এই তাহলে ঘুমের মধ্যে সেই মেয়ের নাম ডাকের আসল রহস্য! এজন্য মেয়ের নাম রাখছো আইরিন? আর এদিকে আমি বোকার মত ভেবছি অনন্যা নামের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছে আইরিন! আল্লাহ কার সংসার করলাম আমি এই ২৭ বছর! আমার জন্য একটাও ফুলের গাছ লাগালো না আর এদিকে প্রেমিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কদম কৃষ্ণচূড়া গাছ ৩০ বছর থেকে লাগানো আছে!
.
আবার এই কথা ছেলেকে গর্ব করে পুরনো প্রেমের গল্প শোনানো হচ্ছে, সে ভালো রবীন্দ্র সংগীত পারে আর এদিকে আমি যে অনেক কিছু পারি এগুলো একবার ও বলে না!
.
আজ সেই সেই গাছ সহ পুরো ক্যাম্পাস জ্বালিয়ে দিবো!
আর তোর বোনের নামে আবার আকিকা দিয়ে নাম চেঞ্জ করবো! তুই সুধু ভালো হয়ে কাল বাড়ী আয়, তবে তোর বাপ যেন বাড়িতে না আসে! ওকে সেই কদম তলায় যেতে বল!
আয়ান- আব্বু! আজ তুমি শেষ!
আমি- কোন জ্বালা হলো রে বাবা! ছেলের জীবন সাজাতে এসে নিজের জীবনে আগুন লাগিয়ে দিলাম!
লাস্ট একবার ঝগড়া হয়েছিলো, ১৫ দিন বাইরে খেতে হয়েছিলো! আল্লাহ! এবারের মত একটু রক্ষা করিও! আর ভুলেও কোন কদম কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে যাবো না!
//
সমাপ্ত
গল্পের নাম- পরিবার
ফেইসবুক থেকে নেওয়া
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন