টমেটো চাষী ভাইদের জন্য রোগ বালাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শঃ
## টমেটো চাষের জন্য ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করা, সুষম সার ব্যবহার করা, সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা ( গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২ ফুট এবং সারি থেকে সারি দুরত্ব ২.৫-৩ ফুট , বেডের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি । পানির বিষয় সবসময় সর্তক থাকবেন যাতে ক্ষেতে পানি জমে না থাকে।
## শিডিউল স্প্রে :
১. চারা মূল জমিতে লাগানোর ৪/৫ দিন পরে কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
২. চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পরে হলুদ রঙের ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২টি দিয়ে দিবেন।
৩. চারা লাগানোর ৩০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ১ বার করে ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক + কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ৪০ দিন পর্যন্ত। তারপর ৬০ দিন পর থেকে আবার ১০ দিন পর পর স্প্রে করবেন।
৪.চারা রোপনের ৪০ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত শুধু ছত্রাকনাশক দিবেন, কীটনাশক দিবেন না( যদি পোকার আক্রমন অতিরিক্ত না হয় তাহলে)
৫.যদি তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি বেশি হয় তাহলে সুড়ঙ্গকারী পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে তাই শিডিউল স্প্রে ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশকের সাথে ডেল্টামেথ্রিন(1ml/L) গ্রুপের এবং স্পিনোসাইড( 1ml) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করবেন।
৫.চারা লাগানোর ৩৫/৪০দিন পর থেকে ১০ দিন পর পর ১ বার করে [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)] অথবা [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)]অথবা কার্বেন্ডাজিম(2gm/L)+ ক্লোরো আইসো ব্রোমাইন সায়ানুরিক এসিড গ্রুপের(1gm/L) ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
[বি:দ্র: এভাবে স্প্রে করলে আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন, ইন শা আল্লাহ । ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক মাত্রা কোম্পানি অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে]
##টমেটো গাছের রোগ- বালাই জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
১. চারা ধ্বসা রোগের জন্য= রোগ বালাই মুক্ত বীজতলা সংগ্রহ করা। জমি প্রস্তুতির সময় শতক প্রতি ১ কেজি সরিষার খৈল এবং শতাংশ প্রতি ৩/৪ কেজি ট্রাইকো- কম্পোস্ট দিতে পারেন।। এরপরও নিয়ন্ত্রণ না হলে কার্বেন্ডাজিম( 2gm/L) গ্রুপের অথবা (ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
২. বুশি স্টান্ট বা পাতা কুঁকড়া & ছোট হওয়া রোগের জন্য = রোগ মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। ১-৫% হলে গাছ তুলে ফেলে ধ্বংস করা এবং বাহক পোকা দমনে জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের (1ml/L) অথবা ডাইমেথেয়েট (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন।
৩. আগাম ধ্বসা রোগের জন্য = সময়মত সুষম সার & পানি সেচ দেয়া। পাতায় ১/২ টি চিহ্ন দেখা গেলে ম্যানোজেব( 2gm/L) অথবা (ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল) ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
৪.নাবী ধ্বসা রোগের জন্য = কুয়াশা ও মেঘলা আবহাওয়া বেশি হয়। প্রতিরোধক হিসেবে (ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) 2gm/L অথবা সিকিউর 2gm/L অথবা ( ম্যানকোজেব+ ডায়মেটামফ) অথবা ( ম্যানকোজেব+ সাইমোক্সালি) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন।
৫.টমেটো লিফ কার্ল রোগের জন্য = আক্রান্ত গাছ ১-৫% হলে তুলে ফেলে ধ্বংস করুন। তারপর বাহক পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড(1ml/L) গ্রুপ বা ডায়মেথেয়েট(1ml/L) স্প্রে করুন।
৬.পাতা সুরঙ্গকারী পোকা দমনের জন্য = ডেল্টামেথ্রিন (1ml/L)গ্রুপের ডেসিস অথবা স্পিনোসাইড ( 1ml/L) কীটনাশক স্প্রে করবেন।
৭.ফল ছিন্দ্রকারী পোকা দমনের জন্য = ৫০/৬০ গ্রাম নিমবীজ ভেঙে ১০/১২ ঘন্টা পানিত ভিজিয়ে রেখে ছেকে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করুন টমেটো ফুল আসার পর।। বেশি আক্রমণ করলে এমামেকটিন বেনজোয়েড(1gm/L) অথবা সাইপামেথ্রিন (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন।
৮.ব্লোজম ইন্ড রট রোগের জন্য = এটি সাধারণত ক্যালসিয়াম অভাবের কারণে হয়ে থাকে, তাই অম্লীয় মাটির ক্ষেতে শতাংশ প্রতি ৩.৫/৪ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।।
৯.টমেটো বাক আই রোগের জন্য = ( ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) 2gm/L অথবা সিকিউর 2gm/L স্প্রে করবেন।
১০. গাছের কান্ড বা ডাঁটা পঁচা হলে= ( ম্যানকোজেব+ ডাইমেটামরফ) বা ( ম্যানকোজেব + সাইমোক্সানিল) বা ( টেবুকোনাজল+ ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন।।
১১. ফল ফেটে যাওয়া জন্য = খরা অবস্থায় হঠাৎ পানি দিবেন না। সঠিক দূরত্ব চারা রোপণ করা, সুষম সার ব্যবহার করবেন এবং সলুবোর বোরন 2gm/L স্প্রে করবেন।
১২. পাতা, ফুল,ফল,পত্রবৃন্ত,বৃন্ত পচা রোধের জন্য ম্যানকোজেব/ কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
১৩. ফুল,ফল বৃদ্ধির জন্য [ চিলেকেট জিংক (1gm/L) + সলুবোর বোরন (2gm/L)] অথবা Nitrobenzene গ্রুপের (ফ্লোরা 2ml/L) গ্রুপের মাইক্রোনিউট্রিয়েন ।
১৩. মূলে নেমাটোডা আক্রমণ করলে এটা পরিচর্যা করতে হবে জমি তৈরির সময় করতে হবে চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে শতাংশ প্রতি ৮০-৮৫ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাউডার ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন এবং জমি তৈরির সময় শতাংশ প্রতি ১২০-১৩৫ গ্রাম হারে কার্বোফুরন গ্রুপর কীটনাশক ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন ।
১৪. ছত্রাকের কারনে টমেটো গাছ ঢলে পড়লে কার্বেন্ডিজম (2gm/L)/কপার-অক্সিক্লোরাইড(2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।
১৫.ব্যাকটেরিয়ার কারণে টমেটো গাছ ঢলে পড়লে [স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)] অথবা [(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)] অথবা ক্লোরো আইসো ব্রোমাইন সায়ানুয়িক এসিড গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ানাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।
(N.B: এক ক্ষেতে সকল স্প্রে করতে হবে বিষয় টা এমন না, শিডিউল স্প্রে গুলো শুধু নিয়মমাফিক দিতে হবে, আর এর বাইরে যার ক্ষেতে যেই রোগ হবে তিনি সেই অনুযায়ী স্প্রে করবেন, আশা করি বুঝতে পেরেছেন)
কৃষিবিদ আব্দুল কাইয়ুম
গবেষক
এ আর মালিক সীড
![]() |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন